কেমন আছে মহামারী পরবর্তী রাজস্থান, ঘুরে এসে নিজের অভিজ্ঞতার গল্প শোনালেন কলকাতার পর্যটক নেহা

Main কোভিড-১৯ দেশ ভ্রমণ রাজ্য রেল
শেয়ার করুন

করোনার বিরুদ্ধে সারা দেশ এখনও লড়ছে। এর মধ্যেই চলছে সব কাজ। পর্যটন বিভাগগুলিও চুপ করে বসে নেই। প্রত্যেকেই নিজের মতো করে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। রাজস্থান পর্যটন বিভাগ পর্যটকদের জন্য দ্বার খুলে দিতেই কলকাতার পর্যটক নেহা চ্যাটাজ্জি খান ঘুরে এসেছেন সেখান থেকে। ফিরেই কলম ধরেছেন সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর পাঠকদের জন্য।

Published on: আগ ১০, ২০২০ @ ১২:৪৭

Writer: Neha Chatterjee Khan

এসপিটি প্রতিবেদন:  সংবাদ মাধ্যমে ৮ জুন রাজস্থান পর্যটন বিভাগে “উই আর ওপেনিং” খবরটা পড়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। লকডাউনের একঘেয়েমি জীবনের স্বাদ আস্বাদন করতে ফের একবার “নিউ নর্মাল” রাজস্থান ভ্রমণের স্বপ্ন দেখা তৎক্ষনাৎ শুরু করলাম। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব আমার এই হঠকারী সিদ্ধান্ত শুনে করোনার আতঙ্কে প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ল। প্রায় সকলেই আমাকে বারংবার মানা করা সত্ত্বেও অজানাকে জানার আর অচেনাকে দেখার আনন্দে আমার পর্যটন পিপাসু মনকে টলাতে পারল না।আমি অবশ্য তার আগেই ব্যক্তিগতভাবে কলকাতার রাজস্থান পর্যটন বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে রাজস্থান সরকারের কোভিড-19 নিয়ে সাবধানতা ও ব্যাবস্থাপনা সম্পর্কে সব শুনে সন্তুষ্ট হয়ে মনস্থির করে নিয়েছিলাম।সব নিশ্চিত হয়ে হাওড়া-যোধপুর স্পেশাল ট্রেনের একটি টিকিট কেটে রওনা হয়ে গেলাম।

রেলযাত্রা ও রাজস্থানে প্রবেশ

ট্রেনে চাপার পর ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে গোটা যাত্রাপথে প্রচুর সহযোগিতা পেয়েছি যা অনস্বীকার্য। রেলের তরফে কম্বল ও বিছানাপত্র না পেলেও সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে জল, চা, শুকনো খাবারের পরিবেশনে কোনওরকম কার্পন্য করা হয়নি।

নির্দিষ্ট সময়ের বেশ কিছু আগেই আমার গন্তব্যস্থল জয়পুর পৌঁছে যাই।ওইদিনই রাত ১২টার সময় রাজস্থান সরকারের পক্ষে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীরা সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীদের থার্লা স্ক্রিনিং, স্যানিটাইজিং ইত্যাদি সকল বিধিনিয়ম পালন করে। এরপর গাড়ি ধরে কিছুতা পথ পাড়ি দিয়ে ফের একবার থার্মাল স্ক্রিনিং, স্যানিটাইজেশনের বেড়া টপকে তবেই রাজস্থান সরকারের অতিথিশালার দরজায় পৌঁছনো সম্ভব হয়-‘পধারো জী’ যা দেখে আমি অভিভূত। রাজস্থানে এই শব্দ উচ্চারন করেই অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়।

পরদিন ভোরে ঘুম ভাঙলো কেকার শব্দে। অতিথিশালার পাশেই এক জোড়া ময়ূর-ময়ূরী যান আমার সাহসকে কুর্নিশ করলো এই মহামারীর সময় অতিথিপ্রিয় রাজস্থানবাসীর আতিথেয়তা গ্রহণের জন্য সুদূর কলকাতা থেকে আসায়।”খাম্মা খানি সা”-“নমস্কার”।

রাজস্থান দর্শনের অভিজ্ঞতা

এবার রাজস্থানের রাজধানী বিশ্বখ্যাত জয়পুর শহর বা গোলাপী শহর দর্শনের পালা। মহারাজা সোয়াই সিং প্রতিষ্ঠিত এই শহরে প্রত্যেকবার খুব রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়। আমার সংক্ষিপ্ত সময়সীমার মধ্যে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থদিনে যথাক্রমে আমি একের পর এক পর্যটনস্থল, যেমন- আমির ফোর্ট, সিটি প্যালেস, হাওয়া মহল, অ্যাল্বার্ট হল মিউজিয়াম, নাহাড়্গড় ফোর্ট, জয়গড় ফোর্ট ঘুরে ফেললাম।ভারিত সরকারের আইন অনুযায়ী বিভিন্ন থিয়েটার ও সিনেমা হল বন্ধ থাকায় এ যাত্রায় আমি জয়পুরের বিখ্যাত সিনেমা হল ‘রাজমন্দির’ সিনেমা ও প্রেক্ষাগৃহটির অভিনব সৌন্দর্য্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। তবে একটি বিশেষ সুযোগের সদ্ব্যাবহার করলাম এই সময়ে, তা হল- রাজস্থান পর্যটন বিভাগের তরফ থেকে রাজস্থানের সমস্ত ঐতিহাসিক এবং যাবতীয় পর্যটন স্থলে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সম্পূর্ণ নিখরচায় সব দর্শনার্থীদের ভ্রমণের ব্যবস্থা করা। যা আমার মতো সকল পর্যটকের কাছে এটা একটা উপরি পাওনা।

রাজস্থানী রসনার স্বাদ

মরুভূমির এই দেশে জলের সমস্যা থাকলেও রসনার কোনও ওভাব নেই। আমার মতো ভোজনরসিকরা এখানকার বিখ্যাত পেঁয়াজ কচুরী, ডাল্বাটি, চুরমা, খেভর, মির্চি বড়া, মেওয়া পোলাও ইত্যাদির আস্বাদ গ্রহণ করতে ভোলেন না এই সময়েও।

রাজস্থানী হস্তশিল্প চোখে পড়ার মতো

শেষদিনে রাজস্থানের কিছু বিখ্যাত হস্তশিল্পের খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম জয়পুরের এমআই রোড রাজস্থালী হ্যান্ডিক্র্যাফট এম্পোরিয়ামে, যেখানে একই ছাদের তলায় জয়পুরের বিখ্যাত ব্রাস আর্ট, শ্বেতপাথরের উপর সোনালী কারুকার্যের হস্তশিল্প, কন্দনের গয়না, শাড়ি, কম্বল, বেডকাভার ইত্যাদির অসাধারণ সমস্ত কালেকশন চোখে পড়ার মতো।

সুস্থ অবস্থাতেই কলকাতায় ফিরে আসা

ঘড়ির কাটা বলছে এবার বিদায়ের পালা। অতিথিশালার যায়তীয় নিয়মকানুন স্মপন্ন করে অতঃপর ট্রেন ধরার সময় এসে পড়ল। রেল বিভাগের নিয়ম অনুসারে ট্রেন ছারার ৯০ মিনিট আগেই স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব চেকিং সম্পন্ন করে জয়পুর থেকে কলকাতা ফিরে এলাম।

সবশেষে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে কলকাতা ফিরে আমার ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনের সময়ও অতিক্রান্ত। আমি শারীরিক ও মানসিকভাবেও সম্পূর্ণ সুস্থ। তাই আপনাদের রাজস্থানী ভাষাতেই বলি- “পধারো মাহরে দেশ”।ছবিতে লেখিকা নিজেই দাঁড়িয়ে আছেন অম্বর প্যালেসের সামনে

Published on: আগ ১০, ২০২০ @ ১২:৪৭


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 59 = 69