এক মহাজীবনের অজানা তথ্যের সন্ধানে

এসপিটি এক্সক্লুসিভ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা- অনিরুদ্ধ পাল

Published on: জুন ৭, ২০১৮ @ ১৬:৪৪

এসপিটি নিউজ, হরিদাসপুর(বনগাঁ), ৭জুনঃ  এটা আমাদের একপ্রকার লজ্জ্বা।নিজের জায়গার ইতিহাস জানি না। জানতেও চাই না। বনগাঁ হয়ে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে যেতে হয়।যদিও খাতায়-কলমে ঐ জায়গার নাম হরিদাসপুর সীমান্ত। বনগাঁ পুলিশ স্টেশনের অধীন হরিদাসপুর বর্ডার আউট পোস্ট। আছে হরিদাসপুর সেতু। নাওভাঙা নদীর উপর দিয়ে গেছে সেতুটি। গোটা এলাকাই হরিদাসপুর নামেই পরিচিত।কিন্তু না, হরিদাস ঠাকুর সম্পর্কে জানেই না বহু মানুষ। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশে যে দু’জন হরিনাম প্রচার করেছেন তাদের একজন নিত্যানন্দ ও অপর জন হলেন হরিদাস ঠাকুর।আজ সেই হরিদাস ঠাকুরের মহাজীবনের অজানা তথ্যের সন্ধানেই এই প্রতিবেদন।

বলা যেতে পারে তাঁর সম্পর্কে বিশদে জানতে রওনা দিয়েছিলাম, বনগাঁর সেই প্রত্যন্ত এলাকা হরিদাসপুরে। সঙ্গে ছিলেন মায়াপুর ইসকনের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস। যেখানে আছে হরিদাস ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এক মন্দির। যা নাওভাঙা নদীর ধারে অবস্থিত।

বাংলাদেশের যশোর জেলার বুঢ়ন গ্রামে যবন কুলে জন্মালেও কৃষ্ণ নামেই বিভোর থাকতেন তিনি। এজন্য তৎকালীন সময় যবন রাজ তাঁর উপর কম অত্যাচার করেনি। যদিও হরি ভক্ত হরিদাস মুখ বুজে সব সহ্য করে গেছেন।পরবর্তীকালে তিনি যশোরের বেনাপোল থেকে বনগাঁয় নাওভাঙা নদীর ধারে এক তুলসী গাছের পাশে এসে ওঠেন।এটা আজ থেকে সাড়ে পাঁচশো বছরেরও আগের কথা। আজ সেখানেই গড়ে উঠেছে মায়াপুর ইসকনের শাখা কেন্দ্র। সেই তুলসি গাছের জায়গাটিকে ঘিরে স্থাপন করা হয়েছে হরিদাস ঠাকুরের বিগ্রহ।

এই শাখা কেন্দ্রের প্রধান যুগল কিশোর দাস বলেন, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবের ৩৫ বছর আগে আবির্ভূত হয়েছিলেন হরিদাস ঠাকুর। তিনি তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। মহাপ্রভুর একনিষ্ঠ পার্ষদ হিসেবে প্রভু নিত্যানন্দের পাশাপাশি হরিদাস ঠাকুরের নামও উচ্চারিত হয়ে থাকে।

মায়াপুর ইসকনের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস হরিদাস ঠাকুর সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, পরশমণির স্পর্শে লোহা যেমন সোনায় পরিণত হয়, তেমনি যবন হরিদাস মহাপ্রভুর সংস্পর্শে পরিণত হয়েছিলেন নামাচার্য্য হরিদাসে। পরবর্তীকালে হরিদাস ঠাকুরের পদপ্রান্তে এসে হীরা নটি নিজেই রূপান্তরিত হয়েছিলেন মাহাসাধিকা লক্ষ্মীহীরাতে। যিনি আধুনিক সভ্যতার সংকট হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন এবং জড়বাদেপূর্ণ নাস্তিক সমাজে পারমার্থিক আদর্শ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল মানুষকে এবং অতি উন্নত জীবনের আদর্শে অনুপ্রাণিত করেছিলেন ‘কৃষ্ণ নামে এবং কৃষ্ণ প্রেমে।’

তৎকালীন যবনরাজ হরিদাস ঠাকুরকে ধরে এনে হরিনাম ত্যাগ করে কলমা উচ্চারণ করতে নির্দেশ দেন। তখন হরিদাস ঠাকুর বলেছিলেন-‘ঈশ্বরের নাম গোত্র ভেদ। হিন্দুর শাস্ত্র পুরান আর মুসলমানের শাস্ত্র কোরান। সেই প্রভু যাঁরে যেমন মতি দেন, তিনি তেমনি কর্ম করেন।’ কথা শুনে যবনরাজ হরিদাস ঠাকুরকে কঠোর শাস্তির নির্দেশ দেন। হরিদাস ঠাকুর এর জবাবে বলেন-‘খন্ড খন্ড হই দেহ যায় যদি প্রাণ/তবু আমি বদনে না ছাড়িব হরিনাম।'(শ্রীচৈতন্য ভাগবত আদি ৬/৯৪)।সেইসময় শাস্তি হিসেবে যবনরাজ বাইশ বাজারে বেত্রাঘাত করেছিলেন এবং নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ওই যে কথায় আছে না “রাখে হরি মারে কে”। হরি যাকে বাঁচাবে তাঁকে মারে কার সাধ্য। ভক্ত প্রহ্লাদের কথা আমরা সকলেই জানি। তাই হরিদাস ঠাকুর বেঁচে গিয়েছিলেন শুধু নয় তাঁর হরির নাম প্রচার পরে আরও জোরদার হয়ে ওঠে।

বনগাঁয় হরিদাসপুরে হরিদাস ঠাকুরের আশ্রমে বসে মন্দির প্রধান যুগল কিশোর দাস বলছিলেন হরিদাস ঠাকুরের শেষ জীবনের কথা। তাঁর জীবন ছিল হরির নামে মোহাচ্ছন্ন। তখন তিনি নীলাচল পুরীধামে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুও সেখানে অবস্থান করছেন। প্রতিদিন মহাপ্রভুর প্রসাদ পাঠাতেন হরিদাস ঠাকুরের কাছে। হরির নাম জপ করার পর হরিদাস ঠাকুর সেই মহাপ্রসাদ মুখে দিতেন। তখন তাঁর বয়স ৯৫ বছর। শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। তিন লক্ষ বার জপ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এদিকে মহাপ্রভু তাঁর প্রসাদ পাঠিয়েছেন ভক্ত হরিদাসের কাছে। তিনি প্রেরকদের জানিয়ে দেন, আজ তাঁর তিন লক্ষ বার জপ করা হয়নি তাই প্রসাদ মুখে তুলতে পারবেন না। একথা শোনামাত্রই সেখানে গিয়ে হাজির হন স্বয়ং মহাপ্রভু। তিনি সব শুনে হরিদাস ঠাকুরকে বলেছিলেন, ‘তুমি সিদ্ধ পুরুষ।তোমার সখ্যার প্রতি এত আসক্তি কেন? সংখ্যাটা কমিয়ে তুমি মুখে হরিনাম করো।’ এ কথা শুনে মনের কষ্ট লাঘব হয়েছিল হরিদাস ঠাকুরের। তিনি প্রসাদ মুখে তুলেছিলেন।

পুরীতেই সমাধিস্থ করা হয়েছিল হরিদাস ঠাকুরকে। এর পিছনেও এক কাহিনি আছে। যুগল কিশোর দাস বলেন, হরিদাস ঠাকুর মহাপ্রভুকে বলেছিলেন তিনি যেন তাঁর আগে এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে পারেন। কারণ, তাঁর জীবদ্দশায় মহাপ্রভুর বিদায় তিনি সহ্য করতে পারবেন না। শেষ পর্যন্ত তাঁর ইচ্ছাই পূরণ হয়েছিল। মহাপ্রভু নিজের হাতে ভক্ত হরিদাস ঠাকুরের দেহ সমাধিস্থ করে বলেছিলেন, আজ থেকে নীলচলের এই সমুদ্র পবিত্র হল।পুরীতে আজও হরিদাস ঠাকুরের সমাধি মন্দির বর্তমান।

সত্যি আমিও জানলাম হরিদাস ঠাকুরের সম্পর্কে অনেক কিছু।

Published on: জুন ৭, ২০১৮ @ ১৬:৪৪


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 7 = 2