অসামান্য নজির গড়লেন নজরুল, মাথা ঝুঁকে কুর্নিশ “মেদিনীপুরের গর্ব”-কে

রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল

Time: 7:03pm

এসপিটি নিউজ, মেদিনীপুরঃ তাঁর এই মহানুভবতা, তাঁর এই সততা, তাঁর এই কৃতিত্ত্ব উঠবে না কোনও রেকর্ড বই-এর পাতায়। পড়বে না তাঁর উপর কোনও নামি-দামি চ্যানেলের ক্যামেরার ফ্লাশ-বাল্বের ঝলকানি, মিলবে না হয়ত বড় ধরনের কোনও সম্মানও। কিন্তু তা নিয়ে কোনও হেলদোল নেই তাঁর।সম্মান, পুরস্কার, রেকর্ডের কথা ভেবে তিনি কিছু করেন না। তিনি মনে করেন, তিনি এক অতি সাধারণ মানুষ।ভালভাবে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়েপড়ে থাকতে পারাটাই তাঁর কাছে অনেক। তাই তো আড়াই লক্ষ টাকার সোনার গয়না ও নগদ ৩০ হাজার টাকা ভর্তি ব্যাগ ফিরিয়ে দিয়ে বলতে পারেন- ‘যার জিনিস তার হাতে তুলে দিতে পেরেই আমি খুশি।’ তিন নজরুল। পুরো নাম সৈয়দ নজরুল। মেদিনীপুর শহরের মির্জাবাজারের বাসিন্দা। টোটোতে করে মানুষকে পৌঁছে দেন তার গন্তব্যস্থলে। আজ তাঁর এমন কীর্তিতে গর্বিত গোটা মেদিনীপুর শহরবাসী।মাথা নত করে কুর্নিশ জানাচ্ছেন তারা।

ঘটনায় প্রকাশ, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা এলাকার বাসিন্দা বৃন্দাবন দাস ও তাঁর স্ত্রী প্রণতি দাস আজ বুধবার কেনাকাটা করতে এসেছিলেন।তাঁরা মেদিনীপুর শহরের একটি সোনার দোকান থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার সোনার গয়না কেনেন।সে গয়না সহ নগদ ৩০ হাজার টাকা তাঁরা একটি ব্যাগে রাখেন। এরপর তাঁরা একটি টোটোয় চেপে মেদিনীপুর শহরের এলআইসি মোড়ের একটি হোটেলে যান। নামার সময় তাঁরা গয়না ও টাকা ভর্তি ব্যাগটি নিতে ভুলে যান। খেতে বসে তাঁরা তাঁদের ব্যাগটির খোঁজ করতেই বুঝতে পারেন মস্ত ভুল করে ফেলেছেন তাঁরা। মহা মূল্যবান ব্যাগটি তাঁরা সেই টোটোতেই ফেলে এসেছেন। তখন তাঁদের মাথা চাপড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। হোটেলে বসেই কাঁদতে শুরু করেন। কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না।আর কোনও আশা নেই বুঝে নিয়ে তাঁরা যখন হতাশায় ভেঙে পড়েছেন ঠিক সেই সময় সেই হোটেলে এসে হাজির হন সেই টোটো চালক সৈয়দ নজরুল।

নজরুল এগিয়ে যেন বৃন্দাবনবাবু ও তাঁর স্ত্রী-র দিকে। জিজ্ঞাসা করেন, “আপনাদের কি কিছু হারিয়ে গেছে?” প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই বৃন্দাবনবাবু বলেন, “আমাদের একটি ব্যাগ হারিয়েছে। সেই ব্যাগে সোনার গয়না আর নগদ ৩০ হাজার টাকা আছে।” জবাব পেতেই নজরুল বৃন্দাবনবাবুর হাতে ব্যাগটি তুলে দেন। ব্যাগ খুলে দেন দেখে নেন, সব কিছু ঠিক আছে কি না! দেখেন সব একইরকম আছে। এরপর বৃন্দাবনবাবু খুশি হয়ে কিছু টাকা দিয়ে নজরুলকে পুরস্কৃত করতে চান। কিন্তু, তা নিতে অস্বীকার করেন। বলেন, আপনারা ব্যাগ পেয়েছেন, এতেই আমি খুশি। যদিও বৃন্দাবনবাবুর শত অনুরোধে আর স্থানীয় বাসিন্দাদের জোড়াজুড়িতে অবশেষে নজরুল ১০০ টাকা মিস্টি খাওয়ার জন্য গ্রহণ করেন।

সামান্য এক টোটো চালকের এমন অসামান্য নজির দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছেন বৃন্দাবনবাবু ও তাঁর স্ত্রী। বৃন্দাবনবাবুর কথায়, ওনার এই কাজ কোনও মানদন্ডেই পরিমাপ হওয়া সম্ভব নয়। আজকের দিনে এ এক অসামান্যর চেয়েও অসামান্য নজির। নজরুলের এই সততার যথার্থ মূল্যায়ন হওয়া উচিত বলে মনে করেন মেদিনীপুরের শহরবাসীও।উপস্থিত গুটি কয়েক শহরবাসী মাথা নত করে কুর্নিশ জানিয়েছেন মেদিনীপুরের এই গর্বকে।

ছবিঃ রামপ্রসাদ সাউ

Time: 7:03pm


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + 7 =