Published on: জুন ২০, ২০১৯ @ ২০:৫১
এসপিটি নিউজ ব্যুরোঃ আজ সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গের ভাটপাড়া এলাকা। স্থানীয় রিলায়েন্স জুট মিল সহ বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়ে যায় বোমাবাজি। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। কার্যত বনধের চেহারা নেয় এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র্যাফ নামায় পুলিশ। এরপর দুষ্কৃতীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়তে থাকে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটানো হয়। দু’পক্ষের মধ্যে চলে গুলি বিনিময়। এই সময় গুলিতে মৃত্যু হয় স্থানীয় দুইজন বাসিন্দার।এরই মধ্যে বারাকপুর পুলিশ কমিশনারকে বদলি করে দেওয়া হল।
অর্জুন ও মুকুলের অভিযোগের তীর মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশের বিরুদ্ধে
বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং অভিযোগ করেছেন, পুলিশের ছোড়া গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে এলাকার দুই নিরীহ মানুষের।একই দাবি করেছেন আর এক বিজেপি নেতা মুকুল রায়ও। তিনি আরও গুরুতর অভিযোগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। মুকুলের অভিযোগ, “ট্রিগার হ্যাপি পুলিশ। খেটে খাওয়া মানুষকে হত্যা করছে পুলিশ। চারজন মানুষ আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। এর সব দায়িত্ব নিতে হবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।”
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জবাব চাইলেন মুকুল রায়
মুকুলের আরও অভিযোগ-“পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে দু’জন বাসিন্দার। নিরীহদের উপর কেন গুলি চালানো হল? এর জবাব মুখ্যমন্ত্রীকে দিতে হবে। পুলিশকে দিয়ে ভাটপাড়ায় দখল নিতে চাইছে মমতা। আমরা এর নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।”
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়র পাল্টা দাবি পুলিশ গুলি চালায়নি
অর্জুন সিং কিংবা মুকুল রায়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী উত্তর ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি পালটা অভিযোগ এনে বলেন-“ভাটপাড়ায় পুলিশ এক রাউন্ডও গুলি চালায়নি। এটা নব্য বিজেপি আর পুরনো বিজেপি কর্মীদের নিজেদের মধ্যে গুলির লড়াইয়ের ফল। ওরা নিজেদের গুলিতেই মরেছে।ভাটপাড়ায় বাবা-ছেলে মিলে এসব করছে।”
থানা উদ্বোধন স্থগিত
আজই ছিল ভাটপাড়ায় নতুন থানা উদ্বোধনের অনুষ্ঠান। কিন্তু এই পরিস্থিতির জন্য এই অনুষ্ঠান স্থগিত রাখা হয়েছে। থানা এলাকার ২০০ গজের মধ্যে বোমাবাজিতে তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। সূত্রের খবর , ১৫-২০ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে পুলিশ।
রঙ না দেখে গ্রেফতারের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
এই ঘটনার পর নবান্নে জরুরী বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠোকে মুখ্যসচিব মলয় দে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও।বৈঠোকে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানতে চান- কেন অচলাবস্থা কাটছে না ভাটপাড়ায়? এরপরই তিনি করা ভাষায় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন- রঙ না দেখে গ্রেফতার করুন। যাঁকে যাঁকে প্রয়োজন গ্রেফতার করুন। তিনদিনের মধ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে হবে।কোনও রঙ দেখার প্রয়োজন নেই।”
স্বরাষ্ট্র সচিবের আবেদন- প্ররোচনা ছড়াবেন না
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ভাটপাড়ায় অশান্তির পিছনে যুক্ত বহিরাগতরা। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বহিরাগত দুষ্টীরা এসে গন্ডগোল পাকাচ্ছে। প্রশাসন কড়া হাতে তা দমন করছে। ভাটপাড়া ও জগদ্দল থানা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সকলের কাছে আবেদন- আওপ্নারা অযথা প্ররোচনা দেবেন না। এলাকাকে শান্ত রাখুন। প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করুন।”
বদলি বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার
ভাটপাড়ায় অশান্তির মধ্যেই বদলি করে দেওয়া হল বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরীকে।তাঁর জায়গায় আনা হল মনোজ কুমার ভার্মাকে।তন্ময় রায়চৌধুরীকে ডিআইজি সিআইডি অপারেশন পদে স্রিয়ে দেওয়া হল।নবান্ন থেকে প্রকাশিত এক নির্দেশিকায় এই বদলির খবর জানা গিয়েছে।
এদিন ভাটপাড়ায় যান ডিজি বীরেন্দ্র। তিনি সব কিছু খতিয়ে দেখেন। একই সঙ্গে ভাটপাড়ার পরিস্থিতি কড়া হাতে মোকাবিলা করতে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সঞ্জয় সিং-কে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে ভাটপাড়ায় পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবরে জানা গিয়েছে।
Published on: জুন ২০, ২০১৯ @ ২০:৫১