অক্ষয় তৃতীয়ায় তারাপীঠে ত্রিনয়নী আশ্রমে প্রতিষ্ঠা দিবসে হবে প্রতিষ্ঠাতা শ্রীগুরুদেবেরসমাধি মন্দির –বিগ্রহের উন্মোচন

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

 Published on: এপ্রি ২৭, ২০২২ @ ২৩:২৮
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৭ এপ্রিল: অক্ষয় তৃতীয়ার শুভলগ্নে তারাপীঠে মাতৃসাধক  গুরুদেব  শ্রী শিশির কুমার শর্মা প্রতিষ্ঠিত ত্রিনয়নী আশ্রমে শ্যাম-শ্যামা ও মনসা মায়ের মন্দিরের ২৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন হতে চলেছে। ওইদিন আশ্রমে বিশেষ পুজোরও আয়োজন করা হয়েছে। তবে এবারের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে একটা বিশেষ কারণে। আশ্রম ও পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ওইদিন আশ্রম প্রাঙ্গনে প্রতিষ্ঠাতা পরম পূজ্যপাদ গুরুদেবের সমাধি মন্দির এবং তাঁর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হবে।সেই উপলক্ষে এক বিশাল ভক্ত সমাবেশ হতে চলেছে।

গত বছর ২০২১ সালের ১ মে মাতৃসাধক পরম পূজ্যপাদ গুরুদেব শ্রী শিশির কুমার শর্মা ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে গোটা ত্রিনয়নী পরিবার সহ অসংখ্য অনুরাগী ভক্ত-শিষ্য গভীর শোকে ভেঙে পড়েন। সেইসময় করোনা মহামারীর প্রকোপ চলছিল। জনজীবন স্তব্ধ হয়েছিল। ফলে ইচ্ছা থাকলেও নিজের গুরুদেবকে শেষ সময়ে বহু ভক্ত ও শিষ্য দেখতে পাননি। উত্তর দিনাজপুরে এক প্রকার নীরবে তাঁর অন্তিম সংস্কার হয়।

সমাধি মন্দির ও বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা হয়ে অনেক আগেই

এরপর থেকেই ত্রিনয়নী পরিবারের সকলে স্থির করেন আশ্রমে গুরুদেবের সমাধি মন্দির ও তাঁর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেই মতো কাজ শুরু হয়ে যায়। কারণ সকল ভক্ত-শিষ্যই মনে করেন যে ত্রিনয়নী আশ্রম আর মাতৃসাধক গুরুদেব শ্রী শিশির কুমার শর্মা সমার্থক। কাজেই এই আশ্রমের প্রতি স্থানেই উজ্জ্বল হয়ে আছেন তিনি। তাই তাঁর বিগ্রহ এবং সমাধি মন্দির হলে ভক্ত-শিষ্যরা এসে সেখানে বসে নিজেদের মনের শান্তি খুঁজে পাবেন। অবশেষে সেই শুভক্ষণ এসে গিয়েছে। প্রস্তুতি সম্পন্ন। সকলেই সেই শুভ মুহূর্তের প্রহর গুনতে শুরু করে দিয়েছে।

ত্রিনয়নী আশ্রমের ভক্ত-শিষ্য এবং পরিবারের পক্ষে ভাইপো রুদ্র নারায়ণ শর্মা ও উদিত নারায়ন শর্মা এই ভক্ত সমাবেশে সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা অক্ষয় তৃতীয়ার শুভলগ্নে আশ্রমে বিশেষ পুজোপাঠের পর ভক্ত-অনুরাগী থেকে শুরু করে সকলকে প্রসাদ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আশ্রমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে-

  • ওইদিন ভোর চারটে নাগাদ মন্দিরে দ্বারোদ্ঘাটন ও মঙ্গলঘট স্থাপন হবে।
  • ভোর ৪টে ১৫ মিনিটে শ্রী শ্রী চন্ডীপাঠ হবে।
  • বেলা আটতায় বিগ্রহে মাল্যদান করা হবে।
  • বেলা ৯টায় শ্রী গুরুদেবের সমাধি মন্দির ও বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা –আরাধনা অনুষ্ঠিত হবে।
  • বেলা ১১টায় হবে পুজো পাঠ ও হোমযজ্ঞ। বেলা ১১টায় মা মনসাদেবীর বিশেষ পুজো অনুষ্ঠিত হবে।
  • দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ভোগ ও প্রসাদ বিতরণ হবে।

মাতৃসাধক শ্রী শিশির কুমার শর্মা ছিলেন উচ্চ কোটির সাধক

অত্যন্ত বড় মনের মানুষ ছিলেন শ্রী শিশির কুমার শর্মা। মা তারা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ পর্যন্ত তারাপীঠে যতজন উচ্চকোটি সাধকের সন্ধান পাওয়া যায় তাদের মধ্যে মহামুনি বশিষ্ঠদেবের পরবর্তীতে লোক কল্যাণে নিয়োজিত প্রথিতযশা শ্রী বামদেব চক্রবর্তী অর্থাৎ বামাক্ষ্যাপার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর প্রিয় উত্তরসূরী শ্রী শঙ্কর ক্ষ্যাপা বামদেবের পরবর্তীতে তারাপীঠের প্রসিদ্ধ সাধক ছিলেন। এরপর শ্রী শিশির কুমার শর্মা তারাপীঠ ভৈরবের স্থান অলংকৃত করেছিলেন।সেই সময় মোক্ষকামী সন্ন্যাসী শঙ্করক্ষ্যাপা বাবা প্রথম দর্শনেই অনুভব করেন যে সৌম্যদর্শন যুবক রাজভিখারীর বেশে উপস্থিত হয়েছেন। শ্রী শংকরক্ষ্যাপা বাবা নিজের আসন থেকে উঠে পড়েন। ভক্তদের ডেকে শ্রী শিশির কুমার শর্মাকে দেখিয়ে বলেছিলেন- বল বিশ্বময়ী তারামায়ের জয় হোক, তারা মায়ের মঙ্গল হোক, তারা মায়ের কল্যাণ হোক। বল তোরা তারা সত্য, গুরুনাম সত্য। জয় মা তারা, জয় শ্মশানচারিণী শ্যামা-মায়ের নাম, বশিষ্ঠ বামদেবের নাম।

মানুষের কল্যানের কথা ভেবে গিয়েছেন আমৃত্যু

শ্রীশিশির কুমার শর্মা ছিলেন উচ্চ কোটির সাধক। তারাপীঠ মহাশ্মশানে কঠোর সাধনার মধ্য দিয়ে তিনি শব সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন। তিনি অঘোরী সাধনায়ও সিদ্ধিলাভ করেছেন। তার সাধনায় তিনি মানুষের কল্যানের কথা ভেবে গিয়েছেন আমৃত্যু। তারাপীঠে প্রাথমিক বিদ্যালয়, অবৈতনিক সেবা প্রতিষ্ঠান, দাতব্য চিকিৎসালয়, অসহায় মানুষের পাশে থেকে তাদের সাহায্য করে গিয়েছেন। জ্যোতিষ চর্চাতেও তিনি অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। ভারতের বাইরেও তাঁর নাম ছড়িয়েছে। ভারতের প্রাক্তন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর হাত থেকে সার্ক ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে সেরা জ্যোতিষ সম্মান হিসেবে স্বর্ণমুকুট লাভ করেছিলেন।

মানুষের মনের কথা তিনি পড়ে ফেলতে পারতেন

ত্রিনয়নী আশ্রমে প্রবেশ করা সমস্ত মানুষের মনের কথা তিনি পড়ে ফেলতে পারতেন। এই প্রতিবেদক একাধিকবার তার সাক্ষী থেকেছে। তা নিয়ে আমাকে একবার পরম পূজ্যপাদ শগুরুদেব শ্রী শিশির কুমার শর্মা বলেছিলেন- আশ্রমে এসে কেউ যদি মার সামনে নাও আসে আমি তার সম্পর্কে সবটাই জানতে পারি। এতটাই দূরদর্শী সম্পন্ন মহান সাধক ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন তারাপীঠ অন্ত প্রাণ। তাই তিনি যজ্ঞের আসনে বসেই বলতেন- তারাপীঠে আসলে পড়ে/ ফেরে না কেউ খালি হাতে। আবার কখনো বলতেন- এক মনে ডাকলে পড়ে/ মা যে কৃপা করেন তারে।

বিগ্রহ ও সমাধি মন্দির প্রতিষ্ঠার মুহূর্ত দেখার অপেক্ষায়

করোনা মহামারীর সময় সকলে আমরা যখন নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছিলাম সেই সময় পরম পূজ্যপাদ গুরুদেব শ্রী শিশির কুমার শর্মা কিন্তু নিজেকে আটকে রাখেননি। মানব কল্যাণে তিনি একের পর এক যজ্ঞ করে গিয়েছেন।ভক্ত-শিষ্য সহ মানুষের কল্যাণে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। আজ তাই তিনি আজ না থেকেও সকলের হৃদয় জুড়ে রয়ে গিয়েছেন। আশ্রমবাসী থেকে শুরু করে স্কলেই তাই অক্ষয় তৃতীয়ার শুভলগ্নে তাঁর বিগ্রহ ও সমাধি মন্দির প্রতিষ্ঠার মুহূর্ত দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন।

Published on: এপ্রি ২৭, ২০২২ @ ২৩:২৮


শেয়ার করুন