সংবাদদাতা– অনিরুদ্ধ পাল ও ডা. সৌমিত্র পন্ডিত
Published on: ফেব্রু ১, ২০১৯ @ ২৩:৫৭
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১ ফেব্রুযরি: ভারতীয় প্রাণী চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের নিয়ে এত বড় মাপের ‘ইন্ডিয়ান ভেটেরিনারি কংগ্রেস’ এর আগে সারা দেশে আয়োজিত হয়নি। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অফ ভেটেরিনারি রিসার্চ পিছনে ফেলে এসেছে ২৮টি বছর। সেকথা স্মরণ করে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইএএভিআর-এর ফাউন্ডার সেক্রেটারি ড. রিষেন্দ্র ভার্মা বলেন, “১৯৯১ সালে জন্ম নিয়েছিল। দেখতে দেখতে এতগুলি বছর পার করে দিল। কিন্তু এবারের এই সম্মেলন আগের সম্মেলনকে ছাপিয়ে গেছে। আর জন্য তিনি কিন্তু কৃতিত্ব দিলেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাসকেই।” এটা নিঃসন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের কাছে এক বড় প্রাপ্তি।
এবারের ইন্ডিয়ান ভেটেরিনারি কংগ্রেস আরও একটি দিক দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠল যে এবারের এই সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চে হাজির ছিলেন দেশের বর্তমান ও প্রাক্তন সাতজন উপাচার্য্য। তারা হলেন ভেটেরিনারি এন্ড অ্যানিমাল সেয়েন্স ইউনিভার্সিটির ড. সি বালাচন্দ্রন, কর্ণাটকের ভেটেরিনারি অ্যানিমাল এন্ড ফিসারিজ সায়েন্স ইউনিভার্সিটির ড. এইচ ডি নারায়নস্বামী, ভেঙ্কটেশ্বরা ইউনিভার্সিটির ড. ওয়াই হরিবাবু, লালা লাজপত রায় ইউনিভার্সিটি অফ ভেটেরিনারি এন্ড অ্যানিমাল সায়েন্সের প্রাক্তন উপাচার্য্য এবং ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ ভেটেরিনারি সায়েন্সের প্রেসিডেন্ট ড. (মেজর জেনারেল) শ্রী কান্ত, গুজরাটের কামধেনু ইউনিভার্সিটির উপাচার্য্য ড. এন এইচ কেলাওয়ালা, পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস ও প্রাক্তন উপাচার্য্য ড. বি মল্লিক।
সভায় প্রথম বক্তা হিসেবে আইএএভিআর-এর প্রেসিডেন্ট ড. এস এন সিং প্রথমেই তাঁর কলকাতায় থাকার পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করেন। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ-এ তাদের বাস ছিল। তখন কলকাতায় এইআর অ্যাভিনিউ গঙ্গার জল পাইপ দিয়ে ধোয়া হত। সেকথা বলার সময় তিন কিছুটা আবেগতারিত হয়ে পড়েন। একই সঙ্গে- “এক স্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত খাদ্যের জন্য পশু স্বাস্থ্য এবং উৎপাদন উদ্ভাবনী অগ্রগতি” বিষয়ে তাঁর মূল্যবান বক্তব্য আলোকপাত করেন।
আইএএভিআর-এর ফাউন্ডার সেক্রেটারি ড. রিষেন্দ্র ভার্মা কলকাতায় দাঁড়িয়ে প্রাণী চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে বলতে গিয়ে বেশ উৎসাহিত হয়ে পড়েন। পাশাপাশি কলকাতার ঐতিহ্য পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিকে সম্মান জানিয়ে কৃষকের জন্য গলা ফাটান। তিনি বলেন- এই শহরের ভূমি নেতা তৈরি করেছে, এই শহরের মাটি সঙ্গীতকার তৈরি করেছে, এই শহরের মাটি নোবেলজয়ীকে দিয়েছে। এই শহর অনেক কিছু দিয়েছে। এই শহরেই আবার উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস তাঁর ছাত্র-ছাত্রী, গবেষক, সহকারীদের এক সঙ্গে নিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করে চলেছেন। একসময় স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন- তোমরা আমাকে ১০জন মানুষ দাও, আমি একটা জাতি গড়ে দেব।”
“আমি আজ এখানে বলতে এসে নস্ট্যালজিক হয়ে পড়ছি। কারণ, একটা সময়ে আমি কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়ামে দু’বছর ২০০৮ ও ২০১০ সালে কাজ করে গেছি। আমি এই শহরকে খুব ভালোবাসি। এখান থেকে পদোন্নতি হয়ে মিরাট চলে যাই।আজ এখানে এত সুন্দর ব্যবস্থপনা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করছি।এসব সম্ভব হয়েছে উপাচার্য্য অধ্যাপক বিশ্বাসের যোগ্য নেতৃত্বের জন্যই।” বলেন ড. শ্রীকান্ত।
কর্ণাটকের উপাচার্য্য নারায়নস্বামী নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন-“কৃষকদের আয় বাড়াতে হবে। সেদিকে নজর দেওয়া জরুরী। আমি যখন জাপান গিয়েছিলাম সেখানে এক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে দেখেছিলাম তারা প্রাণী চিকিৎসায় কিভাবে এগিয়ে চলেছে। প্রাণী চিকিৎসা গবেষনা নিয়ে তারা কি কি করছে তা জেনেছিলাম।”
সভায় সবশেষে সভাপতির ভাষনে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস আলোচ্য বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে গিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরেন। যেখানে প্রাণীর স্বাস্থ্যর পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্যও সমানভাবে তুলনীয়। এক স্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোন থেকে কিভাবে প্রাণী উৎপাদন আরও বাড়ানো যায় সেদিকে নিজের মতামত তুলে ধরেন তিনি।
সভায় সম্মেলনের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি শুভাশীষ বটব্যাল স্বাগত ভাষণে সাফল্য কামনা করে বলেন, “এক মঞ্চে দেশের সাতজন উপাচার্য্যের উপস্থিতি এটা খুবই তাৎপর্পূর্ণ হয়ে উঠছে।”
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রের দেশাত্মবোধক সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।এরপর প্রদীপ জ্বালিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন উপস্থিত অতিথিরা।সব শেষে জাতীয় সংগীত দিয়ে সম্মেলনের প্রথম পর্যায়ের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
Published on: ফেব্রু ১, ২০১৯ @ ২৩:৫৭