২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপঃ চার ফেবারিট দলের যাদের দিকে সকলের নজর থাকবে

খেলা বিদেশ
শেয়ার করুন

Published on: জুন ১১, ২০১৮ @ ২০:৩২

এসপিটি স্পোর্টস ডেস্কঃ আর মাত্র তিনদিন। ইতিমধ্যে অংশগ্রহণকারী দলগুলি রাশিয়া ঢুকতে শুরু করে দিয়েছে। প্রতিটি দলই চাইছে বিশ্বকাপে স্মরণীয় কিছু একটা করে যেতে। তার মধ্যে এবারের বিশ্বকাপে এমন বেশ কিছু দল আছে যাদের দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। এই তালিকায় প্রথমেই আছে লিওনেল মেসির নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা। এরপরই আছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর নেতৃত্বাধীন পর্তুগাল। কিন্তু বিশ্বকাপের সম্ভবত ফেবারিটদের তালিকায় এই দুটি দলের কেউই নেই। অন্তত ফিফার বিচারে যে চারটি দলকে এবারের বিশ্বকাপে ফেবারিট ধরা হয়েছে তারা হল ব্রাজিল, ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেন।

এবার দেখে নেওয়া যাক এই চার ফেবারিটদের কাদের দিকে বিশেষ নজর।

ব্রাজিল

তিতের বুদ্ধিমান নেতৃত্বে ব্রাজিলের বর্তমান দলটি বেশ শক্তিশালী। রাশিয়ায় অনগশগ্রণকারী দলগুলির মধ্যে নিঃসন্দেহে ব্রাজিল এবার রীতিমতো তৈরি হয়েই নামতে চলেছে। এটা ঠিক, ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে ৭-১ গোলে জার্মানির কাছে পর্যুদস্ত হওয়ার ক্ষত তাদের সইতে হয়েছিল। তবে সেই ভূত তারা ঘাড় থেকে নামানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। সম্প্রতি মিউনিখে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের তারা ১-০ গোলে পরাজিত করে বুঝিয়ে দিয়েছে এবার তারা আরও সতর্ক। এই ম্যাচে গোলদাতা গ্যাব্রিয়েল জেসাস। তবে গত বিশ্বকাপে খেলা আলিসন ও কুটিনহো নিজেদের আরও উন্নত করে তুলেছেন। শক্তিশালী এই ব্রাজিল দল সব রকমের কঠিন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।

মূল চালিকাশক্তিঃ নেইমার

ফেব্রুয়ারি মাসে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইনের হয়ে খেলার সময় পায়ে আঘাত পেয়ে দীর্ঘ কয়েক মাস মাঠের বাইরে চলে গেছিলেন। ২৬ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান ইতিমধ্যে দেশের হয়ে ৫৪টি গোল করেছেন। এবং ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা তিন খেলোয়াড় পেলে, রোমারিও ও রোনাল্ডোর কাছে চলে এসেছেন। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে অনবদ্য খেলে তাঁর প্রত্যাবর্তন ব্রাজিলের দর্শকদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে, তারা নিশ্চিন্ত নেইমার ফর্মে ফিরে এসেছেন। ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় যেভাবে গোল করেছেন তা সবাইকে মুগ্ধ করেছে।নেইমার যে দলের মূল চালিকাশক্তি তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে। এবারের বিশ্বকাপে তাই নেইমারের দিকে বিশেষভাবে নজর থাকবে।

কোচের মতামত

“ব্রাজিল বিশ্বকাপে ফেবারিট।ফুটবল প্রদর্শন, ফুটবল নিয়ে প্রচার, উৎসাহ, ক্রীড়াদক্ষতার স্তর এবং ফলাফল সব মিলিয়ে ব্রাজিল এক সম্পূর্ণ দল।হ্যাঁ, ব্রাজিল ট্রফি জয় করতে সক্ষম।” বলেছেন ব্রাজিল কোচ তিতে।

ফ্রান্স

ডিডিয়ার ডেসচ্যাম্পস তাঁর গোটা ফ্রান্স দল নিয়ে পৌঁছে গেছেন রাশিয়া। তাঁর দলে আছেন ২৩জন খেলোয়াড়।ব্যক্তিগত দক্ষতা সম্পন্ন একাধিক খেলোয়াড়ে তৈরি হয়ে আছে ফ্রান্স। এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পরেই তাদের ফেবারিট ধরা হচ্ছে। এই দলে আছে পোগবা, গ্রীজম্যান, এমবিঅ্যাপে এবং ডেম্বেলের মতো ফুটবলার। যারা একাই একটা ম্যাচের রঙ বদলে দিতে পারে।মনে করা হচ্ছে মারিও জাগালো এবং ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পর ডেসচ্যাম্পস হতে পারেন তৃতীয় ব্যক্তি। যিনি ফুটবলার ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের তৃপ্তি লাভ করতে পারেন।

মূল চালিকাশক্তিঃ অ্যান্টনি গ্রীজম্যান

উয়েফা ইউরো ২০১৬ ফাইনাল ফরাসিদের জন্য আবার উয়েফা ইউরো লীগ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের জন্য অসাধারণ। যেখানে গ্রীজম্যান নিজেকে বড় মঞ্চের জন্য দক্ষ প্রমাণ করেছেন। কৌশলী এবং বিপজ্জনক এই খেলোয়াড় আবারও তাঁর সতীর্থদের পাশে থেকে বিপক্ষের আক্রমণে ঝড় তুলবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

কোচের মতামত

“হ্যাঁ, আমাদের অনেক উচ্চাকাঙ্খা আছে। কিন্তু আমরা যদি অন্যান্য দেশের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে যে ইউরোপে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে জার্মানি ও স্পেন। দক্ষিণ আমেরিকায় ব্রাজিল।” বলেছেন ডিডিয়ার ডেসচ্যাম্পস

জার্মানি

বিশ্বকাপ ধরে রাখা অত্যন্ত কঠিন। ১৯৬২ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে যা তাদের কেউ চেষ্টা করেনি।তবে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে সেদিকে সতর্ক থেকেই মাঠে নামতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জার্মানি। ইতিমধ্যে তারাও পৌঁছে গেছে রাশিয়া। ২০১৭ সালে ফিফা কনফেডারেশন কাপ জিতে তারা নিজেদের স্কোয়াডকে তৈরি রেখেছে। যে দলে আছেন টিমো ওয়ার্নার, লিওন গোরেতজকা, জোশুয়া কিম্মিচের মতো তরুন প্রতিভারা।যাদের উপর নির্ভর করে এবারেও শেষ হাসি হাসতে পারে জার্মানি।

মূল চালিকাশক্তিঃ মিজাট ওজিল

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জার্মানির ওজিলের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে ক্লাব ও দেশ উভয় ক্ষেত্রে তাঁর অসঙ্গতিপূর্ণ পারফরম্যান্সের জন্য।যদিও তিনি এখনও একজন প্রতিভাবান ও সৃজনশীল খেলোয়াড় হিসেবে সারা বিশ্বে সমাদৃত। এবার যদি জার্মানিকে ট্রফি ধরে রাখতে হয় তবে দলের সাহায্যকারী রাজা হিসেবে ওজিলের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত নিয়ে আসতে হবে। তবেই জার্মানি এবারও বিশ্বকাপ নিজেদের দখলে রাখতে পারবে।

কোচের মতামত

“জার্মানি কখনোই আগের মতো শিকার করবে না এবং যদি আমরা আবারও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠতে চাই তবে সুপারহিউম্যানের মতো বাহিনীর প্রয়োজন হবে।” বলেছেন জোয়াকিম লো।

স্পেন

২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ উয়েফা ইউরো কাপে প্রত্যাশিত ফল করতে পারেনি স্পেন। তবু তারা হাল ছাড়েনি। ফুটবলে এক বড় শক্তি হিসেবে নিজেদের জাত চিনিয়েছে তারা। নতুনভাবে প্রস্তুতি নিয়ে তারা এবার রাশিয়া পা রেখেছে। ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে তাদের দলে যেসব হেভিওয়েট খেলোয়াড়রা নিজেদের প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের বেশ কিছু ভালো খেলোয়াড় যোগ দিয়েছে এবারের দলে। যাদের মিশ্রনে স্পেন এবার নতুন শক্তিতে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। যেখানে তারা জুলেন লপ্তেগুই-এর মতো কোচকে পেয়েছেন। এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিল, ফ্রান্স, জার্মানির পর তাদেরকেও ফেবারিট ধরা হয়েছে।

মূল চালিকাশক্তিঃ ডেভিড সিলভা

১০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। স্পেনের সোনালী প্রজন্মের একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হিসেবে সিলভা এক সহায়ক ভূমিকা পালন করে চলেছেন। ৩২ বছর বয়সী ম্যাঞ্চেস্টার সিটির হিরো সিলভা এবারের বিশ্বকাপে জুলেন লোপেটেগুয়ির পরিকল্পনাগুলিকে বাস্তবায়িত করতে তৈরি হয়ে আছেন। ম্যান সিটির হয়ে তাঁর পারফরম্যান্স এবার সকলের নজর কেড়েছে, যে ভূমিকা কাঁধে নিয়ে দলকে সেরা করেছেন তাতে উৎসাহিত বোধ করছেন কোচ লপ্তেগুই। দলও আশায় রয়েছে।

কোচের মতামত

“যখন আপনি জয়ী হন তখন আপনি ফেবারিট শিরোনামটি অর্জন করেন। স্পানিশ ফুটবল ২০০৮, ২০১০ এবং ২০১২ সালে এক অসাধারণ সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছে। কিন্তু তারপর দলটি আর ধারাবাহিকতা বা সাফল্য খুঁজে পায়নি। এবার আমরা বিশ্বকাপের অনুভূতি অনুভব করার পাশাপাশি নিজেদের প্রমাণ করতে চাই।” বলেন জুলেন লপ্তেগুই।

Published on: জুন ১১, ২০১৮ @ ২০:৩২

 

 

 

 

 

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + = 26