সংবাদদাতা- সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
Published on: ফেব্রু ৫, ২০১৮ @ ২২:৫০
এসপিটি নিউজ,বারুইপুর,৫ফেব্রুয়ারিঃ বাড়িতে ছেলে-বউ-বৃদ্ধা মা সকলেই আছেন। কিন্তু নেই শুধু তিনি। যার উপর গোটা সংসার নির্ভর করেছিল। নিয়তির এক নিষ্ঠুর পরিণামে অকালে নিভে গেল এক দক্ষ পুলিশ অফিসারের জীবনের বাতি। ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল সোনারপুর থানের সদা মিতভাষী সাব ইন্সপেক্টর রাজেশ দাস(৪২)-এর।মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে সোনারপুরের বারেন্দ্র পাড়ার মোড়ে।
ঘটন্য প্রকাশ, সোমবার সকাল পৌনে ৮টা। নরেন্দ্রপুর লাল গেটের কাছে ভাড়া বাড়ি থেকে বাইক নিয়ে রাজপুর রোড ধরে সোনারপুর থানার দিকে আসছিলেন রাজেশবাবু। পুলিশ জানায়, রাজপুরের দিক থেকে সোনারপুরের দিকে বেপরোয়া গতিতে আসছিল একটি খালি ট্রাক। সেটি সাব ইন্সপেক্টরের বাইককে ওভারটেক করে। এই সময় পিছন থেকে জোরাল গতিতে বাইকে ধাক্কা মারে ট্রাকটি। ফলে বাইক থেকে ছিটকে রাস্তার ডান দিকে পড়ে গেলে তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়।
পুলিশ বাইক টিকে উদ্ধার করেছে।কিন্তু ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানায়, সাব ইন্সপেক্টর বাইকে আসার সময় তার সামনে বেপরোয়া গতির ট্রাকটি একটি অটোকে ওভারটেক করে। এর পর সেই লরিকে ওভারটেক করে সাব ইন্সপেক্টরের বাইক। সেই সময় রাস্তা পার হতে গিয়ে বাইকের সামনে এক মহিলা এসে পড়ে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে জোরে বাইকের ব্রেক কষেন সাব ইন্সপেক্টর রাজেশবাবু। রাস্তা কুয়াশার জেরে পিছল থাকায় পড়ে যান ঐ পুলিশ অফিসার। তখন লরির পিছনের চাকা তার কোমরের উপর দিয়ে চলে যায়।
ঘাতক ট্রাকটিকে আটক করেছে সোনারপুর থানার পুলিশ। যদিও চালক আর খালাসি পলাতক। পুলিশ তাদের সন্ধানে জোরদার তল্লাশি শুরু করেছে।
পুলিশ জানায়, লরিটি বসিরহাটের সুস্মিতা এন্টার প্রাইজের ,লরি চালক যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে চম্পট দিয়েছে। মোবাইল ট্র্যাক করে তল্লাশি চলছে। ঘটনার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে আসে। জল দেয় আহত সাব ইন্সপেক্টরকে। তারাই সোনারপুর থানায় খবর দেয়। পুলিশ এসে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুভাষগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজেশবাবুর কোমরের হাড়সহ পা ও ডান হাত ভেঙে গিয়েছে। এমনকি মুখের থুতনিতে চোট দেখা গিয়েছে। তার মৃত্যুর খবর আসতেই শোকের ছায়া নেমে আসে সোনারপুর থানায় ও তার বন্ধু পরিজনদের মধ্যে।একে একে আসেন সোনারপুর-রাজপুর পুরসভার কাউন্সিলররা। আসেন বিধায়ক জীবন মুখোপাধ্যায়।
সাব ইনস্পেক্টরের মৃত্যুতে তার সহকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার দেহ আনা হয় সোনারপুর থানার তাদের থাকবার ঘরে। সেখানে মাল্যদান করেন বিধায়কসহ পরিজনরা।দেহ সুরতহাল করা হয়। পরে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়।
ময়নাতদন্তের পর দেহ সোনারপুর থানার সামনে নিয়ে আসা হলে সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে গান স্যালুট দেওয়া হয়। থানায় আসেন বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈকত ঘোষ।
পুলিশ সুত্রে খবর, রাজেশবাবু ৬-৭ বছরের বেশি সোনারপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। আগে এএসআই ছিলেন।দেড় বছর আগে তিনি সাব ইন্সপেক্টর হয়েছিলেন। দায়িত্বের প্রতি সর্বদা সচল ছিলেন মিতভাষী এই অফিসার।
তার বাড়ি নদিয়ার রানাঘাটে। তার এক ছেলে রোহিত দাস নবম শ্রেণিতে পাঠরত। আর স্ত্রী কৃতি দাস। আছেন বৃদ্ধা মা লক্ষ্মী রানি দাস। তার মৃত্যুর খবর পৌঁছে দেওয়া হয় পরিবারের কাছে।পরিবারে তার ছেলে আর স্ত্রী বিকালে গান স্যালুটের সময় থানায় এলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এই ঘটনায় বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈকত ঘোষ জানান, মর্মান্তিক এই ঘটনা।থানায় ডিউটিতে আসছিলেন রাজেশবাবু। পিচ্ছন থেকে ট্রাক ধাক্কা মারে বাইকে।তিনি পড়ে গেলে চাপা দিয়ে চলে যা। তবে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
Published on: ফেব্রু ৫, ২০১৮ @ ২২:৫০