
Published on: অক্টো ১১, ২০১৮ @ ২১:১৯
এসপিটি নিউজ, বারাকপুর, ১১ অক্টোবরঃ বড় আদর করে ছেলে-মেয়েদের মানুষ করেছিলেন। তারা আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে। অথচ বাবা-মা তাদের কাছে আজ “বোঝা” হয়েছে। তাই তাদের ঠাঁই দিয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। মা আসছেন। হয়তোবা কোথাও এসেও গেছেন। লাখ-কোটির মণ্ডপে “মা দুর্গা”র সামনে দাঁড়িয়ে সেইসব তথাকথিত ‘প্রতিষ্ঠিত’ ছেলে-মেয়েরা জোড় হাত করে বলবে ‘ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা নমস্তস্যই নমস্তস্যই নমস্তস্যই নম নমহঃ’-শুনতে বড় ভাল লাগে। কিন্তু গর্ভধারিণী মা-কে ‘অভুক্ত’-‘অবহেলিত’-‘অনাদর’-এ রেখে এমন লোকদেখানো “প্রার্থণা”র কি কোনও মূল্য আছে! বারাকপুর ভোলানন্দ বৃদ্ধাশ্রমে গেলে এমন অনেক মা-এর দেখা মিলবে। যাদের চোখের জল আর মনের কষ্ট পীড়া দিয়েছে বারাকপুরের সম্রাট তপাদারকে। যিনি সারা বছর ধরেই এই মানুষগুলির পাশে দাঁড়ান। আজও তার বতিক্রম ঘটেনি। ছেলের মতোই একজন হয়ে সম্রাট আজ এই মা-বাবা’দের হাতে পুজোর নতুন বস্ত্র তুলে দিয়ে এসেছেন।
কখনও পৌষ-পার্বন আবার কখনওবা নানা উৎসব সবেতেই এইসব বৃদ্ধ মা-বাবা’র সঙ্গে সময় কাটান সম্রাট। তাদের সুখ-দুঃখের নানা কাহিনি শোনেন। আর চোখ মোছেন। বড়ই করুন সেসব কাহিনি। আমাদের এই ভক্তি, আমাদের এই শ্রদ্ধা, আমাদের এই লৌকিকতা, আমাদের এই সামাজিকতা যে কতটা প্রসাধনী মূলক হয়ে উঠেছে তা বোঝা যায় এইসব বৃদ্ধ মা-বাবাদের বৃদ্ধাশ্রমে দেখলে।
কত কষ্ট করে একদিন মা-বাবা তাঁদের বড় আদরের সন্তানকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করে তোলেন। বড় করে তোলেন। ছেলের ভাল-মন্দ নিয়ে কত চিন্তাই না থাকে মায়ের। বাবা-মা সবসময় সন্তানের কেরিয়ার তৈরিতে বড় ভূমিকা নিয়ে থাকেন। একদিন সেই সন্তানের কাছেই মা-বাবা হয়ে ওঠেন এক ‘বিশাল বোঝা’। সেই সন্তান তার ছেলে-বউ নিয়ে সংসার করেন। কিন্তু বাবা-মা তার কাছে ‘চিন্তার’ কারণ হয়ে ওঠেন।এর মধ্যে যদি বাবা অথবা মা একজনও গত হন তো কথাই নেই।
ভোলানন্দ বৃদ্ধাশ্রমে এমন অনেক বাবা-মা-এর মুখোমুখি হয়ে সম্রাটের আজ মাথা লজ্জায় নত হয়ে গেছে। সম্রাট বলছিলেন-“এ লজ্জা আমাদের সকলের। আমাদের এই সমাজের। সন্তানদের। যারা বাবা-মা’কে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে রেখে দায়িত্ব সেরে চলেছে। তারা নিজেরাও জানে না, আজ যে কাজটা তারা তাদের মামা-বাবার সঙ্গে করেছে একদিন সেটাই আবার তদের দিকেও ফিরে আসবে। এই ব্যাধি দূর না করতে পারলে মহা সর্বনাশ।মণ্ডপের মা দুর্গাকে প্রণাম করার আগে যদি নিজের গর্ভধারিণী ‘মা দুর্গা’কে প্রণাম করে তাঁর মুখে হাসি ফোটাতে পারি সেটাই হবে আমাদের সকলের কাছে মহা দুর্গোৎসব।”
সত্যিই সম্রাটের এই ভাবনা যদি আজ মায়ের বোধনের আগে সকল সন্তান শপথ হিসেবে নেয় তবে তা হবে সমাজের পক্ষে মঙ্গল।
Published on: অক্টো ১১, ২০১৮ @ ২১:১৯