সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: এও যেন এক অসাধারণ প্রেম কাহিনি।সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে তারাপ্রসাদ আর সুমনের ভাল বন্ধু থেকে স্বামী-স্ত্রী হোয়ে ওঠার ঘটনা। পড়াশোনা করার সময় থেকেই দু’জনের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। মাঝে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও ফেসবুকের মাধ্যমে ফের সেই বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়। প্রেমে পরিণত হয় সেই বন্ধুত্ব। আজ সেই প্রেমই পরিণয়ের আকার নেয়।”যদিদং হ্রদয়ং মম” মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে মুক ও বধির তারাপদ আর সুমন বাধা পড়ল সাত পাঁকে।
আজ ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস যখন রাজ্য তথা দেশ জুড়ে বিভিন্নভাবে পালিত হয়েছে তখন দুর্গাপুরের আমরাই পুর্বাচল আবাসনে জন্ম থেকে মুক ও বধির তারাপ্রসাদ আর সুমন এর চার হাত এক হল।মাত্র কয়েক দিন আগে বীরভূমের পরে এবার দুর্গাপুর থানা এলাকার আমরাই পুর্বাচল আবাসনে।আর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে এই দুই মুক ও বধির পুরোহিতের সাথেই বললেন “যদিদং হ্রদয়ং মম”।প্রায় ৫০০ নিমন্ত্রিত অতিথির সামনে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণে মালাবদল থেকে সিঁদুর-দান সব সম্পন্ন হল।আর এই দুই মুক ও বধিরের বিবাহের স্বাক্ষী থাকল তাদের মতই প্রায় ৩০ জন মুক ও বধির বন্ধু।তারা সবাই যখন দুর্গাপুরের গান্ধী মোড়ে মুক ও বধির দের প্রশিক্ষন কেন্দ্রে পড়াশোনা করত তখন এরা সবাই নিজেদের সাথে যুক্ত হয়।মাঝে কিছুদিন সবাই বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে সোশ্যাল মিডিয়াতে ডেফ এন্ড ডাম গ্রুপ গড়ে তোলা।
তারপরেই বেনাচিতির বাসিন্দা সুমন প্রসাদ সাও এর সাথে ফের আবার বন্ধুত্বের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয় অন্ডাল থানা এলাকার দক্ষিণখণ্ডের বাসিন্দা তারাপ্রসাদ পালের।এরপরেই দু’জনের মনের ভাব বিনিময়।দু’জনেই বাড়িতে বলে একে ওপরের পছন্দের কথা।বাড়ির লোকেরাও খুশি হয়।তারপরেই দুই পরিবার সিদ্ধান্ত নেই তাদের বিবাহের জন্য।অবশেষে রবিবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস এর দিনেই দুই প্রতিবন্ধীর শুভদৃষ্টি থেকে সিঁদুরদান,মালাবদল সব কিছুই প্রথা মেনে সম্পন্ন হয়।আর এই বিবাহের স্বাক্ষী হয়ে থাকল মুক ও বধির নবদম্পত্তির প্রায় ৩০ জন মুক ও বধির বন্ধু-বান্ধবীরা।
বিবাহের শেষে সবাই আবার দ্বিপ্রাহরিক ভুরিভোজন সেরে নবদম্পত্তিকে আশীর্বাদ দিয়ে গেলেন।সত্যি, আবার গুলজারের সেই বিখ্যাত সিনেমা কোশিশ-এর রিয়্যাল রিমেক ৪৫ বছর পরে দেখা গেল দুর্গাপুরে।