বিদ্রোহী’ কবি কাজী নজরুলের দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ- কিভাবে, জানালেন শিবপ্রকাশ

দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

“শ্যামাপ্রসাদ সেদিন বলেছিলেন-‘নজরুলদা, তোমার ঋণের টাকা আমি শোধ করব।’ তিনি নিজের টাকা দিয়ে নজরুল ইসলামের ঋণ শোধ করেছিলেন।”

“সেইসময় ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে এসে তাঁকে দিয়ে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করিয়েছিলেন।”

“আজকে আমরা যদি আমাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-ইতিহাসকে রক্ষা করতে চাই এবং বিকৃত ইতিহাস দিয়ে তাকে মুছে ফেলতে না চাই তাহলে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির জন্য ফের আমাদের তার অবদানকে স্মরণ করতে হবে।”

সংবাদদাতা- অনিরুদ্ধ পাল

Published on: জুলা ১০, ২০১৯ @ ০০:১৪

এসপিটি নিউজ, নবদ্বীপ, ৯জুলাই: তিনদিন আগে দেশজুড়ে পালিত হয়ে গেল ভারত কেশরী ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন। আর সেই উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল নবদ্বীপে। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে হাজির ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক শিবপ্রকাশ। ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ ড. স্বপন দাশগুপ্ত, ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ড. অনির্বান গাঙ্গুলি, রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার সহ অনেকে। বক্তারা সকলেই শ্যামাপ্রসাদের বাংলার প্রতি তাঁর ভূমিকা এবং ভারতবর্ষের প্রতি তাঁর দায়িত্বের কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে তাঁরা আজকের বাংলায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে শ্যামাপ্রসাদের আদর্শের কথা তুলে তার উদাহরণ টেনে তৃণমূল শাসিত সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমনও করেন।

বিদ্রোহী কবির প্রতি শ্যামাপ্রসাদের দায়িত্বপরায়নতা

তবে সভায় সকল বক্তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বক্তব্য রাখেন বিজেপির সর্বভারতীয় সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক শিবপ্রকাশ। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যে আজও এ রাজ্যে অর্থাৎ নিজের জন্মভূমি বাংলাতে অবহেলিত এবং তাঁকে ‘মুসলিম বিরোধী’ বলে যে বারে বারে আক্রমণ করা হয় তা যে একেবারে ভ্রান্ত সেটাই নিজের বক্তব্যে একটি ঘটনার উদাহরণ টেনে শিবপ্রকাশ প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে ড. শ্যামাপ্রসাদ কখনোই ‘মুসলিম বিরোধী’ ছিলেন না। কারণ হিসেবে তিনি তুলে ধরেন ‘বিদ্রোহী কবি’ কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে শ্যামাপ্রসাদের একটি ঘটনার কথা। তিনি বলেন-“আপনারা বাংলার শ্রেষ্ঠতম কবি যাকে ‘বিদ্রোহী’ নামে সকলে চেনেন সেই কাজী নজরুল ইসলাম যখন ঋণের ভারে জর্জরিত তখন তাঁকে সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি। কেউ তাঁর পাশে এসে সেইসময় দাঁড়ায়নি। সেইদিন কিন্তু তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। তিনি বলেছিলেন-‘নজরুলদা, তোমার ঋণের টাকা আমি শোধ করব।’ তিনি নিজের টাকা দিয়ে নজরুল ইসলামের ঋণ শোধ করেছিলেন। শুধু এটুকুই ছিল না কাজী নজরুল ইসলাম যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সেইসময় মধুপুরের ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির যে বাসভবন ছিল সেখানে কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন। সেখানে থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন কবি। তাই কাজী নজরুল ইসলামের ঋণ শোধ থেকে শুরু করে তাঁর শারীরিক কুশলতার কথা চিন্তা করার মতো বাংলায় যদি সেইসময় কেউ থেকে থাকে তবে সেই মানুষটি হলেন ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। উনি ছিলেন আসলে সেবাপরায়ন।”

বাংলার পাশাপাশি হিন্দি ভাষার প্রতি ছিল সমান শ্রদ্ধা

এখানেই থেমে থাকেননি বিজেপির সর্বভারতীয় এই নেতা। শ্যামাপ্রসাদকে নিয়ে তাঁরা যে বেশ চর্চা করে থাকেন সেটা কিন্তু বোঝা গেল তাঁর এই ঘটনার অবতারনার মধ্য দিয়ে। যখন তিনি ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের শিক্ষা নিয়ে চিন্তাধারার বিষয়টি  বোঝাতে গিয়ে বলেন- সেইসময় ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে এসে তাঁকে দিয়ে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছেন বাংলা ভাষা মহান। কিন্তু যখন হিন্দির বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় তখন তিনি বলেছিলেন যে ৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশে যদি ১৫ শতংশ লোক হিন্দি ভাষা বলে তাহলে সব ভাষার সঙ্গে হিন্দি ভাষার প্রতিও সম্মান দেখানো উচিত। আমি একবার বাংলায় ভাষন করিয়েছি। বাংলা কোর্স চালু করেছি। বাংলায় গবেষনাও শুরু করেছি। দ্বিতীয়তঃ, হিন্দিকেও সমর্থন করি।”

এ কিসের লড়াই দিদির- প্রশ্ন শিবপ্রকাশের

এই কথার রেশ টেনে শিবপ্রকাশ এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করতে ছাড়েননি।তিনি বলেন- “কিন্তু আজ বাংলায় দিদি বাংলা-হিন্দির মধ্যে লড়াই চালু করার প্রয়াস করছেন? কাকে? না, ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে অপমান করে। আজ বাংলা-হিন্দির নাম বলে বাংলাদেশ থেকে লোক ডেকে এনে প্রচার করানো হচ্ছে। আর মুখে বাংলার কথা বলা হচ্ছে। এটা বাংলার বিষয় নয়। এ হল ক্ষমতার বিষয়। এ বাংলাকে ঠকানোর বিষয়।”

নেহেরুকে সেদিন মোক্ষম জবাব দিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ

পশ্চিমবঙ্গকে স্বাধীন ভারতের অঙ্গ রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ড. শ্যামাপ্রসাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে শিবপ্রকাশ বলেন-“উনি বাংলার বিভাজনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, নেহেরুজি তা মেনে নেননি। বরং নেহেরুজি ইংরেজদের সহমত করেছিলেন। কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় শেষে পশ্চিমবঙ্গকে বাঁচিয়েছিলেন।আর তখন শ্যামাপ্রসাদ বলেছিলেন নেহেরুকে যে ‘আপনি ভারতকে ভাগ করেছেন আর আমি বাংলাকে ভাগ করলাম।’ এমন নির্ভীক, এমন সাহসী এমন প্রত্যুৎপন্নমতি মানুষ যদি দেশে একজনও থাকে তবে তিনি হলেন ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি।

পশ্চিমবঙ্গের নাম কি বাংলা হবে?

আজ পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে এদিন সেই প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল শাসিত রাজ্য সরকারকে খোঁচা মারেন রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ ড. স্বপন দাশগুপ্ত। তিনি বলেন- “আজ একটা বড় চর্চা চলছে যে পশ্চিমবঙ্গ, এই রাজ্যটার কি নাম হবে? এটার নাম পশ্চিমবঙ্গ থাকবে, না বঙ্গ হবে না বাংলা হবে? না বাংলা প্রদেশ হবে। আমি সেদিন টিভিতে দেখছিলাম এটা নিয়ে বড় চর্চা চলছে। কেউ কেউ আবার এটা নিয়ে রাগও করছে। আমরা এটা পাশও করিয়েছি কেন্দ্র সরকার কেন মানছে না। কেন ধরে রাখছে যে এটার জন্য সংশোধনী করতে হবে? পশ্চিমবঙ্গ তো উড়ে এসে বসেনি একটা কারণ ছিল।”

“১৯৪৬ সালের নির্বাচনের পর এইটা মোটামুটি ঠিক হয়েছিল- যে প্রদেশে মুসলিম লিগরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে সেই প্রদেশগুলো পাকিস্তানে চলে যাবে। সেই প্রদেশগুলোর মধ্যে একটা প্রধান প্রদেশ ছিল বাংলা। সেই সময় ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি প্রথম যদিও পরে অনেকে এসেছিলেন যেখানে উনি প্রথম বলেছিলেন- ‘এটা আমরা হতে দেব না।’ এর জন্য দরকার বাংলার জন্য যদি বিভাজন করতে বলে সেটা করতে হবে। কারণ পাকিস্তান হলে আমরা যাকে হিন্দু সংস্কৃতি বলি যেটাকে আমরা বাঙালি সংস্কৃতি বলি সেইটা আর থাকবে না। আপনি চিন্তা করুন- নবদ্বীপ শহর এইটার কি অবস্থা হত যদি এটা ভারতবর্ষে না হয়ে পাকিস্তানে থাকতো। চিন্তা করুন আমার আর বেশি বলতে হবে না। আজকে আমরা যদি আমাদের ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতি আমাদের ইতিহাস এইটাকে রক্ষা করতে চাই মনে রাখইতে চাই এবং বিকৃত ইতিহাস দিয়ে এটাকে মুছে ফেলতে না চাই ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির জন্য আবার আমাদের মনে করতে হবে তার অবদানকে।” বলেন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত।

Published on: জুলা ১০, ২০১৯ @ ০০:১৪


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

41 + = 46