
সংবাদদাতা–কৃষ্ণা দাস
Published on: সেপ্টে ১২, ২০১৮ @ ২০:৩০
এসপিটি নিউজ, শিলিগুড়ি, ১২সেপ্টেম্বরঃ আর ক’দিন বাদেই বিশ্বকর্মা পুজো। আসছে শারোদৎসব। কিন্তু কোথায় যেন সব হারিয়ে গেল নিমেষে। শিলিগুড়ির শান্তিনগরের এই পরিবার আজ ছেলে হারানোর শোকে পাগল। মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে তারা সকলে। কয়েক সেকেন্ডের এক ভূকম্পনের আতঙ্ক। আর তাতেই সব ওলোট-পালোট করে দিয়ে গেল দাস পরিবারকে। ছিনিয়ে নিল তরতাজা এক যুবকের প্রাণ। বাবা-মাকে দেখতে হল ছেলের শ্মশানযাত্রা। কোথায় হল ভূকম্প। সে তো আসামের কোকড়াঝাড়ে। আর এখানে ছড়াল আতঙ্ক। তার মধ্যে প্রাণ চলে সম্রাট দাসের। এ ভূমিকম্প যেন হয়ে গেল শুধুমাত্র শান্তিনগরে তার বাড়িতেই, কেমন অদ্ভুত নয়!
আর কোথাও মৃত্যুর ঘটনা নেই। রাজ্যের সর্বত্র ঠিকঠাকই আছে।ক্ষয়ক্ষতির কোনও খবর পর্যন্ত নেই। এর মধ্যে ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে এল শান্তিনগরের এই বাড়িটিতে। ভূমিকম্পের খবর শোনা মাত্রই পোষ্য হ্যাপিকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামার সময় ঘটে যায় দুর্ঘটনা। পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান সম্রাট। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝড়তে থাকে। সেই অবস্থাতেই কলেজপাড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলেও স্থানান্তর করা হয় শিলিগুড়ির সেভক রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে যা ঘটার ঘটে গেছে।সম্রাটকে মৃত বলে ঘোষণা করে চিকিৎসকরা। মাথায় চোট পেয়েই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান।
এরপর সম্রাটের নিথর দেহ নিয়ে আসা হয় তাদের শান্তিনগরের বাড়িতে।দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট ছিল সম্রাট।তবে বাড়ির সকলের কাছে সে আদরের “গলু” নামেই পরিচিত ছিলেন। বরবারই তার কলা বিভাগ পছন্দ। শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে সেই মত উচ্চ শিক্ষায় বিএড করতে ঘরে বসে ডিসট্যান্সে পড়াশোনা করছিলেন এই যুবক। মুর্শিদাবাদের বিএড কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র ছি্লেন সম্রাট। পিতা অবসর প্রাপ্ত বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী। দাদা বিক্রম দাস একটি গাড়ির শো-রূমের ম্যানেজার। সম্রাট সারাদিন পড়াশুনা করত ও তার প্রিয় কুকুর হ্যাপিকে নিয়ে বেশিরভাগ সময়টা কাটাতেন। তার মাঝে বান্ধবীকে সময় দিতেও ভুলতেন না৷ সেই গলু আজ আর নেই। বাড়িতে নিয়ে আসা হল তাঁর নিথর দেহ।
গ্যারেজ ঘরের সামনে যখন তাঁর ব্যবহৃত কম্বলের ওপর মৃতদেহটি শুইয়ে দেওয়া হল, তখন বাইরে শয়ে শয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে। গলুর দেহের উপর তখন রেখে দেওয়া হয়েছে ঘর থেকে নিয়ে আসা তাঁর প্রিয় লাল নীল চেক শার্টটা। এই শার্টটাই যে বড় প্রিয় ছিল সবার আদরের প্রিয় গলুর। তাই সেটিকে তাঁর সঙ্গেই দিয়ে দেওয়া হল।
এভাবে আদরের গলু তাদের ছেড়ে চলে যাবে- তা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না তাঁর মা-বাবা। ছেলের মৃতদেহ জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছিলেন অসহায় মা। সত্যি, ভূমিকম্প যদি সেভাবে হতো তাও মনকে সায় দিতে পারতেন, কিন্তু এ যে তাদের ঘরেই ঘটে গিয়েছে ভয়াবহ এক ভূমিকম্প। যার মাশুল দিতে হল তাদের প্রিয় পুত্রের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ছেলের এমন বিদায় যে মেনে নেওয়া যায় না। কোনও বাবা-মা’-ই যে তা সহ্য করতে পারেন না। আর তাই ছেলের মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে অসহায় এক মায়ের আর্তি- “গলুরে তুই চলে গেলি রে। আমাকে ফেলে তুই চলে গেলি, সকাল থেকে কিছু না খেয়েই তুই আমাকে ছেড়ে চলে গেলি।” বড় অসহায় লাগছিল পুত্রহারা এই মাকে। শান্তিনগরের শান্তি যে আজ চলে গিয়েছে এক অকাল প্রয়াণে বহু দূরে। চোখের জল বাঁধ মানছিল না পুত্রহারা বাবারও। ছেলের শোকে তিনিও যে আজ দিশেহারা। গলা ভেঙে গিয়েছে।
সমানে কঁদে চলেছেন, আর বলে চলেছেন- “আমি আর কাকে গলু বলে ডাকব।”
Published on: সেপ্টে ১২, ২০১৮ @ ২০:৩০