সংবাদদাতা– বাপ্পা মন্ডল ছবি-বাপন ঘোষ
Published on: জানু ৪, ২০১৯ @ ২০:৫৪
এসপিটি নিউজ, মেদিনীপুর, ৪ জানুয়ারিঃ ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদি ভারতবাসীকে শুনিয়েছিলেন “আচ্ছে দিন”-এর কথা। কিন্তু তারপর সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করে-একের পর এক কেন্দ্রীয় সরকারের নানা সিদ্ধান্তে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাশুল দিতে হয়েছে নোটবন্দির সময়। মানুষ এক চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে নাকানিচোবানি খেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া সেইমানুষগুলি গত পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার কথা শুনতে পায়নি। ২০১৯ সালের প্রথম সপ্তাহে তারা শুনল যে এরকম এক প্রকল্প আছে- যাতে তারা ফ্রি-তে রান্নার গ্যাসের কানেকশন পেতে পারে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে ক্ষমতায় এসেই একের পর এক জনমুখী প্রকল্প কার্যকর করেই বসে থাকেননি সেগুলিকে হাতেনাতে করে দেখিয়েছেন- যার মধ্যে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথীর মতো একাধিক প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছেন রাজ্যের লক্ষাধিক মানুষ। সেখানে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের বিশেষ করে সেইসব ঘরের মা-বোনেদের কাঠের উনুনে রান্না করার কষ্টের কথা এতদিনে মালুম হয়ে তাদের ফ্রিত-তে রান্নার গ্যাসের কানেকশন দেওয়ার কথা মনে হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের-খেদ এই রাজ্যের শাসক দলের।
তপশিলি জাতি-উপজাতিদের জন্য বাড়ি বাড়ি গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এবার প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা প্রকল্প শুরু হতে চলেছে রাজ্যের জেলাগুলিতে। এলপিজি এই প্রকল্পের দায়িত্বে আছে। দ্বিতীয়ার্ধে তাদের টার্গেট তিন কোটি গ্রাহক।মেদিনীপুরে এক সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানিয়েছেন এলপিজি আধিকারিক ইন্দ্রনীল আগারওয়াল l তিনি জানান, ১লা জানুয়ারি ২০১৬সালে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায এক গ্রাহকের হাতে রান্নার গ্যাস প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয় প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার কাজ l
“মূলত এর উদ্দেশ্য ছিল সমাজের পিছিয়ে পড়া বিপিএল তালিকা ভুক্ত মানুষদের কাছে অতি সহজে গ্যাসের কানেকশন পৌঁছে দেওয়া, বিশেষ করে সেই সব মহিলারা যারা এখনও কাঠের উনুন-এর মাধ্যমে রান্না করে এবং বহু কষ্টে দিন যাপন করে l সেসব মা-বোনেদের সাহায্যের উদ্দেশ্যেই , তাদের কষ্ট লাঘব করার জন্যই এই উজ্জ্বলা যোজনা।প্রকল্পের টার্গেট ছিল ৫ কোটি গ্রাহক সংগ্রহ করা। তা পূর্ণ হয়েছে।” বলেন ইন্দ্রনীলবাবু।একথা জানিয়ে তিনি বলেন, এবার তাদের দ্বিতীয় পর্যায়ে লক্ষ্য- সমাজের তপশিলি জাতি-উপজাতিদের ফ্রি-তে রান্নার গ্যাসের কানেকশন দেওয়া।
কিন্তু একটি জায়গায় তাঁর বক্তব্যে কিন্তু প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। তিনি বলছেন- “সমাজের পিছিয়ে পড়া এবং বিভিন্নভাবে সমাজের বিভিন্ন রকম সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা l সমাজের বিশেষ প্রয়োজনে বিভিন্ন কাজ করে থাকে কিন্তু তারাই বঞ্চিত। খুব কষ্টে কাঠের উনুন জ্বালিয়ে দিন যাপন করে তাই তাদের সুবিধার্থে এইবার হাত বাড়িয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী l” তাঁর এই বক্তব্য কিন্তু প্রশ্ন তুলে দিল- তবে কি এ রাজ্যের তপশিলি জাতি-উপজাতি মানুষেরা সকলেই বঞ্চিত? তারা সকলেই খুব কষ্টে দিন যাপন করছেন? এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেসব প্রকল্প চালু করেছে এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা বছর ধরে যেভাবে তাদের পাশে থেকে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখছে্ন সেগুলি কি তবে কিছুই নয়? আর তপশিলি জাতি-উপজাতিরাই কি গরিব আর কেউ গরিব নেই। যদি এই পরিষেবা সত্যি শুধু মাত্র তপশিলি জাতি-উপজাতিদের জন্য হয়ে থাকে তাহলে রাজ্যের দিন আনা-দিন খাওয়া অসংখ্য গরিব মানুষগুলি আর কতদিন “আচ্ছে দিন”-এর অপেক্ষায় থাকবেন- প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।
“নির্ধারিত টার্গেট বা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ২০শে মার্চ ২০২০ l গ্রাহক সংখ্যা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩কোটি l বলা যায় যে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম এই দুই জেলা মিলিয়ে এই মুহূর্তে বেনেফিশিয়ারির সংখ্যা ৬লক্ষ ২৪ হাজার ২জন, যা টার্গেট এর প্রায় ৮০ শতাংশ পূর্ণ হয়ে গিয়েছে l” একথা জানিয়ে ইন্দ্রনীলবাবু বলেন- “এবারে তাদের যে প্রধানমন্ত্রী এলপিজি পঞ্চায়েত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তার মূল উদ্দেশ্যই হল- গ্রামে গ্রামে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে শিবির করে গ্যাসের কানেকশন তুলে দেওয়া l গ্যাসের কানেকশন এবং গ্যাসের দ্বারা রান্না করার সুবিধা সুবিধার কথা গ্রাহকদের মধ্যে তুলে ধরা এবং সচেতন করা l এই উদ্দেশ্যেই এই পর্যন্ত ১৪৪টি শিবির করা হয়েছে। এই প্রথম পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের কাছে অতি সহজে গ্যাসের কানেকশন পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হল, যার মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ অন্ত্যোদ্বয় যোজনা ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার গ্রাহকরা।”
এছাড়া পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ও অতি সহজে যাতে গ্যাসের কানেকশন পেতে পারেন তার জন্য আগামী দিনে তারা আরও এধরনের শিবির করবেন বলে জানান এই আধিকারিক ।
Published on: জানু ৪, ২০১৯ @ ২০:৫৪