সংবাদদাতা– ডা. সৌমিত্র পন্ডিত
- প্রাণীদের অর্থোপেডিক, ফ্র্যাকচার চিকিৎসা, ক্যান্সার গবেষণা, সামুদ্রিক শামুক থেকে জৈব পদার্থের গুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষকদের গবেষণার সাফল্য।
- প্রাণীর কানের কার্টিলেজ ব্যবহার করে নতুন শল্যচিকিৎসা করা
- দোহ বিজ্ঞান বিভাগের- ঘি, মাখন, খোয়া আরও নানা দোহজাত দ্রব্য পশ্চিমবঙ্গে সাড়া ফেলেছে
- মাছ উৎপাদন সহ রঙিন মাছের চাষ ও বিপননে মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগ সাড়া ফেলেছে।
- সমুদ্রের মধ্যে “আবদ্ধ পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ” নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
- মাছের রোগ নির্ণয় ও রোগ চিকিৎসা ও গবেষণা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
Published on: জানু ৪, ২০১৯ @ ২৩:০৭
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৪ জানুয়ারিঃ শুরু হয়েছিল একেবারে শূন্য অবস্থায়। আর আজ তা হয়ে উঠেছে ফুলে ও ফলে সমৃদ্ধ। এটা সম্ভব হয়েছে মাত্র ২৫ বছরেই। রজত জয়ন্তী বর্ষেই পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে যা ভারতবর্ষের শিক্ষাঙ্গনে এক অভূতপূর্ব সাফল্যের মুখ দেখেছে। তারা ইতিপূর্বে উপরের কয়েকটি বিষয়ে সাফল্যের মুখ দেখেছে। তবে সামনের দিনগুলিতে তারা এমন কিছু কাজ করতে চলেছে যা দেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠবে অত্যন্ত ফলপ্রসু। বলা যেতে পারে তা অভূতপূর্ব।
১৯৯৫ সালের ২রা জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে নবতম সংযোজন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় -নামে এক ‘মা’ যার সন্তান-সন্ততিরা বর্তমানে বিশ্বের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে রয়েছে- “মায়ের নামোজ্জ্বল” করছে। গত ২রা জানুয়ারি দিনটি তাই “রজত জয়ন্তী বর্ষ” হিসাবে পালন করা হল-বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলগাছিয়া ক্যাম্পাসের প্রেক্ষাগৃহে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য ডা. পূর্ণেন্দু বিশ্বাস অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে জানালেন-“গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সদস্য যেভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছে তার ফল স্বরূপ আগামিদিনে এই বিশ্ববিদ্যালয় ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করতে আর খুব বেশি দূরে নেই।” একই সঙ্গে তিনি বলেন-“আমরা গত ২৫ বছরে ভারতবর্ষে দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে অনেক কিছু করেছি- আরও কাজ করতে হবে।”
সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন-“বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রাণী হাসপাতাল বছরে ৩৬৫দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে- যা অন্য কোথাও আছে বলে জানা নেই, যার পুরোভাগে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম।এই প্রাণী হাসপাতাল থেকে বছরে ১ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু হয়েছিল। বর্তমানে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা আয় হচ্ছে, যা অবাক করার মতো। আমি আশাবাদী, আগামী কিছু সময়ের মধ্যে এটি ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এই সাফল্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলকে দেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন-“এই আয় থেকে অর্থ গবেষণার জন্য শিক্ষকদের দেবেন যা আগামিদিনে নতুন নতুন ভাবে প্রকল্প রূপায়ন ও বর্তমানে যার নবনিযুক্ত শিক্ষক রয়েছেন তাদের কাজ করার যাতে অসুবিধা না হয়। চারটি নতুন বিভাগ-এর সংযুক্তির সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ আগামী মার্চের মধ্যে শেষ করতে হবে।”
সুপার স্পেশালিটি প্রাণী হাসপাতাল
এসবের পাশাপাশি তিনি এদিন আরও এক বড় খবর দেন সকলকে। বলা যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে। যারা প্রাণী পোষেন কিংবা প্রাণী ভালোবাসেন সেইসব মানুষদের কাছে এটি নিঃসন্দেহে ভাল খবর। তিনি বলেন-“আগামী মার্চের মধ্যে রাজ্যে সুপার স্পেশালিটি প্রাণী হাসপাতাল, ডগ হস্টেল, ডগ ট্রেনিং সেন্টার, ডগ ব্রিডিং সেন্টার খুলে যাবে যেখানে অত্যাধুনিক যন্ত্র ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা থাকবে।”
আগামিদিনে যা করতে হবে
- নতুন করে কম্যিউনিটি সায়েন্স ফ্যাকাল্টি করতে হবে।
- ফিল্ড অরিয়েন্টেড সার্টিফিকেট কোর্স করতে হবে।
- গ্রামীণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী কোর্স চালু করতে হ।
- আরও ডিপ্লোমা কোর্স চালু করার দরকার।
- বিষয়ভিত্তিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনটি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র রয়েছে-জলপাইগুড়ি, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর ২৪ পরগনা। এই তিনটি জেলায় বিজ্ঞান সম্প্রসারণ দ্রুততার সঙ্গে এগোচ্ছে।আরও অনেক কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র রয়েছে এই বাংলায়। কিন্তু তাদের আমাদের এই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র অনেক এগিয়ে।গড়বেতায় ২৫ একর জমি সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছিল। আগামী কিছু সময়ের মধ্যে আরও একটা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র এখানে চালু হবে। বলেন উপাচার্য। লোধাশুলিতে ৩৪ একর জায়গায় এক্সটেনশন সেন্টার শুরু হবে খুব শীঘ্রই।উত্তরবঙ্গে একটি ভেটেরিনারি ও একটি মৎস্য বিজ্ঞান কলেজ স্থাপন করার প্রক্রিয়া চলছে। আগামী দু-এক বছরে তা হয়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্যের স্বাগত ভাষণে তাঁর এই সাফল্যের খতিয়ান প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত সকলের মনে সাড়া ফেলেছে। তবুও তিনি খুশি নন। কারণ, তিনি চান আরও একতা কাজ। আরও কর্মসংস্থান। আরও মানুষের-সমাজের-উন্নতি।
বক্তব্যের শেষে তিনি মঞ্চে উপস্থিত এদিনের মুখ্য অতিথি বেলুড়ের রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল এন্ড রিসার্চ ই্নস্টিটিউশন-এর উপাচার্য্য স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ এবং সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধ্যাপক গয়া প্রসাদ, সহ আরো বিশিষ্ট জনকে স্বাগত জানান।
Published on: জানু ৪, ২০১৯ @ ২৩:০৭