দৌলতাবাদে ১৪ ঘণ্টা বাদে তোলা সম্ভব হল অভিশপ্ত বাসটিকে, মৃত ৩৬, শনাক্ত ২১জনের দেহ

দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: জানু ২৯, ২০১৮ @ ১৭:১৮

এসপিটি নিউজ, দৌলতাবাদ, ২৯ জানুয়ারিঃভয়াবহ এক বাস দুর্ঘটনা ঘিরে রণক্ষত্রের চেহারা নিল মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদ।সোমবার সকালে নদিয়ার শিকারপুর থেকে মালদহ যাওয়ার পথে যাত্রীবোঝাই বাসটি সেতুতে রেলিং ভেঙে ৭০ ফুট নীচে বিলের জল পড়ে যায়। বাসটি বিলের জলে পলির মধ্যে গেঁথে যায়। বাসের ভিতর যাত্রীরা বাঁচার জন্য চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু তাদের মাত্র কয়েকজনকে স্থানীয় মানুষ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ঘটনার বহু সময় পর পুলিশ ও দমকল এলে ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ভাঙচুর করা হয় দমকলের গাড়িও। প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তারা। পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চার্য করে। এমনকী শুন্যে কয়েক রাউন্ড গুলিও চালায়।পুলিশের আগ্রাসী ভূমিকার পরেও কিন্তু স্থানীয় মানুষ তাদের কর্তব্য থেকে পিছু হটেনি। মুলত তাদের জন্যই কিন্তু উদ্ধার হয়েছে দশ জন। যাদের মধ্যে সাতজন পুরুষ ও তিনজন মহিলা। সকালে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। পরে এনডিআরএফ দল আরও ৩২টি মৃতদেহ উদ্ধার করে। ১৪ ঘণ্টা পর বিলের জলে ডুবে যাওয়া অভিশপ্ত বাসটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

ঘটনার খবর পেয়ে দৌলতাবাদে পোঁছে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন করিম্পুরের বিধাওয়ক মহুয়া মৈত্র। ঘটনাস্থলে ছিলেন মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার, জেলাশাসকও।জানা গেছে, বাসটি নদিয়া জেলার করিমপুর থেকে মালদহের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। সকাল সাতটা বেজে দশ মিনিট নাগাদ বাসটি দৌলতাবাদে বালিরঘাট সেতুর রেলিং ভেঙে সোনার রত্নাকর বিলের জলে পড়ে যায়।

ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধারের জন্য কাউকে দেখতে না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরাই নৌকা নিয়ে জলে নেমে পড়েন। তারা যখন নিজেদের চেষ্টায় দশ জনকে উদ্ধার করে ডাঙায় টেনে তোলার চেষ্টা করছে তার ঠিক দু’ঘণ্টা বাদে এসে পৌঁছয় পুলিশ ও দমক্ল বাহিনী। স্থানীয় উত্তেজিত বাসিন্দারা এই পরিস্থিতিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়তে শুরু করে। ভাঙচুর করে দমকলের গাড়িতে। আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের দুটি গাড়িতে।বাধ্য হয়ে পুলিশ শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়।

ঘটনাস্থলে আসার আগেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা, গুরুতর আহতদের এক লক্ষ টাকা ও অন্যান্য আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।ঘটনাস্থলে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন ভেঙে যাওয়া রেলিং যেন দ্রুত সংস্কার করা হয়।এমনকী, এদিন বহরমপুর সার্কিট হাউসে বসে উদ্ধারকার্যের বিষয়টি তদারকি করেন। উদ্ধার যাতে তাড়াতাড়ি হয় সেদিকে ঞ্জর রাখতে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের নির্দেশ দেন।ঘটনাস্থলে ছিলেন মুর্শিদাবাদের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সৌমিক হোসেনও।

স্থানীয় মানুষদের প্রশ্ন, দুর্ঘটনা ঘটল কিভাবে?

উদ্ধার হওয়া বাসের এক যাত্রীর কথায়, সেতু দিয়ে বাস চালানোর সময় বাস চালককে মোবাইলে ফোন করতে দেখা গিয়েছিল। সে এক হাতে মোবাইল ফোন কানে দিয়ে কথা বলছিল আর এক হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সামনে একটি ট্রাক ছিল।রাস্তায় তখন কুয়াশা। ঐ অবস্থায় ট্রাকটিকে ওভারট্রেক করতে গিয়েই বালিঘাট সেতুর রেলিং ভেঙে ৭০ ফুট উপর থেকে নীচে গিয়ে পড়ে। যদিও পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, সামনের ট্রাকটিকে বাঁচাতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন।

ডোমকল হাসপাতালে ভর্তি মৌমিতা মণ্ডল বলছিলেন তাঁর সেই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার কথা। তাঁর কথায়-“আমি যে বেঁচে আছি, বিশ্বাসই করতে পারছি না।” সিটে বসে কানে হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনছিলাম।হঠাৎ গানের আওয়াজ ছাপিয়ে বিকট আওয়াজে কেঁপে ঊঠল। চোখ বন্ধ করে গান শুনছিলাম।ঐ প্রাণঘাতী শব্দে চোখের পাতা খুলে গেল। দেখতে পেলাম শূন্যে ভাসছি। তারপর জলের ভিতর পড়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। সাঁতার জানতাম বলে রক্ষে। সমানে হাত-পা ছুঁড়ছিলাম।অনুভব করলাম কারা আমার হাত-পা ধরে টেনে বের করার চেষ্টা করছে। তারপর তো এখন আমি ডোমকল হাসপাতালে।

রাত পর্যন্ত ২১ জনের দেহ শনাক্ত হয়েছে। তাঁরা হলেন,

১)বিকাশ বিশ্বাস

২)প্রদ্যুৎ চৌধুরী

৩)জয়শ্রী চ্যাটার্জী

৪)মিনতি মিত্র

৫)শুভব্রত মিত্র

৬)বিভাষ কর্মকার

৭)সাফিন বিন রহমান

৮)সৌমিত্র নন্দী

৯)রিপন শেখ

১০)ফারু শেখ

১১)মণিরুল ইসলাম

১২)জানু শাহ

১৩)পার্বতী হালদার

১৪)কৃষ্ণদাস চক্রবর্তী

১৫)পৃথ্বিরাজ নন্দী

১৬)সুফিয়া খাতুন

১৭)তমন্না ইয়াসমিন

১৮)মোজাম্মেল মন্ডল

১৯)ছায়ারানী মাহাত

২০)সুজয় মজুমদার

২১) মলয় বিশ্বাস        

ছবি সৌজন্যে ফেসবুক ও আনন্দবাজার


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 + = 10