‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে বিজেপির সমালোচনা করে খোলা চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

দেশ ধর্ম রাজ্য লোকসভা ভোট 2019
শেয়ার করুন

“আমি রাজ্য তথা দেশের সমস্ত মানুষের কাছে আবেদন করছি যে তারা যেন এই ঘৃনার রাজনীতির উচিত জবাব দেন সেই সঙ্গে আমাদের দেশের মহান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সম্মান করেন। আসুন, আমরা সকলে নিজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করি।” -মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ

Published on: জুন ২, ২০১৯ @ ২২:৪৪

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২জুন: লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে শুরু হয়েছে। আর এখন তো সেটা রীতিমতো একটা ইস্যু হয়ে উঠেছে। ‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে রাজ্য তথা দেশের রাজনীতি এখন তোলপাড়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপি অভিযোগ করেছে যে তিনি এই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ধ্বনি সহ্য করতে পারছেন না। আর তাই তিনি এই স্লোগান দেওয়া মানুষদের উপর লাঠি চার্জ করাচ্ছেন এবং পুলিশ দিয়ে আটক করাচ্ছেন।

এরই মধ্যে বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ আবার মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন- “এবার ওনার বাড়িতে ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা ১০ লক্ষ কার্ড পৌঁছবে। দেখি উনি কতজনকে গ্রেফতার করেন।” এরপর আজ নিজের ফেসবুক পেজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে নিজের মতামত পরিষ্কার করেছেন।আর সেখানে তিনি বলতে চেয়েছেনহ- ‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে তাঁর কোনও সমস্যা নেই। তবে কোনও একটি ধর্মের স্লোগানকে এভাবে রাজনীতিকরন করে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করাটা তিনি মেনে নিতে পারছেন না। তাই তিনি একটি খোলা চিঠি লিখে মানুষকে এর বিরোধিতা করার আবেদন রেখেছেন। সংবাদ প্রভাকর টাইমস সেই খোলা চিঠি তুলে ধরল আপনাদের সামনে।

“আমি জনসাধারণকে এই কথা বলতে চাই যে বিজেপির কিছু সমর্থক মিডিয়ার একাংশকে কাজে লাগিয়ে ঘৃণার বিচারধারা জারি করার চেষ্টা করতে চাইছে। তথাকথিত বিজেপি মিডিয়া তথা জালি ভিডিও, জালি খবর মিথ্যা খবর অপপ্রচার করে গোলমালের সৃষ্টি তথা সত্য এবং বাস্তবিকতাকে ঢাকতে চাইছে। মিডিয়া যে ভাবে প্রচার করছে এবং প্রশ্ন তুলছে, আমার কোনও সমস্যা নেই ‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে কারণ এটা ওদের পছন্দ এবং ওদের বিচারধারা।

রামমোহন রায় থেকে শুরু করে বিদ্যাসাগর তথা অন্য মহান সমাজ সংস্কারকদের সময় বাংলা মেলবন্ধন, উন্নতি ও দূরদর্শিতার আবহ তৈরি হয়েছে। কিন্তু আজ বিজেপি বিকৃত বিচারধারা যুক্ত কপটতার আশ্রয় নিয়ে বাংলাকে বড় রকমের এক নেতিবাচক লক্ষ্য করেছে।

আমার কোনো রাজনৈতিক দলের সমাবেশ এবং তাদের তৈরি স্লোগান নিয়ে কোন সমস্যা নেই। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব স্লোগান আছে। আমার দলের স্লোগান- ‘জয় হিন্দ, বন্দেমাতরম’, বামেদের ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’। তেমনই অন্য দলেরও আলাদা আলাদা স্লোগান আছে। আমরা একে অপরকে সম্মান করি।

জয় সিয়া রাম, জয় রাম জি কি,  রাম নাম সত্য, ইত্যাদি স্লোগানগুলির ধার্মিক ও সামাজিক অর্থ আছে। আমরা এই অনুভূতিকে সম্মান করি। কিন্তু বিজেপি ধর্মীয় স্লোগান,-‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানকে নিজেদের পার্টির স্লোগান করেছে, এর ফলে ধর্ম এবং রাজনীতি এক সঙ্গে মিলে গেছে। আমরা অন্যের অত্যাচারিত রাজনীতির স্লোগানগুলির তথাকথিত আরএসএস দ্বারা অন্যের উপর জোর পূর্ব্বক চাপিয়ে দেওয়াটায় রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না, যা বাংলা কোনওদিনই স্বীকৃতি দেয়নি। এটা ইচ্ছাকৃতভাবে ভণ্ডামি ও সহিংসতার মাধ্যমে ঘৃণার মতাদর্শ বিক্রি করার মতো, যা আমাদের সকলকে একত্রে এর বিরোধিতা করতে হবে।

কিছু লোক কখনও কখনও কিছু সময়ের জন্য কিছু লোককে বিভ্রান্ত করতে পারে তবে সব মানুষ আজীবন সকলকে বিভ্রান্ত করতে পারে না।

জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য ধর্মের তথাকথিত নাম ভুল পথে চালিত মতাদর্শের আশ্রয় নিয়ে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা ও স্বাভাবিক জীবনে বিঘ্ন সৃষ্টি না করার জন্য রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতিহত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে। যদি অন্য সকল রাজনৈতিক দল এ ধরনের বিভক্তকারী এবং বিভ্রান্তিকর ক্রিয়াকলাপের অবলম্বন নিতে শুরু করে তবে সমগ্র পরিবেশ খুব খারাপ এবং বিপর্যয়কর হয়ে উঠবে।

আমাদের বিজেপির এই ধরনের গতিবিধির বিরোধিতা করা উচিত এবং আমরা অবশ্যই তা করব যাতে আমাদের সংবিধানে প্রতিষ্ঠিত দেশ তার ধর্ম নিরপেক্ষ বিশেষত্ব অক্ষুন্ন রাখতে পারে।

আমি রাজ্য তথা দেশের সমস্ত মানুষের কাছে আবেদন করছি যে তারা যেন এই ঘৃনার রাজনীতির উচিত জবাব দেন সেই সঙ্গে আমাদের দেশের মহান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সম্মান করেন। আসুন, আমরা সকলে নিজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করি।

জয় হিন্দ, জয় বাংলা।”

Published on: জুন ২, ২০১৯ @ ২২:৪৪


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + 1 =