চাঞ্চল্য নাকি চমক ! ভারতী ঘোষের বাড়িতে আচমকা সিআইডি হানা, গ্রেফতার বেলদার ওসি, উদ্ধার ১৫ কেজি সোনা

এসপিটি এক্সক্লুসিভ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল

Published on: ফেব্রু ২, ২০১৮ @ ১৫:৫৫

এসপিটি নিউজ, মেদিনীপুর, ২ ফেব্রুয়ারিঃ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ার লক্ষ্যে এক ধাপ পা বাড়াল রাজ্য স্বরাস্ট্র দফতর। এমনটাই বলছে প্রশাসন। তারই প্রথম পদক্ষেপ অনুসারে এক বড় ধরনের অভিযান চালায় সিআইডি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ সহ ছয়জন ওসির বাসভবনে রাতভর বিশেষ তল্লাশি অভিযান চালানো হয়।এই তল্লাশি অভিযানে বেলদা থানার ওসি প্রদীপ রথ-কে তোলাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।তার বাড়ি থেকে ১৫ কেজি সোনা সহ প্রচুর হিসাব বহির্ভূত নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে।

সম্প্রতি রাজ্য প্রশাসনের কাছে মেদিনীপুরের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছিলেন, প্রাক্তন এসপি ভারতী ঘোষ সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের ছ’জন পুলিশ আধিকারিক তার কাছ থেকে তোলা তুলতেন। না দিলে বিশেষ কেস দেওয়ারও হুমকি দিতেন। বাধ্য হয়ে তিনি তা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই তোলাবাজি এখনও অব্যাহত। এই অবস্থায় তিনি তাই ওই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে যথাযথ জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সেই অভিযোগ পাওয়ার পরই কলকাতা থেকে সিআইডি বড় একটি টিম নিয়ে হাজির হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তারা রাতভর তল্লাশি অভিযান চালায়। এজন্য তারা আলাদা আলাদা দলে ভাগ হয়ে এক এক দিকে চলে যান। প্রথমে তারা রাতে প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এরপর একে একে তারা বেলদা থানার ওসি প্রদীপ রথ, মোহনপুর থানার ওসি রাজশেখর, কেশিয়াড়ি থানার ওসি চিত্ত পাল, পুলিশ লাইনে থাকা গড়বেতা থানার প্রাক্তন ওসি হীরক বিশ্বাসের বাড়িতেও তল্লাশি চালায়।

তবে উল্লেখযোগ্য খবর হল, বেলদা থানার ওসি প্রদীপ রথের বাড়ি থেকে সিআইডি ১৫ কেজি মতো সোনা, প্রচুর নগদ টাকা উদ্ধার করে।প্রদীপবাবুর বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, তিনি নাকি নোটবন্দির সময় সোনার বদলে দ্বিগুন টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলেন বেশ স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে।এই অভিযোগের সত্যতা কতটুকু তা নিয়ে সিআইডি তদন্ত শুরু করেছে। তবে যেহেতু তার বাড়ি থেকে হিসাব বহির্ভূত টাকা ও ১৪ কেজি সোনা উদ্ধার হয়েছে তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সিআইডি জানিয়েছে।

রাজ্য প্রশাসন যদিও জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বচ্ছ প্রশাসন নীতিকে সামনে রেখেই এই অভিযান করা হয়েছে। তিনি বার বার বলছেন দুর্নীতি মুক্ত স্বচ্ছ প্রশাসন।দুর্নীতির থেকে কেউ মুক্ত হবে না। সে যেই হোন না কেন।

যদিও এই অভিযান নিয়ে শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক তরজা। কেউ কেউ বলছেন, এটা আসলে পসচিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপার আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে রাজনোইতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার একটা ধাপ মাত্র। এর পর আরও অনেক কিছু বাকি আছে।

তাদের অভিযোগ, একজন আইপিএস অফিসার একসময় মুখ্যমন্ত্রীর এত প্রিয় ছিলেন। তাকে নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগও কম ছিল না। তা হঠাৎ এমন কি ঘটে গেল যে তাকে শুধু সরিয়ে দেওয়াই নয়, তাকে বদলি করে দেওয়া হল একেবারে পুলিশ ট্রেনিং কলেজে। যেটা আইপিএস অফিসারদের কাছে পানিশমেন্ট পোস্টিং ছাড়া আর কিছুই নয়।বাধ্য হয়ে ভারতী ঘোষ সেই পদে যোগ না দিয়ে কার্যত রাজ্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন।েরপর তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন।

রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের অভিযোগ, সেই আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ যদি এতই দুর্নীতি পরায়ন পুলিশ অফিসার হবেন আর তা ঘনিষ্ঠ জেলার থানাগুলির ঐ ওসিরা তোলাবাজ হবেন তাহলে এতদিন কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না?আর যে বা যেসব ব্যবসায়ী এতগুলি পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে এতবড় সাঙ্ঘাতিক ধরনের অভিযোগ তুললেন তিনি বা তারা কি এতদিন নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন? এই প্রশ্নগুলি কিন্তু উঠে আসছে। তাই ভারতী ঘোষের বাড়িতে সিআইডি হানা, বেলদা থানার ওসি গ্রেফতারের ঘটনায় চাঞল্যের থেকেও কিন্তু চমকটাই বেশি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Published on: ফেব্রু ২, ২০১৮ @ ১৫:৫৫


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

95 − 86 =