কলকাতায় শুরু হতে চলেছে আন্তর্জাতিক পোলট্রি মেলা, বিশেষ আকর্ষণ ‘স্টুডেন্ট এডুকেশন জোন’

Main দেশ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: ফেব্রু ৭, ২০২৩ @ ২৩:৫৩
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৭ ফেব্রুয়ারি: আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কলকাতায় সায়েন্স সিটি গ্রাউন্ডে শুরু হতে চলেছে নবম আন্তর্জাতিক পোলট্রি মেলা।এই মেলাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে পোলট্রি ফার্মার্সদের মধ্যে উৎসাহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। এওবারের মেলায় বিশেষ আকর্ষণ হিসাবে থাকছে ‘স্টুডেন্ট এডুকেশন জোন’। সম্ভবত এই প্রথম কলকাতায় এ ধরনের ব্যবাসায়িক মেলা প্রাঙ্গনে কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়ে এ ধরনের এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন আয়োজকরা। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ ডিম উৎপাদনে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে, যা এর আগে ছিল ১৪-১৬ স্থান। জানিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশন-এর সাধারণ সম্পাদক মদন মোহন মাইতি।

মঙ্গলবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক পোলট্রি মেলার সুচনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান ওয়েস্ট বেঙ্গ, পোলট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদন মোহন মাইতি। ফেডারেশনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন- ওয়েস্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশন একটি সংস্থা যা সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এক সঙ্গে কাজ করে। যেহেতু বাংলা ও পূর্ব ভারতের মানুষ ডিম ও মাংস খাবারের পছন্দের তালিকায় থাকে তাই এই মাংস ও ডিমের উৎপাদন বাড়িয়ে তাদের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিগত আটটি পোলট্রি ফেয়ারের ন্যায় এবছরও কলকাতায় সায়েন্স সিটি গ্রাউন্ডে পোলট্রি ফেয়ারের আয়োজন করেছি।

নভোটেল হোটেলে ‘নোভাকন’

৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার নভোটেল হোটেলে সারা দিন ধরে একটি টেকনিক্যাল সেশন থাকবে, যার নাম দেওয়া হয়েছে- ‘নোভাকন’। অনেক বিজ্ঞানী আমাদের দেশের ডাক্তারবাবুরা এবং পোলট্রি ফার্মাররা উপস্থিত থাকবেন। কি করে অ্যাডভান্স পোলট্রি করা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। পোলট্রি শিল্পে জ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রচারের জন্য এই বিশেষ সম্মেলনের আয়োজন বলে জানিয়েছেন মদনমোহনবাবু।

৯ তারিখ ১০টার সময় নবম পোলট্রি মেলার উদ্বোধন

৯ তারিখ ১০টার সময় নবম পোলট্রি মেলার উদ্বোধন হবে। এই মেলা আগামি তিন দিন অর্থাৎ ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।প্রতি বছর পোলট্রির যে উন্নতি হচ্ছে টেকলোজিকাল যে আপগ্রেডেশন হচ্ছে তা দেখার জন্য পোলট্রি মেলার আয়োজন করা হয়। সারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমাদের বিশ্বাস আগামী তিনদিনে ৪০ হাজার পোলট্রি ফার্মার শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, আরও ১৪টি রাজ্য ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, আসাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয় থেকে উপস্থিত হবেন। তারা আমাদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছেন। তারা উন্নতমানের পোলট্রি করার ব্যবস্থা এখান থেকে শিখবেন।যোগ করেন মদনমোহনবাবু।এছাড়াও এই মেলায় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রখ্যাত পোলট্রি ব্যক্তিত্ব, প্রযুক্তিবিদ বক্তা ও পোলট্রি উৎপাদক সহ প্রতিবেশী দেশগুলি, যেমন- বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, নাইজেরিয়া, মায়নামারসহ আরও অনেক দেশ এই মেলায় অংশ নিতে চলেছে।

পোলট্রি মেলার উদ্দেশ্য

এই পোলট্রি মেলার উদ্দেশ্য- যারা এ রাজ্যে পোলট্রি করেছেন বা যারা পোলট্রি করতে চান তাদের অ্যাডভান্স টেকনোলজি , পোলট্রি ইকুইপমেন্ট, পোলট্রি হাউজিং, পোলট্রি ম্যানেজমেন্ট, পোলট্রি ভ্যাকসিনেশন, পোলট্রি মেডিকেশন এই সম্পর্কিত সমস্ত ধরনের স্টল থাকবে। তার থেকে তারা তাদের জ্ঞান সংগ্রহ করতে পারবেন। পোলট্রি ফেয়ার হল পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রির একটা শোকেস।এই মেলার মূল ভাবনা- এই রাজ্যে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি সহ অন্যান্য রাজ্যগুলিতে পোলট্রি উৎপাদন ও শিল্পের উন্নয়ন।

ডিম ও মাংস উৎপাদনের রাজ্যের অবস্থা

বর্তমানে রাজ্যে পোলট্রির অবস্থা ও ডিম উৎপাদন নিয়ে এক তথ্য তুলে ধরেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদন মোহন মাইতি। তিনি বলেন- “ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশনে যখন থেকে আমরা কাজ শুরু করি তখন ৩৪ শতাংশ বয়লার কিট উতপাদন হত। এবং দুই দিকে পাঁচ শতাংশ জীব উতপাদন হত। এই প্রয়োজনের মাত্রা আগামী ১০ বছরে প্রায় দেড় গুনের বেশি বৃদ্ধি হবার পরেও আমরা এখনও আমাদের রাজ্যের প্রয়োজনের ১৩০ শতাংশ মুরগি উৎপাদন করি। বাকি ৩০ শতাংশ আসাম, বিহার , ঝাড়খণ্ডে পাঠাই।“

আগামী এক-দু’বছরের মধ্যেই রাজ্যকে স্বয়ং-সম্পূর্ণ করাই লক্ষ্য ফেডারেশনের

“মুরগি, চিকেন ছাড়াও আমাদের রাজ্যে ডিমের উৎপাদন সেই দুই পাঁচ শতাংশ থেকে বেড়ে আজ ৭০-৭৫ শতাংশ হয়েছে। বাকি সব দক্ষিণ ভারত থেকে আসে। আমরা আশাবাদী পশ্চিমবঙ্গ সরকারও আশাবাদী তারা আমাদের সব রকম সাহায্য করেন। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আমরা আশাবাদী যে আগামী এক-দু’বছরের মধ্যেই আমাদের রাজ্যকে স্বয়ং-সম্পূর্ণ করবো।”বলেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।

পোলট্রি শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিই অন্যতম লক্ষ্য ফেডারেশনের

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদন মোহন মাইতি বলেন- আমাদের রাজ্যের উপর দিয়ে ন’টি রাজ্যে চার কোটি ডিম যায়। রাজ্যের প্রয়োজন মিটিয়ে ওই চার কোটি ডিম উৎপদনের কথাও আমরা ভাবছি। আমরা যখন এই সংগঠন তৈরি করি তখন আমাদের রাজ্যে কর্মসংস্থানের সংখ্যা ছিল দেড় থেকে দুই লাখেরও বেশি। এখন আমাদের এমপ্লয়মেন্ট ২৭ লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আগামী পাঁচ-সাত বছরে আমাদের রাজ্যের এমপ্লয়মেন্টকে ৫০ লাখে পৌঁছে দিয়ে পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিকে প্রতিটি কোনায় কোনায় ছড়িয়ে দিতে চাই। এর উদ্দেশ্য একটাই- আমাদের রাজ্যের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে চিকেন ও ডিম উতপাদন করা। সস্তাতেও উৎপাদন করা।

পোলট্রিকে কর্মসংস্থানের আধার হিসেবে তারা গ্রহণ করুক

এবারের আন্তর্জাতি পোলট্রি মেলার অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ- স্টুডেন্ট এডুকেশন জোন। এর আগে এমন ধরনের মেলায় স্টুডেন্টদের জন্য এমন জোন হয়নি। এবার ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশন এমনই এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে। মদনমোহনবাবু বলেন- এই মেলায় এবার থাকছে স্টুডেন্ট এডুকেশন জোন। আমরা চাই যেসইব ছাত্র-ছাত্রীরা এখন পড়াশুনো করছে তারা আমাদের স্টুডেন্ট এডুকেশন জোনে এসে পোলট্রি সম্পর্কের শিক্ষা গ্রহণ করুক। পোলট্রিকে কর্মসংস্থানের আধার হিসেবে তারা গ্রহণ করুক। এই উদ্দেশ্যেই পোলট্রি এডুএকেশন জোন। আমরা আশা করছি, প্রথম দিনে ১০-১৫ হাজার পোলট্রি ফার্মার এসে হাজির হবেন। পোলট্রি ফার্মের সংখ্যা পাঁচ লাখেরো বেশি।

পোলট্রি উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ এখন পাঁচ নম্বরে

সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর এক প্রশ্নের উত্তরে মদন মোহনবাবু বলেন-  পোলট্রি উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ এখন পাঁচ নম্বরে। ২০০৯-১০ সালে ১৪-১৫ নম্বরে ছিলাম। আমরা পোলট্রি ফেডারেশন প্রথম দিন থেকে পোলট্রি উৎপাদন থেকে শুরু করে জমি বাছাই থেকে শুরু করে তারা কিভাবে ব্যাঙ্ক ঋণ পাবে তারা কিভাবে পোলট্রি ম্যানেজমেন্ট করবে, কিভাবে মার্কেটিং করবে সব রকমভাবে সহায়তা দিয়ে থাকি। তাই আমাদের রাজ্যে এত বেশি পোলট্রির গ্রোথ হয়েছে। গত ১০ বছরে আমাদের রাজ্যে পোলট্রি গ্রোথের শক্তকরা হার যা তা ভারতের কোনও রাজ্যেই হয়নি।

ডিমের দাম বাড়ার কারণ

ডিমের দাম কারণ জানান  মদন মোহনবাবু। তিনি বলেন- মুরগির খাদ্যের ৪০ শতাংশ আমাদের রাজ্যে তৈরি হয়। বাকি ৬০ শতাংশ অন্য রাজ্য থেকে আনতে হয়।২০১৯-২০ সালের মুরগির খাদ্যের কাঁচা মালের যে দাম ছিল সেই নিরীখে এখন ৮৮ শতাংশ গ্রোথ হচ্ছে। আনন্দের কথা পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কৃষি দফতর আমাদের সঙ্গে এই ব্যাপারে বহুবার মিটিং করেছে অনেক গ্রোথ হয়েছে। আর উন্নয়নের কথা বলতে চাই। আমরা ধন্যবাদ জানাবো পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। ২০১০-১১ সালে যেখানে ০.৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হত আজ সেখানে ২.৬ মিলিয়ন ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে। যা আমাদের দেশে খুব কাজে লেগেছে। আমাদের প্রয়োজন পাঁচ মিলিয়ন মেট্রিক টন। আমারা আশাবাদী। আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে আমাদের প্রয়োজনীয় এগ্রিকালচার তারা তৈরি করে ফেলবে।

পোলট্রি সংগঠনগুলিকে একত্রিত করার চেষ্টা

“আমরা উত্তর-পূর্বাঞ্চল সহ আশপাশের রাজ্যগুলির পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে আলোচনা করি, কিভাবে পোলট্রি শিল্পকে আরও লাভজনক উন্নত করা যায়। এই জন্য আমরা ইস্টার্ণ ইন্ডিয়া পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট ফোরাম গঠন করেছি। আমরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন পোলট্রি সংগঠনগুলিকে একত্রিত করার চেষ্টা করেছি,” বলে জানান মদন মোহনবাবু।

Published on: ফেব্রু ৭, ২০২৩ @ ২৩:৫৩


শেয়ার করুন