রণক্ষেত্র কেশপুরঃ আক্রান্ত ভারতী ঘোষ, গুলিবিদ্ধ তৃণমূ্ল কর্মী, বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর

দেশ রাজ্য লোকসভা ভোট 2019
শেয়ার করুন

  1. বুথের বাইরে ধ্বস্তাধ্বস্তিতে পড়ে গিয়ে চোট পেলেন ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ।
  2. দোগাছিয়াতে নিরাপত্তা রক্ষীর গুলি। গুলিবিদ্ধ তৃণমূল কর্মী।
  3. বুথের ভিতর ভিডিওগ্রাফী করার জন্য ভারতীর বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ কমিশনের।
  4. বৈধ কাগজ দেখাতে না পারায় কেশপুরে ভারতীর গাড়ি আটক করল পুলিশ।

 সংবাদদাতা-বাপ্পা মন্ডল

Published on: মে ১২, ২০১৯ @ ১২:১৪

এসপিটি নিউজ, কেশপুর, ১২মে: আজ সকালে ভোট শুরু হতেই রণক্ষেত্র কেশপুর।ভোট লুঠের খবর, এজেন্ট বসতে না দেওয়ার অভিযোগ পেয়েই সেখানে ছুটে যান ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ। তারপরই উত্তাল হয়ে ওঠে ঘটনাস্থল।সেখানে আক্রান্ত হন বিজেপি প্রার্থী।এরপর বুথের ভিতর ভিডিওগ্রাফী করে কমিশনের কোপের মুখে পড়েন বিজেপি প্রার্থী।পরে এই কেশপুরেই দোগাছিয়াতে নিরাপত্তা রক্ষীর গুলিতে জখম হয়েছেন এক তৃণমূল কর্মী।ইতিমধ্যে বুথে ঢুকে ভিডিওগ্রাফী করার জন্য জেলাশাসককে ভারতীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এজেন্টকে ঢুকতে বাধা তৃণমূলের

1) বিজেপির এজেন্ট বসতে না দেওয়া নিয়ে সেখানে ছুটে যান বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ। ঘটনাস্থলে গিয়ে দলের এজেন্টকে বুথে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় মহিলাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। সেইসব বিক্ষোরত মহিলারা নিউজ চ্যানেলের ক্যামেরার সামনে সাফ জানিয়ে দেন তারা তৃণমূলের সমর্থক। তারা ভারতী ঘোষকে বুথে ঢুকতেই দেবেন না। বসতে দেবেন না বিজেপির এজেন্টকেও। এরপর বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীরাই কর্ডন করে বিজেপির এজেন্টকে বুথের ভিতর নিয়ে যাচ্ছিল।

বিজেপির এজেন্টকে দেখেই সেখানে জড়ো হয়ে যায় স্থানীয় মহিলারা। তারা নিজেদের তৃণমূলের সমর্থকবলে দাবি করে বিজেপি এজেন্টকে বুথে ঢুকতে বাধা দেন। তারা বলতে থাকেন – আমরা ওই এজেন্টকে বুথে ঢুকতে দেব না। সেখানে উপস্থিত পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে থাকলেও পরিস্থিতি জটিল আকার নিতে থাকায় ভারতীর সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীরা সেইসময় সেই এজেন্টকে নিয়ে ঢুকতে গেলে তৃণমূলের মহিলা সমর্থকদের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয়ে যায়। এইসময় ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে যান ভারতী ঘোষ। তাঁর পায়ে চোট লাগে।

বুথে ঢুকে ক্যামেরায় ছবি তুলে বিতর্কে ভারতী

2) এরপর তিনি বুথে ঢুকে মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলতে শুরু করেন।তা নিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়. প্রিসাইডিং অফিসারও বুথের ভিতর ছবি তোলায় আপত্তি জানান। এখান থেকে বেরোনোর সময় ভারতীর ঘোষের কাছে ফোনে খবর আসে কেশপুরের আরও একটি বুথ দোগাছিয়ায় ভোট লুঠ হচ্ছে। এই খবর পেয়েই সেখানে ছোটেন তিনি। কিন্তু সেখানে পৌঁছতেই ফের তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। সংবাদ মাধ্যমের বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।

আক্রান্ত নিরাপত্তা রক্ষী

3) এখানে বিজেপি প্রার্থীকে ঘিরে ফেলে যখন বিক্ষোভ চরমে পৌঁছয় তখন সেখানে তাঁর সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীরা ভারতীকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে এক নিরাপত্তা রক্ষী ইটের ঘায়ে আক্রান্ত হন। তাঁর মাথায় চোট লাগে। রক্ত ঝরতে থাকে। তাঁকে চটজলদি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি আয়ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে শেষ পর্যন্ত উত্তেজিত মারমুখী জনতাকে আটকাতে শূন্যে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে নিরাপত্তা রক্ষীদের বিরুদ্ধে।

চলল গুলিও, আক্রান্ত তৃণমূল কর্মী

4) তৃণমূলের অভিযোগ- ভারতী ঘোষের নির্দেশেই নিরাপত্তা রক্ষীরা গুলি চালায়। আর সেই সময় একটি গুলি এসে লাগে এক তৃণমূল কর্মী বখতিয়ার খানের হাতে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময় তৃণমূল কর্মীরা ভারতীকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে।তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, বিজেপি প্রার্থী শান্তিপূর্ণ এলাকায় ঢুকে অশান্তি লাগাচ্ছে।যদিও নিরাপত্তা রক্ষীরা জানায় প্রার্থীকে রক্ষা করতে গিয়ে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে গেছিল তা থেকে বের করে আনতে তারা শুন্যে গুলি চালায়।

গাড়ি আটক করতেই মন্দিরে অবস্থান ভারতীর

5) এরই মধ্যে বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের গাড়ি আটক করে কেশপুর থানার পুলিশ।পুলিশ জানিয়েছে, উনি গাড়ির বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। কাগজ দেখালেই গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হবে। গাড়ি আটকে দেওয়ায় ভারতী ঘোষকে স্থানীয় এক মন্দিরে অবস্থানে বসে থাকতে দেখা যায়।তিনি বলেন, ‘গাড়ির বৈধ কাগজের জন্য আমি তো নির্বাচন কমিশনে আবেদন জানিয়েছিলাম। তারা তো অনমতিপত্র পাঠাননি। না পাঠালে আমি কি করতে পারি। আসলে ওরা চাইছে এভাবে আমার গাড়ি আটক করে থানায় নিয়ে যাবে। যাতে করে আমি আর কোথাও না যেতে পারি।’

ভারতীর প্রতিক্রিয়া

6) নির্বাচন কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার প্রসঙ্গে ভারতী ঘোষ বলেন- সকাল থেকে এত কিছু হয়ে গেলে। আমার এজেন্টকে বুথে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। স্থানীয় মহিলারা বুথে ঢুকতে দেবে না বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। আমার গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এসব কিছুই নির্বাচন কমিশনের চোখে পড়ছে না।

দেবের প্রতিক্রিয়া

7) ঘাটালের তৃণমূলের প্রার্থী দেব অধিকারী বলেন, “উনি সব জায়গায় গিয়ে অশান্তি পাকাচ্ছেন। টাকা সহ ওনার গাড়ি আটক করা হয়। আজ উনি ১৫টা গাড়ির কনভয় নিয়ে এক এক জায়গায় গিয়ে অশান্তি ছড়াচ্ছেন।তৃণমূল কর্মীরা এত দিন একটা কথা বলেনি। উনি উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক নিয়ে আসার হুমকি দিয়েছেন। আমি চাই শান্তিতেই ভোট হোক।”

Published on: মে ১২, ২০১৯ @ ১২:১৪


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 1 = 4