আমরা মাথা নোয়াইনি, বাংলাদেশের মানুষ পেরেছে- পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে এসে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

Main বাংলাদেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

Published on: জুন ২৫, ২০২২ @ ২১:৫১

এসপিটি নিউজ, ঢাকা, ২৫ জুন:  আজ বাংলাদেশে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন করতে এসে তিনি বিরোধীদের নাম না করে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন।বলেন- একদিন তারা ক্ষমতায় এসে সেতুর নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা বলেন- এসব স্বপ্ন। এ কখনোই সম্ভব নয়। তারা দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ করেছিল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমাদের দাবায়ে রাখতে পারেনি। আমরা মাথা নোয়াইনি। বাংলাদেশের মানুষের টাকায় এই সেতু নির্মাণ হয়েছে। আমি স্যালুট জানাই বাংলাদেশবাসীকে। বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

“বাংলাদেশের ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে আমরা দাঁড়িয়ে আছি”

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন- “বাংলাদেশের ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের এই বাংলাদেশ। যার নেতৃত্বে আমরা দেশের স্বাধীনতা পেয়েছি বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বের স্বীকৃতি পেয়েছি আমাদের নেতা সর্বকাল্র শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানকে জানাই আমার শ্রদ্ধা।”

কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

“আপনারা জানেন, যখন সেতুটি নির্মাণ করতে যাই তখন অনেক ষড়যন্ত্র করা হয়। মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে কিভাবে এক একটি মানুষ এক একটি পরিবারকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে সেই যন্ত্রণা ভোগ করেছিল আমার ছোট বোন শেখ রেহানা। শত বাধা সত্ত্বেও যারা সেদিন আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল তাদের প্রতি জানাই আমার কৃতজ্ঞতা।”

এ সেতু আমাদের অহংকার-হাসিনা

“অনেক বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমরা এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। এই সেতু শুধু একটি সেতু নয়- এই সেতু দু’পাশের শুধু বন্ধন সৃষ্টি করছে তা নয়, এই সেতু শুধু ইট, সিমেন্ট, লোহার কংক্রিটের একতা অবকাঠামো নয়। এ সেতু আমাদের অহংকার। এ সেতু আমাদের গর্ব। এ সেতু আমাদের সফলতার আমাদের মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ। আমাদের সৃজনশীলতা। সাহসিকতা। সহনশীলতা। এবং আমাদের প্রত্যয়। যা আমরা এই সেতু তৈরি করবোই। সেই জেদ, সেই প্রত্যয়।”

৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি

হাসিনা বলেন- “সেতুটি নির্মাণ করতে দুই বছর বিলম্ব হয়। কিন্তু আমরা কখনো হতোদ্যম হয়নি। হতাশায় ভুগিনি। আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলেছি। এবং শেষ পর্যন্ত সকল অন্ধকার ভেদ করে আলোর পথে আমরা যাত্রা করতে সক্ষম হয়েছি। আজকে পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, হলুদ, সবুজ, বেগুনি আলোর ঝলকানি। ৪২টি স্তম্ভ। এই স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন- কেউ দাবায় রাখতে পারবা না

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন- কেউ দাবায় রাখতে পারবা না। কেউ দাবায় রাখতে পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি। তারুণ্যের কবি সুকান্তের ভাষায় তাই বলতে চাই- ‘সাবাশ বাংলাদেশ…এ পৃথিবী মাথা নোয়াবার নয়।’ আমরা মাথা নোয়াইনি। আমরা মাথা নোয়াবো নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কখনও মাথা নোয়াইনি। তিনি আমাদের মাথা নোয়াতে শেখান নাই। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি জীবনের জয়গান গেয়েছিলেন। বাংলার মানুষের মুক্তি চেয়েছিলেন, স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। তাঁরই নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরন করেই আজ বিশ্বে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।বলেন হাসিনা।

৩ মাসের সংগ্রাম, ৯ মাসের যুদ্ধ বিজয়ের মধ্য দিয়ে এই বাংলাদেশের সৃষ্টি

তিনি বলতে থাকেন- “আমাদের বাংলাদেশের মানুষের জন্য ২৩ মাসের সংগ্রাম, ৯ মাসের যুদ্ধ বিজয়ের মধ্য দিয়ে এই বাংলাদেশের সৃষ্টি। তাঁর ডাকেই সাড়া দিয়ে এ দেশের মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়ে বিজয় এনে দিয়েছিল। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা জাপানে গিয়েছিলেন। জাপানের কাছে অনুরোধ করেছিলেন, আমাদের জন্য পদ্মায় সেতু করে দেওয়ার। যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মানের যে পদক্ষেপ তিনি নিয়েছিলেন জাপান সরকার তা নিয়ে পর্যালোচনা করে । তারপর তারা উদ্যোগ নেয়। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হতা করে অবৈধভাবে যে ক্ষমতায় আসে তারা সেতুর কাজ বন্ধ কর দেয়।”

যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ

“যাক, আমাদের সৌভাগ্য, ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করি। তখন আমরা যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করি। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন সেই সেতু উদ্বোধন করেছিলাম। সেই সেতুতে রেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোজন করেই আমরা সেতুটি নির্মাণ করি।”

৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি

’৯৭ সালে আমি জাপান সফরে যাই। জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম- আমার বাবা চেয়েছিলেন আপনারা যমুনা সেতু করে দিয়েছিলেন। রূপসা অর্থাৎ খুলনা-বাগেরহাট সেতু সংযোগ এবং পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে চাই। আমি জানি পদ্মা অত্যন্ত খরস্রোতা একটি নদী।কাজেই সেই সেতুতে সেতু করা যথেষ্ট কঠিন। জাপান এই বিষয়ে স্টাডি করা শুরু করে এবং রূপসা নদীতে সেতু নির্মাণ করে দেয়। এই পদ্মা নদীর যে স্টাডি হয় ২০০১ সালে সেই রিপোর্ট আমাদের দেয়। তারই ভিত্তিতে আমরা প্রথম ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি।বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

“২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এসেছিল। এই সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়ে জাপানকে আবার স্টাডি করতে বলে। মানিকগঞ্জের আইজা থেকে দৌলতিয়া পর্যন্ত। জাপান একই রিপোর্ট দেয়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য পাওয়া থেকে সেতুটি নির্মাণ হলে সব থেকে কার্যকর হবে। এই মতামতের পর বিএনপি আর কাজই করেনি।”

আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নি

“আমরা আবার ক্ষমতায় আসি ২০০৯ সালে। আমরা আবার সিদ্ধান্ত নি যে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। ক্ষমতায় আসার ২২ দিনের মধ্যে আমরা সেতু নির্মাণের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নি। অনেক পরামর্শের পর যখন দেখছি কিভাবে অর্থ সংগ্রহ হবে তখন বিশ্ব ব্যাঙ্ক এগিয়ে আসে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে একটা পর্যায়ে এটা আমাদের কাছে লজ্জার যে আমাদের দেশের এক স্বনামধন্য ব্যক্তি তিনি একটি ব্যাঙ্কের এমডি ছিলেন। যেহেতু নির্দিষ্ট বয়স পেড়িয়ে যাবার পরেও ওই পদে থাকতে পারেন না অর্থাৎ তাঁর বয়স ৭০ হয়ে গিয়েছে তখন সেই পদ থেকে তাকে সরে যেতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক তাকে বলেছিল যে আপনি তো এভাবে থাকতে পারেন না। তাকে উপদেষ্টা করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ক্ষেপে যান। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নরের বিরুদ্ধে, অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলায় তিনি হেরে যান।।”

কানাডা আদালতে রায় দিল বিশ্ব ব্যাঙ্কের আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা

“এরপর আমরা দেখলাম আমাদের অর্থ বন্ধ করে দিল। দুর্নীতির অভিযোগ এনে। যখন আমরা চ্যালেঙজ জানালাম যে পদ্মা সেতু নিয়ে কোনও দুর্নীতি আমরা করিনি। এজন্য আমাদের অনেক লড়াই করতে হয়েছে। কানাডা আদালতে রায় দিল বিশ্ব ব্যাঙ্কের আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। তারপর বিশ্ব ব্যাঙ্ক অবশ্য থেমে যায়।” বলেন হাসিনা।

‘ঘোষণা করেছিলাম- পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করবো’

তিনি বলেন-“বাংলাদেশ আমাদের দেশ। এদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা এটাকে আমরা দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি। যখন সব প্রতিষ্ঠান সরে দাঁড়াল আমি তখন পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলাম- পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করবো, নিজের অর্থায়নে করবো। এই ঘোষনার পর আমার দেশবাসী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সারা পেয়েছিলাম। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ”

আমি মনে তাদেরও এবার আত্মবিশ্বাস বাড়বে-হাসিনা

হাসিনা বলেন- “অনেকের ধারণা ছিল, বাংলাদেশ চিরকাল পরনির্ভরশীল থাকবে আর অন্যের দয়ায় চলতে হবে। জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে। সেই লক্ষ্যেই আমরা এগিয়ে চলেছি। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের মানুষকে। সেইদিন আমার আশেই শুধু দাঁড়ায়নি অর্থ পর্যন্ত দিয়েছিলেন। একদিন যারা বলেছিল আমাদের ক্ষমতা নেই। আমরা পারবো না। এসব স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। যাই হোক আমার কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। তাদের হয়তো চিন্তায় দৈন্যতা আছে। আত্মবিশ্বাসের দৈন্যতা আছে। আজ থেকে আমি মনে তাদেরও এবার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তারা এবার জানবে যে বাংলাদেশ পারে।”

আমাদের অর্থনীতি স্থবির হয়নি, সচল আছে

স্বাধীনতার পর বিদেশি এক সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন- আপনাদের কোনও সম্পদ নেই, কি দিয়ে এ দেশ গড়বেন? জাতির পিতা সেদিন বলেছিলেন- আমার মাটি আছে, মানুষ। মাটি আর মানুষ দিয়েই এই দেশ গড়বো। আজকের পদ্মা সেতু কিন্তু সেই মানুষের সহযোগিতায় করতে পেরেছি। আমাদের অর্থনীতি স্থবির হয়নি। সচল আছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ, আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ আমার সাহসের ঠিকানা। তাই বাংলাদেশের জনগণকে আমি স্যালুট জানাই। বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Published on: জুন ২৫, ২০২২ @ ২১:৫১


শেয়ার করুন