TOURISM-এ কেন তারা ভারত সেরা TTF KOLKAT 2019-এ তারই প্রমাণ দিয়ে গেল RAJASTHAN

এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

২০১৮ সালে এখনও পর্যন্ত রাজস্থানে বিদেশি পর্যটক এসেছেন ১৭.৫৪ লক্ষ।

ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৫০২.৩৬ লক্ষ।

বিশ্বের সেরা দশটি বিলাসবহুল ট্রেনের মধ্যে ‘প্যালেস অন হুইলস’ (POW) অন্যতম।এই ট্রেনে সফরের সময় সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল।এই ট্রেনে চেপেই ঘুরে দেখে নিতে পারেন রাজস্থানের সেরা পর্যটন কেন্দ্রগুলি।

সংবাদদাতা- অনিরুদ্ধ পাল

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৯ জুলাইভারতে পর্যটনের মানচিত্রে রাজস্থান কেন সবার উপরে সেকথার প্রমাণ দিয়ে গেল TTF KOLKATA 2019-এ রাজস্থান পর্যটন দফতর। কিভাবে পর্যটনকে রাজ্যের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম প্রধান মাধ্যম করে তোলা যায় কিভাবে রাজ্যের অতি সাধারণ এক একটা উৎসবকে বিদেশের সামনে তুলে ধরা সঠিক প্যাকেজিং-এর মাধ্যমে , কিভাবে রাজ্যের সংস্কৃতিকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পর্যটনের ব্যবসায় জড়িয়ে দেওয়া যায়, কিভাবে পর্যটনের প্রতি আগ্রহ গরে তুলতে অন্য রাজ্যের মানুষদের কাছে টেনে নেওয়া যায় এর সব চেয়ে বড় উদাহরণ হয়ে রইল এবারের ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম ফেয়ার। এক কথায় রাজস্থান অনবদ্য-অসাধারণ-অপূর্ব।

কি বললেন রাজস্থানের টুরিজম-এর ডেপুটি ডিরেক্টর

সম্প্রতি শেষ হয়েছে TTF KOLKATA 2019. যেখানে নজর কেড়েছে রাজস্থান। পশ্চিমবঙ্গের পর্যটকদের টানতে তারা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের কনফারেন্স হলে আয়োজন করেছিল এক অভিনব রোডশো। রাজস্থান পর্যটন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর দলীপ সিং রাঠোর স্লাইড শোয়ের মাধ্যমে তুলে ধরলেন রাজস্থানের পর্যটনের সমস্ত কিছু। তিনি প্রথমেই জানালেন-“সোনার কেল্লা, গুপি গায়েন বাঘা বায়েন ছবির শ্যুটিং হয়েছে রাজস্থানে। সেই সূত্রে রাজস্থানের বাংলার সঙ্গে একটা যোগসূত্র আগে থেকেই আছে। রাজস্থান ভারতের একটি বড় রাজ্য।এক অসাধারণ বৈচিত্র্যময় স্থান হল রাজস্থান। জয়পুর রাজস্থানের রাজধানী শহর। খুব সুন্দর শহর। খুবই ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। সড়ক, রেল, আকাশ সব দিক দিয়ে। উত্তর-দক্ষিণ,-পূর্ব-পশ্চিম সব দিক দিয়ে রাজস্থানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। এখানে আছে কালারফুল আর্ট এন্ড ক্র্যাফট, সাংস্কৃতিক মেলা ও উৎসব, অসাধারণ খাবারের জায়গা, নাচ ও গান, হ্রদ ও ঝর্না, বন্যপ্রাণঃ বাঘ, পরিযায়ী পাখি, ঐতিহ্যবাহী দূর্গ, প্রাসাদ ও মন্দির, বিলাসবহুল ট্রেন, রঙিন ও চোখধাঁধানো মরুভূমি।”

এক নজরে রাজস্থানের পরিসংখ্যান

এবার আসা যাক রাজস্থান পর্যটনের পরিসংখ্যানে। সেই পরিসংখ্যান কি বলছে। যেখানে বলা হয়েছে ২০১৮ সালে এখনও পর্যন্ত রাজস্থানে বিদেশি পর্যটক এসেছেন ১৭.৫৪ লক্ষ। আর ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৫০২.৩৬ লক্ষ। এই রাজ্যে জিডিপি রেট এখন পর্যন্ত ১৪.০২ শতাংশ। চলতি বছরের ৩১শে মার্চ পর্যন্ত রাজস্থানের ক্লাসিফায়েড হোটেলের সংখ্যা ৩২৯৬টি।মোট কক্ষের সংখ্যা ৬৫,৯০২টি। আগামী দিনের জন্য ইতিমধ্যে ১৬৭টি নতুন হোটেল রাজস্থান সরকার অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে।

দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে গত ৯ বছরে রাজস্থানে

রাজস্থান সরকার পর্যটন নিয়ে সত্যিই গুরুত্ব দিয়ে ভাবনা-চিন্তা করে সে্টা উঠে এল এই রোড শোয়ে তাদের পর্যটন নিয়ে গত ৯ বছরের পরিসংখ্যানের উপর। আমি জানি না ভারতে অন্য কোনও রাজ্যের কাছে তাদের গত ৯ বছরের এমন তথ্য তারা তুলে ধরতে পারবে কিনা! এই তথ্য বলছে রাজস্থানে বিদেশি পর্যটকদের আগমন ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে ২০১১ সালে ১১.১২ লক্ষ, ২০১২ সালে ১৪.৫১ লক্ষ, ২০১৩ সালে ১৪.৩৭ লক্ষ, ২০১৪ সালে ১৫.২৬ লক্ষ, ২০১৫ সালে ১৪.৭৫ লক্ষ, ২০১৬ সালে ১৫.১৪  লক্ষ, ২০১৭ সালে ১৬.১০ লক্ষ, ২০১৮ সালে ১৭.৫৪ লক্ষ, ২০১৯ সালে শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৬.৩৯ লক্ষ পর্যটক ভ্রমণ করেছেন।

ঠিক সেভাবে দেশের পর্যটকদের আগমনেরও একটা পরিসংখ্যান তারা দিয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে ২০১১ সালে ২৭৩.৩৭ লক্ষ, ২০১২ সালে ২০৮.১২ লক্ষ, ২০১৩ সালে ৩০২.৪৫ লক্ষ, ২০১৪ সালে ৩৩০.৭৬ লক্ষ, ২০১৫ সালে ৩৫১.৮৮ লক্ষ, ২০১৬ সালে ৪১৪.৯৫ লক্ষ, ২০১৭ সালে ৪৫৯.১৭ লক্ষ এবং ২০১৯ সালে জুন মাসের আগে পর্যন্ত ১১৮.৬৯ লক্ষ পর্যটক ভ্রমণ করেছে।

পর্যটনের বিপুর সম্ভারে পরিপূর্ণ রাজস্থান

ট্যুরিজম প্রোডাক্টস অর্থাৎ পর্যটন পন্যের বিপুল সম্ভারে পরিপূর্ণ রাজস্থান। সেখানে যা আছে দূর্গ, প্রাসাদ, হাভেলি এবং স্টেপওয়েলস। আছে সাতটি স্মৃতিসৌধ এবং একটি প্রাকৃতিক দিক এবং জয়পুর- পিঙ্ক সিটি । সম্প্রতি এই শহর ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে স্থান করে নিয়েছে ‘প্রাচীরের শহর’ হিসেবে। রাজস্থানে ছড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী একাধিক হোটেল।হ্রদ, ঝর্না এবং বন্যপ্রাণ। এই রাজস্থানেই আছে রণথম্বোর ন্যাশনাল পার্ক- যা দেখার জন্য গোটা বিশ্ব থেকে বহু পর্যটক আসে প্রতি বছর। এখানেই হয় টাইগার সাফারি।ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফির জন্য রণথম্বোর খুবই জনপ্রিয়। আছে বিলাসবহুল ট্রেন। আছে জনপ্রিয় ধর্মীয় স্থান- যার মধ্যে আছে রানী সতী, বালাজী, জয়পুরে গোবিন্দজীর মন্দির, জৈন মন্দির সহ একাধিক স্থান আছে যেখানে ধর্মীয় ক্ষেত্র হিসেবে খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। এছাড়াও আছে কালারফুল লিভিং ট্র্যাডিশন- যেখানে এখানে ন’টি উৎসব হয়। আছে মেলা এবং উৎসব, লোক নৃত্য এবং লোক সঙ্গীত।

বিলাসবহুল ট্রেন

বিশ্বের সেরা দশটি বিলাসবহুল ট্রেনের মধ্যে ‘প্যালেস অন হুইলস’ (POW) অন্যতম।এই ট্রেনে সফরের সময় সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল।এই ট্রেনগুলিতে দিল্লি থেকে সফর করে আপনি ঘুরে দেখতে পারেন রাজস্থানের জয়পুর, সয়াই মধুপুর, চিতোরগড়, উদয়পুর, জয়শলমীর, যোধপুর, ভরতপুর। দিল্লি ফেরার আগে দেখে নেওয়ার সুযোগ পাবেন আগ্রা। তাহলে আর দেরী কেন আজই টিকিট কেটে ফেলুন।

পর্যটনে বাড়তি আকর্ষণ মেলা ও উৎসব

আপনি কি রাজস্থান ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানিং করছেন তাহলে এই সময়গুলি মাথায় রেখে টিকিট বুক করুন তা সে ট্রেন কিংবা বিমান যাই হোক না কেন। এই সময়গুলিতে ভ্রমণ করলে আপনি আপনার পরিজনদের নিয়ে রাজস্থানের প্রসিদ্ধ মেলা ও উৎসবের সাক্ষী থাকতে পারবেন। রাজস্থান ভ্রমণে পূর্ণ হবে আপনার ষো্লো কলা।

উট উৎসব-১১-১২ জানুয়ারি ২০২০, ঘুড়ি উৎসব- ১৪ জানুয়ারি ২০২০, কুম্ভলগড় উৎসব-১-৩ ডিসেম্বর ২০২০, মরু উৎসব-৭-৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ব্রজ হোলি উৎসব, ভরতপুর-৫-৬মার্চ ২০২০, ধুলন্দি-১০ মার্চ ২০২০, রাজস্থান দিবস উৎসব-২৭-৩০ মার্চ ২০২০, গঙ্গৌর উৎসব-২৭-২৮ মার্চ ২০২০, উদয়পুরে মেওয়ার উৎসব-২৭-২৯ মার্চ ২০২০, জয়পুরে তিজ উৎসব-৩-৪ আগস্ট,২০১৯, যোধপুরে মারোয়ার উৎসব-১২-১৩ অক্টোবর ২০১৯, পুষ্কর মেলা-৪-১২ নভেম্বর,২০১৯ এবং ঝালওয়ারে চন্দ্রভাগা মেলা-১১-১৩ নভেম্বর ২০১৯।

ফিল্ম ট্যুরিজমেও স্থান করে নিয়েছে রাজস্থান

চলচ্চিত্রের শ্যুটিং-এর জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে রাজস্থান। তাই চলচ্চিত্র পর্যটন রাজস্থানে একটা বড় আকর্ষণ। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত গুপি গায়েন বাঘা বায়েন ছবির শ্যুটিং হয়েছিল এই রাজস্থানে। এছাড়াও বেশ কিছু ইংরাজি ছবিরও শ্যুটিং হয়েছে এখানে, যার মধ্যে আছে- ‘দ্য বেস্ট এক্সোটিক মেরিগোল্ড হোটেল’, ‘দ্য দার্জিলিং লিমিটেড’, ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’, ‘অক্টোপাসি’, ‘দ্য ফল’, ‘হোলি স্মোক!ওয়ান নাইট উইথ দ্য কিং’, ‘দ্য সেকেন্ড বেস্ট এক্সোটিক মেরিগোল্ড হোটেল’, ‘সিটি লেকস ওয়েডিং কন্সেপ্ট ফিল্ম’। যে সমস্ত হিন্দি ছবির শ্যুটিং হয়েছে সেগুলি হল- ‘রুদালি’, ‘সারফারোস’, ‘পহেতি’, ‘একলব্য’, ‘ডর’, ‘রঙ দে বাসন্তি’, ‘দিল্লি-৬’, ‘বাজিরাও মাস্তানি’, ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’, ‘ধড়ক’, ‘জব উই মেট’, ‘রেশমা সেরা সহ আরও অনেক।

আছে ঐতিহ্যবাহী সেরা হোটেল

ঐতিহ্য বহন করে আসছে এমন হোটেলের সংখ্যা সারা ভারতে ১৮৬টি, এর মধ্যে ১৩৬টি রয়েছে শুধুমাত্র রাজস্থানে। এর সেরা হোটেলের শতকরা হার যেখানে ভারতে মাত্র ২৭ শতাংশ সেখানে রাজস্থানে আছে ৭৩ শতাংশ সেরা হোটেল। রাজস্থানে বেড়াতে গেলে এই হোটেলগুলিতে একটি দিন কাটানোর অভিজ্ঞতা আপনার জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে। রাজস্থানের এক একটি ঐতিহ্যবাহী হোটেলে থাকার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। রাজকীয় ঘরানা, সাফারি, ইকো-ট্যুরিজম, হেরিটেজ ওয়াক, স্থানীয় সংস্কৃতি সব কিছুর এক অপূর্ব সংমিশ্রন আপনাকে এনে দেবে ব্যতিক্রমী অনুভূতি।

এছাড়াও আছে রাতের বেলায় রাজস্থানের স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর দর্শন এবং সেই সঙ্গে দেখতে পারেন আলো ও শব্দের প্রদর্শনী।জয়পুর, জয়শলমীর, উদয়পুর, ভরতপুর, চিতোরগড়, আজমেড়।

সেরা পুরস্কারে সমৃদ্ধ রাজস্থান

ভ্রমণ এবং পর্যটনে রাজস্থান যে বরাবরই অন্যান্দের পিছনে ফেলে দিয়েছে তা বোঝা যায় তাদের ঝুলিতে থাকজা পুরস্কার ও সম্মান প্রদানের তালিকার দিকে তাকালেই। ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় পর্যটন পুরস্কার হিসেবে সেরা রাজ্যের সম্মান জিতে নিয়েছে রাজস্থান। পর্যটনে নানাবিধ উন্নয়নের জন্য সম্মান। এছাড়াও তারা ‘বেস্ট ফিল্ম প্রমোশনাল ফ্রেন্ডলি স্টেট’, তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সৃজনশীল ব্যবহার-এর মতো সম্মান তারা পেয়েছে। এছাড়াও একাধিক পর্যটন ম্যাগাজিন দ্বারাও সেরা পর্যটন রাজ্যের পুরস্কার জিতে নিয়েছে রাজস্থান।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 42 = 44