
Published on: সেপ্টে ২৭, ২০২৪ at ২৩:৪০
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৭ সেপ্টেম্বর : আজ সারা বিশ্ব জুড়ে উদযাপিত হয়েছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। ভারতের নানা প্রান্তের সাথে আমাদের রাজ্যে বিশেষ করে কলকাতায় বিভিন্ন সংস্থা পালন করেছে দিনটিকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল দিনটি উদযাপন করল গঙ্গাবক্ষে। তার আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে নিজেদের লোগো লাগানো টি-শার্ট ও টুপি পরে পায়ে হেঁটে বাবুঘাটে এসে ক্রুজে ওঠেন সদস্যরা।
পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন বিকাশ নিগমের অনুমোদিত এম ভি সুমঙ্গল-এ শুরু হয় যাত্রা। যাত্রা শুরুর আগে মধ্যপ্রদেশ পর্যটনের অভিজিৎ ধর, গুজরাট পর্যটনের অনুজিৎ মুখার্জি ও জম্মু ও কাশ্মীর ট্যুরিজের এক প্রতিনিধিকে বিশেষ স্মারক দিয়ে ট্যাব-এর পক্ষ থেকে উত্তরীয়, বিশেষ স্মারক ও ট্যাব-এর টি-শার্ট, টুপি দিয়ে সম্বর্ধিত করেন সভাপতি প্রশান্ত মাজি। প্রত্যেকেই গঙ্গাবক্ষে ট্যাব-এর বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপনের আয়োজনের তারফ করেন। এরপর ‘ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম ডে’ লেখা অসাধারণ একটি কেক কেটে উদযাপন অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়।
যথাসময়ে বাবুঘাট থেকে দক্ষিণেশ্বর অভিমুখে যাত্রা শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন বিকাশ নিগমের ক্রুইজ এম ভি সুমঙ্গল। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে ক্রুজটিকে এদিন খুব সুন্দর করে রং-বেরঙের বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছিল। বাবুঘাট হয়ে একের পর এক ঘাটের পাশ দিয়ে এম ভি সুমঙ্গল এগোতে থাকে দক্ষিণেশ্বরের দিকে। যাত্রা শুরুর সময় একটু বৃষ্টি হলেও পরে তা থেমে যায়। গোটা যাত্রায় আবহাওয়া অনুকূলেই ছিল।
এদিন এই যাত্রায় ট্যাব-এর আমন্ত্রণে যোগ দিয়েছিলাম সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর পক্ষ থেকে আমিও। এক বিশেষ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। বছরের শুরুতে ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল বা ট্যাব বাংলার পর্যটনকে তুলে ধরতে একটি থিম নিয়েছিল। তা হল- ‘দেখো আমার বাংলা’। অর্থাৎ এই থিমের মধ্যে দিয়ে ট্যাব বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি-শিল্পকে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছে। তারই অঙ্গ হিসাবে তারা সারা বছর ধরেই একাধিক কর্মসূচি পালন করে চলেছে। এদিনও তার ব্যতিক্রম হল না।
এদিনের গংগাবক্ষের অনুষ্ঠানের মূল ভাবনা ছিল একদিকে যেমন বাংলার কৃষ্টি-ঐতিহ্য-স্থাপত্যকে তুলে ধরা ঠিক তেমনই বাউল গানকের মাধ্যমে দিনটিকে উদযাপন করা। সেই সঙ্গে দুই থেকে তিন ঘণ্টার যাত্রা পথে নানা অজানা তথ্য আর তার ইতিহাসকে সহজ করে তুলে ধরেছেন ইন্ডিয়া ট্যুরিজম-এর দুই গাইড দেবশ্রী সাহা ও অদিতি চট্টোপাধ্যায়। তারা পরিচিত করেন এই যাত্রা পথের কম-বেশি ৫০টি ঘাটের। যার মধ্যে উল্লেখযোগু- বাবুঘাট, আহিরীটোলা ঘাট, শোভাবাজার ফেরিঘাট, কাশি মিত্র ঘাট, মায়েরঘাট, কুমোরটুলি, অন্যদিকে হাওড়া রেলস্টেশনের দিকের ঘাট। যেতে যেতে চোখে পড়ে পুতুল বাড়ি। পাশাপাশি এই গঙ্গার উপর দিয়ে এক সময় ব্রিটিশ, ফরাসী, পর্তুগীজদের যাতায়াতের বিষয় নিয়ে খুব সুন্দর আলোকপাত করেন দুই অভিজ্ঞ ট্যুরিস্ট গাইড। তারা জানান, আমাদের যাত্রা পথে জল্পথের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটারের মতো।
এদিন যাত্রাপথে বাউল শিল্পীদের গান বিশ্ব পর্যটন দিবসের গুরুত্বকে অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছিল। বিশেষ করে এবারের থিম যেখানে পর্যটন ও শান্তি সেই নিরীখে বাউল গানের মধ্য দিয়ে গঙ্গায় এক অপার শান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। একই সঙ্গে ট্যাব-এর এক সদস্যের গানকে উপস্থিত সকলের মন ছুঁইয়ে গিয়েছে।
এদিন ট্যাব-এর জয়েন্ট সেক্রেটারি উত্তম দাস জানান, প্রতিবছরই তারা এই দিনটিতে কোথাও না কোথাও ভ্রমণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান করে থাকেন। এবারেও তাদের উত্তর ২৪ পরগনার বেরি পাঁচপোতায় দিনটি উদযাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, অসময়ের অতিবর্ষণে সেই এলাকা প্লাবিত হওয়ায় তা শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে যায়। তারপরেই এই গঙ্গাবক্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবার বিশ্ব পর্যটন দিবসের থিম পর্যটন ও শান্তি। সেই থিমকে সামনে রেখেই গঙ্গাবক্ষে তাদের এই অভিনব আয়োজন। যেখানে তারা একদিকে যেমন বাংলার পর্যটনকে তুলে ধরছেন ঠিক তেমনই বাউল গানকেও পর্যটনের সঙ্গে রেখে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাইছি।
এদিন ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল অসাধারণ ভোজনের আয়োজন করেছিল। শুরু হয়েছিল ঠান্ডা পানীয় দিয়ে। এরপর চিকেন পাকোড়া দিয়ে যাত্রায় খাবারের সূচনা হয়। তারপর দুপুরের আহারে ছিল- মটন বিরিয়ানি, স্যালাড, চিকেন চাপ, ডিম সেদ্ধ, চাটনি, পাপড় ও ক্ষিরকদম্ব। এর পর আবার দেওয়া হয়েছিল ঠান্ডা পানীয়।
যাত্রা শেষের আগে ভাসমান ক্রুজে সম্বর্ধিত করা হয়। ইন্ডিয়া ট্যুরিজমের দুই গাইড দেবশ্রী সাহা ও অদিতি চট্টোপাধ্যাওকে উত্তরীয় পরিয়ে বিশেষ স্মারক দিয়ে সম্মানিত করা হয়। একইভাবে বেরি পাঁচপোতা থেকে আসা প্রদীপ রায় ও সেখানকার এক গাইডকেও একইভাবে সম্বর্ধিত করে ট্যাব।
সম্বর্ধনা নেওয়ার পর আপ্লুত বেরি পাঁচপোতার বাসিন্দা হোমস্টে-র মালিক প্রদীপ রায় সকলের একটা সুযোগ চেয়ে বলেন –আপনারা একবার আসুন। ধুরে দেখুন আমাদের বেরি পাঁচপোতাকে। এরপর কিছুটা অভিমানের সুরে বলেন – কোনও সরকারঅই আমাদের কথা ভাবে না। মাত্র দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরেই বাংলাদেশ। সেখানে অশ্বক্ষুরাকৃতি একটা দ্বীপ আছে। ঘোরার একটা আদর্শ জায়গা। একটা হোমস্টে করা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে একতা দাল লেক কেন্দ্র করে যদি পর্যটন গরে উঠতে পারে তাহলে আমাদের এত বড় লেক নিয়ে কেন হবে না।? এই প্রশ্নও তিনি তোলেন এদিন। আমি আপনাদের বলব, একবার হলেও ঘুরে যান আমাদের লেকা। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
সবশেষে ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল-এর সভাপতি প্রশান্ত মাজি তাদের অ্যাসোসিয়েশনের আগামিদিনের কর্মসূচির কথা ঘোষনা করেন। প্রথমেই জানান যা সামনে শীতের মরশুম শুরু হচ্ছে। সেই সময় তাদের একটি পিকনিকের আয়োজন করা হবে। সেখানে এদিনের অংশগ্রহণকারী সকলেই থাকবেন। একই সঙ্গে তিনি সদস্যদের একটা ফটোগ্রাফি প্রশিক্ষণ শিবিরের কথাও উল্লেখ করে বলেন যে যারা এতে আগ্রহী তারা যোগাযোগ করবেন। এরপর তিনি ট্যাব-এর যে সমস্ত সদস্য কলকাতার বাইরে থাকেন তাদের জন্য ‘স্যাটে কাঙ্কট’ এর আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে কম পক্ষে ১০ জন অংশ নিতে পারবে। এরপ নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বরে একটা বিশেষ ট্যুরের আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।
Published on: সেপ্টে ২৭, ২০২৪ at ২৩:৪০