
Published on: সেপ্টে ২৩, ২০২৩ at ২৩:৫৪
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, মায়াপুর, ২৩ সেপ্টেম্বর: অত্যন্ত বর্ণময় আর উৎসবের মেজাজে হরেকৃষ্ণ আর জয় রাধে ধ্বনিতে মুখরিত শনিবার ইসকন মায়াপুরধামে উদযাপিত হল রাধাষ্টমী উৎসব।দেশ-বিদেশ থেকে অগণিত ভক্তের সমাগমে এদিন ইসকন মায়াপুরধামে হয়ে উঠেছিল এক সর্ব্বজনীন মিলনক্ষেত্র।চন্দ্রোদয় মন্দিরেই হয় মূল অনুষ্ঠান। সেখানে জায়গা কম থাকায় ভক্তদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছিল ইসকনের আধিকারিকরা। মন্দিরের বাইরে বিশেষ কয়েকটি জায়গায় লাগানো হয়েছিল জায়েন্ট স্ক্রিন। সেখানেই সারাদিনের অনুষ্ঠান লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
ত্রিতাপদগ্ধ দুঃখ জ্বালায় জর্জরিত জীবের নিজ স্বরূপ ভ্রষ্ট জীবসমূহকে পরম অমৃত্ময় পথের সন্ধান দিতে ৫২৫০ বছর আগে শ্রীমতি রাধারানি ভাদ্রমাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে সোমবার মধ্যাহ্নকালে রাভেল নামক গ্রামে বৃষভানু রাজার গৃহে কীর্তিদা দেবীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এদিন শ্রীমতি রাধারানির সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণকেও সমানভাবে বন্দনা করা হয়।
Read more news
এদিন সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় নানা অনুষ্ঠান। যেখানে শ্রীমতি রাধারানী ও শ্রীকৃষ্ণকে বন্দনা করা হয়। রাধারানী লীলা কথা, অধিবাস, ড্যান্স ড্রামা, রাধা প্রেমদান কীর্তন উৎসব এবং সবশেষে মহা অভিষেক।
এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে ইসকন মায়াপুরের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন- “আজ শুভদিন। রাধারানীর শুভ আবির্ভাব তিথি মহোৎসব। আজ থেকে ৫২৫০ বছর আগে রাধারানী এই শুক্লা অষ্টমী তিথিতে রাভেলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বৃষভানু রাজার নন্দিনী রূপে এবং কীর্তিদা দেবীর গর্ভে। ইসকনের প্রধান কেন্দ্র মায়াপুর ছাড়াও বিশ্বব্যাপী সমস্ত শাখা কেন্দ্রে এই উৎসব জাঁকজমক সহকারে এবং ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে পালন করা হচ্ছে। আজ এই উপলক্ষ্যে দু’দিন ব্যাপী আমাদের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল হয়েছে অধিবাস এবং আজ মঙ্গলারতি ভোর সাড়ে চারটে থেকে শুরু। চলবে রাত দশটা পর্যন্ত।”
“তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভাষায় শ্রীরাধারানীর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা এবং তার অবদান সম্পর্কে আলচনা, শুধু তাই নয় শ্রীরাধারানির জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে নাটক এবং শ্রীরাধারানীকে বিভিন্ন উপহার প্রদান দর্শন-আরতি ,পুষ্পাঞ্জলী, অধিবাস, অভিষেক মহাসমারোহে ভোগ নিবেদন এবং প্রসাদ বিতরণ, সংকীর্তন শোভাযাত্রা, সন্ধ্যায় রাধাষ্টকম স্তোত্র পাঠ, রাধা প্রেম দান কীর্তন চলছে দু’দিন ধরে।
পাশাপাশি শ্রীরাধারানীর উৎসব উপলক্ষ্যে দীপদান করা হবে। প্রার্থণা করা হবে বিশ্ব শান্তি ও কল্যাণের জন্য। বৈষ্ণব মতে রাধা ও কৃষ্ণ এক ও অভিন্ন। এক আত্মা দুই তনুধারী । সুতরাং দু’জনেই সমান। একে দুই দুইয়ে এক। এই দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে বৈষ্ণব সমাজ চলে। দুধ ওতার ধবলত্ত্ব যেমন আলাদা করা যায় না, শক্তি ও শক্তিমান অভেদ করা যায় না তেমনই কৃষ্ণ ও রাধা অভিন্ন। এটা আলাদা করা যায় না। আজকের এই শুভদিনে রাধা-কৃষ্ণের মিলিত শক্তি সমগ্র বিশ্বে শান্তি, মৈত্রী এবং ভালোবাসা প্রদান করতে পারে।কারণ শ্রীকৃষ্ণের প্রতি রাধারানীর যে প্রেম শুদ্ধ প্রেম এবং তার প্রতি যে আকর্ষণ তার প্রতি যে ভালোবাসা তার কণামাত্র যদি মানবকূল গ্রহণ করতে পারে তাহলে তার অমৃতলোকে আলোর সন্ধান পেয়ে পৌঁছে যাবে। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।” যোগ করেন জনসংযোগ আধিকারিক।
“এদিন রাধামাধবকে পঞ্চদ্রব্য, দধি-দুগ্ধ-ঘৃত—মধ্য-গঙ্গাজল-ফলের রস এসব দিয়ে অভিষেক করা হয়। ডাবের জল থেকে শুরু করে সব কিছু ব্যবহার করা হয়। এমনকী নানা ধরনের ফলের রসও অভিষেকে ব্যবহার করা হয়। ভোগের জন্য এখানে শ্রীরাধারানীর জন্মতিথি উপলক্ষ্যে প্রায় হাজার রকমের পদ রান্না করা হয়। একই সঙ্গে দেশ-বিদেশের বিভিন্নভক্ত-বৃন্দ রাধারানির এই ভোগের জন্য তারা রান্না করে এখানে ভোগ নিবেদন করেছে। সাধারণ মতে- ডাল-ভাত-সবজ-শুক্তো রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ভাজা, দাল, পোলাও, পাস্তা-পিৎজা থেকে শুরু করে কেক পর্যন্ত চাইনিজ খাবার, ইউরোপিয়ান খাবার, অন্যান্য দেশের খাবার, বিভিন্ন ধরনের কেক, লাড্ডু, কোনও কিছু বাদ যায় না আমাদের এই ভোগে। রাধাষ্টমীর তাৎপর্য- ভগবানকে স্মরণ-মনন করা।” বলেন জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস।
Published on: সেপ্টে ২৩, ২০২৩ at ২৩:৫৪