প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ ৯টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যাত্রার সূচনা করেছেন, লাভ হল বাংলারও

দেশ ভ্রমণ রাজ্য রেল
শেয়ার করুন

এসপিটি নিউজ: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে ৯টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যাত্রার সূচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে এই নতুন বন্দে ভারত আরও উন্নত ও আধুনিক। দেশজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনাকে এই নতুন বন্দে ভারত ট্রেনগুলি বাস্তবায়িত করবে। রেলযাত্রীরা এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবাও পাবেন।

উদ্বোধন হওয়া নতুন ট্রেনগুলি হল:
১) পাটনা – হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
২) রাঁচি – হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
৩) উদয়পুর – জয়পুর বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
৪) তিরুনেলভেলি – মাদুরাই – চেন্নাই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
৫) হায়দ্রাবাদ – বেঙ্গালুরু বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
৬) বিজয়ওয়াড়া – চেন্নাই (ভায়া রেনিগুন্টা) বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
৭) কাসারগড় – তিরুবনন্তপুরম বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
৮) রাউরকেলা – ভূবনেশ্বর – পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
৯) জামনগর – আমেদাবাদ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস

৯টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী একে দেশের আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসে অভূতপূর্ব এক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। “দেশে বর্তমানে যে গতিতে পরিকাঠামোর উন্নয়ন হচ্ছে তা আসলে ১৪০ কোটি ভারতবাসীর চাহিদা পূরণ করছে”। তিনি বলেন, আজ যে ট্রেনগুলি যাত্রা শুরু করলো সেগুলি আরও আধুনিক এবং আরামপ্রদ। এই বন্দে ভারত ট্রেনগুলি নতুন ভারতের নতুন আকাঙ্খার প্রতীক। বন্দে ভারত সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। ইতিমধ্যেই ১ কোটি ১১ লক্ষ যাত্রী এই ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন।

বন্দে ভারতের মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্রগুলি যুক্ত হওয়ার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে

প্রধানমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ২৫টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চলাচল করছে। আজ আরও ৯টি ট্রেন এই ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হল। “সেদিন আর দূরে নেই যখন দেশের প্রতিটি প্রান্ত বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মাধ্যমে যুক্ত হবে”। এখন যে কোন রুটে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে কম সময়ে যাওয়া যায়। অনেকে এই ট্রেনে গিয়ে তার কাজ শেষ করে সেদিনই ফিরে আসছেন। বন্দে ভারতের মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্রগুলি যুক্ত হওয়ার ফলে সংশ্লিষ্ট স্থানে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিটি মানুষ দেশের সাফল্যে গর্ব অনুভব করে

প্রধানমন্ত্রী বলেন দেশজুড়ে আশা এবং আস্থার এমন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে যার ফলে প্রতিটি মানুষ দেশের সাফল্যে গর্ব অনুভব করে। তিনি তাঁর ভাষণে চন্দ্রযান-৩ এবং আদিত্য এল ওয়ান-এর ঐতিহাসিক সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের গণতন্ত্র, জনসংখ্যা এবং বৈচিত্রের শক্তি জি-২০-র সাফল্যের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, নারী শক্তি বন্দন আইন একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এর ফলে মহিলাদের নেতৃত্বে উন্নয়নে গতি আসবে। বর্তমানে অনেক রেলস্টেশন মহিলারাই পরিচালনা করছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত তার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণের জন্য একযোগে কাজ করছে। পিএম গতিশক্তি মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে দেশজুড়ে পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে। পণ্য পরিবহন এবং রপ্তানীর খরচ কমাতে নতুন পণ্য পরিবহন সংক্রান্ত নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে বহুস্তরীয় যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিভিন্ন যাতায়াতের মাধ্যমকে যুক্ত করা হয়েছে। এরফলে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে সুবিধা হবে।

সাধারণ নাগরিকদের জীবনযাত্রায় রেলের গুরুত্ব অপরিসীম

সাধারণ নাগরিকদের জীবনযাত্রায় রেলের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অতীতে এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটি ছিল অবহেলিত। বর্তমান সরকার ভারতীয় রেলের সংস্কার ঘটাচ্ছে। ২০১৪ সালের রেল বাজেটে বরাদ্দ অর্থের তুলনায় এবছরের রেল বাজেটে তার পরিমাণ ছিল আটগুণ বেশি। বর্তমানে বিভিন্ন রুটে দ্বিতীয় রেললাইন বসানো এবং বৈদ্যুতিকীকরণ কাজ চলছে। এছাড়াও নতুন নতুন রেলপথ নির্মিত হচ্ছে।

রেলস্টেশনগুলির আধুনিকীকরণ অত্যন্ত জরুরী   

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, উন্নত ভারত গড়ার ক্ষেত্রে রেলস্টেশনগুলির আধুনিকীকরণ অত্যন্ত জরুরী। এই প্রথম দেশজুড়ে রেলস্টেশনগুলির উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়েছে। রেলযাত্রীদের সুবিধার্থে রেকর্ড সংখ্যক ফুটওভার ব্রিজ এবং লিফ্ট এবং চলমান সিঁড়ি বসানো হচ্ছে। মাত্র দিন কয়েক আগে দেশজুড়ে ৫০০টি প্রধান প্রধান রেলস্টেশনের পুনরুন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। অমৃতকালে নতুন যে স্টেশনগুলি গড়ে তোলা হচ্ছে সেগুলিকে অমৃত ভারত স্টেশন বলে অভিহিত করা হবে। “এই স্টেশনগুলি আগামীদিনে নতুন ভারতের পরিচয় বহন করবে”।

বিভিন্ন স্টেশনে ‘স্থাপনা দিবস’ উদযাপন

রেল বর্তমানে বিভিন্ন স্টেশনে ‘স্থাপনা দিবস’ উদযাপন শুরু করায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন।  কোয়েম্বাটোর, ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস এবং মুম্বাই স্টেশনের স্থাপনা দিবস উদযাপনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোয়েম্বাটোর রেলস্টেশনের ১৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। “এখন রেলস্টেশনের জন্মদিন উদযাপনের মাধ্যমে আরও বেশি মানুষকে এরসঙ্গে যুক্ত করা হবে”।

সবকা সাথ সবকা বিকাশের ভাবনা

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, দেশ এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের মাধ্যমে বিভিন্ন সংকল্পের বাস্তবায়ন ঘটাচ্ছে। “২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ার লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিটি রাজ্যের এবং রাজ্যগুলির জনসাধারণের উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরী”। যে রাজ্য থেকে রেলমন্ত্রী হলেন শুধুমাত্র সেই রাজ্যের রেলের উন্নয়নের জন্য ভাবনা-চিন্তা করার প্রবণতা দেশের পক্ষে ক্ষতিকর। অতীতে এই জিনিসটিই ঘটতো। কোন একটি রাজ্য পিছিয়ে পড়বে এটা এখন আর মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। “আমাদের সবকা সাথ সবকা বিকাশের ভাবনা নিয়ে এগিয়ে চলতে হবে”।

কঠোর পরিশ্রমী রেলকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাত্রীদের রেল সফরকে স্মরণীয় করে তুলতে তাঁদের উদ্যোগী হতে হবে। “যাত্রীসাধারণের রেল সফর সহজ এবং সুন্দর করে তুলতে প্রতিটি রেলকর্মী সর্বদা সতর্ক রয়েছেন”।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি নাগরিক রেলওয়ের পরিচ্ছন্নতার নতুন মান লক্ষ্য করেছে। তিনি মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১ অক্টোবর সকাল ১০টায় প্রস্তাবিত স্বচ্ছতা অভিযানে সবাইকে যুক্ত হতে বলেছেন। তিনি সকলকে খাদি এবং স্বদেশী পণ্য কেনার জন্য নিজেকে উত্সর্গ করতে এবং ২ অক্টোবর থেকে ৩১শে অক্টোবর, সর্দার প্যাটেলের জয়ন্তীর সময় স্থানীয়দের জন্য আরও সোচ্চার হতে বলেন।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী, সাংসদ ছাড়াও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহনমন্ত্রী নীতিন গড়করি তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া এক্স যা আগে ট্যুইটার ছিল সেখানে লিখেছেন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আজ ৯টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করার জন্য। এই অত্যাধুনিক, ট্রেনটি ভারতে রেল ভ্রমণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, একটি স্বনির্ভর ভারত এবং আমাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণের সহজতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।আমরা যখন অমৃতকালে অগ্রসর হচ্ছি, আমাদের রেলপথের এই স্মারক অগ্রগতিগুলি কানেক্টিভিটির একটি নতুন যুগের সূচনা করার প্রতিশ্রুতি দেয়, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জির অগ্রণী নির্দেশনায় ভারতকে তার উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

প্রেক্ষাপট 

এই ৯টি ট্রেন পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরালা এবং গুজরাট অর্থাৎ ১১টি রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবে।

বন্দে ভারত এক্সপ্রেসগুলি সংশ্লিষ্ট রুটের যাত্রাপথে অন্য ট্রেনের থেকে দ্রুতগতিতে চলাচল করবে এবং যাত্রীদের সময় বাঁচাবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় রাউরকেলা – ভূবনেশ্বর – পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এবং কাসারগড় – তিরুবনন্তপুরম বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ওই রুটে চলাচলকারী দ্রুতগামী ট্রেনের চাইতেও তিন ঘন্টা আগে পৌঁছাবে। হায়দ্রাবাদ – বেঙ্গালুরু বন্দে ভারত এক্সপ্রেস আড়াই ঘন্টা ও তিরুনেলভেলি – মাদুরাই – চেন্নাই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ২ ঘন্টা আগে পৌঁছাবে। রাঁচি – হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, পাটনা – হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এবং জামনগর – আমেদাবাদ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ১ ঘন্টা আগে ও উদয়পুর – জয়পুর বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ৩০ মিনিট আগে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছোবে।

প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে ধর্মীয় স্থানগুলির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার মানোন্নয়নে উদ্যোগী হয়েছেন। রাউরকেলা – ভূবনেশ্বর – পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেস পুরী এবং তিরুনেলভেলি – মাদুরাই – চেন্নাই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস মাদুরাই স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলবে। বিজয়ওয়াড়া – চেন্নাই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস রেনিগুন্টা দিয়ে চলাচল করবে। এই ট্রেন তিরুপতিগামী তীর্থযাত্রীদের জন্য সহায়ক হবে। খবরঃ পিআইবি


শেয়ার করুন