আজ রাধাষ্টমীঃ মানবজাতিকে পরম অমৃতময় পথের সন্ধান দিতেই আবির্ভাব হয় হ্লাদিনী স্বরূপিনী শ্রীমতি রাধারানীর

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: সেপ্টে ২৩, ২০২৩ at ০১:০৪
লেখকঃ শ্রী তারকব্রহ্ম দাস ব্রহ্মচারী

এসপিটি বিশেষ প্রতিবেদনঃ শ্রী গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের অপ্রাকৃতযুগল- মাধুরী হলো সর্বশ্রেষ্ঠ উপাস্য তত্ত্ব। লীলা পুরষোত্তমশ্রীকৃষ্ণ হলেন সর্বশক্তিমান আর শ্রীমতি রাধারানী হলেন হ্লাদিনী রূপা স্বরূপ শক্তি, শ্রীকৃষ্ণের প্রেমের বিকার। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে-

“রাধিকা হয়েন কৃষ্ণেরপ্রনয় বিকার।

স্বরূপশক্তি-হ্লাদিনী নামযাহার।”

শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণ স্বরূপতঃ এক আত্মা। কিন্তু এক আত্মা হলেও , তাঁদের দেহ ভেদ না থাকলেও অনাদি কাল হতেই তাঁরা দুটি দেহ ধারণ করে আছেন লীলারস আস্বাদন করার জন্য। লীলার নিমিত্তই দুটি দেহের প্রয়োজন, কারণ একাকী লীলা হয় না।

“রাধা-কৃষ্ণ এক আত্মা দুইদেহধারী।

অন্যোন্যে বিলাসেরসাস্বাদঙ্কারী।।”

শক্তিমান ও শক্তির বিলাস বৈভবের নামলীলা। হ্লাদিনী স্বরূপ শক্তির সহিত পুরষোত্তমশ্রীকৃষ্ণের যে লীলা তাকে নিত্যলীলা বা চিদ্বিলাবলে। জড়জগতের হেয়তা এখানে স্পর্শ করে না অর্থাৎ জড়জগতের জুগুপ্সিতভাব এখানে নাই। সেই নিত্যজগতে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের নিত্যলীলা সর্বদা নব নবায়মান সৌন্দর্য মাধুর্যেভরা, নিত্যনবোল্লাসেপূর্ণ অনন্ত বৈচিত্রময়। আমাদের এই পার্থিব জগতের অতৃপ্ত কামনাময় অপূর্ণ হৃদয় সেই নিত্যধামে নিত্য ও পূর্ণ বস্তুর সেবায় পরম পরিতৃপ্তি লাভ করে। সেই নিত্যধাম গোলক হতে শ্রীমতি রাধারানী ভৌমব্রজমন্ডলে অবতরণের উদ্দেশ্য হলো মধুররসাশ্রিত জীব সমূহের নিগূড় সেবায় পথ প্রদর্শন। আর সেই শ্রীরাধাকৃষ্ণের সেবায় শ্রীমতি রাধারানীর পরিচারিকারূপে আত্মনিয়োগ করাই সাধনভজনের চরম ও প্রমপ্রাপ্তি। তাঁরদাস্যই নিখিলনরনারীর চরমতম সাধনার পরমতম বস্তু প্রাপ্তির মূলকারণ।

Read more news:

রাধাষ্টমীঃ এই দিনে জন্মেছিলেন শ্রীমতি রাধারানী, অসাধারণ তাঁর সেই জন্মলীলা

জন্মজন্মান্তর ধরে নিজস্বরূপ ভ্রষ্ট জীবসমূহ অনন্ত দুঃখের সাগরে ভাসমান হয়ে চুরাশিলক্ষজন্ম পরিক্রমা করে চলছে। এই জীবসমূহ উদ্ধারের জন্য বেদ – পুরাণাদিবহুশাস্ত্রে বহিসাধপন্থা, যেমন- কর্মেভুক্তি, জ্ঞানে মুক্তি, যোগে সিদ্ধিলাভে কথা থাকলেও শ্রীকৃষ্ণ্বের চ্রণ কমলের নিত্য সেবাসুখ লাভের সম্ভাবনা নেই। শ্রীকৃষ্ণের নিত্যসেবা লাভই জীবের নিত্যস্বরূপ প্রতিষ্ঠিত হবার একমাত্র উপায়। তাই শ্রীমতি রাধারানীর প্রাণ ত্রিতাপ দুঃখজ্বালায়জর্জরিত জীবের জন্য কেঁদে উঠল নিজস্বরূপভ্রষ্ট জীবসমূহকে পরম অমৃতময় পথের সন্ধান দিতে।

শ্রীকৃষ্ণ সেবা হতে জীবকে নিত্য সেবায় নিযুক্ত করতে হলে অনিত্যের প্রতি আসক্তি দূর করে শ্রীকৃষ্ণ সেবায় উন্মুখী করাই করুণাময়ী শ্রীমতি রাধারানীর ইচ্ছা। এটি তার জীব উদ্ধারণলীলার পূর্বাভাস। এটি অপরের দ্বারা সম্ভব নয়। নিজের জীবনাচরণ করে শ্রীকৃষ্ণসেবা রূপ সুনির্মল সুখ হতে বঞ্চিত জীবকে শ্রীকৃষ্ণ সেবায় উন্মুখী করতে পারলেই জীবের বাস্তব মঙ্গল। স্বয়ং গোলোকেশ্বরী শ্রীমতি রাধারানী এভাবে চিন্তা করতে করতে প্রাপঞ্চিক লীলারসময় এসে উপস্থিত হলো। পাঁচসহস্রাধিক বৎসর পূর্বে গত দ্বাপর যুগের শেষ ভাগে সোয়াশতবৎসর কাল ভৌমলীলা করবার অভিপ্রায় গোলোক হতে ভূলোকের ব্রজমন্ডলে তিনি ভাদ্রমাসে শুক্লাষ্টমী তিথিতে সোমবার মধ্যাহ্ন কালে রাভেলনামক গ্রামে বৃষভানু রাজার গৃহে কীর্তিদা দেবীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন।

দুর্বারগতিতে শ্রীকৃষ্ণ প্রেমসিন্ধু মাঝে পতিত হয়ে কায়-মন-বাক্যের যে গতি সেটি হলো শ্রীমতি রাধারানীর কৃষ্ণ ভজনের মূল সূত্র, এটিই তাঁর নিত্যপ্রাণ প্রিয় শ্রীকৃষ্ণের সেবা পদ্ধতি- যা শ্রীমতি রাধারানীর বিশুদ্ধ চিত্তে নিবদ্ধ ছিল। জীবজগতে এটি অনর্পিত ছিল। কৃপাময়ী শ্রীমতি রাধারানীর ইচ্ছা হলো এই পন্থারদ্বারা জগতজীবকে তাঁর প্রিয়সহচরী করে প্রাণদয়িত শ্রীকৃষ্ণের সেবায় নিযুক্ত করবেন। শ্রীমতি রাধারানী সচ্ছিদানন্দময়, কৃষ্ণপ্রেমেরাধারস্বরূপিনী, মহাভাব বিভাবিতা, সর্বলক্ষ্মীময়ী, তাঁর কোনও কামনা বা বাসনার ইচ্ছা হয়না। তিনি নিত্যকাল আত্মকামা, আত্ম্ররামা, তবে জগৎ জীবকে তাঁর সহচরী করার ইচ্ছা জাগ্রত হলো কেন? ভক্ত বাৎসল্য হেতু কৃপাশক্তির সঞ্চালনে তাঁর এরূপ অহৈতুকী ইচ্ছার উদয় হলো। তাঁর এই ইচ্ছা সমস্ত জগৎ জীবের কল্যাণের জন্য। এটি জীবের পক্ষে মঙ্গলের আলয় স্বরূপ। বিষয় বিগ্রহ শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত রসের আকর। সেই রস ঘ্নীভূত হয়ে পরিণামে বিশুদ্ধ প্রেমের উদ্ভব হয়, আর তা আশ্রয়জাতীয় বিগ্রহস্বরূপিনী শ্রীমতি রাধারানীর চিত্তগত কৃষ্ণসেবার পরিপাকে সমুৎপন্নহয়। সেই জন্য হ্লাদিনী প্রধানা শ্রীমতি রাধারানী শ্রীকৃষ্ণ প্রেমের ভান্ডারী। কৃপাময়ী শ্রীমতি রাধারানী কৃপা করে যাকে তা প্রদান করবেন তিনি শুধুমাত্র তার আধিকারী হবেন। ত্রিকালের সমস্ত সৌন্দর্য মাধুর্যেরঘবনীভূতা লাবণ্যসার শ্রীমতি রাধারানীর আজ শুভ আবির্ভাব তিথি। তিনি সমস্ত জীবজগতের প্রতিশুভ দৃষ্টিপাতপূর্বক পরমমঙ্গল করুন।

লেখক পরিচিতিঃ মায়াপুর ইসকনের সঙ্গে যুক্ত   

Published on: সেপ্টে ২৩, ২০২৩ at ০১:০৪


শেয়ার করুন