জল সংরক্ষণে সচেতনতা গড়তে ৩১ জুলাই দেশের ৭৫টি ‘ওয়াটার হেরিটেজ’ এ বৃক্ষরোপণ, খুলছে পর্যটনের এক নয়া দিক

Main এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: জুলা ২৯, ২০২৩ @ ১৭:৩৮
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৯ জুলাই: এক অসাধারণ উদ্যোগ নিয়েছে পর্যটন ও জলশক্তি মন্ত্রনালয়। যেখানে তারা দেশের ৭৫টি ‘ওয়াটার হেরিটেজ’ কিংবা ‘জল ঐতিহ্য’কে জল সংরক্ষণের জন্য তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছে। এজন্য আগামী ৩১ জুলাই সারা দেশ জুড়ে এই ঐতিহ্যবাহী জলের এলাকায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেখানে যুব পর্যটন ক্লাব এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা একযোগে গাছ লাগাবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে একদিকে যেমন পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে ঠিক তেমনভাবেই জল সংরক্ষণের বিষয়েও মানুষের মধ্যে একটা সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষ তাদের পরিচিত এলাকায় এই সুপ্রাচীন জলের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে। সংবাদ প্রভাকর টাইমসকে বিশেষ সাক্ষাৎকারে এখবর জানিয়েছেন ভারতীয় পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কলকাতায় ইন্ডিয়া ট্যুরিজমের রিজিওনাল ডিরেক্টর (পূর্ব) ড. সাগ্নিক চৌধুরী।

পর্যটনের মানচিত্রে নিঃসন্দেহে এক নয়া অধ্যায়

পর্যটন ও জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ পর্যটনের মানচিত্রে নিঃসন্দেহে এক নয়া অধ্যায় রচনা করবে।এতদিন অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা দিকে ঘুরতে গিয়েছেন। দেখেছেন অনেক কিছুই। কিন্তু তাদের নজর এড়িয়ে গিয়েছে এই সমস্ত সুপ্রাচীন ‘জল ঐতিহ্য’, যা আজও অমলিন হয়ে আছে কালের বিবর্তনে। ভারত সরকারের এই দুই মন্ত্রনালয়ের যৌথ উদ্যোগ অবশেষে সেই ঐতিহ্যকে নতুন করে সাধারণ মানুষের সামনে নিয়ে এসেছে।খুলে যাচ্ছে পর্যটনের এক নয়া দিক।

জল সংরক্ষণের জন্য জল ঐতিহ্যকে ফোকাস করব- ড. সাগ্নিক চৌধুরী

সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে ড. চৌধুরী বলেন-“ পর্যটন মন্ত্রণালয় ও জলশক্তি মন্ত্রণালয় আমরা যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়েছি যে ওয়াটার হেরিটেজ ফর ওয়াটার কনজার্ভেশন-এর উপর ফোকাস করব। আমাদের দেশে ওয়াটার রিলেটেড হেরিটেজগুলি সুপ্রাচীন। এক্ষেত্রে আমাদের পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে অ্যানিকট ড্যাম, যা ১৮৭১ সালে তৈরি হয়েছিল। জলশক্তি মন্ত্রণালয় দেশের মোট ৭৫টি ওয়াটার হেরিটেজ স্ট্রাকচার (ডবল্যুএইচএস) সনাক্ত করেছে।পর্যটন মন্ত্রনালয় এর মধ্যে দেশের একটা প্ল্যানটেশন প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করেছে।”

জল ঐতিহ্য, জল সংরক্ষণ, টেকসই পর্যটন-এর লক্ষ্যে

জল ঐতিহ্য, জল সংরক্ষণ, টেকসই পর্যটন-এর লক্ষ্যে এবং পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তুলতে সারা দেশ জুড়ে আগামী ৩১ জুলাই যুবা ট্যুরিজম ক্লাব এবং স্কুলের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।জল ও গাছের উপযোগিতা সম্পর্কে মানুষের কাছে একটা বার্তা পৌঁছতে পারব। যোগ করেন ড. চৌধুরী।

গাছ আমাদের কি কি কাজে লাগে?

গাছ আমাদের পরিবেশ এবং মানুষের সুস্থতার জন্য অমূল্য গুরুত্ব। তারা আমাদের পান করার জন্য বিশুদ্ধ জল, শ্বাস নেওয়ার জন্য বাতাস, মানুষ, প্রাণী ও গাছপালাকে ছায়া ও খাবার দেয়। তারা অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল, রান্না ও তাপের জন্য জ্বালানী কাঠ, ভবন এবং আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক এবং বিনোদনমূলক গুরুত্বের জায়গাগুলির জন্য উপকরণ সরবরাহ করে, বন্যা প্রতিরোধ করে। গাছগুলি বিশ্বব্যাপী পরিবেশ এবং সেখানে বসবাসকারী প্রজাতির স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের আমাদের নিঃশর্ত যত্ন এবং সুরক্ষা প্রয়োজন।বলেছেন ইন্ডিয়া ট্যুরিজম, কলকাতার রিজিওনাল ডিরেক্টর (পূর্ব) ড. সাগ্নিক চৌধুরী।

ভারত, প্রাচীনতম সভ্যতার দেশ হওয়ায় স্থাপত্য এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি এবং সম্পর্কিত মানব ইতিহাসের গল্প সহ বিভিন্ন ধরণের ঐতিহ্যের কাঠামো রয়েছে। জল ইতিহাস 100 বছরেরও বেশি পুরানো কিছু নির্বাচিত জল ঐতিহ্যের কাঠামো প্রদর্শন করে।

দেখে নিন সম্পূর্ণ তালিকা

দেশের মোট ৭৫টি সুপ্রাচীন ওয়াটার হেরিটেজগুলিকে চিহ্নিত করেছে জলশক্তি মন্ত্রণালয়। এই জল হেরিটেজগুলির মধ্যে আছে বাঁধ, জলাধার, লেক, কৃত্রিম লেক, কূপ সহ অন্যান্য। যার মধ্যে আমাদের পূর্ব ভারতেই আছে ৭টি। এগুলি হল-

বিহারের দু’টি

১)পাটনায় অবস্থিত আগম কুয়া (২৭৩বিসি), ২)রোহতাসের শের শাহ সুরি পন্ড (১৫৩৮এডি)।

ওড়িশায় আছে দু’টি

৩) রিসি কুল্লা ইরিগেশন সিস্টেম যার মধ্যে আছে রাসেলকোন্ডা রিজার্ভার (১৮৯৪), সোরাডা রিজার্ভার(১৮৯৬), জানি ভিলি অ্যানিকট(১৮৯১), মাধাবারিদা অ্যানিকট(১৮৯১) যা কিনা ঘুমুসর অ্যানিকট নামেও পরিচিত।

৪) এছাড়াও আছে ওড়িশার জয়পুরে বৈতরণী ইরিগেশন প্রোজেক্ট(১৮৭১-১৮৭৮)।

৫)ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে তোপচাঞ্চি লেক (১৯১৫-১৯২৪)।

৬)আন্দামানে পানিঘাট অ্যাকুয়েডাক্ট(ব্রিটিশ শাসনকালে)।

৭) পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরে মেদিনীপুর অ্যানিকট(১৮৭১)।

তবে ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে ওয়াটার হেরিটেজগুলি হল-

অন্ধ্রপ্রদেশের  কুর্ণূলে কে সি ক্যানাল অ্যাকুয়েডাক্ট (১৯ শতাব্দী), পূর্ব গোদাবরীতে স্যার আর্থার কটন ব্যারেজ(১৮৫২), ওয়াইএসআর কাড়াপায় পোরুমামিল্লা ট্যাঙ্ক(১৩৬৯), প্রকাসমে কাম্বাম ট্যাঙ্ক (১৫২২-১৫২৪ এডি), আসামে শিবসাগরে বর পোখুরি অথবা শিবসাগর ট্যাঙ্ক (১৭৩৪), জয়সাগর পুখুরি (১৬৯৭, মাত্র ৪৫ দিনে), গৌরীসাগর পুখুরি, (১৭০০ শতাব্দী), ছত্তিশগড়ে সিতা বাড়ি(দ্বিতীয় শতাব্দী বিসি), দিল্লিতে অর্গসেন কি বাউলি (১৪ শতাব্দী), গুজরাতে জুনাগড়ে সুদর্শন তাল (১৫০ এডি-র কাছাকাছি), প্তনে রানী কি ভব (১১ শতাব্দী), আমেদাবাদে লোথাল ডক্স (২০০০ বিসিই প্রায়), কচ্ছ-এ হামিরসর লেক (১৫৪৮-৮৫ এডি), আমেদাবাদে আমেদাবাদ সিস্টেম অব লেকস (১৪৫১ সিই), হিমাচল প্রদেশের কাংরায় ভাগসু নাগ টেম্পল ওয়াটারবডি(১৮৫০), হরিয়ানার ফারিদাবাদে সুরজকুণ্ড(১০ শতাব্দী এডি),যমুনানগরে দ্য ওয়েস্টার্ন যমুনা ক্যানেল (১৩৩৫ সিই, ১৬৪০, ১৮১৭), রিওয়ারিতে শোলা রাহি(১৬৫০), জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় প্রাচীন মন্দির লাডুভ/লাড্ডু সন্যাসার নাগ(৮ শতাব্দী সিই), কর্ণাটকের বাগলকোটে দুর্গা জিডিআই কমপ্লেক্স আইহোল- এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট( ৬-১২ শতাব্দী সিই), কোলারে দ্য কেসকাডিং ট্যাঙ্ক ইকোসিস্টেম (১১৫০), চিক্কামাগালুরুতে নেই মাদাগা ট্যাঙ্ক (খুব পুরনো), বল্লারিতে বিজয়নগর ক্যানেল সিস্টেম(১৬০০), বেঙ্গালুরুতে ফার্স্ট পাইপ ওয়াটার সিস্টেম, হেসারগাট্টা লেক(১৮৯৪ এডি), কেরালায় এর্নাকুলামে কেরালা ওয়াটারওয়েজ (১৯ শতাব্দী), কান্নৌরে পেরালাসসেরি সুব্রমানিয়া মন্দির, লাদাখের লে-তে কারজু জিঙ্গ (পন্ড) (১৯০৯), মহারাষ্ট্রের রাইগড়ে রাইগড় ফোর্ট (১০৩০সিইএবং আবারও পরে ১৭ শতাব্দীতে), সিন্ধুদুর্গে ধামাপুর লেক (১৫৩০), সাতারায় বরামিতিচি ভিহির (১৬৪৬), ঔরঙ্গাবাদে নেহারস অব ঔরঙ্গাবাদ, নেহার-ই অম্বারি(১৬১২) এবং নেহার-ই-পাঞ্চক্কি(১৬৯৫), মেঘালয়ের ওয়েস্ট জয়ন্তিয়া হিলসে বাম্বি ড্রিপ ইরিগেশন (১০০ বছরেরও বেশি পুরনো), মণিপুরের ইম্ফল পশ্চিমে কাংলা মোটস(১৬৫২-১৬৬), মধ্যপ্রদেশের ছত্তরপুর মোহবা পান্নায় বুন্দেলখণ্ড ট্যাঙ্ক সিস্টেম, ধরে মান্ডু(১৫ শতাব্দী), বরহানপুরে খুবনি ভান্ডারা (১৬১৫সিই), দাতিয়ায় চান্দেভা কি বাওয়াড়ি (১৬১৮ এডি), বরহানপুরে গুলারা মহাল (১৬২৭-১৬৫৮), ভোপালে আপার লেক(১০০৫-১০৫৫), মিজোরামের লাংলেই-এ সপতুল ওয়াটার পয়েন্ট(১৯০৩), পাঞ্জাবের ফতেগর সাহিবে আম খাস বাগ (১৬৩৪), পুডুচেরীতে বাহর ইরিগেশন ট্যাঙ্ক(১০ শতাব্দী), রাজস্থানের আজমেরে আজমের লেক (১১৩৫-১১৫০), রাজাসমাণ্ডে রাজসমান্দ লেক ও ড্যাম(১৬৭৬ এডি), উদয়পুরে উদয়পুর লেক (১৩৮২-১৮৮৭), যোধপুরে তুর্জি কি বাউরি (১৭৪০), দৌসাতে চাঁদ বাউরি (নম্বম শতাব্দী এডি), জয়শলমিরে গডসিসার লেক(১৩৬৭ এডি), যোধপুরে কায়লানা লেক এবং তাখত সাগর (১৮৭২), তামিলনাড়ুতে তাঞ্জাভুরে লোয়ার অ্যানিকট (১৮২৭-১৮৩৬), মাদুরাই-তে ভন্দিউর মারিয়াম্মান তেপ্পাকুলম(১৬৩৫), চেন্নাইয়ে বাকিংহাম ক্যানেল (১৮০৬/১৮৩৭/১৮৭৭-৭৮), তাঞ্জাভুরে গ্র্যান্ড অ্যানিকট (১০০ বিসি-১০০ এডি), কোয়েম্বাটোরে নোয়্যাল রিভার সিস্টেম ট্যাঙ্ক , কুড্ডালোরে ভীরানাম ট্যাঙ্ক (নবম শতাব্দী), ইরোডে কালিঙ্গ্রায়ান অ্যানিকট (৭৪০ বছরের পুরনো), ত্রিপুরায় সেপাহিজালায় কমলাসাগর দিঘি মন্দির সহ (১৪ শতাব্দী), হায়দ্রাবাদের তেলেঙ্গানায় হুসেন সাগর লেক (১৫৬৩), নির্মলে সাদরমাট্ট অ্যানিকট (১৮৯১-৯২), হায়দ্রাবাদের গোলকুন্ডা ফোর্ট ওয়াটার সিস্টেম(১১ শতাব্দী), কাকাতিয়া ইন্টারকানেক্টেড ট্যাঙ্ক সিস্টেম, উত্তরাখণ্ডের রুর্কিতে সোলানি অ্যাকুয়েডাক্ট (১৮৪৬-১৮৫৬ সিই), পিথোরাগড়ে নৌলা কভার্ড স্প্রিঙ মন্দিরের সাথে সংযুক্ত, উত্তরপ্রদেশের কানপুরে শুক্লা তালাব (১৫৭৮), ঝাঁসিতে বরুয়া সাগর(১৬৯৪সিই), কাসগঞ্জে নাদরাই পুল (১৮৮৯), প্রয়াগরাজে শৃঙ্গভেরাপুরা (প্রথম শতাব্দী বিসিই)।

এই ৭৫টি ওয়াটার হেরিটেজ সাইটেই আগামী ৩১ জুলাই যুবা ট্যুরিজম ক্লাব এবং স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এক যোগে গাছ লাগাবেন। একদিকে পরিবেশ সচেতনতার সঙ্গে জল, গাছ ও প্রকৃতি সম্পর্কে মানুষের ভিতর আরও বেশি করে সচেতনতা জাগানোই এই কর্সূচির প[রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন ড. সাগ্নিক চৌধুরি।

Published on: জুলা ২৯, ২০২৩ @ ১৭:৩৮


শেয়ার করুন