
আইসিএসই বোর্ডের রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে কাউন্সিল নিজস্ব পদ্ধতির মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন করেছে এবং সঠিক সময়ের আগেই ফলাফল প্রকাশ করেছে। যা একটি নজিরবিহীন ঘটনা আইসিএসই কাউন্সিলের কাছে।ছাত্রছাত্রীরা তাদের ফলাফল পেয়ে খুশি।সংবাদ প্রভাকর টাইমস এর পক্ষ থেকে কাউন্সিল ও সিইও জেরি অ্যারাথুন-কে জানাই ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর সম্পাদকীয় বিভাগ এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা সম্ভবত আমাদের রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমের মধ্যে সর্বপ্রথম পদক্ষেপ। আমরা ঠিক করেছি রাজ্যের আইসিএসই অনুমোদিত কিছু স্কুলের পারফরম্যান্স ও সেখানকার ছাত্রীদের দক্ষতা-কর্মকুশলতা তুলে ধরতে। যা স্কুলের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর কাছে এক মূল্যবান নথি হয়ে থাকবে। আমরা এই সিরিজ-এর নাম দিয়েছি “শিক্ষা সফর”। আজ আমাদের প্রথম স্কুল- বাগুইআটির ন্যাশনাল ইংলিশ স্কুল।
Published on: জুলা ১৩, ২০২০ @ ১৬:৩৭
Reporter: Jayanta Bandopadhyay
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৩জুলাই: একজন মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠান চেনা যায় তার ব্যবহার-কাজকর্ম দেখে অথবা শুনে।আমরা অভিভূত বাগুইআটির ন্যাশনাল ইংলিশ স্কুলের প্রিন্সিপল ম্যাম মৌসুমী সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করে। গত শুক্রবার যেদিন রেজাল্ট বের হয় সেইদিন ওইসময়ই আমরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু তিনি শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ফলাফলের তথ্য সরবরাহ করে গিয়েছেন। এজন্য তাঁর কাছে আমরা সংবাদ প্রভাকর টাইমস কৃতজ্ঞ। একই সঙ্গে জানাই তাঁকে আমাদের সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
ন্যাশনাল স্কুলের প্রিন্সিপাল ম্যাম মৌসুমী সাহা সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা, যা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক অভিভাবকদের কাছে মূল্যবান নথি হয়ে থাকবে। আসুন, তাহলে জেনে নেওয়া যাক তাঁর কাছে থেকে স্কুলের পঠন-পাঠন থেকে শুরু করে নানা কর্মকান্ডের কথা।
জানালেন সাফল্যের পিছনের গল্প
প্রিন্সিপল মৌসুমী সাহা- “ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল শিক্ষকতা নিয়ে থাকবো। সেইমতো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার করে তারপরে বিএড পাস করে সরকারি স্কুলে চাকরি গ্রহণ করি। তখন থেকে ইচ্ছা ছিল একটা ভালো পরিকাঠামোর স্কুল তৈরি করা যেখানে এডুকেশন এমন হবে যাতে আগামী প্রজন্ম একটা ভালো জায়গায় পৌঁছতে পারে। 2000 সালে প্রথম স্কুল, তারপরে 2010-এ রাজারহাটে তার শাখা উদ্বোধন। 2007 থেকে এখনও অবধি আমাদের ছাত্রছাত্রীরা অত্যন্ত ভালো রেজাল্ট করে আসছে ধারাবাহিকভাবে। এর প্রধান কারণ হলো, আমাদের শিক্ষায়তনে টিমওয়ার্কে কাজ হয়। ম্যানেজমেন্ট, টিচার, স্টুডেন্ট ও প্যারেন্টস দের মধ্যে একটা অত্যন্ত ভালো যোগসূত্র স্থাপন। যেটা অত্যন্ত জরুরী। সোজা কথায় বলতে গেলে কি জানেন- টেবিলের যেমন চারটি পা ঠিক থাকে তেমনি আমাদের কোঅর্ডিনেশনটাও টেবিলের ওই চারটি পায়ের মতো।”
যোগাযোগ রক্ষায় দিয়ে রেখেছেন ফোন নম্বর
প্রিন্সিপল মৌসুমী সাহা- “এখানে আমি স্কুলের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকা, অশিক্ষক কর্মচারী সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ রেখে চলেছি। সকলের কাছে আমার ফোন নাম্বার দেওয়া আছে যাতে তারা যে কোন সমস্যার ক্ষেত্রেই সরাসরি আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারে।ফ্যামিলি চালাতে গেলেও যেমন প্রবলেম হয়, তেমনি স্কুলের ক্ষেত্রেও হতে পারে, তাই যাতে তাড়াতাড়ি সেটা সমাধান করা যায় সেই চেষ্টাই আমরা করি।”
প্রিন্সিপল মৌসুমী সাহা যেন এক ‘অলরাউন্ডার’
প্রিন্সিপল মৌসুমী সাহা- “ক্লাস নিতে আমার ভালোই লাগে। আমি নিয়েও থাকি। তবে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাজ থাকে তো, আর প্রিন্সিপল হিসেবে কাউন্সিলের প্রচুর প্রেসার। তাছাড়া যেহেতু আমি এএসআইএসই ওয়েস্টবেঙ্গল চ্যাপ্টারের জয়েন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সেহেতু ওদিকেও একটু নজর দিতে হয়।তা সত্ত্বেও দৈনন্দিন ক্যারিকুলামকে ফলো করা ও সিলেবাস, স্ট্র্যাটেজি প্ল্যানিং এক্সিকিউশন সবটাই আমি লক্ষ্য রাখি। সিলেবাস, লেসন প্লান এই কাজগুলোও আমি নিজেই করি।”
স্কুলের রেজাল্ট
প্রিন্সিপল মৌসুমী সাহা- “কাউন্সিল এবছর মেরিট লিস্ট দিচ্ছে না। তাহলেও ওভারঅল ফলাফল খুবই ভালো হয়েছে। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা খুব খুশি।”
অনলাইন ক্লাস নিয়ে প্রিন্সিপল জানালেন তাদের কথা
প্রিন্সিপল মৌসুমী সাহা- “আমাদের স্কুল আগে থেকেই ডিজিটাল ক্যাম্পাস। প্রতিটি সার্কুলার থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যাপারটাই আমাদের অনলাইনের মাধ্যমে করা হতো, এখন একটু বাড়তি সুবিধা যে নতুন করে আমাদের স্টুডেন্ট বা টিচারদের টেকনোলজি সম্বন্ধে কোন ট্রেনিং দিতে হয়নি। আমরা মার্চ মাসে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু করি। প্রতিটি ক্লাসের মধ্যে একবার ব্রেক আছে। পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা ক্যারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ ও অনলাইনে করি। রবীন্দ্রজয়ন্তী ,ফাদার্স ডে, মাদার্স ডে সেলিব্রেশন প্রতিটি ভার্চুয়াল হয়েছে। পোস্ট করেছি আমাদের সাইটে, আমাদের স্কুলের ফেসবুক পেজেও রোজ আপডেট যায়। প্রত্যেকের কাছে স্কুলের কাউন্সিলর -এর ফোন নাম্বার আছে। যাতে এই সিচুয়েশনে কোন রকম অসুবিধা না হয় সেটা লক্ষ্য রাখে আমাদের স্কুলের কাউন্সিলার, এটা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
অনলাইন অ্যাক্টিভিটি
প্রিন্সিপল মৌসুমী সাহা- “দেখুন বাচ্চারা শুধু স্কুলে আসছে না ফিজিক্যালি কিন্তু ডিজিটালি। আমরা যেভাবে ডিজাইন করেছি ক্লাস রুম সিস্টেমকে তাতে ওরা ইন্টারেস্ট পাচ্ছে, শুধু তাই নয়-অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি অনলাইন অ্যাক্টিভিটিতে ওরা আগ্রহী।আমার এখানে সেরকম কোনো অভিযোগ এখন অবধি পাইনি, পেলে অবশ্যই ভেবে দেখব।”
ক্লাস ওয়ান থেকে এইট কাউন্সিলের কি সিলেবাস
প্রিন্সিপল মৌসুমী সাহা- “কাউন্সিলের ওয়েবসাইট-এ ঢূকলে আপনারা দেখতে ও বুঝতে পারবেন। কাউন্সিল চাইল্ড ফ্রেন্ডলি- প্রত্যেকটি পদক্ষেপ কাউন্সিলের খুবই গোছানো। কোনও স্কুল যদি এটা ফলো করে অবশ্যই ভালো স্টুডেন্ট তৈরি হবে। স্কুলেরও ভালো রেজাল্ট হবে। এটাও আমাদের একটা সাকসেস স্টোরি বলতে পারেন।আমরা প্রতিটি ইনস্ট্রাকশন কাউন্সিলের ফলো করি ও মেনে চলি।”
স্বপ্ন নিয়ে কি বললেন প্রিন্সিপল
প্রিন্সিপল মৌসুমী সাহা- “আমার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল টিচার হওয়া।এই কাজটাকে আমি ভালোবাসি আমার সন্তানের মতো। শত কাজের পরেও আমি হাসিমুখে চলতে পছন্দ করি। সব সময় পজিটিভ থাকতে ভালোবাসি। আমাদের কাজ ভালো স্টুডেন্ট তৈরি করা।”
স্কুল থেকে বই নেওয়া কি বাধ্যতামূলক
প্রিন্সিপল মৌসুমী সাহা- “আমার স্কুল ডাইরিতে প্রতিটা ক্লাসে সাবজেক্ট বুকের লিস্ট দেওয়া আছে কেউ চাইলে বাইরে থেকে কিনে নিতে পারে। অভিভাবকদের অনুরোধের ভিত্তিতে আমরা একই ছাদের তলায় যাতে সব বই পাওয়া যায় সেই চেষ্টা করেছি। বই অন্য একটি সংস্থা দায়িত্ব নিয়ে সাপ্লাই করে। স্কুলের ভর্তির সঙ্গে বই নেওয়ার কোনও সম্বন্ধ নেই।”
ভর্তির ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে দিয়েছেন এই সমাধান
প্রিন্সিপল মৌসুমী সাহা- “প্রথম কথা, যে সমস্ত ছেলে-মেয়েরা আমাদের এখানে ভর্তি হয় তারা মোটামুটি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। কিন্তু যারা যারা তাদের অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে এসেছেন আমরা যথাসাধ্য তাদের সাহায্য করেছি।কেউ হয়তো একবারে পারবে না, তাদেরকে আমরা ইনস্টলমেন্ট করে দিয়েছি। এটা তো বুঝতেই পারছেন- স্কুলে খালি বাচ্চারা আসছে না বাকি সবকিছু সিস্টেমেই চলছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন থেকে শুরু করে সবকিছুই দিয়ে যেতে হচ্ছে। অনলাইন ক্লাসের টেকনোলজিক্যাল সাপোর্টের খরচসহ অন্যান্য বহুমুখী খরচ হচ্ছে।”
আইসিএসই পাশ করে অনেকেই সিবিএসই-তে চলে যায়
প্রিন্সিপল মৌসুমী সাহা- “আমাদের ক্ষেত্রে হয়নি। আমাদের স্কুলে যারা ক্লাস টেন পাশ করেছে তারা প্রত্যেকে ইলেভেনে অ্যাডমিশন নিয়েছে। তবে হ্যাঁ, কিছু কিছু যায়। কিন্তু আগে যে ভয়টা ছিল সিলেবাসের সেটা এখন আর নেই এখন দুটো সিলেবাসই “অ্যাট পার”।”
অনলাইন ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের চোখের সমস্যা রোধে নিয়েছেন এই উপায়
প্রিন্সিপল মৌসুমী সাহা- “আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ এ ব্যাপারে আসেনি। আমরা ওয়াকিবহাল ছিলাম- সেই জন্য আমরা প্রতি 1 ঘণ্টা ক্লাসের পরে এক ঘণ্টা রেস্ট দিয়ে ক্লাস চালিয়েছি। প্রতিটি ক্লাসের পরে চোখের পরিচর্যার জন্য আমরা গাইডলাইন দিয়েছি যোগা ও জলের ঝাপটা দিতে বলেছি। প্রেয়ার দিয়ে আমাদের ক্লাস শুরু হয় কোন অসুবিধা হচ্ছে না বা হয়নি।”
বিএড বিষয়ে
প্রিন্সিপল মৌসুমী সাহা- “আমাদের সবাই বিএড টিচার। তবুও যদি কেউ বিএড না থাকে আমরা আমাদের বিএড কলেজ থেকে তাদেরকে দু’বছরের কোর্স করিয়ে নিই।”
Published on: জুলা ১৩, ২০২০ @ ১৬:৩৭