
- কেরালা গ্রীষ্মের মরশুমে পর্যটকদের টানতে দেশজুড়ে শুরু করছে প্রচারাভিযান
- স্কুলে গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময়ে পরিবারগুলি/পারিবারিক সফর ব্যবস্থাপকদের টানতে বিশেষ নজর দেওয়া হবে
- ‘মোস্ট ওয়েলকামিং রিজিয়নস’-এর তালিকায় কেরালা দ্বিতীয়
- ২০২৪ সালে বাংলা থেকে ১.৪০ লাখ পর্যটক কেরালা ভ্রমণ করেছে
Published on: মার্চ ২৫, ২০২৫ at ২৩:০১
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৫ মার্চ: আজ কলকাতায় কেরালা পর্যটন এক প্রচারাভিযানের আয়োজন করে। ললিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে আয়োজিত এই প্রচারাভিযানে একদিকে যেমন ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যুর অপারেটররা ছিলেন ঠিক তেমনই হাজির হয়েছিলেন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। কেরালা পর্যটন দুই পক্ষের সঙ্গেই বৈঠক করে। পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কেরালা থেকে আসা ট্যুর অপারেটর থেকে শুরু করে হোটেলিয়ার্স, রিসর্ট –এর প্রতিনিধিরা বৈঠক করেছেন। ঠিক তেমনই সংবাদ মাধ্যমের সামনে কেরালা পর্যটনের সাম্প্রতিক তথ্য তুলে ধরেছেন তাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইনফর্মেশন অফিসার সাজেশ। তিনি জানিয়েছেন , ২০২৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেরালা ভ্রমণ করেছেন ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ।
কেরালা সাতটি বি২বি মিটের আয়োজন করছে, কলকাতায় অংশ নেয় ৪৪ ট্রেড পার্টনার
এদিন অনুষ্ঠান শুরু হয় পার্টনারশিপ মিট দিয়ে। কেরালা থেকে আসা হোটেলিয়ার্স, রিসর্ট ব্যবসায়ী, ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে ব্যবসায়িক বিষয়ে আদান-প্রদান হয় কলকাতার ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের। এরপর কেরালা পর্যটনের ট্যুরিস্ট ইনফর্মেশন অফিসার সাজেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন। বলেন- তারা সাতটি বি-টু-বি মিট এর আয়োজন করছে। যার মধ্যে আছে- হায়দ্রাবাদ, বেঙ্গালোর, আমেদাবাদ, দিল্লি, চন্ডীগড়, জয়পুর আর চেন্নাই। আজ কলকাতায় ৪৪ ট্রেড পার্টনার্স এসেছে কেরালা থেকে। এবার আমাদের ফোকাস থাকছে উত্তর কেরালায়, যার মধ্যে কান্নুর, ওয়ানাড় জেলা।
এদিন তিনি জানিয়েছেন- গত বছর ২০২৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১ লক্ষ ৪০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। দেশীয় পর্যটক আগমন হয়েছে ২ কোটি ৪০ লক্ষ। তবে আন্তর্জাতিক পর্যটক আগমনে সাড়া ফেলে দিয়েছে কেরালা। ২০২৪ সালে ৬ কোটি ৪০ লক্ষ বিদেশি পর্যটক কেরালা ভ্রমণ করেছেন।
স্কুলের গরমের ছুটি এবং পারিবারিক পর্যটনকে লক্ষ্য রেখে পর্যটনের নতুন সম্ভার- পর্যটনমন্ত্রী রিয়াস
কেরালার পর্যটনমন্ত্রী পিএ মোহাম্মদ রিয়াস বলেন, “গ্রীষ্মের ছুটির মরশুম দ্রুত এগিয়ে আসছে, তাই আমরা স্কুলের গরমের ছুটি এবং পারিবারিক পর্যটনকে লক্ষ্য রেখে ভারতীয় দর্শনার্থীদের জন্য নতুন সম্ভার উন্মোচন করব।”
এ’বারের প্রচারে জোর দেওয়া হবে উত্তর কেরালা, বিশেষ করে ওয়ানাড, বেকাল, কান্নুর এবং কোঝিকোড়ের উপরে। পাশাপাশি উন্নত পরিকাঠামো-সহ কম পরিচিত গন্তব্যস্থলগুলিতেও মনোনিবেশ করা হবে বলে মন্ত্রী জানান।
শ্রী রিয়াসের মতে, “দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা কেরালার পর্যটনকে একটি গতিশীল উদ্যোগে পরিণত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আমাদের সমগ্র ভারতব্যাপী সচেতনতামূলক প্রচারের মূল লক্ষ্য হল, বিভিন্ন ধরণের দর্শনার্থীর জন্য সব ঋতুতেই উপভোগ্য পর্যটন গন্তব্য হিসেবে কেরালার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তোলা।”
পর্যটনের নতুন পণ্য নিয়ে জানান কেরালা সরকারের পর্যটন সচিব
কেরালা সরকারের পর্যটন সচিব বিজু কে বলেন, “নতুন পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে হেলি-ট্যুরিজম এবং সমুদ্র বিমান উদ্যোগ, যা রাজ্যের গন্তব্যগুলিকে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত এবং সহজগম্য করে তুলবে।”বিজু আরও বলেন, “নতুন প্রকল্পগুলির পাশাপাশি, দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা সামগ্রিকভাবে সমৃদ্ধ করতে রাজ্যের মূল সম্পদ যেমন সমুদ্র সৈকত, হিল স্টেশন, হাউসবোট এবং ব্যাকওয়াটার তো থাকছেই।”
সমস্ত ঋতুর ক্ষেত্রেই কেরালা এক রোমাঞ্চকর পর্যটনস্থল-কেরালার পর্যটন পরিচালক
কেরালার পর্যটন পরিচালক শিখা সুরেন্দ্রনের দাবি, “আমি জোর দিয়ে বলছি, কেরালা পর্যটনের ক্ষেত্রে শুধু তার পরম্পরাগত আকর্ষণগুলিই বজায় রাখে নি, বরং বিভিন্ন উদ্ভাবনী পণ্য এবং উদ্যোগের মাধ্যমে পর্যটনক্ষেত্রকে ক্রমাগত বিকশিত করে চলেছে। ফলে সমস্ত ঋতুর ক্ষেত্রেই কেরালা এক রোমাঞ্চকর পর্যটনস্থল হয়ে রাজ্যের খ্যাতি বৃদ্ধি করছে ও পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে।”
কেরালার পর্যটনে একটি বিশাল অংশই দেশীয় পর্যটকেরা। সেই অবদানের কথা মাথায় রেখে ও পর্যটনের ক্রমবর্ধমান আগ্রহকে কাজে লাগাতে, বিশেষ করে স্কুলের গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় দেশব্যাপী অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য রাজ্য পর্যটন দফতর একটি সর্বভারতীয় প্রচার শুরু করেছে।
কেরালা সরকারের পর্যটন বিভাগের পরিচালক শিখা সুরেন্দ্রনের মতে, বিলাসিতা এবং অবসর যাপনের মিশ্রণে, কেরালা দ্রুত ডেস্টিনেশন ওয়েডিং এবং মাইস (মিটিং, ইনসেনটিভ, কনফারেন্স এবং প্রদর্শনী) ইভেন্টের জন্য একটি পছন্দের কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। রেকর্ড বলছে, দিনের পর দিন, আরও বেশি করে ভারতীয় এবং বিদেশি নাগরিক কেরালায় বেড়াতে আসছেন। দর্শনীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য, বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা এবং ঐতিহ্য ও আধুনিকতার নিরবচ্ছিন্ন মেলবন্ধনের দৌলতে এই রাজ্য স্বতন্ত্র অভিজ্ঞতার সন্ধানে থাকা ইভেন্ট পরিকল্পনাকারী, দম্পতি এবং কর্পোরেট ক্লায়েন্টদের সমানভাবে আকর্ষণ করছে।
অতিমারী-পরবর্তী সময়ে, কেরালাকে অবশ্যগন্তব্য পর্যটন স্থান হিসেবে বহু আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ স্বীকৃতিটি শীর্ষস্থানীয় ডিজিটাল ভ্রমণ সংস্থা Booking.com থেকে এসেছে, যারা তাদের ত্রয়োদশ বার্ষিক পর্যটক মূল্যায়ন পুরষ্কারে ‘মোস্ট ওয়েলকামিং রিজিয়নস’-এর তালিকায় কেরালাকে দ্বিতীয় স্থান দিয়েছে।
- একটি অ্যাডভেঞ্চার পর্যটন গন্তব্য হিসেবে কেরালার অবস্থানকে আরও উন্নত করার জন্য, এই বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক সার্ফিং, প্যারাগ্লাইডিং এবং মাউন্টেন সাইক্লিং চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে রাজ্য।
- ১৯ থেকে ২৩ মার্চ ইদুক্কির ভাগামনে আন্তর্জাতিক প্যারাগ্লাইডিং উৎসব এবং ২৮ থেকে ৩০ মার্চ ওয়ানাডের মানন্তওয়াডিতে মাউন্টেন টেরেইন বাইকিং চ্যাম্পিয়নশিপ (এমটিবি কেরালা ২০২৫) অনুষ্ঠিত হবে।
কেরাল সত্যিই অনন্য কেন জানেন
ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য হাউসবোট, ক্যারাভান স্টে, প্ল্যান্টেশন ভিজিট, জঙ্গল রিসোর্ট, হোমস্টে, আয়ুর্বেদ-ভিত্তিক সুস্থতা সমাধান, অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রমস, সবুজে ঢাকা পাহাড়ে ট্রেকিং এবং গ্রামাঞ্চলে পায়ে হেঁটে ঘোরার মতো বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে এই রাজ্য সত্যিই অনন্য।
কেরালায় পর্যণের আধিক্য বাড়ছে
২০২২ সালে যেখানে কেরালায় দেশীয় পর্যটকদের আগমন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়ে অতিমারীর আগেকার সংখ্যাকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল, সেখানেই ২০২৩ সালে তাদের আগমন রেকর্ড সংখ্যায় পৌঁছে যায়। ২০২৪ সালেও পর্যটকদের আগমনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) মোট ১,০৮,৫৭,১৮১ জন দেশীয় পর্যটক এখানে এসেছেন। চলমান শীতকালীন ছুটির মরশুমে বুকিংয়ের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা থেকে আশা করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আগমনও এই বছর কোভিড-পূর্ব স্তরে পৌঁছে যাবে।
গ্রীষ্মের ছুটির মরশুমে দেশীয় পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রত্যাশায় কেরালা পর্যটন বড় বড় বাণিজ্য মেলায় সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি বৃহত্তর দর্শকদের সামনে নতুন পণ্যসম্ভার তুলে ধরার জন্য ভারতজুড়ে বি২বি রোড-শো আয়োজনের মাধ্যমে ভ্রমণ বাণিজ্য নেটওয়ার্কিং ইভেন্টের বিস্তৃত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
Published on: মার্চ ২৫, ২০২৫ at ২৩:০১