এসপিটি নিউজ, পুণে ও কলকাতা, ৭ নভেম্বর: বিপুল প্রত্যাশা ও আগ্রহের অবসান ঘটিয়ে অভয় প্রভাবনা সংগ্রহশালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সম্পন্ন হল। এই সংগ্রহশালা জৈন দর্শন এবং ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতি নিবেদিত সর্ববৃহৎ ‘আদর্শের সংগ্রহশালা’। অমর প্রেরণা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান তথা সংগ্রহশালার প্রতিষ্ঠাতা অভয় ফিরোদিয়া দ্বারা নির্মিত অভয় প্রভাবনা ভারতের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ ও প্রচারের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এই সংগ্রহশালার আদর্শ হল : জৈন মূল্যবোধ সম্পর্কে গভীর চেতনার সঞ্চার,ভারতীয় মূল্যবোধ প্রক্রিয়ার উপরে তার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব এবং সমসাময়িক সমাজে এর প্রাসঙ্গিকতা। সেই আদর্শ উদযাপনের উদ্দেশ্যেই, এই যুগান্তকারী উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সম্মানীয় বহু বিশিষ্টজন,সাংস্কৃতিক পণ্ডিত এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বদের সমাবেশ ঘটে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী নীতিন গড়করি, এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা গোয়ালিয়রের মহারাজা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া । অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, দ্য হেগএর বিচারপতি দালবীর ভান্ডারি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহামান্য মহারাজ কুমারলক্ষ্মী রাজসিংমেওয়ার; পদ্মভূষণ ডি আর মেহতা, বিএমভিএসএস-এরপ্রতিষ্ঠাতা; এবংপদ্মভূষণ আন্না হাজারে, গান্ধীবাদী নেতা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেনকা গান্ধি, পরিবেশ ও বনমন্ত্রণালয়ের (স্বতন্ত্রদায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রতিমন্ত্রী। অনুষ্ঠানটি আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ পেয়েছিল পদ্মশ্রী গুরুদেব রাকেশজি (ধর্মপুর), পদ্মশ্রী আচার্য চন্দনাজী মহারাজ (বীরায়তন), এবং মহামান্য সিলিংটংখররিনপোচে, যিনি মহামান্য দালাই লামার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
ইন্দ্রায়ণী নদীর পারে, মনোরম পরিবেশে অবস্থিত, সাড়ে তিন লক্ষ বর্গফুটের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে থাকাসুসজ্জিত এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অভয় প্রভাবনা সংগ্রহশালাটি দর্শকদের গভীর ভারতীয় মূল্যবোধে নিমজ্জিত করার জন্য নকশা করা হয়েছে, ঠিক যেমনটি জৈন ধর্মের শিক্ষায় প্রতিফলিত হয়। নিখুঁতভাবে ডিজাইন করা ৩০টি গ্যালারি জুড়ে, ৩৫০টিরও বেশি অনন্য নিদর্শন জৈন আদর্শ অনুযায়ী সুরক্ষা, নিরাপত্তা, উৎপাদনশীলতা, সামাজিক স্তরে সমৃদ্ধি, ব্যক্তিগত স্তরে সহানুভূতি,মুক্তমন এবং নৈতিক জীবনযাপন সংক্রান্ত মূল্যবোধের সরমর্মগুলিকে চিত্রিত করে।
জটিল দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে আধুনিক এবং সহজ পদ্ধতিতে ধারণা প্রদানের জন্য ৫০ একর (বিশ হেক্টর) জমি জুড়ে তৈরি সংগ্রহশালাটিউচ্চ-প্রযুক্তির অডিও-ভিজ্যুয়াল, অ্যানিমেশন,ভার্চুয়াল রিয়েলিটি,নিমগ্ন অভিজ্ঞতা,ইন্টারেক্টিভ সিস্টেম এবং বিশেষভাবে নির্মিত ৩৫০টি শিল্পকর্ম,ভাস্কর্য এবং বিরাট প্রতিকৃতিতে পরিপূর্ণ। সংগ্রহশালায় ৩৫টি প্রজেক্টর, ৬৭৫টি অডিও স্পিকার,২৩০টি এলইডি টিভি/কিয়স্ক,৮০০০ আলোর ফিক্সচার, ৬৫০ টন এইচভিএসি লোড, ৫ কিলোমিটারের বেশি এইচভিএসি ডাক্টিং রয়েছে এবং সংগ্রহশালা চালানোর জন্য বিদ্যুতের চাহিদার লোড প্রায় ২ এমভিএ।এখানকার নির্মল পরিবেশ এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এক সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যা ভারতের মূল্যবান ঐতিহ্যকে সম্মান জানায়।
এই সংগ্রহশালা তৈরির অনুপ্রেরণা প্রসঙ্গে অভয় ফিরোদিয়া জানিয়েছেন, “অভয় প্রভাবনা শ্রমণ ও জৈন ঐতিহ্যের গভীর মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তৈরি, যে মূল্যবোধ হাজার হাজার বছর ধরে ভারতের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক নীতির ভিত গঠন করেছে। এই সংগ্রহশালা শিক্ষা,উদ্যোগ এবং নৈতিকতার আদর্শগুলিকে শুধুমাত্র ধারণা হিসাবে নয়, বরং প্রকৃত সামাজিক মূল্যবোধ হিসাবে প্রতিফলিত করে- যা ব্যক্তিদের এক ভারসাম্যময় এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনের পথেপরিচালিত করে৷ আমাদের আশা, এই কেন্দ্রটি জৈন ধর্মের মাধ্যমে প্রকাশিত ভারতীয় সভ্যতার দশটি আদর্শের অন্বেষণে ও আদর্শগুলির সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে। ওই দশটি আদর্শ হল:
১. অসি: সরঞ্জাম এবং অস্ত্র
২. মসি: কালি এবং যোগাযোগ
৩. কৃষি: কৃষি ও পশুপালন
৪. বাণিজ্য: ব্যবসা এবং বাণিজ্য
৫. শিল্প: পেশাগত দক্ষতা
৬. বিদ্যা: জ্ঞান (গণিত,সৃষ্টিতত্ত্ব,চিকিৎসা বিজ্ঞান)
৭. অহিংসা: হিংসা না করা এবং চিন্তা,বক্তৃতা এবং কর্মের মাধ্যমে কাউকে আঘাত না করা
৮. অপরিগ্রহ: স্বাধিকারের ইচ্ছা বর্জন
৯. আনেকান্তবাদ: কোনও সত্যকেই ধ্রুব হিসেবে মেনে না নেওয়া,অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিকেও সমান বৈধ হিসাবে গ্রহণ করা
১০. ক্ষমা: মার্জনা করা ও মার্জনাচাওয়া
অন্বেষণের ধারণাটি “পান্না সমীখায়ে ধম্মাম”-এর জৈন নীতিতে নিহিত,যা বস্তুনিষ্ঠ অনুসন্ধান এবং সত্য বোঝার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রত্যয় প্রতিষ্ঠার উপরে জোর দেয়।
২২০০ বছরের সুপ্রাচীন পালে জৈন গুহাগুলির কাছে, পুনের ঐতিহাসিক ভূমিতে অবস্থিত অভয় প্রভাবনা সংগ্রহশালাটি এখন প্রতিদিন দুই সহস্রাধিক দর্শককে স্বাগত জানাচ্ছে এবং দ্রুত এক আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক গন্তব্যে পরিণত হতে চলেছে।প্রতিফলন এবং অনুপ্রেরণার ক্ষেত্র প্রদান করে, এই সংগ্রহশালাসমস্ত বয়স এবং পটভূমির ব্যক্তিদের জৈন ধর্মের নিরবধি জ্ঞান এবং সার্বজনীন মূল্যবোধগুলি অনুভব করতে আমন্ত্রণ জানায়। পুনেকে সাংস্কৃতিক অন্বেষণের কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করেঅভয় প্রভাবনা আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক শিক্ষার আলোকবর্তিকা রূপে বিশ্বের মঞ্চে পুনের স্থানকে উন্নততর করেছে।
অভয় ফিরোদিয়ার নেতৃত্বে অমর প্রেরণা ট্রাস্ট ভারতের ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অভয় প্রভাবনা সংগ্রহশালার মাধ্যমেট্রাস্ট এমন একটি মঞ্চ তৈরির কথা ভেবেছে- যা শুধুমাত্র ভারতের নৈতিক ঐতিহ্যকে সম্মান করাই নয়, বরং ভবিষ্যত প্রজন্মকে তাদের নিজেদের জীবনে এই মূল্যবোধগুলি পালন করতেও অনুপ্রাণিত করবে।