ভারতে বিদেশি পর্যটক পরিদর্শনে শীর্ষস্থানে গুজরাত, চমকে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গও-বলছে ২০২২-র রিপোর্ট

দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: আগ ৯, ২০২৩ @ ১৮:০৮
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৮ আগস্ট: কোভিড মহামারীর পর থেকে ভারতে বিদেশি পর্যটকদের আগমন শুরু হয়েছে নতুন করে। ধীরে ধীরে আগমন বাড়ছে। ভারতের পর্যটন মন্ত্রক সম্প্রতি ২০২২ সালের বিদেশি পর্যটক পরিদর্শনের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা প্রথম দশটি রাজ্যের নাম প্রকাশ করেছে, যেখানে সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন কিংবা পরিদর্শন করেছেন। সেই তালিকায় শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে গুজরাত। তবে পশ্চিমবঙ্গও রীতিমতো চমক দেখিয়েছে।তারা তৃতীয় স্থানে রয়েছে। মহারাষ্ট্র আছে দ্বিতীয় স্থানে।ভারতে বিদেশি পর্যটক পরিদর্শনে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান আরও ভাল হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া বা টাফি’র চেয়ারেম্যান(পূর্ব) অনিল পাঞ্জাবি।

২০২৩ সালে এই বৃদ্ধির হার বজায় থাকবে

এবার বিদেশি পর্যটক পরিদর্শনের বৃদ্ধির হার দেখে মনে হয়েছে ছবিটা খুব আহামরি নয়। তবে গত ১২ বছরের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির হার ক্রমে বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৪ সালে- ১১.৯৪ %। তবে ২০২০ ও ২০২১ সালে বিদেশি পর্যটক পরিদর্শন অনেকটাই তলানিতে নেমে এসেছিল। ২০২০ সালে ৭.১৭ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটক পরিদর্শন করেছিল। যেখানে ২০১৯ সালে করেছিল ৩১.৪১ মিলিয়ন। অর্থাৎ কোভিড মহামারীর ফলে তা ৭৭.১৭% কমে গিয়েছিল। একই ভাবে ২০২১ সালেও ৮৫.৩৬% কমে গিয়েছিল। যদিও ২০২২ সালে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এবার ৮.৫৯ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটক ভারতে পরিদর্শন করেছেন। বৃদ্ধির হার রীতিমতো রেকর্ড করেছে-৭১৪.২৬%। আশা করা হচ্ছে ২০২৩ সালে এই বৃদ্ধির হার বজায় থাকবে।

তালিকায় প্রথম দসে এই রাজ্যগুলি

ভারতের রাজ্যগুলিতেও বিদেশি পর্যটক পরিদর্শন করছেন নিয়মিত। কোভিডের পর থেকে প্রবণতা ধীরে ধীরে ফিরছে। তবে এখানেও বৃদ্ধির হার অল্প। এই তালিকায় একেবারে শীর্ষে আছে গুজরাত। সেখানে ২০২২ সালে ১.৭৮ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটক পরিদর্শন করেছে।বৃদ্ধির হার ২০.৭০%। দ্বিতীয় স্থানে আছে মহারাষ্ট্র। পরিদর্শন করেছেন ১.৫১ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটক। বৃদ্ধির হার ১৭.৬০%। তবে পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি পর্যটক পরিদর্শনের ছবি রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। পর্যটনের মানচিত্রে বিদেশিদের কাছে ভারতের তৃতীয় পছন্দের স্থান  যে বাংলা সেটা কিন্তু সদ্য প্রকাশিত পর্যটন মন্ত্রকের রিপোর্টই বলছে। ভারতে তৃতীয় সেরা রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ , যেখানে বিদেশি পর্যটপকরা পরিদর্শন করেছেন। ২০২২ সালে ১.০৪ মিলিয়ন। বৃদ্ধির হার ১২.০৮%। এরপর ক্রমানুসারে রয়েছে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, তামিলানাড়ু, রাজস্থান, কেরালা, পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ। আশ্চর্যের হলেও সত্যি প্রথম দশে নেই হি্মাচল প্রদেশ কিংবা জম্মু ও কাশ্মীরের মতো রাজ্য কিংবা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল।

পশ্চিমবঙ্গের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল-অনিল পাঞ্জাবি

ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া বা টাফি’র চেয়ারম্যান(পূর্ব) অনিল পাঞ্জাবি এসপিটি-কে বলেন- এটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হিসাবে খুবই ভাল লাগছে। এটা তো অস্বীকার করা যাবে না যে এখানে পর্যটনের সব ধরনের উপকরণ রয়েছে।আসলে পশ্চিমবঙ্গ এমনই একটা রাজ্য যেখানে বেশ কিছু সুবিধা আছে যা আপনি দেশের অন্য কোথাও তা পাবেন না। পশ্চিমবঙ্গের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। এখানে খাবার থেকে শুরু করে হোটেল ভাড়া তুলনামূলক অনেক কম।

  • এখানে ফাইভ স্টার কিংবা সেভেন স্টার হোটেল ভাড়া দিল্লি, মুম্বই-এর চেয়ে অনেক কম। তাছাড়া এখানে যাতায়াতের অনেক সুযোগ আছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব ভাল।
  • দ্বিতীয়, এখানে মরুভূমি বাদ দিয়ে সব কিছু আছে। পাহাড়, সমুদ্র, বিচ, হেরিটেজ, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস সব আছে। বিশেষ করে এখানে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজো কার্নিভালকে যেভাবে তুলে ধরেছেন তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দারুনভাবে ছাপ ফেলেছে। যার ফলে গত বছর থেকে বিদেশে থাকা বহু প্রবাসী থেকে শুরু করে বিদেশিরা আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে। গত বছর এখানে বহু বিদেশি এসেছে। আশা করছি, এবার সেই সংখ্যাটা আরও বাড়বে।
  • তৃতীয়, কলকাতা হল পূর্ব ভারতের শুধু নয় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটা গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্ট। এখান থেকে মানুষ সহজেই উড়ানে চেপে সেইসব গন্তব্যে অনেক কম সময় পৌঁছে যেতে পারে। এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক।

আমাদের রাজ্য সরকার যদি এই বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দিয়ে ভাবে এবং সেই সঙ্গে কলকাতা-ইউরোপের মধ্যে যদি সরাসরি উড়ান চালুর ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে কিন্তু বিদেশি পর্যটক পরিদর্শন বৃদ্ধির হার আগামিদিনে আরও বাড়বে নিঃসন্দেহে।আবারও বলছি এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।যোগ করেন টাফি’র চেয়ারম্যান।

টাফি’র চেয়ারম্যান (পূর্ব)নিল পাঞ্জাবি আরও বলেন- কলকাতায় একের পর এক ট্রাভেল ফেয়ার আয়োজন হয়েছে। এই খবর বিদেশেও পৌঁছচ্ছে। সবার উপরে রয়েছে জি২০ মিটিং। দার্জিলিং-এ সেই মিটিং-এর আয়োজন করে পর্যটন দফতর একটা বাররাত পাঠাতে সফল হয়েছে। সেখানে যারা এসেছিলেন তারাও দেশে ফিরে গিয়ে এখানকার পর্যটন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করছে। ফলে এটাও একটা বড় দিক।পশ্চিমবঙ্গে এমন অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে তা যদি ঠিক ভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে পর্যটনে এক নম্বর জায়গা করে নেওয়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।তাই আমার মনে হয়, বিদেশি পর্যটক পরিদর্শন বৃদ্ধির হার এবার আরও বাড়বে পশ্চিমবঙ্গে।

Published on: আগ ৯, ২০২৩ @ ১৮:০৮


শেয়ার করুন