ই-পাসপোর্ট আসছে খুব শীঘ্রই কলকাতায়, বাড়াবে সুরক্ষা

Main দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

টাফি মিট ২০২৫-এ সম্মানিত হলেন রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসার আশিস কুমার মিদ্ধা
গত বছরে ১.৬ কোটি পাসপোর্ট পরিষেবা প্রদান করা হয়েছে

Published on: মার্চ ১৭, ২০২৫ at ২৩:৪৬

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৭ মার্চ :  আজ ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া বা টাফি’র সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত ছিলেন রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসার আশিস মিদ্ধা। পাসপোর্ট বিষয়ে এদিন তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আপডেট দিয়েছেন। তবে সেই বিষয়ে তথ্যগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে উপস্থিত সকলের কাছে। তবে সেই তথ্যগুলি প্রকাশে তার নাম উদ্ধৃত করা যাবে না বলে তিনি জানিয়ে দেন। টাফি’র ন্যাশনাল কমিটির মেম্বার অনিল পাঞ্জাবি পাসপোর্ট বিষয়ে সাম্প্রতিক আপডেট নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে বিস্তারিত জানিয়েছেন। সেই সব তথ্যই তুলে ধরা হচ্ছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ই-পাসপোর্ট বা ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট, যা আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে কলকাতায় চালু হয়ে যাবে। এই পাসপোর্ট চালু হলেন পাসপোর্ট গ্রহীতার পাসপোর্টের সুরক্ষা অনেক বেশি মজবুত হবে।

ই-পাসপোর্ট কী?

ই-পাসপোর্ট হলো কাগজ এবং ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের সম্মিলিত সংস্করণ, যার মধ্যে একটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (RFID) চিপ এবং পাসপোর্টের একটি অংশ হিসেবে একটি অ্যান্টেনা থাকে, যাতে পাসপোর্টধারীর ব্যক্তিগত তথ্য এবং বায়োমেট্রিক তথ্য থাকে। পাসপোর্টের সামনের কভারের নীচে মুদ্রিত একটি ছোট অতিরিক্ত সোনালী রঙের প্রতীকের মাধ্যমে ই-পাসপোর্টটি দৃশ্যত শনাক্তযোগ্য হবে।

ই-পাসপোর্ট থাকার সুবিধা এবং পাসপোর্টধারীদের জন্য কার্যকর করার নিয়ম

ই-পাসপোর্টের প্রধান সুবিধা হল পাসপোর্টধারীর তথ্যের অখণ্ডতা বজায় রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ই-পাসপোর্টে তথ্য পুস্তিকায় মুদ্রিত আকারে থাকবে, এবং ইলেকট্রনিক চিপে ডিজিটালি স্বাক্ষরিত থাকবে, যা বিশ্বব্যাপী অভিবাসন কর্মকর্তারা নিরাপদে প্রমাণীকরণ করতে পারবেন; এইভাবে, জালিয়াতি এবং জাল পাসপোর্টের মতো সম্ভাব্য প্রতারণামূলক কার্যকলাপ থেকে পাসপোর্টকে রক্ষা করা হবে, একই সাথে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে সত্যতা নিশ্চিত করা হবে।

ই-পাসপোর্টের নিরাপত্তার জন্য অন্তর্নিহিত প্রযুক্তি হল পাবলিক কী ইনফ্রাস্ট্রাকচার (PKI) সমাধান যা সংবেদনশীল তথ্য সুরক্ষিত করার এবং ই-পাসপোর্টের মধ্যে চিপে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত এবং বায়োমেট্রিক ডেটার অখণ্ডতা এবং উৎপত্তি নিশ্চিত করার ভিত্তি।

বিদ্যমান বৈধ পাসপোর্টধারীদের জন্য ই-পাসপোর্ট দিয়ে পাসপোর্ট প্রতিস্থাপন করা বাধ্যতামূলক কিনা?

না। ভারত সরকার কর্তৃক জারি করা সমস্ত পাসপোর্ট তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ পর্যন্ত বৈধ থাকবে। যখন কোনও সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিস ই-পাসপোর্ট প্রদানের জন্য প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম হবে, তখন সেই পাসপোর্ট অফিসের অধীনে আবেদনকারী নাগরিকরা ই-পাসপোর্ট পাবেন। ভারত জুড়ে সমস্ত পাসপোর্ট অফিসে পর্যায়ক্রমে ই-পাসপোর্ট চালু হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। তবে কিছু জায়গায় এই ই-পাসপোর্ট চালু হলেও কলকাতায় আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে চালু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

তবে পাসপোর্ট করতে গেলে এখন ডিজিটাল তথ্য দেওয়া জরুরী। বিশেষ করে জন্মের শংসাপত্র। আগে যারা লিখিত শংসাপত্র জমা করেছিলেন পরে যখন তারা পাসপোর্ট পুনর্নবীকরণ করবেন তখন অবশ্যই তা  ডিজিটাল ‘বার্থ সার্টিফিকেট’ দিতে হবে। যদি এখনও তা না করে থাকেন তবে তারা যেন নিজের এলাকার প্রসাসনিক দফতরে গিয়ে তা করিয়ে নেনে। এটা পাসপোর্ট অফিস থেকে বলা হচ্ছে। পাসপোর্ট, করার সময় বা রিনিউ করার সময় কখনোই ভোটার আধার এবং প্যান কার্ডের ফটো কপি কিংবা জেরক্স কপি গৃহীত হবে না। আধার কার্ডেরও ডিজিটাল ফরম্যাট দেখাতে হবে। এমনকী যাদের পুরনো ভোটার কার্ড আছে তারাও যেন ভোটার কার্ডের নতুন কপি বের করে নে। কারণ সেটাই দেখাতে হবে। কারণ, আগের ভোটার কার্ডে যে বুথ নম্বর লেখা ছিল বর্তমানে তা অনেকাংশেই বদলে গিয়েছে। তাই সেক্ষেত্রে পুরনো ভোটার কার্ড –এ তথ্যের ত্রুটি  ধরা পড়ার সম্ভাবনা আছে। এদিকে খেয়াল রাখা জরুরী।

পাসপোর্ট আবেদনকারীর সাধারণ দায়িত্ব

বিধি মতো সমস্ত পাসপোর্ট আবেদনকারীদের সত্য তথ্য ও বৈধ আসল কাগজপত্র সহকারে আবেদন  জমা করা উচিত। ১৯৬৭ সালের পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী কোনও আবেদনকারী  মিথ্যা তথ্য দেবেন না বা পাসপোর্ট বা যাত্রার কাগজ জোগাড়ের জন্য কোনও তথ্য গোপন করবেন না। এই জাতীয় কাজের জন্য দুই বছরের জেল বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড দুই হতে পারে।

সাম্প্রতিকালে কলকাতায় রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসের নথিতে তেমনই কিছু ঘটনার খবর শিরোণামে উঠে এসেছে। ২০২৩ সালে সেখানে সিবিআই হানা দেয়। ১২ জনের নামে কেস ফাইল হয়। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরের ঘটনা ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর। যেখানে গোটা রাজ্যে মোট ৪৩৭ জনের বিরুদ্ধে ভুয়ো তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট করার অভিযোগ ওঠে। তাদের মধ্যে ১২জন আবার কলকাতার। ভুয়ো তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট করার সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আছে উত্তরবোন্নগে। সেখানে ৫০ শতাংশ এমন অভিযোগ আছে। তবে দক্ষিণবঙ্গেও সংখ্যাটা অনেক বেশি। তবে ইদানীংকালে ভুয়ো তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট করারা প্রবণতা অনেকটাই কমেছে।

পাসপোর্ট নিয়ে অনেক অনেক অভিযোগ থেকে। অনেকে নানা সমস্যার মুখে পড়েন। সেই সব আবেদনকারীর জন্য রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিস সাম্প্রতিককালে পাসপোর্ট আদালতের ব্যবস্থা করেছে। মাসে ছ’টি। এটি হয় মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার।

বর্তমানে পাওস্পোর্ট করতে দেড় হাজার টাকা লাগে। তবে কারও যদি পাসপোর্ট নষ্ট হয়ে যায় সেক্ষেত্রে নতুন করে পাওয়ার জন্য তাকে দ্বিগুন টাকা জমা করতে হবে অর্থাৎ তিন হাজার টাকা।

আর একটা দিক পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিস থেকে। সেটা হল- তিনটি প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট পৌঁছয় আবেদনকারীর কাছে- ১) পাসপোর্ট অফিসে ভেরিফিকেশোন, পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং সর্বশেষ পোস্টঅফিসের মাধ্যে তা আবেদনকারীর কাছে পোঁছে দেওয়া। বর্তমানে পুলিশ ভেরিফিকেশনে থানায় ডেকে পাঠানো যাবে না আবেদনকারীকে। আবেদনকারীর বাড়ি গিয়ে তা করতে হবে। এমনকি, আবেদনকারীর কাছ থেকে কোনও টাকা দাবি করতে পারবে না। যদি তা করে এবং সেই অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয় তাহলে ভারতীয় ফৌজদারী দন্ডবিধির আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  সেক্ষেত্রে অভযোগকারী rpo.kolkata@mea.gov.in এই মেইলে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারেন। এমনকি, তিনি ইচ্ছা করলে সশরীরে 4, ব্র্যাবোর্ন রোড, কলকাতা-4এই ঠিকানায় রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও অভিযোগ জানাতে পারেন। সোম, বুধ ও শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে আগে এলে আগে দেখা করার নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগ জানাতে পারবেন।

নীচে দেওয়া হল গত পাঁচ বছরে পাসপোর্ট –এর পরিসংখ্যান

  • ০১/০১/২০২৪ থেকে ৩১/১২/২০২৪- ৬ লাখের বেশি
  • ০১/০১/২০২৩ থেকে ৩১/১২/২০২৩- ৬,২১,১৩৩
  • ০১/০১/২০২২ থেকে ৩১/১২/২০২২ – ৬,০৪,৫৭৭
  • ০১/০১/২০২১ থেকে ৩১/১২/২০২১- ৩,৭৭৪,৪২১
  • গত বছরে ১.৬ কোটি পাসপোর্ট পরিষেবা প্রদান করা হয়েছে

৯৩টি PSK এবং ৪৪৪টি POPSK-এর ৩৭টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

মন্ত্রণালয় বিদেশে আমাদের ১৮৭টি মিশন পোস্টে পাসপোর্ট নিশ্চিতকরণ ব্যবস্থা সফলভাবে সংহত করেছে।

Published on: মার্চ ১৭, ২০২৫ at ২৩:৪৬


শেয়ার করুন