

Published on: অক্টো ১৩, ২০২৫ at ২০:৪৪
এসপিটি নিউজ, মায়াপুর (নদিয়া), ১৩ অক্টোবর : প্রতি বছরের ন্যায় এবছর ইসকনের প্রধান কেন্দ্র শ্রীধাম মায়াপুর চন্দ্রোদয় মন্দির এবং বিশ্বব্যাপী সমস্ত শাখা কেন্দ্রে শ্রীশ্রী লক্ষী পূর্ণিমার দিন ৭ অক্টোবর ২০২৫ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে দীপদান অনুষ্ঠান।চলবে রাসপূর্ণিমা ৫ ই নভেম্বর ২০২৫ বুধবার পর্যন্ত।এই একমাস ব্যাপী অনুষ্ঠানে জাতি- ধর্ম- বর্ন নির্বিশেষে সকলেই দীপদান করতে পারবেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলবে।একই সাথে চলবে দামোদরাষ্টকম্ স্ত্রোত্র পাঠ।দেশ বিদেশের হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকেন। পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য পৃথক লাইনের ব্যবস্থা করা হয়।কঠোর করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ভগবানের প্রীতি লাভার্থে দীপদান করা হয়।দীপদান আলোর উৎসব,আনন্দের উৎসব,অন্ধকার দূরীভূত করার উৎসব,মহামিলনের উৎসব।
চঅন্ধকার বিদূরিত হয়ে আমাদের মনোমন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হোক আলোর দীপ। শুভ দীপদান অনুষ্ঠানে এই হোক আমাদের ঐকান্তিক প্রার্থনা।
সনাতন ধর্মে যত প্রকার উৎসব আছে তার মধ্যে দীপাবলী অন্যতম।দীপাবলি কথাটির অর্থ দীপশ্রেণী বা দীপের আলি।ত্রেতাযুগে রাবনকে বধ করার পর ভগবান শ্রীরামচন্দ্র যখন অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, তখন অযোধ্যাবাসীগণ তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য বিশেষ উৎসবের আয়োজন করেছিল। সমগ্র অযোধ্যা নগরীকে আলোকমালায় সজ্জিত করে বিভিন্ন নৃত্যনাট্য ও আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল।তারই স্মরণে এই উৎসব। আজও বিভিন্ন মন্দিরে, গৃহে, রাজপথে, শত শত ঘৃত, তৈলপ্রদীপ, মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে এই উৎসব মহাসমারোহে উদযাপিত হয়। অনেকে আবার দীপাবলী বা দেওয়ালি উদযাপন করেন।
ইসকন মায়াপুরের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস এই দীপদান সম্পর্কে পুরানের ঘটনাকে স্মরণ করে বলেন- “সেখানে বলা হয়েছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুর বধ করেছিলেন। নরকাসুর ছিলেন পৃথিবীর পুত্র এবং তিনি ব্রহ্মা ও শিবের বরে এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন যে শুধু পৃথিবী নয়, দেবতাদেরও পরাজিত করে স্বর্গলোকও অধিকার করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামার সহায়তায়(ওই সময়ে সত্যভামা শ্রীকৃষ্ণের রণের সারথী হয়েছিলেন) তাকে হত্যা করেন।নরকাসুরের মৃত্যুর পর মাতা ধরিত্রী ওই দিন বিশেষ উৎসব করার জন্য শ্রীকৃষ্ণকে অনুরোধ করেন। এইভাবে নরকাসুরের কবল থেকে পৃথিবী ও স্বর্গলোকের উদ্ধার বিজয়োৎসব রূপে দীপাবলীর মাধ্যমে উদযাপিত হয়। এই উৎসব ধনসম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মীর প্রসন্নতাও বিধান করে। এই বিশেষ দিনটিতে যদি কারো গৃহ অন্ধকার থাকে তাহলে লক্ষ্মী দেবী সেখানে প্রবেশ করেন না। ভক্তেরা লক্ষ্মীদেবীর বিশেষ পূজা করে থাকে যাতে তাদের গৃহ সমৃদ্ধশালী হয়, সকলে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারেন। কৃষ্ণভক্তদের কাছে এই উৎসব অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কৃষ্ণভক্তরা শুধু এই বিশেষ দিনটিই নয়, একমাস ব্যাপী ভগবানের উদ্দেশ্যে দীপদান করে থাকেন। “
“ভাগবতের বর্ণনা অনুসারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দামবন্ধন লীলাবিলাস ঘটনাটি হয় এই দীপাবলীর সময়।কৃষ্ণের দামবন্ধন লীলা কে স্মরণ করে আজ সাড়ম্বরে নানা স্থানে মহোৎসব হয়। কোথাও কোথাও মহাসমারোহে কার্ত্তিক ব্রত পালন করা হয় এই সময়ে। বর্তমানে সারা বিশ্বের কৃষ্ণভাবনামৃত প্রসারের ফলে প্রায় সমস্ত দেশের ইসকন মন্দির সমূহে এই উৎসব মহাসমারোহে প্রতিপালিত হয়। পদ্মপুরানে বর্ণনা করা হয়েছে কার্তিক মাসের এই বিশেষ তিথি তথা সারা মাসেই যদি কেহ গগনতলে আকাশ প্রদীপ জ্বালায় তাহলে তার সমস্ত কুল পরিত্রাণ লাভ করে হরিধাম প্রাপ্ত হয়। সুস্থ ও সাংস্কৃতিক বিনোদনের মাধ্যমে দীপদান উৎসব উদযাপন সমাজের রুচিপূর্ণ সংযতচর্চা তথা জনসাধারণের যথার্থ কল্যাণ সাধনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।“
Published on: অক্টো ১৩, ২০২৫ at ২০:৪৪



