৫১ সতীপীঠের মধ্যে একমাত্র বক্রেশ্বরেই হয় এক ব্যতিক্রমী দুর্গাপুজো

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: অক্টো ১৭, ২০২৩ at ১১:১৯
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, বক্রেশ্বর, ১৭ অক্টোবরঃ কথিত আছে গোটা বিশ্বে পীঠস্থানের সংখ্যা একান্নটি।আর সবথেকে বেশি পীঠস্থানের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায়।মোট পাঁচটি। ‘বক্রেশ্বর’, ‘নন্দিকেশ্বরীতলা’, ’কংকালীতলা’, ‘ফুল্লরাতলা’, ’নলাটেশ্বরী’। এই তথ্য কম-বেশি অনেকেই জানেন।কিন্তু এই বীরভূম জেলায় এই পাঁচটি পীঠস্থানের মধ্যে মাত্র একটি পীঠস্থানে শরৎকালের দুর্গাপুজো হয়। সেই পীঠস্থানটি ‘বক্রেশ্বর’।

বাকি পীঠস্থানগুলিতে সারা বছর ধরে দেবী দুর্গাকে যে ভাবে পুজো করা হয়, সেই ভাবেই ‘মা দুর্গা’ পুজিত হন।কিন্তু ব্যাতিক্রম শুধুমাত্র ‘বক্রেশ্বর’।‘বক্রেশ্বর’ পীঠস্থানটিতে সারা বছর ধরে ‘দেবী দুর্গা’- কে পুজিত করা হলেও, এই শরৎকালে যে চার-পাঁচ দিনের বাঙালিদের শ্রেষ্ঠ উৎসব ‘দুর্গাপুজো’  তা শুধু ‘বক্রেশ্বর’ই হয়।

‘বক্রেশ্বর’ মন্দিরে একটি অষ্টধাতুর ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’-র মূর্তি আছে।সেই মূর্তিটিকে পুজো করা হয়,আর বাকি ‘দুর্গাপুজা’ যে ভাবে হয়।যেমন ‘ঘট’ আনা থেকে শুরু করে ‘বলিদান’পর্যন্ত সবকিছুই। ‘সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী’তে যে ভাবে পুজোর আচার মানা হয় সেই ভাবেই এই পুজো হয় ‘বক্রেশ্বরে’।

বীরভূম জেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যিনি গবেষনা করছেন সেই গবেষক ও লেখক  প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘গোটা বিশ্বের একান্নটি সতীপীঠের তথ্য জানা না গেলেও বীরভূম জেলায় যে পাঁচটি সতী পীঠ রয়েছে,তার মধ্যে শুধুমাত্র এই ‘বক্রেশ্বর’ পীঠস্থানটিতেই শরৎ কালের দুর্গাপুজো আমরা দেখি।

এই চারদিন ‘বক্রেশ্বরে’ ‘দেবী দুর্গা’-কে ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’রুপে পুজো করা হয়’।সুতরাং একান্ন পীঠের কথা না জানলেও বীরভূমের পাঁচটি পীঠস্থানের মধ্যে শুধুমাত্র ‘বক্রেশ্বর’ পীঠস্থানেই ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’ রুপে ‘দেবী দুর্গা’ পুজিতা হন,তা অন্ততঃ বীরভূমের ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রমী ও বিরল দুর্গা পুজো।

‘তীর্থভূমি তারাপীঠ’ গ্রন্থে লেখক প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বক্রেশর মাহাত্ম্য’ নিবন্ধে এই বিষয়ে বিশদ বর্ণনা করেছেন। বীরভূম জেলায় বক্রেশ্বর অবস্থিত। স্থানটি হিন্দুদের কাছে সতীপীঠ এবং সিদ্ধপীঠ রূপে পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। সদর সিউড়ি থেকে ১৪ মাইল এবং দুবরাজপুর রেল স্টেশন থেকে পাঁচ মাইল এবং তারাপীঠ থেকে ৭৫ কিমি দূরে অবস্থিত। এটি সতীর একান্ন পীঠের অন্যতম পীঠ। এখানে দেবীর দুই ভ্রুর মধ্যবর্তী স্থান (মনঃ) অর্থাৎ মন মতান্তরে বৃক্ক পতিত হয়েছিল।

বীরভূম ও তারাপীঠ গবেষক লেখক প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘তীর্থভূমি তারাপীঠ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন- “এখানকার দেবী অষ্টধাতুর তৈরি দশভূজা মহিষমর্দিনী বা বক্রেশ্বরী রূপে পূজিতা এবং ভৈরব বক্রনাথ। শিবরাত্রিতে এখানে বিশেষ পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই স্থানের উত্তর পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে বক্রেশ্বর নদী এবং দক্ষিণে পাপহরা নদী। পাশেই আছে মহাশ্মশান। শ্মশানে সিদ্ধ সাধক অঘোরীবাবার সমাধি আছে। তিনি বক্রেশ্বর মহাশ্মশানে সিদ্ধিলাভ করেন। তারাপীঠ ও বক্রেশ্বরে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন অঘোরীবাবা, খাঁকিবাবা, চক্রবর্তীবাবা সহ অনেকে। অষ্টাবক্র ঋষি ছাড়াও মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য ও প্রভু নিত্যানন্দ এখানে সাধনা করেছেন। প্রথম মন্দিরটি বিশ্বকর্মার বলে জনশ্রুতি।

Read more news:

অযোধ্যার আগেই কলকাতায় রামমন্দিরের উদ্বোধন, কলকাতাবাসীকে শুভেচ্ছা অমিত শাহের

ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ মতে, পুরাকালে অষ্টাবক্র ঋষি বক্রেশ্বরে বক্রনাথের ও মহিষমর্দিনীর সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন। কিংবদন্তি অষ্টাবক্র ঋষির নাম সুব্রত। সুব্রত একবার বৈকুণ্ঠে শচীপতি ইন্দ্রের আচরণে রুষ্ট হন এবং রাগে তার দেহের অষ্টস্থান বক্র হয়ে যায়। তথন তাঁর নাম হয় অষ্টাবক্র। ক্রোধ সংবরণ না করার জন্য তিনি অনুতপ্ত ও লজ্জিত হন এবং দেহ বিকৃতি দূর করতে বিভিন্ন তীর্থ পরিক্রমা করতে থাকেন। একসময় বক্রেশ্বরে আসেন এবং দেবাদিদেব মহাদেবকে স্তবে সন্তুষ্ট করে বরলাভ করেন। মহাদেবের বরে তার অষ্টাবক্র দূর হয় এবং তাঁর পূজার আগে বক্রেশ্বরে ঋষি অষ্টাবক্রের পূজার প্রচলন হয় এবং মহাদেবের নামের আগে ঋষি অষ্টাবক্রের নাম লোকসমাজে প্রচারিত হয়।

এমনই মাহাত্ম্য রয়েছে এই বক্রেশ্বরে। তাই এই বক্রেশ্বরের সতীপীঠে দুর্গাপুজোর আভিজাত্য অনেকাংশেই বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

Published on: অক্টো ১৭, ২০২৩ at ১১:১৯


শেয়ার করুন