
Published on: জানু ৩০, ২০২৫ at ২৩:৫৪
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, রিষড়া (হুগলি), ৩০ জানুয়ারি: আজ ছিল রিষড়া লোকনাথ মন্দিরে লোকনাথ মিলন মেলার অষ্টম দিন। মন্দিরের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এই আয়োজন করে রিষড়া লোকনাথ সেবাশ্রম সঙ্ঘ। সেই উপলক্ষে এদিন অতিথি সম্বর্ধনা এবং বাবা লোকনাথকে মালসা ভোগ অর্পণের মাধ্যমে বিশেষ পূজার্চ্চনার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বাবার মহানাম প্রচারক ও চাকলা ধামের প্রধান উপদেষ্টা নবকুমার দাস এদিন স্থানীয় কাউন্সিলয়ার ও রিষড়া লোকনাথ সেবাশ্রম সঙ্ঘের সম্পাদক অভিজিৎ দাস, লোকনাথ আলয়ের প্রণব পোদ্দার , পুরোহিত প্রিয়নজিৎ পোদ্দার, শিমুরালি লোকনাথ মন্দিরের মধু বাবাজি,গঙ্গাসাগরের চন্দ্র শেখরানন্দের উপস্থিতিতে চাকলাধামের প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন।
বাবা কিন্তু প্রতিটি মানুষকেই দেখেন- নবকুমার দাস
এই রিষড়াবাসীর কাছে আমার একটা আবেদন এই মন্দিরে কিন্তু সপ্তাহে একদিন-দুইদিন করে আপনারা আসবেন। এই রিষরা লোকনাথ মন্দিরে কিন্তু বাবা নজর রাখছেন। বাবা কিন্তু প্রতিটি মানুষকেই দেখেন। বাবা কিন্তু সকলকে দৃষ্টি দিয়েছে। কিন্তু নিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের। আমরা যদি তাঁর কাছে সঁপে দিতে না পারি তাহলে বাবা কিভাবে দেবে? এই কথাগুলি বলতে বলতে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরোহিত প্রিয়নজিৎকে উদ্দেশ্য করে নবকুমার দাস ফের বলতে থাকেন- “এই যে প্রিয়নজিৎ আমার একটা সন্তান বাবাকে নিষ্ঠা ভরে ভক্তি করে, পুজো করে। তার বাবা প্রণব পোদ্দার দীর্ঘদিনের আমাদের সাথী। আমরা বলছি –এই মন্দিরে কিন্তু ওনারাও থাকবেন। আমিও আছি, অভিজিৎদা আছেন, স্বপনদা আছেন, শৈলেনদাও আছেন, উত্তমদা আছেন, বালুদাও আছেন।“
লোকনাথ বানী সম্বলিত বই প্রকাশের ঘোষণা
এরপর চাকলাধামের প্রধান উপদেষ্টা নবকুমার দাস বলেন- “বাবার শত শত অলৌকিক ঘটনার করহা আছে। কিন্তু সব যদি আমি এখন বলে দি, তাহলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কেটে যাবে। আমি অভিজিৎদার কাছে একটা অনুমতি চাইছি আমরা কয়েকজন যার মধ্যে মধুবাবা, বাসুবাবা, গঙ্গাসাগরের সাধুবাবা এই কয়েকজন সাধু মিলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বাবার শততম বানী অর্থাৎ ১০০টি বানী নিয়ে আমরা একটা বই তৈরি করছি। অভিজিৎদা যদি অনুমতি দেয় তাহলে বইতে এই রিষড়ার নামও থাকবে। রিষড়া মন্দিরের ফটো, অভিজিৎদার নাম দিয়ে বাবার বানী দিয়ে বইটা প্রকাশ করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি লোকনাথ মন্দির থেকে পাঁচ হাজার করে বই দেব। “
দুবাই যাত্রা ক্রছেন চাকলার প্রধান উপদেষ্টা
“ আমি এবার দুবাই যাব। দুবাই যাত্রার জন্য ভিসা করতে দিয়েছি। ফেব্রুয়ারি মাসে দুবাই যাব। আপনার সবাই একটু প্রার্থনা করবেন। বাবার অনুষ্ঠাটি যেন সার্থক করে আসতে। দুবাইতে বাবা লোকনাথের একটা ছোট্ট মন্দির হয়েছে। একশো মতো ভক্ত একটা চিঠি পাঠিয়েছে আমাকে। তারা চিঠিতে লিখেছে যে বাবা আপনি চাকলা মন্দিরের জন্য এত কিছু করেছেন এবার আপনি দুবাইতে একবার আসুন। এটা আমার কাছে একটা সৌভাগ্য যে দুবাইতে বাবা লোকনাথ আমাকে ডেকেছেন। আমেরিকা থেকেও আমাকে ডেকছেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সেখানে মন্দির উদ্বোধন হয়ে গেল। এই কৃষ্ণনগর থেকে মূর্তি গিয়েছে। আমি পছন্দ করে দিয়েছি। চাকলার মতো মূর্তি। আমি আপনাদের কাছে আবারও আশীর্বাদ চাইছি। “ বলেন চাকলা ধামের প্রধান উপদেষ্টা নবকুমার দাস।
বাবা লোকনাথ কখনও দারোয়ান কখনও পরীক্ষক আবার কখনবা চিকিৎসক
অনুষ্ঠানের উপস্থাপক লোকনাথ আলয়ের সেবক প্রণব পোদ্দার মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে নবকুমার দাসের বক্তব্যের তারিফ করে বলেন- নবদার অমূল্য ভাষণ আমরা শুনলাম। কিছু বলার নেই। এই যে মানুষটি সকাল-সন্ধ্যা শুধু ছুটে বেড়াচ্ছেন কখন কখনও আমরা রসাতা দিয়ে চলতে চলতে দেখি গাড়ির গায়ে পেট্রল ট্যাঙ্কে লেখা থাকে – জন্ম থেকে ছুটছি। কারণ পেট্রল না হলে গাড়ি তো ছুটবে না। এই মহানাম প্রচার করতে তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন দেশ-বিদেশ। এই মহানাম আর কিছুই নয়- শ্রীশ্রী বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার মহানাম। যে নামেই যে নামে তৃপ্তি আসে। যে নামে ভক্তি আসে। শ্রদ্ধা আসে। যে নামে সাফল্য আসে। আমরা দেখি – ধরুন আমরা বাড়ি-ঘরে তালা-চাবি দিয়ে বেড়াতে যাচ্ছি তখন আমরা কি বলে যাই বাবা, একটু যাচ্ছি। আমার ঘর-দোর খোলা রইল। তুমি একটু দেখো। সেই মুহূর্তে বাবা লোকনাথ হয়ে যান আপনার দারোয়ান। আপনার সন্তান পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে বাবা, সারা বছর কিন্তু পড়াশুনো করেনি তুমি ওকে একটু পাশ করিয়ে দিও। সেই মুহূর্তে বাবা লোকনাথ হয়ে যাচ্ছেন আপনার পরীক্ষক। আপনার খাতা দেখে উনি নম্বর দেবেন। অসুস্থ রোগী হাসপাতালে ছটফট করছেন – বাবা, ওকে জীবন দাও, ও ফিরে আসুক। সেই মুহূর্তে বাবা লোকনাথ হয়ে যাচ্ছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক। এইভাবে আমাদের জিবনের প্রতিটি পদক্ষেপে বাবা লোকনাথকে আমরা পাই। “
বাবা লোকনাথ বলতেন- আমায় ভক্তি শ্রদ্ধার সাথে ডাকিস- প্রণব পোদ্দার
এরপর প্রণব পোদ্দার একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন- “ আমার পরিচিত একজন মানুষ হঠাৎ করে দুর্ঘতনায় পড়ে। নার্সিংহোমে তাকে ভর্তি করা হয়েছে। একটি দুরারোগ্য তার রক্তের গ্রুপ। সেই গ্রুপের রক্ত সচরাচর পাওয়া যায় না। আমার কাছে ফোন এল। সারা বছর আমরা সমাজসেবামূলক কাজ করি। ফোন পাওয়ার সাথে সাথে আমি বলে উঠেছিলাম- হায় বাবা লোকনাথ, এই গ্রুপ দিয়েছো। সঙ্গে সঙ্গে ফোনতা বেজে উঠল। ফোনপ্টা তুওলতেই দেখলাম সারা বছর ধরে সারা রাজ্যে যে ব্লাড ডোনেশানের শিবির করে তার প্রধান কর্ণধার। তাকে সব বলতেই তিনি রোগী কোন হাসপাতালে আছে জানতে চান। আমি হাসপাতাল ও বেড নম্বর বলি। তিনি জানিয়ে দেন যে আধ ঘণ্টার মধ্যে দু’জন পৌঁছে যানে। তারা গেল। রক্ত দিল। সেই মানুষটি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল। ফিরেই আমার বাড়িতে এসেছিল দেখা করতে। এটাই বাবা লোকনাথের মাহাত্ম্য। বাবা লোকনাথের প্রচার। বাবা লোকনাথকে শুধু অন্তর দিয়ে ডাকবেন। অবশ্যই বাবা লোকনাথ আপনাকে উদ্ধার করবেন। তাই তিনি বলেছেন- শুধু ডাকার মতো করে ডাকিস না। ভক্তি-শ্রদ্ধার সাথে ডাকিস।“
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অভিজিৎ দাসের
রিষড়া লোকনাথ সেবাশ্রম সঙ্ঘের সম্পাদক অভিজিৎ দাস বলেন- “ আজ যারা না থাকলে রিষড়ায় এই লোকনাথ মন্দির তৈরি হত না, রিষরার বুকে বাবার এত প্রচার ক্রতে পারতাম না। আমরা দশ দিন ধরে এই মেলা, মঞ্চ – উদ্দেশ্য একটাই বাবার প্রচার। বাবার নাম ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক। এটাই আমাদের ব্রত। সেই জন্য দশদিন ধরে এই মেলার আয়োজন। যে মানুষগুলি এই মঞ্চে উপস্থিত আছেন আজ যদি তারা পাশে না দাঁড়াতেন তাহলে হত এই মন্দির গরে তুলতে পারতাম না। যেমন আমাদের স্বপন সিনহা, শৈলেন বাগচ্চি, বাবলুদা, নিতাইদা, দিদি সুশীলা দাস, শিখা সিনহা এমন অনেকি আছেন। এই প্রণদা যেদিন থেকে মন্দির শুরু হয়েছে বাগুইআটি থেকে ৩৬৫দিনের মধ্যে ৩০০দিন এখানে এসছেন। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মন্দির করেছেন। ওনার ছেলে প্রিয়নজিৎ এত ভাল পুজো করেন , বাড়িতেও মূর্তি আছে। তাছাড়া বিভিন্নজাতগায় পুজো করেন। আমি ধন্যবাদ জানাই অন্য মন্দির থেকে আজ যারা এখানে এসছেন। আমাদের মধ্যে যিনি ছিলেন এই মন্দিরের শুরু থেকে তার নাম না বললে হয়ত দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাব। অনল পাল মহাশয় আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন।“
যতবড় প্রাচীর তত বেশি প্রচার- প্রিয়নজিৎ পোদ্দার
চাকলাধামের প্রধান উপদেষ্টা নবকুমার দাসের মুখ থেকে এদিন পুজারী প্রিয়নজিৎ পোদ্দারকে সম্বর্ধিত করার কথা শুনে তিনি বলেন- “নবদা সিঁড়িতে একটাই কথা বললেন তোমাকে থাকতে হবে। আমি বললাম যে বাবার নামে আমি তো আছি। আমার আর ওনার আর এখানে যারা বসে আছেন সবার একটাই লক্ষ্য সবাই লোকনাথ বাবাকে চিনুক। বাকি বাবা সবাইকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজ বিশ্বের দরবারে উনি চেষ্টা করছে। লোকনাথ আলয় মন্দির একভাবে চেষ্টা করছে। লোকনাথ সেবাশ্রম সঙহ ওনারা একভাবে চেষ্টা করছে। কিন্তু সবাইকে একভাবে হাত ধরে এগোতে হবে। এই যে কথাতা বললেন উনি যে বিন্দু বিন্দুতে সিন্ধু হয়। সবাইকে হাত ধরে দাঁড়িয়ে পড়লে মানব প্রাচীর তৈরি হয়। এই মানব প্রাচীরকে বড় করতে হবে। যতবড় প্রাচীর তত বেশি প্রচার। প-এ প্রাচীর, প-এ প্রচার। “
দুবাই থেকে সফল হয়ে ফিরুন বাকলাধামের প্রধান উপদেষ্টা
এখানেই না থেমে তিনি বলে চলেন- “প্রিয়নজিৎ পোদ্দারকে লোক চিনুক আমি চাই না। লোকনাথ ব্রহ্মচারীকে চিনুক। লোকনাথ ব্রহ্মচারীর সেবাইতকে চিনুক। সেতা মধু মন্ডল হোক আর প্রিয়নজিৎ পোদ্দারই হোক সেটা বিষয় নয় লোকনাথ বাবার সেবাইত, লোকনাথ বাবার প্রচারক। আমাদের নামের আগে বিশেষণ- লোকনাথ বাবা। এটা নিয়ে আমাদের এগোতে হবে। নবদা খুব ব্যস্ত মানুষ। দুবাইতে যে কাজে উনি যাচ্ছেন সফল হয়ে উনি ফিরে আসুন। বাকিটা সামনে পাদুকা উৎসব আছে ১২ ফাল্গুন চাকলাধামে , বলছিলেন। এই পাদুকা উৎসবে সকলেই যাক।“
আমাদের সকলের বন্ধু, সকলের বাবা, মা হলেন বাবা লোকনাথ- মধু বাবাজি
শিমুরালি লোকনাথ মন্দিরের সেবাইত মধু বাবাজি বাবা লোকনাথ প্রসঙ্গে বলেন- পুরোহিত অর্থাৎ পরেরহিত কামনা যিনি করেন তিনি হলেন পুরোহিত। উনি যা মন্ত্র বলছিলেন তা শুনছিলাম। এরপর বাবার মন্ত্র বলার মতো বাক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছি। উনি তো সব বললেন। এমনকি তার ব্যাখ্যাও দিলেন। আমরা যারা অঞ্জলি দি , জানি না কি বললাম। কিন্তু তার যদি ব্যাখ্যা হয় তাহলে আমার বলতে সুবিধা হয়। বাবাকে অন্তর থেকে পাই। যখন পরিচয় হয় শুনলাম যে উনি ব্রাহ্মণ নয়। এ কথা বলার সময় আমার একটু গর্ব হয়। কারণ, আমিও ব্রাহ্মণ নই। বাবা লোকনাথ বলেছিলেন- ব্রাহ্মণ কথার অর্থ হ- ব্রহ্ম জ্ঞান। যার মধ্যে ব্রহ্ম জ্ঞান আছে সেই শুধু ব্রাহ্মণ। বাবা লোকনাথই একমাত্র ব্যাক্তি যিনি চারবার মক্কায় গিয়েছিলেন। সেই মক্কার আব্দুল গফুর যিনি চারশো বছর এই পৃথিবীতে ছিলেন । বাবা লোকনাথ ভগবান । দেখেছিলেন কে প্রভুপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী। তিনি ছোটবেলা থেকে ভগবানকে খুঁজে বেড়াতেন। এখন বাবার মহানাম প্রচার করে চলেছে নবকুমার দাস। তিনি বলেছেন যে আমার শ্বাস-প্রশ্বাস যদিন চলবে আমি বাবার মহানাম প্রচার করে যাব। তাই বাবা যদি শক্তি না দেয় তিনি করতে পারবেন। তাই বাবা দিচ্ছেন বলেই তিনি করছেন। তাই তার মাথায় বাবা লোকনাথ হাত রেখেছেন। এই মেলা এখানে আজ আটদিন ধরে চলছে। এত লোক কেন। আমরা বহুদিন ধরে চাকলাধামকে দাখছি। আগে টিনের চালা ছিল। সেই জায়গা থেকে আজ তিন-চার তলা হয়ে গিয়েছে। কারণ সেখানে যারা ভক্ত্ররা যায় তারা কিছু পায়। তাই বন্ধু ভাবিস কাকে- কথায় কাজে মিল আছে যার বিপদ কালে পাশে। তাই বিপদে পড়লে কে পাশে দাঁড়ায়- লোকনাথ। তাই আমাদের সকলের বন্ধু, সকলের বাবা, মা হলেন বাবা লোকনাথ। “
Published on: জানু ৩০, ২০২৫ at ২৩:৫৪