অ্যাডামাসের সমাবর্তনে নোবেলজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী- সফলদের কাছে স্মরণীয় দিন

Main দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: ফেব্রু ৯, ২০২৪ at ২৩:৫৪

Repoter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ফেব্রুয়ারি : শুক্রবার অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হল প্রতিষ্ঠানের সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। ২০২৩ সালের স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি-তে সফল পড়ুয়াদের সম্মানিত করা হয় এদিন। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী কৈলাশ সত্যার্থী। উপস্থিত পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে সমাবর্তন ভাষণও দেন তিনি। তুলে দেন সফলদের হাতে শংসাপত্র।

 

এছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথির আসনে ছিলেন পদ্মশ্রী ভিএস চৌহান, ইউজিসি ও ন্যাক (UGC & NAAC) -এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান। এদিনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১২৫৬ জন পড়ুয়ার হাতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের ডিগ্রি, সোনা ও রুপোর মেডেল এবং পিএইচডি ডিগ্রি তুলে দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর প্রফেসার ড. শমিত রায় এবং ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসার সুরঞ্জন দাস।

পড়ুয়াদের স্বীকৃতি জানানোর পাশাপাশি এদিনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাম্মানিক ডিগ্রি দেওয়া হয় চার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে, যাঁরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের অবদান রেখেছেন। তাঁরা হলেন ইনফোসিস ইন্ডিয়া বিজনেস-এর প্রধান সিএন রঘুপতি; বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী মিনু বুধিয়া; প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. তরুণ প্রহারাজ; এবং বিখ্যাত চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ।

এদিন অ্যাডামাস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। এরপরই শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। স্বাগত ভাষণে চ্যান্সেলর প্রফেসার শমিত রায় বলেন- “কৈলাশ সত্যার্থী বিশ্বব্যাপী শিশু অধিকার কর্মের অক্লান্ত সমর্থক। তার নিরলস প্রচেষ্টা শুধু বিদেশেই নয় বাস্তবিক পরিবর্তন এবং শিশুশ্রমের একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন এবং প্রতিটি শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করেছে এবং তার শৈশব। এই  অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য স্বাগত জানাই পদ্মশ্রী অধ্যাপক ড. ভি এস চৌহানকে। প্রফেসর চৌহানের দূরদৃষ্টি এবং স্যানিটিক অন্তর্দৃষ্টি ভারতে উচ্চশিক্ষার ল্যান্ডস্কেপে অবর্ণনীয় চিহ্ন রেখে গেছে। অগণিত কলেজে, শিক্ষাবিদ এবং প্রশাসক পদমর্যাদার শ্রেষ্ঠত্ব অনুপ্রেরণাদায়ক। আমরা উচ্চশিক্ষা সরকারের সহায়তা অব্যাহত রাখি। অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতি জানাই আমাদের কৃতজ্ঞতা।

উল্লেখ্য, শিশুদের ওপর নির্যাতন ও দমনের বিরোধিতা এবং সকলের জন্য শিক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন কৈলাশ সত্যার্থী। এই দুই বিষয়কে মান্যতা দিতে তাঁকে বহু কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। কিন্তু তবু সেই কাজের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং সাফল্য লাভের জন্য অদম্য জেদের কারণেই নোবেল শান্তি পুরস্কার পান তিনি। ১৯৮০ সালে ‘বচপন বাঁচাও আন্দোলন’-এর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় তাঁর সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সবার জন্য সাম্য, শান্তি ও শিক্ষার অধিকার চাওয়ার লড়াই।

নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী কৈলাশ সত্যার্থী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিটি মানুষের জীবনে যে বা যাঁরা কোনওভাবে অবদান রেখেছেন, তাঁদের প্রতি প্রত্যেক মানুষের কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। তিনি আরও বলেন, পড়ুয়াদের উচিত অধ্যাপকদের পাশাপাশি নিজেদের অভিভাবক এবং শিক্ষকদের কাছেও সমানভাবে চিরকৃতজ্ঞ থাকা। কারণ, তাঁদের হাত ধরেই ছোট থেকে পথচলা শুরু হয় প্রতিটি মানুষের। এঁরাই সেই মানুষ, যাঁরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয় করান এবং পড়াশুনোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তিনি বলেন- বিশ্ব দায়বদ্ধতা আসছে, আমরা নৈতিক দায়িত্ববোধ গড়ে তুলেছি। এটা সংবিধানের বিধানের মাধ্যমে জবাবদিহিতা নয়।নৈতিকভাবে একে অপরের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে।  পৃথিবীর এত জ্ঞান, তথ্য সমস্যা এর আগে কখনো হয়নি। প্রযুক্তিগত এবং সামাজিকভাবে, আর্থিকভাবে অনেক ধারণা। কিন্তু পরিস্থিতি সব ছাড়িয়ে গেছে। কেন মানুষ মারামারি করছে, কেন মানুষ ক্ষুধায় বাঁচছে আর মরছে? আমি যখন এখানে দাঁড়িয়ে আছি এক ঘণ্টায় ভারতে আটটি শিশু চুরি হয়েছে। নিখোঁজ শিশু। এই এক ঘণ্টায় পাঁচজন আমাদের সম্পর্কে একটা ভাবনা ভাবলেন। লাখ লাখ শিশু কষ্ট পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী আমাদের নেতৃত্ব। নৈতিক কম্পাস হারাচ্ছে। আমরা দ্রুত দৌড়াচ্ছি। কোটি কোটি মানুষকে পেছনে ফেলে। এবং আমরা চিন্তা করি না। আমাদের বেদে আছে- সংগাচ্ছুতুম- একসাথে কাজ করতে। কোন মানুষ পিছিয়ে নেই, কোন মানুষ ঠিক নেই। আমরা সবকিছু শিখেছি। প্রতি মিনিটে আমাদের শেখার আছে। তবে সত্যিই একসাথে কাজ করতে শিখুন। স্বামী তার স্ত্রীর একসাথে কাজ করে। “

“ভারতীয় সংবিধান সর্বসম্মতিক্রমে সংশোধিত হয়েছিল কোন সংসদ সদস্যের বিরোধিতা ছিল না। এটি একটি রেশম পথ ছিল না। অনেক সমস্যা আছে।“ বলেন নোবেল শান্তি জয়ী কৈলাশ সত্যার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর সুরঞ্জন দাস পড়ুয়াদের মেধার বৃদ্ধি এবং তাঁদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাবের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার ওপর জোর দেন।

Published on: ফেব্রু ৯, ২০২৪ at ২৩:৫৪

 


শেয়ার করুন