রামনগরে মহাশিবরাত্রি উদযাপনের সাথে লোকসেবা করলেন আচার্য দেবানন্দ শাস্ত্রী(গুরুজী)

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: ফেব্রু ২৮, ২০২৫ at ২১:৫৭

এসপিটি নিউজ , কলকাতা ও রামনগর, ২৮ ফেব্রুয়ারি: গৃহীযোগী শ্যামাচরণ লাহিড়ী বলতেন- বর্তমান কালের মানুষের পক্ষে ভক্তিপথে সাধন করা বড়ই কঠিন। সমস্যা জর্জ্জরিত সমাজে, আধুনিক বিশ্বাস-বিহীন বিলাসবহুল সমাজে তেমন ভক্তিমান ব্যক্তি খুবই কম। তাই তিনি সহজ-সরল আড়ম্বরহীন যোগসাধনের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করে বলতেন এই যুগোপযোগী সহজ যোগসাধন গণিতশাস্ত্রের মতো একেবারে অভ্রান্ত। জাত-ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে যে কোন মানুষ তা করতে সক্ষম। মানবপ্রেমিক শ্যামাচরণ লাহিড়ী এইভাবে সামাজিক মঙ্গলসাধনে ব্রতী ছিলেন। আ্র সেই ধারাই বয়ে নিয়ে চলেছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগরে অখণ্ড শ্রী ক্রিয়াযোগ সাধন মন্দির সেবাশ্রমের প্রাণপুরুষ প্রতিষ্ঠাতা আচার্য্য দেবানন্দ শাস্ত্রী (গুরুজী)। খুব সুন্দরভাবে তিনি রামনগরে মহাশিবরাত্রি আয়োজন করলেন। উপস্থিত ছিলেন গঙ্গাসাগরের চন্দ্রশেখরানন্দ মহারাজ এবং অসীমানন্দ গিরি। তাদের উপস্থিতিতেই হল লোকসেবাও।

আচার্য্য দেবানন্দ শাস্ত্রী যিনি সকলের কাছে গুরুজী নামেই বেশি পরিচিত। যোগীরাজ মানবপ্রেমিক শ্যামাচরণ লাহিড়ীর আধ্যাত্মিক এবং যোগের আদর্শে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে রেখেছেন। এই সম্পর্কে তিনি লিখেছেন-  “এমন এক পৃথিবীতে যেখানে মহাবিশ্বের রহস্য আমাদের কল্পনাকে মোহিত করে এবং গভীর বোধগম্যতার দিকে আমাদের আহ্বান করে, সেখানে একজন ক্রিয়া যোগী এবং একজন জ্যোতিষীও আছেন যার জ্ঞান সীমানা ছাড়িয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্তৃত।“

“প্রাচীন জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অটল নিবেদন এবং একটি রহস্যময় আধ্যাত্মিক অনুশীলন, ক্রিয়া যোগের উপর গভীর দক্ষতার সাথে, আমাদের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী আন্তর্জাতিক মঞ্চে অন্তর্দৃষ্টি এবং জ্ঞানার্জনের আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন।“

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রামনগর ত্রৈলক্য ভবনের সামনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। মূল উদ্যোক্তা ছিল অখণ্ড শ্রী ক্রিয়াযোগ সাধন মন্দির সেবাশ্রম। যার প্রতিষ্ঠাতা আচার্য্য দেবানন্দ শাস্ত্রী সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে জানিয়েছেন- সেবাশ্রমের কুড়িতম মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে স্থানীয় মানুষদের খিচুড়ি বিতরণ করা হয়। এই অনুষ্ঠানে গঙ্গাসাগর থেকে এসেছেন চন্দ্রশেখরানন্দ মহারাজ, ছিলেন অসীমানন্দ গিরি সহ অনেকেই। এমন সুন্দর এই অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিলেন – আশীষ আদক, সত্যেন্দ্রনাথ জানা, ব্রহ্মানন্দ সাউ, তাপস কুমার জানা, অসিত কুমার সাউ, শিপ্রা আদক, সুমিতা সাউ, নীলেশ মাইতি, সঞ্জীব জানা, নগেন প্রধান, দুর্গাপদ পতি, সুধীর সাউ এবং দীপক নায়ক।

এদিন গঙ্গাসগর থেকে যাওয়া চন্দ্রশেখরানন্দ মহারাজও এই লোকসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি নিজেই সাধারণ মানুষকে খিচুড়ি বিতরণ করেন, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মুগ্ধ করেছে।

আচার্য্য দেবানন্দ শাস্ত্রী (গুরুজী) সবসময় যোগীরাজকে ঈশ্বর রূপেই দেখেন। একজন গৃহী হয়েও তিনি হয়ে উঠেছিলেন সধারণ মানুষের ভগবান। পুরান পুরুষ যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী পুস্তকে এক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে- “যোগীরাজ কাহাকেও স্বধর্ম পরিত্যাগ করিতে বলেন নাই। ইহা তাঁহার প্রদর্শিত সাধন-পন্থার আর একটি বৈশিষ্ট্য। তিনি বলিতেন- যে কোন ধর্ম বা যে কোন মতাবলম্বী মানুষই হোক না কেন এই যোগসাধন করিতে বাধা নাই। শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব, সৌর, গাণপত্য সহ সকল হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান এক কথায় সকল মানুষই এই যোগসাধন করিতে পারে। কোন প্রতিবন্ধ নাই। তিনি বলিতেন ইহা আত্মসাধনা। সব জী্ব দেহেই একই আত্মা বিরাজমান। সুতরাং আত্মসাধনায় কোন বাধা নাই। যাহার যে ধর্মে বিশ্বাস, যাহার যে দেব-দেবীতে ভক্তি, যাহার যাহা ইষ্ট তাহাই থাকিবে। আপন আপন বিশ্বাসে নির্ভর করিয়া চল। তাই দেখা যায় সকল প্রকার হিন্দু, মুসল্মান, খ্রিস্টান প্রভৃতি নানা ধর্মে ও শ্রেণীর মুমূক্ষু ও সত্যানুসন্ধানী ভক্তগণ তাঁহার পদাশ্রয় লাভ করিয়াছিল। আব্দুল গফুর খাঁ নামে এক দরিদ্র মুসলমান ভক্ত তাঁহার নিকট যোগসাধন পাইয়া অনেক উচ্চ অবস্থা লাভ করিয়াছিলেন।“

রামনগরে গুরুজী আচার্য্য দেবানন্দ শাস্ত্রী তাঁ নিজের প্রতিষ্ঠিত অখণ্ড শ্রী ক্রিয়াযোগ সাধন মন্দির সেবাশ্রম সেই কাজই করে চলেছেন নীরবে।

Published on: ফেব্রু ২৮, ২০২৫ at ২১:৫৭


শেয়ার করুন