এরা ‘অদ্ভুত-কিম্ভূতকিমাকার’, ‘খায় না মাথায় দেয়’- মাথায় কিছু আছে এদের-বিজেপিকে তোপ ক্ষুব্ধ মমতার

Main দেশ ভোট সংবাদ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: এপ্রি ১২, ২০২১ @ ১৮:০৪

এসপিটি নিউজ, রানাঘাট, ১২ এপ্রিলঃ শীতলকুচির ঘটনাকে সামনে এনে ফের বিজেপিকে এক হাত নিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রানাঘাটের সভা থেকে আজ রীতিমতো ক্ষোভের সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে বলেন ওঠেন-“এরা অদ্ভুত-কিম্ভূতকিমাকার। এদের কি বলবেন। এরা না খায় না মাথায় দেয়। মাথায় কিছু আছে এদের।”

‘একটা পলিটিক্যাল পার্টি বলছে- গুলি চালিয়ে দাও’

মমতা বলেন- “চারটে লোককে পুলিশের গুলিতে ভোটের লাইনে মেরে দিল। মেরে দেওয়ার পর বলছে চারজনের জায়গায় আটজনকে গুলি করা উচিত ছিল। সবাইকে গুলি করিয়ে দাও। বুথে গুলি চালিয়ে দাও। এরা অদ্ভুত-কিম্ভূতকিমাকার। এদের কি বলবেন। এরা না খায় না মাথায় দেয়। মাথায় কিছু আছে এদের।কি বলবেন- একটা পলিটিক্যাল পার্টি বলছে- গুলি চালিয়ে দাও। বুথে গুলি চালিয়ে দাও। আরও গুলি চালিয়ে দাও।”

‘রাজনৈতিকভাবে এই নেতাদের ব্যান করা উচিত’-মমতা

“রাজনৈতিকভাবে এই নেতাদের ব্যান করা উচিত। যারা গুলি চালনার পক্ষে সওয়াল করে। লজ্জা-ঘৃণা-ভয় তিন থাকতে নয়। একটা বিজেপি পার্টি এক হাতে বিজেপির ঝান্ডা অন্য হাতে বড় বড় ডান্ডা। সাথে আছে বিজেপির গুন্ডা। বহিরাগত হয়েছে কিছু পান্ডা। এই নিয়ে ওরা বাংলাকে মেরে করবে ঠান্ডা। এই হচ্ছে ওদের কাজ।” বলতে থাকেন মমতা।

তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন-“কোচবিহারের শীতলকুচিতে যেভাবে গুলি চালিয়েছে বিজেপিকে কেউ ক্ষমা করবেন না। ওরা হিন্দু-মুসলিম করার চেষ্টা করে।মানুষ মরে গেলে হিন্দু-মুসলমান হয়।প্রথমে নিজেদের একটা লোককে খুন করেছে। এরা পারে না এমন কোনও কাজ নেই। দেখলেন ওদের এক মহিলা এমপি নিজের গাড়ি নিজেই ভাঙছিলেন। এরা নিজের লোককে নিজেই মেরে ফেলতে পারে। এরা খুবই বিপজ্জনক।”

প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে ফের সরব মমতা

এদিন রানাঘাটের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে সরব হন। মমতা বলেন-“এখন বলছে মতুয়া ভোট চাই। তাই মতুয়ার এমপিকে নিয়ে বাংলাদেশ গিয়েছিলেন। অর বলেন- আমি নাকি অনুপ্রবেশকারীদের ঢোকাই। বাংলাদেশ মানেই অনুপ্রবেশকারী। রোজ আপনারা গালাগালি দেন। আর ইলেকশনের সময় ভোট করতে যান।লজ্জা করে না।”

মোট তিনটে পা মিলে দুটো পায়ের বেশি শক্তি জোগাবে- বললেন মমতা

নিজের আঘাত প্রাপ্ত পা-এর প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন- “আমি তিনদিন হাসপাতালে ছিলাম। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে আমার ভাঙা পা নিয়ে আপনাদের হয়ে এখানে-ওখানে-সেখানে যাচ্ছি। কারণ, বিজেপি-র পরিকল্পনা ছিল- আমাকে আঘাত করে আমি যাতে বাইরে বেরোতে না পারি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি- আমার মা-বোনেদের দুটো পা আমার একটা পা মোট তিনটে পা মিলে দুটো পায়ের বেশি শক্তি জোগাবে। আর তাই মা-বোন-ভাইদের দিকে তাকিয়ে আমি কিন্তু গত এক মাস ধরে একটা দিনও ছুটি নিই নি।অবিরাম সভা করে যাচ্ছি।”

কারণও তুলে ধরেন মমতা- “কেন করছি জানেন? আপনারা কি জানেন- বাংলা গুজরাট হয়ে যাক। আপনারা কি চান- বাংলা উত্তরপ্রদেশ হয়ে যাক। আপনারা কি চান- বাংলা গুন্ডাদের হাতে চলে যাক। তাহলে বাংলাকে বাঁচাতে হবে। আর বাংলা মায়ের সম্মান বাঁচানো আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ।”

রানাঘাটের মানুষ এবার একটু বদলাবেন তো? জানতে চান মমতা

গত লোকসভা ভোটে এই আসনে হার নিয়ে আক্ষেপের সুরে মমতা বলেন-“নদিয়ার এই আসনে আমরা পুরো হেরেছি। কারণ, বিজেপি আমাদের নামে মিথ্যা প্রচার করেছে। টাকা ছড়িয়েছে। আর যাকে আপনারা জিতিয়েছেন তার ছবিটা ভিডিওতে দেখেছেন তো কি করে বেড়াচ্ছে। আমি তো দেখেছি। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন কি করে বেড়াচ্ছে। এরা সব চরিত্রবান লোক। এরা নাকি রাজনীতি করবে।তাই পরিষ্কার বলতে চাই। রানাঘাটের মানুষ এবার একটু বদলাবেন তো? এবারের ভোটটা বিজেপিকে দেবেন না তো?”

রাজনীতির পাঠ পড়ালেন মমতা

“আমি বলি প্রথমে রাজনীতি করতে গেলে কথাবার্তা শেখা দরকার। কথাবার্তা বুঝে বলা দরকার। সমাজের সেবা করা দরকার। রাজনীতি করা মানে- করে খাওয়া নয়। বিজেপি মনে করছে- রাজনীতি করা মানে গুলি চালনার অধিকার দেওয়া। এটা রাজনীতির নাম নয়।”

ভাষা নিয়েও পরামর্শ মমতার- ‘বাংলা ভালো করে পড়লে সব ভাষা বলতে পারবেন’

মমতা বলেন- “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোথায় পড়েছিলেন? মনে রাখবেন মানুষের মানসিকতা বড় হওয়া প্রয়োজন।আর আপনি যদি বাংলা ভালো করে পড়েন আপনি সব ভাষা বলতে পারবেন। কোনও অসুবিধা নেই।বাংলার সাথে নাগাল্যান্ডের মিল আছে। বাংলার সাথে মণিপুরী ভাষার মিল আছে। অসমিয়ার মিল আছে।উড়িষ্যার মিল আছে। আমি মারাঠি বুঝতে পারি, আমি পাঞ্জাবি বুঝতে পারি। আমার তো কোনও অসুবিধা নেই। গুজরাটিও বুঝতে পারি। ভাষা ভালোবাসি।কিন্তু গুজরাটি বাংলা দখল করুক এটা আমি চাই না।”

ভোট নিয়ে সতর্ক মমতা দিলেন এই পরামর্শ

নন্দীগ্রামে ভোট করতে গিয়ে তাঁর চোখ খুলে গেছে। সেকথা টেনে এনে মমতা এদিন বলেন- “বুলেটের বদলে আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হোক। গুলি চালিয়ে ভোট চাই না। মনে রেখো- ভোট হয়ে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর গ্রামে গ্রামে পুলিশ পাঠিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। আমি নন্দীগ্রামে না দেখলে চোখ খুলতো না। কিভাবে মারা গেছে আমার কর্মী কল্পনা করতে পারবেন না। তারপরেই তো আমার চোখ খুলল। তারপরেই সবাইকে সাবধান করতে শুরু করলাম।”

“যারা ভোট দেবেন, ভোট মেশিন দু’বার অন দু’বার অফ করবেন। দরকারে অপেক্ষা করবেন। আবার যদি মেশিন খারাপ হয়ে যায় দু’বার অন দু’বার অফ করবেন। মনে রাখবে এখানে দিল্লির পুলিশে ভর্তি। সেখানে নিজেদের পাহারাদারও রাখবেন। নিশ্চিন্তে থাকুন বিজেপি গো-হারা হারবে। বাংলাই বাংলাকে বাঁচাবে।” বলেন মমতা।

Published on: এপ্রি ১২, ২০২১ @ ১৮:০৪


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 32 = 42