বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন জানিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে বিস্ফোরক অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

Main দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: মার্চ ৫, ২০২৪ at ১৭:৩৮
Reporter: Aniruddha pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৫ মার্চ: পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী আজ সাংবাদিক সম্মেলন করলেন বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে নিরাপত্তার কারণে নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। আগামী ৭ মার্চ তিনি বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন বলে জানিয়ে দেন। এরপরই তিনি রাজ্যের প্রধান শাসক দলের বিরুদ্ধে রীতিমতো বিস্ফোরক মন্তব্য করতে থাকেন। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সাফ মন্তব্য – তৃণমূল দুর্বৃত্তদের দল ছাড়া আর কিছুই নয়। দলটা ২০২৬ পর্যন্ত থাকবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তিনি।

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দেন আগামী ৭ মার্চ তিনি বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। তবে এবারের লোকসভা নির্বাচনে তিনি কোনও কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হচ্ছেন কিনা তা নিয়ে তিনি বলেন-  “আমি কোন কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে লড়ব তা ঠিক করবে বিজেপির উপর মহলে যে ইলেকশন কমিটি আছে তারা। এ বিষয়ে আমার এখনও পর্যন্ত কিছু জানা নেই। সেখানে আমি প্রার্থী হই বা না হই আমি বিজেপিতে থাকব। বিজেপির যে উন্নয়নের কর্মসূচি তাকে সাহায্য করার জন্য আমি আছি। “

শাসক দলের পক্ষ থেকে তাকে একাধিকবার আক্রমণ করা নিয়ে  অভিজিৎবাবু বলেন- আমাকে শাসক দলের পক্ষ থেকে অনেক অপমানজনক কথা বলা হয়েছে।  বলা যেতে পারে তারাই আমাকে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে এক ধরনের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। কয়েক মাস আগে বহু টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে । এই টাকা তো বাইরে পাব না। তাদের মুখপাত্ররা অপমানজনক কথাবার্তা বলেছেন। তারা জানেনই না, শিক্ষা দীক্ষা তাদের আছে বলে মনে হয় না। বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে এভাবে কথা বলা যায় না। একটা জাজমেন্টের বিরুদ্ধে অবশ্যই কথা বলা যায়। তার জন্য অ্যাপিল ফোরাম আছে। তার উপর সুপ্রিম কোর্ট আছে। তারা তো সেখানে গেছেনই। তারা জজকে উদ্দেশ্য করে গালাগাল দিচ্ছে। তাদের দলের দুষ্কৃতকারীদের তাদের কেলেঙ্কারীগুলো ফাঁস হয়ে যাচ্ছিল। অনেক কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়েছে। অনেক বড় বড় দুষ্কৃতী যারা মন্ত্রীর ছদ্মবেশে, অন্যান্য আমলার ছদ্মবেশে গিয়েছেন। তারা আপাতত জেলে আছেন গড়াগড়ি খাচ্ছেন না ফাইভস্টার ব্যবস্থায় আছেন সেটা আমি এখনও জানি না।“

বিজেপি কি দুর্নীতি মুক্ত দল, এই প্রশ্নের জবাবে বলেন- “বিজেপি দুর্নীতি মুক্ত দল কি দল নয় সে আমার মনে করার কথা নয়। আমি যদি দায়িত্ব পাই সেদলে আমি অবশ্যই সেই কাজটা করব। সেটা দুর্নীতি মুক্ত করার কাজ। যারা দুর্নীতি করবেন না এরকম মানুষদের আমি রাজনীতিতে আসার আহ্বান জানাব। না হলে রাজনীতিটা দখল হয়ে গেছে কিছু দুর্নীতিবাজদের কাছে। ভদ্রলোক, যারা পড়াশুনো করেছে বাঙালি তো এমন অনেক আছে কিন্তু এইসব দুর্বৃত্তদের দেখে তারা আসে না। আমি চাই তারা আসুন। আর এই দুর্বৃত্ত দের শেষ করুন।“

কেন বিজেপিতে, সিপিএম কিংবা কংগ্রেসে নয় কেন? এই প্রশ্নের জবাবে অভিজিৎবাবু বলেন- আমি ঈশ্বরে, ধর্ম, উপর ওয়ালায় বিশ্বাস করি তাই সিপিএমে যোগ দিলাম না।, তারা তো সেগুলো করে না। হয়তো ভিতরে করে। বাইরে করে না।  আর রইল বাকি কংগ্রেস। কংগ্রেস একটা দল যেখানে পরিবারের জমিদারি। সেই পরিবারে কিছু ভাল ভাল নেতা আছেন। ধরুন জয়রাম রমেশ । যার কোয়ালিফিকেশন এসব রাহুল গান্ধীর চেয়ে অনেক বেশি। তিনি একজন আইআইটি-র ছাত্র। এরা ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। কেন বেড়াবে?  এরা তো কোনও পদই পাবেন না। কাজও করতে পারবেন না। এই দলটা একটা রাজনৈতিক জমিদারির দল। সুতরাং এই দলে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এছাড়াও তাদের দলের অনেক পুরনো নেতা অতুল্য ঘোষের একটা পুরনো বই পড়েছি। সেখানে আমি দেখেছি কংগ্রেস দলের চরিত্র নিয়ে অতুল্য ঘোষের মতো মানুষ কি লিখে গেছেন। “

তৃণমূলের ভিতরে ক্ষোভ নিয়ে বলেন- “তারা কেন ক্ষোভে ফুঁসছেন এতদিন বাদে কেন তারা দল ছাড়ছে সেটা আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন। এক্ষুনি মন্তব্য করার কিছু নেই। তারা অবশ্যই কিছু বলবেন, কেন ছাড়ছেন দল। আমি যেটা বুঝছি, তৃণমূল কিন্তু ভিতর ভিতর ভেঙে পড়ছে। এই তৃণমূল দল আর বেশিদিন পশ্চিমবঙ্গে নেই।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বলেন- বিচারকের আসনে লড়াই করা যায় যখন একটা বিরোধ পিটিশনের আকারে জজের কাছে আসে। কিন্তু তার বাইরে অনেক বিরোধ, দুর্নীতি থাকে। যে গুলো আসে না কোর্টে। আজই যখন পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছি । তারপর আমি বসে আছি, তিনজন আইনজীবী আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তারা আমাকে কথা দিয়েছেন একশো দিনের কাজের দুর্নীতি বহু ডকুমেন্ট আমার কাছে দিয়ে যাবেন। সেই ডকুমেন্টে কি আছে জানেন? একজন দেখা যাচ্ছে তার বাবার ছবিটাকে তুলে দিয়ে নিজের ছবি বসিয়ে নিজেকে মায়ের হাজবেন্ড বলে দাবি করে মায়ের সিঁথিতে সিদুঁর দিয়ে ১০০ দিনের কাজের টাকা হাসিল করছেন। এই ধরনের দুর্নীতির কাগজ আমি পাব। এটা আমাকে তারা বলে গেছেন – তার কাছে অন্তত এক হাজার এরকম ডকুমেন্ট আছে  যেগুলো আপনাকে আমি দিতে চাই। সেই জন্য আপনার সঙ্গে আমি দেখা করতে এলাম।“

“প্রচারের আলোয় আসার জন্য তিনি নিজেকে হাইলাইটস করছেন – এ প্রসঙ্গে বলেন-কিছু মানুষ আছে তারা বদ্মায়েশি করে একথাগুলো বলছে। তারা আইনও কিছু জানেন না। কিছু মুখপাত্র আছে  যাদের একটা সামান্য প্রশ্ন করলেই দেখা যাবে তারা ধেরিয়ে বসে আছে।“

সন্দেশখালির মতো ঘটনা বহু জেলায় আছে। আমি শুনেছি, বীরভূম জেলায় যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না করা হয় তাহলে সেখানে ভোটই করতে দেবে না। যোগ করেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

নারদা কান্ড প্রসঙ্গে ফের বিস্ফোরক অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বলেন-  “প্রথম কথা নারদা কান্ড একটা চক্রান্ত।  একটা লোক আছে তালপাতার সেপাই না সেনাপতি কি বলে ডাকে সব তৃণমূলের নেতারা তাকে। তার খুশ্বশু্রের অ্যালকেমিস্ট বলে একটা কোম্পানি ছিল তাকে দিয়ে এই পুরো কান্ডটা করেছিল। এটা একটা চক্রান্ত। এটা কোনও স্টিং অপারেশনই নয়। ওই ভদ্রলোককে ইউজ করে একটা চক্রান্ত করা হয় বিভিন্ন লোককে ফাঁসানোর জন্য। যখন সেই তালপাতার সেপাই রাজনীতিতে দাঁড়াতে চাইছিল তখন সে চাইছিল সিনিয়র নেতা যারা আছে তাদের নামে বদনাম করে রটিয়ে দিতে। সেই জন্য এই কাজটা করা দুর্নীতির  সঙ্গে এর সংস্পর্শ অনেক দূরে। আগে চক্রান্তের দিকটা দেখতে হবে, কে চক্রান্তটা করেছিল। ইডি তো অ্যালকেমিস্টের তদন্ত শুরু করেছে। কেউ কেউ চক্রান্তের শিকার হয়ে এখনও তালপাতার সেপাইকে সেনাপতি করে রাখছে। তিনি কোন যুদ্ধ জিতেছেন আমি জানি না।“

তৃনমূলের সেকেন্ড কমান্ডের নাম না করে বলেন- “প্রতিদ্বন্দী হয়ে দাঁড়ালে দাঁড়াবে আমি কি তার ভয়ে পালিয়ে যাব নাকি। এবং আমি দেখিয়ে দেব, তার দুর্বৃত্ত দলকে কিভাবে মোকাবিলা করতে হয়। তার একটা পরিষ্কার দুর্বৃত্ত দল আছে ডায়মন্ড হারবারে।  তাদের মোকাবিলা করে লক্ষ লক্ষ ভোটে হারাব।“

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন যেখান থেকে দাঁড়াবেন সেখান থেকেই হারাবে। এই প্রশ্নের জবাবে বলেন- “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই আগে টিকিট পায় কিনা দেখুন। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়কে আমি একজন প্রকৃত রাজনীতিবিদ বলে মনে করি। কোনও তালপাতার সেপাইকে আমি দুর্ষ্কৃতীর বেশি অন্য সম্মান দিতে পারব না।“

তৃণমূল সম্পর্কে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়  ফের বিস্ফোরক হন। বলেন- “তৃণমূল বলে যে দলটা আছে সেটা সম্পূর্ণভাবে দুষ্কৃতীদের একটি দল। এটাকে পলিটিক্যাল দল বলে আমি মনে করি না। এটা একটা যাত্রা পার্টি। পলিটিক্যাল পার্টি নয়, যাত্রা পার্টি। যাত্রা পার্টির যেমন বিবেক থাকে তেমন এদেরও বিবেক আছে। তাদের যাত্রা পালার নাম হচ্ছে মা-মাটি-মানুষ। এদের মধ্যেও কেউ কেউ হঠাৎ বিবেকবান হয়ে ওঠেন। সেখানে যেমন ছোট লোকের চরিত্র থাকে মদমাতালের চরিত্র থাকে এরকম অনেক কিছু আছে সেই দলে। দলটি সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতি গ্রস্তদের দিয়ে তৈরি। আর কিছু ভাল লোক আছেন যারা কিছু না বুঝে সেখানে ঢুকে পড়েছেন আর বেরোতে পারছেন না। কালকেই এরকম একজন পন্ডিত মানুষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বললেন- ভাই আমি তো বুঝতেই পারিনি যে এরা এতটা দুর্নীতি গ্রস্ত। তিনি তথ্য দিয়ে অভিযোগ করলেন বর্তমান একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। “

স্নদেশখালিতে প্রধানমন্ত্রী মোদির না যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে রীতিমতো যুক্তিদিয়ে তা খণ্ডন করেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন- “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  গেছেন? সেখানকার একজন সাংসদ এক ভদ্রমহিলা তিনি কবার গেছেন? কেউ কোথাও যাওয়া না যাওয়া নিয়ে পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কাজ হয় না।“

বিচারব্যবস্থাকে তো আক্রমণ করছেন না করছে বিচারপতিদের। এব্যাপারে তাদের ছোটবেলার শিক্ষাদান বাবা-মায়ের শিক্ষার মধ্যে কোথাও ফাঁকি আছে। তারা জানেনই না কি করতে হয় , না হয়।

“আমার মনে হচ্ছে তৃণমূল দলটি যেভাবে নরবেড়ে হয়ে গেছে এবং যেরকম ভিতরে ভিতরে ভাঙছে, বিভিন্ন চাপে তারা নিজেরাই ভেঙে পড়ছে তাতে আমার মনে হয় ২০০৯ সালে সিপিএমের যেরকম অবস্থা হয়েছিল এই ২০২৪ সালে তৃণমূলের সেরকম অবস্থা হবে।“ যোগ করেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ।

এরপর তার প্রশ্ন- “২০২৬ পর্যন্ত দলটা টিকবে? এখানে ২-একটা লোক গ্রেফতার হয়েছে। দেখবেন পুরো দলটাই ভেঙে বেড়িয়ে গেছে। দলটাই নেই।“

Published on: মার্চ ৫, ২০২৪ at ১৭:৩৮


শেয়ার করুন