ভারত চিকেন উৎপাদনে বিশ্বে পঞ্চম স্থানে, তবে মাথা পিছু মুরগির মাংস ব্যবহারে অনেক পিছিয়ে

Main দেশ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: নভে ১৮, ২০২৩ at ২১:৪০
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৮ নভেম্বর: প্রোটিনের সেরা উৎস চিকেন ও ডিম। সারা বিশ্বে ডিম ও মাংস উৎপাদনে ভারত দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। চিকেন উৎপাদনে রয়েছে পঞ্চম স্থানে। এত কিছু সত্ত্বেও কিন্তু ভারতে মাথা পিছু মুরগির মাংস ব্যবহারে ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে।আমাদের দেশ কিন্তু ৭৫ শতাংশ নন-ভেজিটেরিয়ান দেশ। ২৫ শতাংশ মানুষ নিরামিষভোজি। তবু সমীক্ষার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, প্রতি বছর গড়ে ৩.১ কেজি মুরগির মাংস খায় যেখানে বিশ্বে পরিমানটা হল ১৭কেজি। ১৬ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশনের উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় চিকেন দিবসের এক অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান সহ পোলট্রি ও চিকেন বিষয়ে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন ড. কৌশিক দে।

পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদন মাইতি বলেন, মুরগির মাংস উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশ একই জায়গায় অবস্থান করছে। শীর্ষেই আছে দু’টি রাজ্য। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ১৯৯৯-২০২১ সাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে পেরেছি। তবে মাথা পিছু মুরগির মাংস খাওয়ার পরিমান এখনও অনেক কম। বিশ্বের যা চিত্র সেই নিরীখে আমাদের আরও বেশি জোর দিতে হবে। এজন্য মুরগির মাংসের উপকারিতা ও তার গুনাগুন আমরা তুলে ধরছি। এজন্য আরও বেশি করে প্রচারাভিযান করছি।ডাক্তাররাও বলছেন, প্রোটিনের সেরা উৎস হল ডিম ও মুরগির মাংস।এরপর তিনি ড. কৌশিক দে-কে এই সম্পর্কে বিস্তারিত পরিসংখ্যান তুলে ধরার অনুরোধ করেন।

চিকেন এবং ডিম হল প্রোটিনের সেরা উৎস

ড. কৌশিক দে এই সম্পর্কে বলেন- “চিকেন এবং ডিম হল প্রোটিনের সেরা উৎস। আজকের দিনে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এটাকে আমরা বলি গ্রেড ওয়ান বা ক্লাস ওয়ান প্রোটিন। এর মানে এই প্রোটিনে অ্যামাইনো অ্যাসিডের যে কম্পোজিশন তা মানব শরীরের যে কম্পোজিশন তার সঙ্গে এক। নিউট্রিশিয়ান ফুড হিসাবে ডিম ও মুরগির মাংস সহজলভ্য হিসাবে পরিচিত। এখন ডাক্তার, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সকলেই বলছে যে চিকেনের কোনও বি্কল্প নেই।”

Read more news:

আজ জাতীয় চিকেন দিবস উদযাপন করল ওয়েস্টবেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশন, জানাল তাদের লক্ষ্য

সারা বিশ্বে ডিম ও মাংস উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে ভারত

“ ২০২১-২০২২ তে যে সার্ভে এসছিল, তাতে দেখা গিয়েছে যে পোস্ট পোলট্রিতে ভারতের ভবিষ্যৎ আছে।  ভারতে পোলট্রি ইন্ডস্ট্রিতে দারুন বৃদ্ধি এসেছিল – সেখানে ভারতের স্থান সারা বিশ্বে ডিম ও মাংস উৎপাদনে তৃতীয়। ইকোনমিক সার্ভে অনুযায়ী, ২০২২-২০২৩ এ সে সার্ভে রিপোর্ট এসেছে তাতে দেখা গিয়েছে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি চিকেন উৎপাদন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, চীন। যদিও আমাদের দেশ ভারতও খুব দ্রুত ভালো করছে। এমনটা হতে থাকলে খুব শীঘ্রই ভারতও একটা দারুন জায়গায় থাকবে।”

Read more news: 

আমি ‘চিকিটেরিয়ান’ জাতীয় চিকেন দিবসে বললেন দিতিপ্রিয়া

ভারতে মুরগির মাংসের উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৯.২৯ মিলিয়ন টন

“ভারত সরকারের প্রাণী সম্পদের পরিসংখ্যান যদি আমরা দেখি , মানুষ প্রতি মুরগির মাংসের উৎপাদন যদি দেখি তাতেও কিন্তু বৃদ্ধি খুবই ভাল। গতবার ২০২১-২০২২ তে ছিল ৮.৮ মিলিয়ন টন সেটা বেড়ে হয়েছে ৯.২৯ মিলিয়ন টন। এবং জন প্রতি পোলট্রি সহ অন্যান্য মাংসের উৎপাদন যেটা ছিল ৬.৫২ মিলিয়ন সেটা বেড়ে ৬.৮২ মিলিয়ন টন হয়েছে। বৃদ্ধির রেট যদি দেখা যায় তাহলে দেখা যাবে যে সেটা বৃদ্ধি পাচ্ছে ৫.৬২ শতাংশ। বৃদ্ধির হার যত বাড়ছে তত কিন্তু খরচও বাড়ছে।” বলেন ড. কৌশিক দে।

বিশ্ব স্বাথ্য সংস্থার চার্ট অনুযায়ী প্রতি দিন ৮৪ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া প্রয়োজন

“ভারতে প্রজাতিভিত্তিক মাংসের অবসান যদি দেখি তাহলে দেখা যাবে যে মোট ৫১.৪৪ শতাংশের মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি আছে পোলট্রির অবদান। পোলট্রির উৎপাদন ৪.৮৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন। পাশাপাশি যদি অন্য মাংসের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে পোলট্রির মাংসের বৃদ্ধি হার কিন্তু খুবই দ্রুত হচ্ছে। যেটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। সেই কারণে ভারত নিরামিষ কিংবা ভেজিটেরিয়ান দেশ নয় , আমাদের দেশ নন ভেজিটেরিয়ান দেশ। কারণ, এখানে ৭৫% নন ভেজিটেরিয়ান এবং ২৫% ভেজিটেরিয়ান। তবু আমরা যদি দেখি আমরা পর্যাপ্ত প্রোটিন খাচ্ছি তাহলে দেখা যাব, না সেই ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু বিশ্বে অনেকটাই পিছিয়ে আছি। বিশ্ব স্বাথ্য সংস্থার চার্ট অনুযায়ী প্রতি দিন ৮৪ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া প্রয়োজন। সেখানে আমরা ভারতে খাচ্ছি ৬৬ গ্রাম।তার মধ্যে একটা মেজর প্রোটিন আসছে কিন্তু উদ্ভিজ প্রোটিন থেকে। মাংস কিংবা ডিম থেকে কিন্তু শতকরা হার অনেকটাই কম।যদিও গতবার ৬৪ গ্রাম, দু’গ্রামের মতো বাড়াতে পেরেছি। পাশপাশি যদি অন্য উন্নত দেশগুলি দেখি এক্ষেত্রে পরিমান বাড়ানোর জন্য যা যা প্রয়োজন তার দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে।” যোগ করেন তিনি।

Read more news: 

চিকেনের প্রসারে রাজ্যজুড়ে রেসিপি প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে পোলট্রি ফেডারেশন

বিশ্বজুড়ে প্রাণীজ প্রোটিনে পোলট্রি দু’নম্বরে

ড. কৌশিক দে বলেন- “গত বছর যদি বিশ্বজুড়ে প্রাণীজ প্রোটিনের দিকে তাকাই তাহলে দেখব সেখানে কিন্তু পোলট্রি দু’নম্বরে আছে। অন্য প্রাণীজ প্রোটিনের মধ্যে এগিয়ে আছে মুরগির মাংস। কিন্তু পোলট্রির কনজাম্পশন বিশ্বব্যাপী যদি দেখি তাহলে কিন্তু দ্বিতীয় নম্বরে। বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, পোলট্রিতে দারুন বৃদ্ধি। যদিও আমরা দেখি যে ভারত সারা বিশ্বে চিকেন উৎপাদনে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। বিশ্বে প্রতি বছর গড়ে ১৭ কেজি’র বিপরীতে ভারতে ৩.১ কেজি মুরগির মাংস খায়। সারা বিশ্বে মাথা পিছু মুরগির মাংসের ব্যবহারে প্রথম স্থানে রয়েছে বাহামাস। তারা করেছে মাথা পিছু ৭০.২ কিলো। এটা অনেক বেশি। যেখানে আমরা খাই ৩.১ কেজি সেটা উন্নত দেশগুলি অনেক বেশি খায়। তাই এই ব্যবহার বারানোর জন্য কি করা দরকার, মার্কেটিং করা দরকার, উৎপাদন বাড়ানো দরকার এবং জন্সাধারণকে বোঝানো দরকার যে মুরগির মাংস খাওয়ার সুবিধা কি কি আছে। এসব করতে হবে।”

ভারতে মাথা পিছু মুরগির মাংসের ব্যবহারে বৃদ্ধি

“ভারতে মাথা পিছু মুরগির মাংসের ব্যবহারের কিন্তু একটা ভাল বৃদ্ধি হচ্ছে। কোভিডের সময় মাথা পিছু ব্যবহার একটু কমেছিল কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা বিশ্বাস করি ৩.২৩ কেজির কাছে গিয়ে পৌঁছবে। ২০২০ সালে যেটা ছিল ৩.২০ আবার সেই লেভেলে আমরা পৌঁছতে পারব। ভারতে মাথা পিছু মুরগির মাংসের ব্যবহারে যদি ২০১৩-২০২৩ সালের চিত্রটা দেখি তাহলে দেখা যাবে যে যখনই আমাদের ইন্ডাস্ট্রি বৃদ্ধি পেয়েছে তখনই কিন্তু ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে।” যোগ করেন তিনি।

চিকেন উৎপাদনে সারা দেশে কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ একই স্থানে রয়েছি। প্রজাতি অনুসারে 2019 আর্থিক বছরে ভারত জুড়ে উত্পাদিত মাংসের পরিমাণ যদি দেখি সেখানে মুরগির মাংস সবচেয়ে এগিয়ে। সরকারি গণনা অনুসারে মুরগির মাংস ১.৪৪ শতাংশ আমরা ব্যবহার করছি অন্যান্য প্রোটিনের সঙ্গে ।

Published on: নভে ১৮, ২০২৩ at ২১:৪০

 


শেয়ার করুন