সুন্দরবনের মহিলাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়াতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রাণী পালনের প্রশিক্ষণ শুরু হল প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে

প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা– অনিরুদ্ধ পাল ও ডাঃ সৌমিত্র পন্ডিত

Published on: জানু ৭, ২০১৯ @ ২৩:০৯

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৭ জানুয়ারিঃ পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। গবেষণা, চিকিৎসা থেকে শুরু আনুষঙ্গিক সমস্ত কাজের পাশাপাশি গ্রামীণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আয়ের পথ দেখাচ্ছে। জৈব প্রযুক্তি হাব প্রতিষ্ঠা প্রকল্পের আয়োজনে এই নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাংলার কালো ছাগল ও গাড়ল ভেড়া পালনের প্রশিক্ষণ শুরু হল সোমবার থেকে।সুন্দরবন এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আসা ২৫জন মহিলা যারা প্রাণীপালক হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিত তারা প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পাঠ নিয়ে নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পাঁচদিনের এই প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিয়েছেন।

ইতিমধ্যেই সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ ও গোসাবা ব্লকে কিষাণ হাব তৈরি করেছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়। এই দুই ব্লকের থেকে ১০০০ মহিলা কৃষককে বেছে নিয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে রেখে বাংলার কালো ছাগল এবং গাড়ল ভেড়া কিভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পালন করা হবে তা নিয়ে পাঁচদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর আগে ছটি শিবির হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৩৫০ জন মহিলাকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের ছাগল এবং ভেড়া বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। যা নিয়ে তারা গ্রামে নিজের বাড়িতে রেখে প্রশিক্ষণ শিবিরে শিখে যাওয়া বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সেগুলি পালন করে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে আয়ের পথ বৃদ্ধি করতে পারবেন। এর জন্য সুষম খাবার, খনিজ লবণ, প্রতিষেধক, ওষুধপত্র সবই প্রজেক্টের খরচায় দেওয়া হচ্ছে।

সোমবার পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলগাছিয়া ক্যাম্পাসে সপ্তম এই প্রশিক্ষণ শিবিরের উদ্বোধন করেন উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস। প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নেওয়া সুন্দরবনের এই মহিলাদের তিনি বলেন, প্রাণীপালনটা আপনাদের একটা সাংসারিক কাজের মধ্যে পড়ে। সেই সাংসারিক কাজটাই কিভাবে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গীতে করানো যায় সেটা সঠিকভাবে জানানোই এই প্রশিক্ষণের কাজ। অংশগ্রহণকারী এক মহিলা বলেন- তিনি ছাগল পালন করতেন। সেই ছাগল তিনি বিক্রি করেছেন। একথার সূত্র ধরে উপাচার্য্য বলেন-“এই যে একজন বললেন, ছাগলটা বিক্রি করে দিয়েছেন। বিক্রি করে কিছু টাকা পেয়েছেন। সেই টাকায় কতটা লাভ করেছেন কতটা লোকসান করেছেন সেই হিসেবটা উনি জানেন না। সেই প্ল্যানটা এখানে দেওয়া। আপনারা সব জানেন সব করেন কিন্তু তার মধ্যে একটা বিজ্ঞান আছে সেই বিজ্ঞানটাকে একটু চালিয়ে দেওয়া যাতে করে আরও ভাল করে করতে পারেন।ছাগলকে ঘাস কেন খাওয়াতে হয় কেন কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হয়? এই কেনোর কোনও উত্তর আপনাদের জানতে হবে। এই কেনোর উত্তরের মধ্যে যেটা আছে সেটা হল বিজ্ঞান। আপনি যদি ঘাস না খাওয়ান তাহলে বাচ্চা হবে না চোখের সমস্যা হবে। এই যে সমস্যাগুলো কেন হবে সেইটা জানানোর জন্য এখানে এই প্রশিক্ষন। এটা না জানলে আপনাদের মধ্যে ঘাস খাওয়ানোর তাগিদ থাকবে না। সেই বিজ্ঞানটা জানা আর কিছু অসুখ-বিসুখ সম্পর্কে জেনে যাওয়া। এই অসুখগুলি যাতে না হয় সেটা দেখা। এই প্রশিক্ষণে আমাদের মাস্টারমশাইরা আপনাদের তা শেখাবে।”

“এর সঙ্গে ব্যবসায়িক ভিত্তিটাও জানতে হবে। আপনারা মুরগি পুষছেন অনেকেই সুন্দরবনের মহিলারা মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত আছেন। কিন্তু এর থেকে কতটা রোজগার করা যায় বা কি করলে এই রোজগারটা আর একটু বাড়বে -সেই পাঠটাও আপনাদের এখান থেকে নিতে হবে। এটা ঠিক যে আপনি যদি বিজ্ঞানসম্মতভাবে চাষ করেন তাহলে এখন যা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি লাভ হবে।” বলেন উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস।

প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, সম্প্রসারণ ও খামার অধিকরণ দফতরের অধিকর্তা ডা. অরুণাশীষ গোস্বামী প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ও তার প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ডিপার্টমেন্ট অব বায়ো টেকনোলজি বলে ভারত সরকারের একটি সংস্থা আছে তাদের সহযোগিতায় এই প্রকল্পের আওতায় আপনাদের এলাকায় বিগত এক বছর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাংলার কালো ছাগল ও গাড়ল ভেড়া পালন করার যে প্রশিক্ষণের কাজ চলছে সেটা আরও বাড়ানো যায় কিনা সেটাও আপনারা ঠিক করবেন।মূলত এই কাজের সঙ্গে গ্রামের মহিলারা যুক্ত থাকবেন। মূলত প্রাণী পালন ছাগল এবং ভেড়া তার সঙ্গে শুয়োর তিনটি প্রজাতিকে নিয়ে এই প্রাণী পালনের উপর একটি প্রশিক্ষণ আমরা দেব। প্রশিক্ষণের পর আমরা ওখানে যাব। আপনারা কিভাবে পালন করছেন এবং প্রাণীগুলিকে আমরা বিনা পয়সায় আপনাদের কিনে দেব। তার অসুখ-বিসুখের ওষুধপত্র আমরা দেব।খাওয়ার জন্য আমরা খাদ্য দেব। এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে এই সব কিছু মিলে আমরা দেখে নেব যে ঐ প্রাণী পালনের মাধ্যমে আপনাদের অর্থনৈতিক ভিত্তিটা অর্থাৎ আয়ের পথটা আপনারা ঠিক মতো বাড়াতে পারলেন কি পারলেন না।”

“আমাদের মূল উদেশ্য হল-আপনার বাড়ির কাছে আপনার গ্রামে যে প্রাণীটি আপনারা সাধারণভাবে পালন করে এসেছেন বাংলার কালো ছাগল এবং ভেড়া সেই দুটি প্রাণী পালন করে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তার সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তার থেকে অতিরিক্ত আয়ের পথ দেখানো। তার জন্য আপনাদের একটা হিসেব রাখতে হবে। আপনার নিজের নামে একটা অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এই সমস্ত বিষয়গুলি আমাদের বিশেষজ্ঞরা আপনাদের জানাবেন- বিষয়টি এখানেই থেমে থাকার বিষয় নয়। আপনারা যখন বাড়ি ফিরে যাবেন আমাদের এখান থেকে বিশেষজ্ঞরা যাবেন প্রয়োজন ভিত্তিক আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। প্রাণীসম্পদের মাধ্যমে আপনাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে শক্ত করতে পারবেন সেই আশা রাখি।” বলেন অরুণাশীষবাবু।

এদিনের সভায় খামারের সহ অধিকর্তা ও বায়োটেক কিষাণ হাবের মুখ্য প্রকল্প পরিদর্শক ডঃ কেশব চন্দ্র ধারা সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাসকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক অধ্যাপক এস এস দানা, ছাত্র কল্যান অধ্যক্ষ অধ্যাপক শুভাশীষ বটোব্যাল, মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বিপুল কুমার দাসকেও ধন্যবাদ জানান।গোটা প্রশিক্ষণ শিবিরটি তাঁর তত্ত্বাবধানেই হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে সুন্দরবনের মহিলারা আশার আলো দেখেছেন বলেই সেখান থেকে অংশগ্রহণকারীদের যোগদান বেড়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে।

Published on: জানু ৭, ২০১৯ @ ২৩:০৯


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 1 = 5