সীতা মাতা ছাড়া অসম্পূর্ণ অযোধ্যা, ভগবান রামও- নেপালের জানকী মন্দিরে পুজো দিয়ে বললেন মোদী

দেশ বিদেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

Published on: মে ১১, ২০১৮ @ ১৬:২২

এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ দু’দিনের সফরে নেপালে এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।তবে অন্যান্যবারের মতো এবার তিনি তাঁর নেপাল সফর রাজধানী কাঠমান্ডুর পরিবর্তে মা সীতাদেবীর জন্মস্থান জনকপুর থেকেই শুরু করলেন। যেখানে তিনি আজ থেকে ভারত-নেপাল সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে জনকপুর-অযোধ্যা বাস পরিষেবাও চালু করলেন। জনকপুরে তিনি জানকী মন্দিরে পৌঁছে পুজোও দেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী এখানে তাঁর জনসভা শুরু করেন ‘জয় সিয়া রাম’ বলে। ১২১ কিলো ওজনের ফুলের মালা পড়িয়ে মোদীকে স্বাগত জানানো হয়। মোদী বলেন-জনকপুর ছাড়া আমাদের অযোধ্যা অসম্পূর্ণ।সীতা মাতা ছাড়া ভগবান রাম যেমন অসম্পূর্ণ।

শুক্রবার মোদী জনকপুর থেকেই তাঁর দু’দিনের নেপাল সফর শুরু করেন। যেখানে তিনি মা সীতাদেবীর মন্দিরে গিয়ে বিশেষ পুজোও দেন। জানকী মন্দিরের পুজারী রাম তপেশ্বর দাস বৈষ্ণব জানান, এর আগে ভারতের প্রাক্তন তিন রাষ্ট্রপতি নীলম সঞ্জীব রেড্ডি, জ্ঞানী জৈল সিং এবং প্রণব মুখোপাধ্যায় ভগবান রামের স্ত্রী-র মন্দির দর্শন করে গেছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী মোদী ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা পতাকা নেড়ে জনকপুর-অযোধ্যা বাস পরিষেবার সূচনা করেন।এরপর প্রধানমন্ত্রী রামায়ন সার্কিটেরও উদ্বোধন করবেন।যা ভারতের স্বদেশ দর্শন প্রকল্পের ন্যায় ১৩টি পর্যটক সার্কিটের মধ্যে অন্যতম। মোদী পশুপতিনাথ মন্দিরেও পুজো দেবেন বলে ঠিক আছে।

বিদেশ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী এই সফরে দু’দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হবে। যার মধ্যে আছে তৃতীয় পনবিজলী সংযন্ত্র শিলান্যাস। আগামী পাঁচ বছরে এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হবে। এর ফলে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।

এদিন জনকপুরের জানকী মন্দিরে পৌঁছতেই সেখানকার বাসিন্দারা মোদী-মোদী আওয়াজ করতে থাকেন একই সঙ্গে তারা ‘জানকী মাতা কী জয়’ বলেও স্লোগান দিতে থাকেন। এই নিয়ে মোদীর চার বছরের শাসনকালে নেপালে এটি তিন নম্বর সফর। তবে নেপালে নতুন সরকার গঠনের পর সেখানকার নয়া সরকারের আমলে এটা মোদীর প্রথম সরকার।যদিও এই সফরকে ধর্মীয় সফর বলা হচ্ছে তবে  এর পিছনে মোদীর একটা কূটনৈতিক চালও কাজ করছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। ইদানীং নেপাল যেভাবে চীনের দিকেে ঘেঁষতে শুরু করেছে তা থেকে তাদের সরিয়ে আনাটাও একটা কূটনৈতিক চাল বলে মনে করা হচ্ছে।

জানকী মন্দির দর্শন করার পর মোদী তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন-“আমি গর্বিত যে এখানে এসে আমি মাতা সীতার পুজো করার সৌভাগ্য লাভ করলাম। আমি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি জনকপুরে এসে পুজো দিলেন। এজন্য আমি নেপালের প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। একই সঙ্গে আমি নেপালের কয়েক কোটি মানুষকে সম্মান জানাই। রামায়ন সার্কিট থেকে পর্যটনের সুবিধা মিলবে। অযোধ্যার সঙ্গে জনকপুরের পুরনো যোগসূত্র আছে। জনকপুর-অযোধ্যা বাস পরিষেবা চালু হওয়ার জন্য নেপাল সরকারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। যা ভারত-নেপালের পক্ষে খুবই মূল্যবান।

এরপর জনকপুরের এক জনসভায় মোদী বলেন-

“আজ জানকী মন্দির দর্শন করে আমার বহু বছরের মনোকামনা পূর্ণ হয়েছে। ভারত আর নেপাল দুই দেশ। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব আজকের নয়, ত্রেতা যুগ থেকে চলে আসছে। রাজা জনক আর রাজা দশরথ শুধু জনকপুর আর অযোধ্যার নন, ভারত এবং নেপালের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং সম্পর্কের বন্ধনে বেঁধে দিয়ে গেছেন।এই বন্ধন রাম-সীতার। বুদ্ধের, মহাবীরের। এই বন্ধন রামেশ্বরমে বসবাসকারীকে টেনে পশুপতিনাথে নিয়ে আসে। এই বন্ধন লুম্বিনীতে বসবাসরত মানুষকে বুদ্ধগয়ায় টেনে নিয়ে যায়। এই বন্ধন, এই আস্থা, এই স্নেহ আজ আমাকে জনকপুরে নিয়ে এসেছে। ভারত-নেপাল সম্পর্ক কোনও পরিভাষাই দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তা ভাষার বন্ধনে বেঁধে আছে। এই ভাষা আমাদের নিজেদের। এই ভাষা রুটির, এই ভাষা বেটির। এই স্থান মা জানকী ধাম, যাকে ছাড়া আমাদের অযোধ্যা অসম্পূর্ণ।ইতিহাস সাক্ষী আছে, যখনই একে অপরের উপর সঙ্কট নেমে এসেছে ভারত-নেপাল দুই দেশ এক জোট হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা উভয়েই একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে সঙ্কটের মোকাবিলা করেছি।এই সময় আমাদের একসঙ্গে মিলে শান্তি, শিক্ষা, সুরক্ষা, সমৃদ্ধি আর সমগস্কারের পঞ্চবটিকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের এটা মানতেই হবে যে নেপালের উন্নয়নের মধ্যেই ক্ষেত্রীয় উন্নয়নের সূত্র আছে। উন্নয়নের প্রথম শর্ত হল, গণতন্ত্র। আমি খুশি এই কারণে যে আপনারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে মজবুত করছেন। আর তারই মধ্যে আপনাদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। মিথিলার সংস্কৃতি এবং সাহিত্য, মিথিলার লোক-কলা, মিথিলার স্বাগত সম্মান সব অদ্ভুত। সারা বিশ্বের মধ্যে মিথিলার সম্মান সবার উপরে বিরাজ করছে। জনকের রাজ্য, সীতা মাতার কারণে চেতনার গঙ্গোত্রী তৈরি হয়েছে। সীতা মাতার ত্যাগ, তপস্যা, সমর্পন এবং সংঘর্ষের মূর্তি। এই জায়গা সেই স্থান যারা দেখিয়েছে কন্যা সন্তানকে কিভাবে সম্মান দিতে হয়।কন্যা সন্তানদের সম্মান আজ খুবই আবশ্যক হয়ে পড়েছে। ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ শুধু ভারতের ক্ষেত্রে নয় আমাদের সমস্ত প্রতিবেশী দেশের ক্ষেত্রেও এই কামনা করি। যখন দেখি নেপালে ‘সমৃদ্ধ নেপাল, সুখী নেপালী’ স্লোগান ওঠে তখন আমার মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। আমাদের দেড়শো কোটি ভারতবাসী পর্যন্ত খুশি হয়।

Published on: মে ১১, ২০১৮ @ ১৬:২২

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − = 2