সকলের সামনেই বৃদ্ধ দম্পতির পায়ে ধরে ‘অত্যাচারী’ ছেলে-বৌমাকে ক্ষমা চাওয়ালেন বিডিও

দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল                                                                ছবি-বাপন ঘোষ

Published on: আগ ২৪, ২০১৮ @ ২২:৪৫

এসপিটি নিউজ, ঝাড়গ্রাম, ২৪ আগস্টঃ “স্বামী-স্ত্রী আর অ্যলসিশিয়ান জায়গা বড়ই কম/ আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।”

নচিকেতার গানের এই লাইন যে কতখানি বাস্তবমুখী তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। একদিন যে বাবা-মা কত কষ্ট স্বীকার করে ছেলেকে তিলে তিলে বড় করে তোলেন এক সময় সেই বৃদ্ধ বাবা-মা’কেই কষ্ট দিতে তাদের এতটুকু বাধে না।

ঠিক এমনটাই ঘটেছে ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম ব্লকের খড়িকামাথানী গ্রাম পঞ্চায়েতের বড় ধানশোলা গ্রামে।এখানেই থাকেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ রমেশ মাহাত ও তাঁর বৃদ্ধা স্ত্রী অলকা মাহাত। তাদের এক ছেলে রবীন্দ্রনাথ মাহাত ও বৌমা কাজল মাহাতকে নিয়ে তাঁদের সংসার। ছেলে বিডিও অফিসের অস্থায়ী কর্মী। বৌমা অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী। কাজেই পরিবারে অর্থাভাব একেবারেই নেই।

কিন্তু বাবা-মা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাঁদের ব্রাত্য করে ফেলা হয়। আর তা করে একশ্রেণির ছেলে-বৌমা। অভিযোগ, এখানেও রমেশবাবু ও তাঁর বৃদ্ধ স্ত্রী দিনের পর দিন ছেলে-বৌমার অত্যাচারের শিকার হয়ে আসছিলেন। একমাত্র ভরসা ছিল বৃদ্ধভাতার এক হাজার টাকা। ‘গুণধর’ ছেলের কীর্তি বাপের সেই সামান্য টাকাও কেড়ে নেয়। খেতে দেয় না। চলতে থাকে নির্মম অত্যাচার। বৃদ্ধ দুটি মানুষ এমন অত্যাচার আর কতদিন সইবেন!সহ্যের বাঁধ ভেঙে যেতেই বৃদ্ধ দম্পতি সোজা চলে আসেন বিডিও সৌরেন্দ্রনাথ পতির কাছে।

বিডিও জানতে চান-আপনাদের কি হয়েছে? জবাব দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধ দম্পতি। জানান ‘গুণধর’ ছেলে-বৌমা’র কথা। সব শুনে বিডিও সৌরেন্দ্রনাথবাবু তৎক্ষণাৎ ডেকে পাঠান অভিযুক্ত ছেলে-বৌমাকে। অফিসে সকলের সামনে ধমক দেন ছেলে-বৌমাকে। বুঝিয়ে দেন বৃদ্ধ বাবা-মা কখনও বোঝা হয় না তাঁরা হয় সংসারের অবলম্বন।এরপর ছেলে রবীন্দ্রনাথ মাহাত ও বৌমা কাজল মাহাতকে সকলের সামনে বৃদ্ধ দম্পতির পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দেন। বিডিও-র নির্দেশে সকলের সামনে তারা নিজেদের গর্হিত অপরাধ স্বীকার করে বাবা-মায়ের পায়ে ধরে ক্ষমা চান।

এরপর বিডিও-র হস্তক্ষেপে ছেলে-বউমাকে দিয়ে অঙ্গীকার পত্র লিখিয়ে নেন যে আর কোনও দিন তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে এমন আচরন করবেন না। সেই সঙ্গে তারা বাবা-মায়ের দরকারি কাগজপত্রও ফিরিয়ে দেন। সব শেষে বিডিও ক্যান্টিনে বৃদ্ধ দম্পতিকে বসিয়ে দুপুরের আহার করিয়ে অফিসের গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

বিডিও সৌরেন্দ্রনাথবাবুর এমন ভূমিকাকে সকলেই সাধুবাদ জানাচ্ছেন।

Published on: আগ ২৪, ২০১৮ @ ২২:৪৫


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

23 − = 15