প্রেম ও মহামিলনের উৎসব ‘ ঝুলন ও রাখী পূর্ণিমা ‘ ঘিরে আছে কত কাহিনি

এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

লেখক-রসিক গৌরাঙ্গ দাস

Published on: আগ ২৫, ২০১৮ @ ০৯:৫২

এসপিটি প্রতিবেদনঃ সুপ্রাচীনকাল থেকে ঝুলন ও রাখী উৎসব ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় এবং সমাজ জীবনে শক অপরিসীম তাৎপর্য বহন করে চলেছে। এই উৎসবের মুখ্য উদ্দেশ্য হল প্রেম, মৈত্রী, জাতীয় সংহতি, জন জাগরন, দেশভক্তি ও দেশপ্রেম এবং আধ্যাত্মিকতার বিকাশ সাধন।জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন উৎসব। আজও ধর্মপ্রাণ নরনারীদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে এই উৎসব হয়ে ওঠে আনন্দমুখর। এই উৎসব বেশ কয়েকদিন ধরে চলে।বর্তমানে কালের বিবর্তনে কিছু পরিবর্তিত রূপ পরিলক্ষিত হয়।ভারতবর্ষের সর্বত্রই এই উৎসব ধুমধামের সহিত পালিত হয়। তন্মধ্যে উল্লেখ যোগ্য মণিপুর রাজ্য, বৃন্দাবন এবং মায়াপুর ও নবদ্বীপ ধাম। প্রতিটি মঠ-মন্দির এবং গৃহাঙ্গন আলোকমালা ও ফুল সজ্জায় সুসজ্জিত করা হয়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও মেতে ওঠে উৎসবে। পাড়ায় পাড়ায় দেখা যায় ঝুলন মন্ডপ। শ্রাবণী পূর্ণিমাকে ‘ঝুলন পূর্ণিমা’ ও ‘রাখী পূর্ণিমা’ বলা হয়।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই নানা লীলার কেন্দ্রবিন্দু। তার মধ্যে সর্বোত্তম নরলীলা। ঝুলন তারই এক মনোরম প্রকাশ। দ্বাপর যুগে বৃন্দাবনে স্নিগ্ধ চন্দ্রলোকে যখন গগন মন্ডল উদ্ভাসিত, তখন সখা ও গোপীগন পরিবেষ্টিত হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ঝোলায় (দোলায়) আরোহণ করে লীলা বিহার করেন এবং ভগবৎ আনন্দের সঞ্চার করেন সমাবেত ভক্তগণের মধ্যে। এই ঝুলন ‘ হিন্দোল ক্রীড়া ‘ অর্থাৎ ঝুলা বা দোলা খাওয়া। ঝুলন প্রেমের উৎসব। মহামিলনের ‘ পবিত্র নীড় ‘। ভগবানের সঙ্গে মিলিত হবার উৎসব। তাঁকে আপন করে পাওয়ার উৎসব। যুগ যুগ ধরে আসমুদ্র হিমাচলের কোটি কোটি নরনারী সমস্ত প্রতিকূলতা জয়ের জন্য পরম পুরুষোত্তমের নিকট আরাধনা করে চলেছেন।

শ্রাবণী পূর্ণিমাতে শ্রীকৃষ্ণ গোকুল বাসীদের হাতে এবং গোকুলবাসীগণ ভগবানের হাতে মঙ্গলসূত্র রাখী বেঁধে দিয়ে পরস্পরের রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তাই এই পূর্ণিমার নাম রাখী পূর্ণিমা। বর্তমানে ভারতবর্ষের জাতীয় জীবনে রাখী বন্ধন এক বিশেষ স্থান অধিকার করেছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণের সীমা অতিক্রম করে পরস্পর পরস্পরের শুভ কামনায় রাখী বন্ধন করে চলেছে অবলীলাক্রমে।

সত্যযুগে দেবরাজ ইন্দ্র বহু বছর ধরে অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধ করে পরাজিত হচ্ছিলেন। তখন দেবগুরু বৃহস্পতির নির্দেশে ইন্দ্রের স্ত্রী ইন্দ্রানী শ্রাবণী পূর্ণিমার দিন ইন্দ্রের হাতে রক্ষা কবচ পরিয়ে দেন। ইন্দ্র যুদ্ধে গমন করলেন। অসুরদের সঙ্গে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হল। অবশেষে অসুররা পরাজিত হল।

ত্রেতাযুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র বালী বধের পূর্বে সুগ্রীবও রামচন্দ্রের হাতে লতা-পাতা দিয়ে রক্ষা কবচ পরিয়ে দিয়েছিলেন (যা কিনা আজকের দিনের রাখীর মতো)।

দ্বাপরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রজবাসীদের হাতে রাখী পরিয়ে দিয়েছিলেন।

কলিতে রাধাকৃষ্ণ মিলিত তনুধারী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুও শ্রীধাম বৃন্দাবন ও নবদ্বীপে ঝুলন এবং রাখী উৎসবে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।

ঐতিহাসিক মত প্রচলিত আছে যে, সিকন্দরের পত্নী রৈক্সোনা রাখী পূর্ণিমার দিন রাজা পুরুকে রাখী পাঠিয়েছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে রাজা পুরু যখন সিকন্দরকে হত্যা করার জন্য তরবারি উদ্যত করেন তখন তাঁর নিজের হাতের রাখীর দিকে দৃষ্টি পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে রাজা পুরু তরবারি নামিয়ে নেন এবং সিকন্দরের প্রাণ রক্ষা পায়।

বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলনের সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরস্পরের হাতে রাখী বেঁধে দিয়ে দেশ রক্ষার সঙ্কল্প করেছিলেন।

পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থণা ঝুলন ও রাখী পূর্ণিমা উৎসব প্রসারিত হোক সমাজ জীবনের প্রতি কোনে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হোক শান্তি, সংহতি, দৃঢ় হোক মানব মেন বন্ধন। (লেখক পরিচিতি-মায়াপুর ইসকনের জনসংযোগ আধিকারিক) ছবিঃ অনিরুদ্ধ পাল

Published on: আগ ২৫, ২০১৮ @ ০৯:৫২


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 1 = 3