লোকাল পুলিশকে ধমক মমতারঃ ফের যদি নৈহাটিতে কেউ আক্রান্ত হয়, আমি কিন্তু ডিজি-র সঙ্গে বুঝে নেব

Main রাজ্য লোকসভা ভোট 2019
শেয়ার করুন

  • “মনে রাখবেন আমি পাবলিকের পক্ষে, আপনাদের সন্ত্রাসের বিপক্ষে।”

  • “আইন-শৃঙ্খলা কাল থেকে আমার হাতে এসেছে। আইন আইনের পথে চলবে।সন্ত্রাস আমি বরদাস্ত করব না”

  • “আমি বেশি মানবিক। তাই আমার একটু বেশি ভুল হয়। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”

  • “মারলে এখানে (লাশ পড়ার কথা বলব না) বিচার হবে অন্য খানে। যার যা বোঝার বুঝে নিন। কোথায় কোথায় কে কি করে সব আমার জানা আছে। কদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকবেন?”

সংবাদদাতা- অনিরুদ্ধ পাল

Published on: মে ৩০, ২০১৯ @ ২৩:৫০

এসপিটি নিউজ, নৈহাটি, ৩০মে: ঘর ছাড়াদের ঘরে ফেরাতে আজ নৈহাটি পুরসভার সামনে ধর্না মঞ্চে হাজির হয়ে একদিকে যেমন বিজেপিকে শাসিয়ে গেলেন পাশপাশি পুলিশ প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়ে জানিয়ে গেলেন অবিলম্বে যেন হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এখান  থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ফের যদি কেউ  আক্রান্ত হন তাহলে তিনি ডিজি-র সঙ্গে তা বুঝে নেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ফের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান মুখ্যমন্ত্রীকে

নৈহাটি আসার পথে কাঁকিনাড়া জুটমিলের সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে এক দল যুবিক ‘জত শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে থাকেন। আর এজন্য তিনি বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে সদ্য জয়ী অর্জুন সিং-এর নাম না করে তার বিরুদ্ধে তোপা দাগেন। বলেন- “বাংলায় থেকে হিন্দিতে গালাগালি দিচ্ছে। আপনার সাহস তো কম নয়- আপনি নিজে পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে আছেন আর সবাইকে ঘর ছাড়া করে দিয়েছেন। ভাবেন কি, আপনাদের পরিবারের লোকজন নেই? যারা বাইরে আছেন বাঙালি পরিবারের লোকজন, সংখ্যালঘু পরিবারের যারা আছেন- এটা ডেকে ডেকে বলা হচ্ছে দুটি সম্প্রদায়ের উপর। সব হিন্দিভাষী লোক খারাপ এটা আমি বিশ্বাস করি না।”

প্রতিবাদী মমতা

এই সময় মঞ্চে থাকা নোয়াপাড়ার বিধায়ক সুনীল সিং-কে লক্ষ্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন- “সুনীল, তোমরা তোমাদের কম্যিউনিটিকে মেসেজ দাও।আমি কিন্তু বলে গেলাম। বাঙালি-ননবেঙ্গলি আমি কিন্তু এসব করতে দেব না। পরিষ্কার বলে যাচ্ছি।আর যারা বলছেন, তারা কত বড় গুন্ডা তাদের কত বড় গুন্ডা লিডার আছে, আমি বলছি সন্ত্রাসের কারখানা করেছেন দিকে দিকে তার শেষ আমি দেখতে চাই। মনে রাখবেন আমাদের মেরেধরে কেড়ে নিতে পারে নি আর পারবেও না। পারবেও না, আমরা কেউ মরে যায়নি। মোদিবাবু, আপনি ৩০০ সিট পেয়েছেন তাই ভালোভাবে পার্লামেন্ট করুন।কোনও অসুবিধা নেই। যদি মনে করেন প্রেসিডেন্ট রুল করবার জন্য সন্ত্রাসের কারখানা করে বাংলায় উড়ন তুবড়ির কয়েকটা ক্যাডারকে এনে বসিয়ে দেবেন- মনে রাখবেন আমার থেকে বড় কেউ আর হবে না আমি পাবলিকের পক্ষে, আপনাদের সন্ত্রাসের বিপক্ষে।”

“আমার কালচার আমার কাছে। তোমার কাছে আমি শিখব না। মা-কে কেউ মা, কেউ মাদার কেউ আম্মি- তুমি কে হরিদাসের দল? তুমি আমায় শিখিয়ে দেবে মা-কে কি বলব? গুন্ডামি? দু’দিন বাদে যখন খেতে পাবে না, তখন বুঝবে বিজেপি কত টাকা দেয় আমি দেখছি।”

“নির্বাচনের সময় এক একজনকে ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে, এক একটা পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে।টাকা কোথা থেকে আসছে? গুন্ডামি? একটা বোম যেন এলাকায় না থাকে? একটা আর্ম যেন এলাকায় না থাকে? সে যত বড়ই নেতা হোক। এটা আমি বরদাস্ত করব না। আইন-শুঙ্খলা কাল থেকে আমার হাতে এসেছে। আইন আইনের পথে চলবে।” বলেন মমতা।

পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

ঘর ছাড়াদের এফআইআর-এর কপি দেখিয়ে মমতা বলেন-“দেখুন ৪০০ এফআইআর করা হয়েছে। কেউ ঘর ছাড়া কাউকে নির্যাতন করা হয়েছে। কাউকে অত্যাচারিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে পুলিশ ছিল। দিল্লিকে জেতানোর জন্য কি কি করেছে দেখুন। কিভাবে করেছে দেখুন একটাও বিচার হয়নি। ডিজিকে এই পেপারগুলি দিতে বলছি। আমি বলব, যত শীঘ্র পারেন ব্যবস্থা নিন।”

“যদি কারও রিকশা ভাঙে, দোকান ভাঙে, যদি কারও ঘর ভাঙে, পার্টি অফিস নিয়ে কেস হবে। আমি নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানা পরিবার অনুযায়ী চাই। যাদের সম্পত্তি লুঠ হয়েছে লোকাল থানায় এফআইআর করুন। সবে জিতেছে তো গ্যাস বেলুনের গ্যাসটা ফুলে গেছে বেশি। আমি ২০১১ সালে জিতেছিলাম বলেছিলাম- বদল চাই বদলা নয়। রনীন্দ্র সংগীত ব্বাজিয়েছিলাম আর নজরুল গীতি বাজিয়েছিলাম।হ্যাঁ, ঠিক বলেছো, ভুল আমার হয়েছে। আমি বেশি মানবিক। তাই আমার একটু বেশি ভুল হয়। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।” বলেন মমতা।

‘আমি কিন্তু সব জানি’

“আজকে সিপিএমের হার্মাদরা যারা ৩৪ বছর বাংলায় অত্যাচার করেছে তারা আজ বিজেপির ঝলাদে পরিণত হয়েছে। তারাই আগামিদিন টাকা নিয়ে বিজেপিকে তাড়াবে দেখে নেবেন। কিন্তু ক্রিমিনাল তো ক্রিমিনাল। তাদের কোনও রঙ দেখার প্রয়োজন নেই। ক্রিমিনালদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা আছ বারাকপুর সাবডিভিশনে- মদন (মিত্র) তুমি সময় দেবে। আরে এটা কেন ভাবে না ভাই, মদনের গাড়িতে বোম মারছে। এই বোমটা যদি তোমার গাড়িতে পড়ে কি হবে? আমি চাই না এটা হোক। আমি শুধু উদাহরণ দিচ্ছি। আপনি যে অন্যকে মারছেন মারটা যদি আপনার ঘাড়ে পড়ে কেমন হবে? আপনিও তো রোজ এখানে-ওখানে যান আমি জানি। আপনারা কে কোথায় যান, কোথায় থাকেন, কত ব্যবসা, কোথায় চালায় সবই তো ফেকবুকে মিথ্যে রটনা করেন। আমি সব কটাকেই চিনি।”

“হবে নাকি চ্যালেঞ্জ! ওই মিঠুন চক্রবর্তীর একটা সংলাপ আছে না- এই খানে মারলে…. আমি ডায়লগটা বলছি- ‘মারলে এখানে (লাশ পড়ার কথা বলব না) বিচার হবে অন্য খানে’। যার যা বোঝার বুঝে নিন। কোথায় কোথায় কে কি করে সব আমার জানা আছে। কদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকবেন? কদিন বাইরে গিয়ে থাকবেন? বেআইনি সম্পত্তি আমি কেন রাখতে দেব? আইনি করতে হবে? বেআইনি জুট মিল করে আপনি যদি আমার গাড়িতে হামলা করেন আমি আইন গত ব্যবস্থা নেব। আমি আইনত ব্যবস্থা নিলে আপনার করে খাওয়াও বন্ধ আর যারা হামলা করছে তাদেরও করে খাওয়া বন্ধ।”

হুঁশিয়ারি মমতার

“এবার কিন্তু বদলা নেব- আমাদের স্লোগান ছিল বদল চাই বদলা নয়। আমি বদলা নেব সন্ত্রাসের বদলা। আমি সন্ত্রাস করতে দেব না। আমি শান্তি স্থাপন করব- এটাই আমার বদলা। আমি সন্ত্রাসের বদলা বনেব মানুষকে ভালবেসে। যদি ভাবেন মমতা ব্যানার্জিকে কটা সিট পেয়ে মুখটা বন্ধ করে দিয়েছি। ধুর মশাই, এতে আমার কিছুই এসে যায় না। আমি যদি দিল্লিতে ক্ষমতায় থাকতাম তখন যদি একটা-দুটো সিতের জন্য সমস্যা হলে একটা কথা উঠত। এখন কি আছে- না ঘরকা না ঘাটকা।আমরা যা আছি তাতেই আমরা পার্লামেন্ট সামলে নেব। এতেই আমরা বুঝিয়ে দেব আমরা কি। আর বেঙ্গলে ৪০টি কেন ১০০টা কিনে নিন টাকা নিয়ে। কিসসু হবে না।”

“এত চেষ্টা করেও তো একটা আধা গদ্দারের ছেলে তো ছোট গদ্দার তাকে তো সাসপেন্ড করে দিয়েছি। আইন আইনের মতো চলবে। আর একটা লোক বেচারা অসুস্থ বলে আমি কিছু বলব না। বেচারা ক্যানসার তিন বছর ধরে কলকাতাতেই থাকে।ও এলাকায় ঢুকতেও পারে না কাজ করে না। ওদের নিয়ে নিন না। মারা দলটা ভাল হবে। ওই আবর্জনাগুলো যে নিয়ে এসছে সে এখন বিজেপির বড় আবর্জনা। বিজেপি দলটা শেষ করার জন্য ওই গদ্দারই যথেষ্ট। সুতরাং এর আমি শেষ দেখে ছাড়ব।”

মমতার নজর এখন বারাকপুর মহকুমায়

“আমি আগামি ১৪ তারিখ কাঁচরাপাড়ায় কাঁচরা হটাবার জন্য বুথ লেভেলে কর্মী সম্মেলন করব। সেখানে যদি সাধারণ লোক আসতে চায় আসুক।মাঝেমাঝে এখন বারাকপুর ঢু মারব। আমি ভাটপাড়া ঢু মারব। আমি জগদ্দল ঢু মারব। আমি কাঁচরাপাড়া, নৈহাটি ঢু মারব। গদ্দাররা ভুলে যাবেন না।”

“আমডাঙা তোমরা পারবে। আর বারাকপুরের এদিককার লোকজন একটু শান্তিপ্রিয়। আমি নন-বেঙ্গলিদের বলব এই ক্রিমিনালদের বিরুদ্ধে আপনারাও এগিয়ে আসুন। আপনারাও রুখে দাঁআরান- এর একটা শেষ হোক।তা না হলে যদি কোনওদিন ভাগাভাগি হয় সেদিন আপনি কিন্তু থাকতা পারবেন না। আমিও ভালভাবে থাকতে পারব না। তাই বলব- বুঝে চলুন, ভেবে চলুন, বুদ্ধি খরচ করুন। বিজেপির টাকায় নিজের ইজ্জতকে বিক্রি করবেন না।”

ডিজিকে নির্দেশ

“মিস্টার ডিজি সাহেব, মিস্টার সিপি সাহেব। আমি চলে যাওয়ার পর যদি ফের কোনও ঘটনা ঘটে আমাকে জানাবেন কে কত বড় নেতা আর কোন নেতা কোথায় পালাচ্ছে আমি ধরে নিয়ে আসব। আমেরিকায় পালালেও ধরে নিয়ে আসব। অস্ট্রেলিয়ায়া পালালেও ধরে নিয়ে আসব। সেই মেকানিজম আমাদের আছে। আমি শান্তি বজায় রাখার জন্য সবাইকে আবেদন জানিয়ে গেলাম।”

Published on: মে ৩০, ২০১৯ @ ২৩:৫০

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

60 − = 55