লাভদায়ক নতুন প্রাণী ও উদ্ভিদ আবিষ্কারে বড় ভূমিকা নিতে চলেছে এই জৈবপ্রযুক্তি- কলকাতায় বলে গেলেন জার্মান প্রাণীবিজ্ঞানী

দেশ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিদেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা– ডা. সৌমিত্র পন্ডিত

Published on: জানু ২০, ২০১৯ @ ২৩:৪১

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২০ জানুয়ারিঃ প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান আমাদের নানা ধরনের আবিষ্কার দিয়ে চলেছে। সেই তালিকায় ঢুকে পড়েছে “ট্রান্সপোজন” নামে এক উদ্ভাবনী জৈবপ্রযুক্তি।এটি একটি জাম্পিং জিন- যার স্থানের পরিবর্তনে নানান ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদ বা শস্যের উদ্ভাবন সম্ভব।”পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়”এ আয়োজিত এই বিষয়ের উপর এক আলোচনায় এমনই আশার আলো দেখিয়েছেন জার্মান প্রাণী বিজ্ঞানী অধ্যাপক উইলফ্রেড কিউস।

গত ১১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ্জস্ব ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত “জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইন লাইভস্টক বাই ট্রান্সপোজনস অ্যান্ড ক্রিপস/ক্যাস৯” শীর্ষক আলোচনায় উঠে এল প্রাণী বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অভাবনীয় সেই সম্ভবনার কথা। বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট অধ্যাপক ও প্রাণী বিজ্ঞানী উইলফ্রেড কিউস। তিনি একাধারে জার্মানির ফ্রেড্রিচ লফলার ইনস্টিটিউট ও হ্যানোভা ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করেন। মূলতঃ “ট্রান্সপোজনস ও ক্রিসপার” জিন নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।

আলোচনার বিষয়টি একটু অন্যমাত্রার যা গত দু’দশক ধরে চলে আসা নতুন ধরনের প্রাণী বা উদ্ভিদবিদ্যার আবিষ্কারকে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। সোজা কথায় বলতে গেলে- আমরা জানি বংশগতির ধারক ও বাহক হল ‘জিন’-এই জিনের প্রকার ভেদ ঘটলে জিন নতুন জীব বা প্রাণী বা উদ্ভিদ তৈরি হয় বা একে অন্যের থেকে আলাদা হয়। তাই এই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা বংশগতি সম্বন্ধীয় প্রকৌশল যা প্রাণীসম্পদ উন্নতিতে কিভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং তা কিভাবে আমাদের উপকারে আসে এবং আগামিদিনে এর গুরুত্ব কি? আলোচনায় উঠে আসে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর।

বংশগতি সম্বন্ধীয় প্রকৌশল জৈব প্রযুক্তিবিদ্যায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটা কখনও জেনেটিক মডিফিকেশন বা জিনগত পরিবর্তন বলে থাকি। যার মূলে আছে ডিএনএ। যা কিনা জন্ম দেয় জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম বা জিনগত পরিবর্তন সম্বলিত জীব-এর। বর্তমানে এই জৈবপ্রযুক্তি -উদ্ভিদ-প্রাণী প্রভৃতির উপর গবেষণা চলছে।

কৃষিবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যার নানা বিষয়ের সঙ্গে এই প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় নতুন প্রাণী, উদ্ভিদ শস্য উৎপাদনে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে, রোগনির্ণয় থেকে রোগমুক্তির উপায় খোঁজার ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার বহুলাংশে বেড়েছে।

অধ্যাপক উইলফ্রেড ”ট্রান্সপোজন’ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন- এটি একটি জাম্পিং জিন- যার স্থানের পরিবর্তনে নানান ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদের বা শস্যের উদ্ভাবন সম্ভব।বলা হচ্ছে- এই পরিবর্তনীয় প্রাণী অধিক উৎপাদনশীল।এই জিনটি নিয়ে বিশ্বে প্রথম বিজ্ঞানী বারবারা ম্যাকক্লিনটক ১৯৪৮ সালে ভুট্টার উপর কাজ করেন এবং এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ১৯৮৩ সালে নোবেল পুরস্কারও পান।

এইভাবে পরবর্তীকালে মুষিক, গরু, মোষ, ভেড়্‌ ছাগল ও শুকরের উপর কাজ শুরু হয় যার ফলস্বরূপ বর্তমানে নতুন ধরনের আরও উন্নত উৎপাদনশীল প্রাণীর সৃষ্টি হচ্ছে।এই প্রযুক্তির মূল লক্ষ্য হল-নির্দিষ্ট কোনও সাহায্যকারী বা উপকারী জিনকে বাছাই করে অন্য প্রা্ণীর দেহে প্রবেশ ঘটিয়ে নতুন প্রাণীর সৃষ্টি যা রোগপ্রতিরোধ, উৎপাদনক্ষম প্রাণী তৈরি করা।

এই আলোচনার মাধ্যমে আগামিদিনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কাজের সূচনা হবে এই আশা করা যায়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড সারা ভারতে যেভাবে সমাদৃত হচ্ছে তার ধারাবাহিকতাও আগামিতে বজায় থাকবে এই আশা রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যান সমিতির অধ্যক্ষ ও প্রাণী জৈব রসায়নবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শুভাশীষ বটব্যাল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন গবেষণা, সম্প্রসারণ ও খামার অধিকরন-এর অধিকর্তা অধ্যাপক শুভাশীষ বিশ্বাস, বর্তমান অধিকর্তা অধ্যাপক অরুণাশীষ গোস্বামীর আশা বর্তমান পরিস্থিতিতে যে হারে প্রাণীপালনের দিকে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে তাতে আগামিদিনে চাহিদার সঙ্গে যোগানের যে বিস্তর ফারাক তা কিছুটা হলেও কমানো যাবে যদি অধিক উৎপাদনশীল প্রাণীর সৃষ্টি করা যায়।

এই আলোচনাসভায় প্রায় ১০০জনের মতো ছাত্র-শিক্ষক ও গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।

Published on: জানু ২০, ২০১৯ @ ২৩:৪১

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 + 8 =