প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনটি প্রশ্নের জবাব চেয়ে শত্রুঘ্ন বললেন- উত্তর না পেলে সবাই বলতেই থাকবে “চৌকিদার চোর”

Main দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: জানু ১৯, ২০১৯ @ ২৩:০৪

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৯ জানুয়ারিঃ ব্রিগেডের সভায় দাঁড়িয়ে বিজেপি সাংসদ বিহারিবাবু শত্রুঘ্ন সিনহার স্পষ্ট স্বীকারোক্তি- সত্যি কথা বলতে আমি ভয় পাই না। যেখানে জনগণের স্বার্থ জড়িয়ে আছে সেখানে যা সত্যি তা আমি বলবই। তার জন্য কেউ যদি বলে আমি অপরাধ করেছি তবে হ্যাঁ, আমি অপরাধ করেছি। আমার কাছে ব্যক্তির চেয়ে পার্টি বড়। আর পার্টির চেয়ে বড় দেশ। সেই দেশের উপরে কেউ হতে পারে না। আমি ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ হলেও বলতা চাই আমি আগে আসলে ভারতীয় জনতারই একজন।একজন দেশের প্রধান হয়ে যেভাবে রাতারাতি মানুষের উপর একটার পর একটা বোঝা চাপিয়ে দিলেন তার উত্তর আমার কাছে নেই।আজ সময় এসেছে তাঁর উত্তর দেওয়ার। আমিও তাঁর কাছে তিনটি প্রশ্ন রাখছি। এই প্রশ্নের উত্তর দিন। আর আড়াল করবেন না। উত্তর না দিলে লোকে বলতেই থাকবে- চৌকিদার চোর চৌকিদার চোর।

শত্রুঘ্ন সিনহা তিনটি প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি বলেন, এক একটা রাফেল চুক্তিতে ৪১ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রশ্ন-১)১২৬টি উড়োজাহাজের প্রয়োজন ছিল। ৩৬টি কেন কেনা হল? যেখানে দেশের সুরক্ষার প্রশ্ন জড়িয়ে আছে।

প্রশ্ন-২)এই উড়ো জাহাজের দাম তিন গুনেরও বেশি কেন হল? ৫০০-৫৩০ কোটি টাকা দাম ছিল। সেটা ১৬০০ কোটি টাকা দাম কিভাবে হয়ে গেল?

প্রশ্ন-৩) আমাদের দেশে এত ভাল কোম্পানি যেমন এইচ এ এল (হ্যাল)-যারা সুখী বানাতে পারে তাদের  বরাত না দিয়ে যারা সাইকেলের চাকা বানায়নি সেই বিদেশি কোম্পানিকে কেন বরাত দেওয়া হল? এ প্রশ্নের উত্তর যতক্ষন আপনি না দেবেন ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের মানুষ বলতেই থাকবে “চৌকিদার চোর” “চৌকিদার চোর।”

এরপর বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা এই সভায় যোগদানের কারন দর্শাতে গিয়ে বলেন-“আমি বোন মমতা ব্যানার্জির ডাকে ছুটে এসেছি।সংবিধানের রক্ষা করতে দেশ বাঁচানোর জন্য দেশকে আগে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশকে সঠিক পথ এবং নয়া পথের জন্য দেশকে এক মজবুত নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমরা আজ এখানে সবাই একত্রিত হয়েছি। এখানে উপস্থিত নর্থ ইস্ট ওয়েস্ট সাউথ -এর সমস্ত নেতারা দিশা দেখিয়েছেন। আমি লক্ষ্য করলাম সকলের লক্ষ্য একটাই। একটাই উদ্দেশ্য। পরিবর্তন পরিবর্তন পরিবর্তন। নয়া নেতৃত্বের সঙ্গে চলার জন্য এখানে হাজির হয়েছি।”

এরপর বিহারিবাবু বিজেপির সাংসদ হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলার বিষয়টিও এদিন ব্রিগেডের সমাবেশে দাঁড়িয়ে পরিষ্কার করে দেন। তিনি বলেন-“এখানে আসার অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন যে এখনও পর্যন্ত আপনি তো ভারতীয় জনতা পার্টিতে রয়েছেন তাহলে ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধে কেন বলছেন? আপনি কেন বিরুদ্ধাচরন করছেন? আপনি বিদ্রোহী? আমি বলতে চাই- যদি সত্যি বলাটা অপরাধ হয়ে থাকে তবে বুঝে নিন আমি অপরাধী। আমি সত্যের সঙ্গে সিদ্ধান্তের কখনও সমঝোতা করি না। এই সময় পর্যন্ত আমি ভারতীয় জনতা পার্টিতে আছি।”

এরপর তিনি নিজের অবস্থান সম্পর্কে জানান-“এর আগে আমাকে আমার বড় ভাই দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা বলছিলেন – এই সভার পর আমাকে অবশ্যই পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে। আমি তাঁকে জানিয়েছি- কোনও ব্যাপার নয়।আমি এটা ভালমতোই জানি। আমি এটাও জানি আমি-ভারতীয় জনতা পার্টির হলেও আগে আমি ভারতীয় জনতার একজন। আমার সমস্ত দায়দায়িত্ব, কর্তব্য ভারতের জনতার প্রতি।তাই এক্ষেত্রে যা বলছি যা করছি তা সবটাই দেশের জন্য। জনতার স্বার্থের জন্য। জনতার ভালর জন্য। এটা সারা বিশ্ব জানে ব্যক্তির চেয়ে পার্টি বড় পার্টির চেয়ে বড় দেশ। দেশের চেয়ে বড় কিছু হয় না। তাই পার্টিকে আয়না দেখানোর চেষ্টা করি। যে গণতন্ত্র বলে একটা বিষয় আছে। দেখুন ভাগাভাগি বন্ধ করুন।”

তুঘলকি ফরমান জারি করে রাতারাতি নোটবন্দি ঘোষণা করে দেওয়া হল। কেন নোট বন্দি ঘোষণা করা হল?এর ফলে আমাদের দেশের বহু মানুষের উপর কি প্রভাব পড়েছে তা আমরা দেখেছি। আমাকে অনেকে বলেছেন-কেন আপনি এ নিয়ে বললেন। এটা তো পার্টির সিদ্ধান্ত। আমি জানতেই পারিনি যে এটা পার্টির সিদ্ধান্ত ছিল। তাহলে ফ্রেন্ড-ফিলোজফার-গাইড-গুরু লালকৃষ্ণ আদবানিজি জানতে পারতেন। মুরলি মনোহর যোশী জানতে পারতেন। আমাদের যশবন্ত সিনহাজি জানতে পারতেন। আমাদের অরুণ শৌরিজি জানতে পারতেন। আমি জানতে পারতাম। লোক তো এটাও বলেছে যে ভারতের অর্থমন্ত্রী জানতেন না। হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রীর দফতর সিদ্ধান্ত নিল নোটবন্দির। কত মানুষ আমাদের দেশের বহু মা-বোনেরা ঘরে নিজেদের অর্জিত পয়সা জমিয়ে রেখেছিলেন তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য। সেই রকম কয়েক শো কোটি টাকা হাওয়ায় উড়ে গেল এসব করার অধিকার কে দিল?” প্রশ্ন তোলেন বিজেপির এই সাংসদ।

জিএসটি-নোটবন্দি নিতেও তিনি মোদিকে তুলোধনা করতে ছাড়েননি। তিনি বলেন- “জিএসটি-তে কারা লাভবান হলেন?এতে লাভ হল চাটার্ড অ্যাকাউন্টট্যান্টদের।জিএসটি ঘোষ্ণা করে তিনি বললেন এ আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। দ্বিতীয় স্বাধীনতা তো অনেক দূরের কথা মানুষ ক্রীতদাসের শিকার হলেন। মন্দিরে দর্শন বন্ধ হল। গুরুদ্বোয়ারায় চাপিয়ে দেওয়া হল জিএসটি। কোথাও ১৮ কোথাও ২৮ শতাংশ। এসব কি ধরনের তামাশা? একদিকে নোটবন্দি দ্বিতীয়ত জিএসটি। এ যেন নিমের পর করলা।”

“প্রতিশ্রুতি অনেক হচ্ছে কাজ হচ্ছে অনেক কম।আপনারা শুনতেই থাকবেন চেক আপ ইন্ডিয়া, মেড ইন ইন্ডিয়া। উজ্জ্বলা যোজনা এক দিকে সিলিন্ডারের দাম বাড়ছে আর দিকে। মেড ইন ইন্ডিয়া হয়ে যাবে মেড ইন চায়না।” এ কথা বলে তিনি ঐক্যবদ্ধ ভারতের ডাক দেন।

Published on: জানু ১৯, ২০১৯ @ ২৩:০৪


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 7 = 1