রামকৃষ্ণ মিশন ৫২ বছর ধরে অরুণাচলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে চলেছে

Main এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ
শেয়ার করুন

প্রায় ৫৩ বছর আগে অরুণাচল প্রদেশে প্রথম বেসরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে রামকৃষ্ণ মিশন।  

আজ থেকে আজ থেকে ৪০ বছর আগে ১৯৭৯ সালে ইটানগরেই রামকৃষ্ণ মিশন গড়ে তোলে একটি হাসপাতাল।

Published on: আগ ১, ২০১৯ @ ২৩:৩৭

এসপিটি নিউজ, ইটানগর, ১ আগস্ট: লোকসেবা আর রামকৃষ্ণ মিশন প্রায় সমার্থক হয়ে গেছে। বিশ্বে এমন কোনও প্রান্ত নেই যেখানে রামকৃষ্ণ মিশন লোকসেবা করছে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের পাশাপাশি তারা দুর্যোগ কবলিত জায়গাতেও পৌঁছে যাচ্ছেন। সেখানে বিপদের সঙ্গে লড়াই করে বিপদগ্রস্ত মানুষকে রক্ষার ব্রত পালন করে চলেছেন। ঠাকুর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের দেখানো জীব সেবার পথ ধরে তারা আজও এগিয়ে চলেছেন এই ভবসাগরের পথে। আর সেই পথ ধরে দেখতে দেখতে প্রায় ৫৩ বছরে ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম দুর্গম স্থান অরুণাচল প্রদেশের পাহাড়ি এলাকায় মানুষের পাশে থেকে তাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করে চলেছে এই প্রাচীন প্রতিষ্ঠান।

ইটানগরে সকলের পরিচিত পার্থ মহারাজ

কথা হচ্ছিল অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগরে রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী বিশ্বর্থনানন্দের সঙ্গে। যাকে সকলে পার্থ মহারাজ নামে চেনেন। একসময় এই এলাকা ছিল দুর্গম। সহজে এখানে পৌছনো প্রায় অকল্পনীয় ছিল। সেই সময় থেকেই কিন্তু রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ- ব্রহ্মচারীরা রামকৃষ্ণের নামে শপথ নিয়ে তাঁর দেখানো পথে এখানে একদিকে শিক্ষা আর দিকে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করে চলেছেন।

আলোতেই আলোর দিশা দেখিয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন

অরুণাচলেই আলো বলে একটা জায়গা আছে। জায়গার নামের সঙ্গে ঠাকুরের সেবার একটা অদ্ভুত সম্পর্ক এখানে গড়ে উঠেছে। ১৯৬৬ সাল। পাহাড়ি এই রাজ্য তখন খুবই পিছিয়ে শিক্ষা-স্বাস্থ্য সব দিক থেকে। পড়াশোনার জন্য ছেলে-মেয়েরা কোথায় যাবে? ভাল স্কুল কোথায় পাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অভিবাবকরা রীতিমতো দিশেহারা। আর তখনই তাদের চিন্তার মেঘমুক্তি ঘটালেন মহারাজরা। ছোট ছোট শিশুদের জন্য একটি নতুন স্কুল গড়ে তুলে আলো নামক স্থানে শিক্ষার আলো ফোটালেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সন্তানরা। প্রায় ৫৩ বছর পর সেই বিদ্যালয় আজ মহীরূহের আকার নিয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক এই স্কুলটি অরুণাচলের প্রথম বেসরকারি বিদ্যালয়। যেখানে আজ ছাত্র সংখ্যা প্রায় ১২০০।

ফের আরও দুটি বিদ্যালয় স্থাপন

এখানেই থেমে থাকেনি রামকৃষ্ণ মিশন।মঠের মহারাজরা রাজ্যের শিশুদের শিক্ষার আলো দেখাতে ১৯৭২ সালে নারোতামনগরে আরও একটি স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে আজ ছাত্র সংখ্যা ৭০০। গত বছর ২০১৮ সালেও রামকৃষ্ণ মিশন লুমডং-এ ফের আরও একটি স্কুলের সূচনা করেন। এভাবে মিশন তাদের লোকসেবার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।

হাত বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও

শুধু শিক্ষা বিস্তারেই থেমে নেই মিশন। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার দিকেও হাত লাগিয়েছেন। সেই মতো আজ থেকে আজ থেকে ৪০ বছর আগে ১৯৭৯ সালে ইটানগরেই রামকৃষ্ণ মিশন গড়ে তোলে একটি হাসপাতাল।আজ যা হয়ে উঠেছে ইটানগরবাসীর কাছে এক অমূল্য ধন।যেখানে গিয়ে রাজ্যের মানুষ শুধু সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবাই নয় পাচ্ছেন দেহ-মন সুস্থ করে তোলার এক অমূল্য রসদ।

ইটানগরে রামকৃষ্ণ মিশন হাসপাতাল

পার্থ মহারাজ সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে জানালেন-1979 সালে 26 একর জমির উপর এই হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। এখানে প্রতিদিন আউট ডোর পেশেন্ট আসেন 700 জন। হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা এখন 260টি।এর মধ্যে পেয়িং বেড-এর সংখ্যা 50টি। অপারেশন থিয়েটার আছে 5টি।যা এখন গোটা ইতানগরবাসীর শুধু নয় গোটা অরুণাচল প্রদেশের নানা প্রান্তের মানুষের আশা-ভরসার স্থল হয়ে উঠেছে।

সারদানন্দের সেবাদানের একটি ঘটনা

শুরুতে একটা কথা বলেছিলাম-রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে লোকসেবা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। অতীতে এমন একাধিক ঘটনা আছে। তেমনই একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে এই প্রতিবেদন শেষ করছি।স্বামী সারদানন্দ: মূর্ত বিবেকবাণী গ্রন্থে স্বামী চৈতন্যানন্দ মহারাজ ঠাকুর রামকৃষ্ণ পার্ষদ স্বামী সারদানন্দের আর্তের প্রতি যে সেবার মনোভাব দেখিয়ে গেছেন তা সত্যিই দৃষ্টান্তযোগ্য। রামকৃষ্ণ মিশনের সমস্ত সাধু-সন্ন্যাসীরাই সেই একই পথ ধরে আজও নিরলস ভাবে আর্তের সেবায় নিজেদের মন-প্রাণ সব ঢেলে দিয়েছেন। স্বামী চৈতন্যানন্দ লিখছেন-

“যজ্ঞেশ্বর ভট্টাচার্য (ফকির) নামে এক দরিদ্র যুবকের গ্যালোপিং থাইসিস হয়। রোগটি ভীষণ সংক্রামক এবং এই রোগের প্রতিষেধক ঔষধ তখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।অতএব এ-সব রোগীদের বাঁচার কোন সম্ভাবনা ছিল না।যাই হোক, ফকিরকে বলরামবাবুর বাড়ির পূর্বদিকের একটি ঘরে শুশ্রূষার জন্য এনে রাখা হয়। তার চিকিৎসা ও ঔষধ-পথ্যের জন্য সারদানন্দজী আর যোগানন্দজী দুজনে মিলে পাঁচজনের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে কিছু অর্থ সংগ্রহ করে তাকে প্রাণপনে সেবা করতে লেগে গেলেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন পূজনীয় তুলসী মহারাজ। ফকিরের বাঁচার কোন আশা ছিল না, তবু তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সারদানন্দজী ও তুলসী মহারাজ তাঁদের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে দিনরাত সেবা করেছিলেন। ফকিরের মুখনিক্ষিপ্ত রক্ত ও থুতু ভর্তি ডাবর তারা নির্দ্ধিদায় পরিষ্কার করতেন। এতে তাদের মধ্যে এই রোগ সংক্রামিত হতে পারে– কেউ এরকম আশঙ্কা প্রকাশ করে ঐ কাজ থেকে তাঁদের বিরত হওয়ার জন্য বললে সারদানন্দজী তৎক্ষণাৎ বলতেন: অপর কারও জন্য কিছুই তো করতে পারলাম না, তবে লোকসেবা করতে করতে যদি প্রাণটাও যায় তাও ভাল।”

Published on: আগ ১, ২০১৯ @ ২৩:৩৭


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + 3 =