মাত্র ছাপান্নতেই থেমে গেল তাঁর কর্মযজ্ঞ, চলে গেলেন শিক্ষাবিদ নবারুণ দে, শোকস্তব্ধ শিক্ষাজগৎ

Main দেশ শিক্ষা
শেয়ার করুন

 Published on: নভে ২১, ২০২০ @ ১৮:১৯
Reporter: Aniruddha Pal & Jayanta Bandopadhyay

এসপিটি নিউজ: নিজের বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন শিক্ষাবিদ এএসআইএসসি-র ন্যাশনাল কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারি নবারুণ দে। বরানগর সেন্ট্রাল মর্ডান স্কুলের প্রিন্সিপালও ছিলেন তিনি। রাত ১২টা দুই মিনিটে বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। মৃত্যুর সময় রেখে গেলেন তাঁর স্ত্রী, এক কন্যা ও এক পুত্রকে। নবারুণবাবুর মৃত্যুতে শিক্ষাজগতে বিশেষ করে আইসিএসই কাউন্সিলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।এভাবে অতর্কিতে তাঁর চলে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারছেন না। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। সংবাদ প্রভাকর টাইমস নবারুণ বাবুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।

আজ যখন আমরা নবারুণবাবুর বাড়িতে তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি তখন তাঁর মেয়ে নম্রতা দে গভীর দুঃখের সঙ্গে জানান- রাত ১২টা দুই মিনিটে বাড়িতে বাবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।এর পর আমরা কাউন্সিল অনুমোদিত স্কুলের কয়েকজন প্রিন্সিপালের সঙ্গে কথা বলি।প্রত্যেকেই তাঁদের মতো করে শোক জ্ঞাপন করেছেন।

সুজয় বিশ্বাস, প্রিন্সিপাল, রামমোহন মিশন স্কুল

প্রেসিডেন্ট, এএসআইএসসি, ন্যাশনাল কমিটি

মানুষ হিসেবে ব্যক্তি হিসেবে একজন বড় মানব দরদীকে হারালাম। তার কাজের পরিধি ছিল বিশাল। সমস্ত কাজ নিজের হাতে নিয়ে করতেন। উৎসাহ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। প্রত্যেকটা মানুষের বিপদের সময় তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। ছুটে বেড়াতেন আজকে কলকাতা, কালকে বীরভূম, পরশু মালদা। ফোন করছি বলছে আমি চুচুঁড়া থেকে ফিরছি। আবার কখনো সে পৌঁছে যাচ্ছে বসিরহাটে। এই যে একাত্মবোধ- অ্যাসোসিয়েশন কোডে সবাইকে এক সাথে নিয়ে চলতেন তিনি। সব থেকে বড় কথা বিশাল মাপের ক্ষতি হল। এই জায়গাটা যেই পূরণ করুক না কেন ওর মতো করে কেউ তা পারবে না। আমাদের মধ্যে প্রতিদিন রাতে ৪৫মিনিট ধরে ফোনে আলোচনা হত। আর সেই আলোচনার মধ্যে থেকে উঠে আসত আমাদের উপলব্ধি আর চিন্তাভাবনা। তখন দেখেছি যে উনি কত গভীর আন্তরিকতা দিয়ে জিনিসগুলি নিয়ে ভাবেন। আজকে অ্যাসোসিয়েশ্ন বাংলায় যে জায়গায় পৌছেছে তা উনি নিজে তুলে নিয়ে এসেছেন। আমার গভীর এক আত্মীয়কে আমি হারালাম। আর বন্ধু যদি বলতে হয়ে তাহলে ওর নাম বলতেই হয়।

রঞ্জন মিত্তার, প্রিন্সিপাল, ফিউচার ফাউন্ডেশন, সেক্রেটারি-এএসআইএসসি(পশ্চিমবঙ্গ)

নবারুণ আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। ওর বর্তমানে যে ভূমিকা তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে কাউন্সিল ফর ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট-এর অন্যতম এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য এবং এএসআইএসসি-র ন্যাশনাল জয়েন্ট সেক্রেটারি। এই দুটি কাজই ও যথেষ্ট দায়িত্বের সঙ্গে পালন করে এসেছে। এর আগে দীর্ঘ দেড় দশক সময় পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্বাঞ্চলের সেক্রেটারি ছিল। ওর যে হৃদ্যতা, ভালোবাসা, মানুষকে ছুঁইয়ে যাওয়ার ক্ষমতা বিশাল। আমাদের কাউন্সিলের হয়ে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে এ রাজ্যে এবং জাতীয় স্তরে। সেইখানে আমাদের এই ক্ষতি অপূরণীয়। বয়স অত্যন্ত কম। এই সময় ওর চলে যাওয়ার সময়ও হয়নি। নতুন করে ও একতা অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেছিল। সেইখানে ও সাড়াও পেয়েছে। গতকালই আমাকে প্রেস রিলিজ পাঠিয়েছিল।  সেইখানে এই খবর অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কাউন্সিলের জগতে একতা উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন হল।

অনিমেষ দে, প্রিন্সিপাল, গুরুকুল বিদ্যামন্দির, প্রাক্তন সম্পাদক, এএসআইএসসি

আমার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। এএসআইএসসি আমি সেক্রেটারি ছিলাম। এরপর উনি সেই পদের দায়িত্বে এসেছিলেন। অত্যন্ত কর্মঠ ছিলেন। সেকারণে সকলের কাছেই তো উনি গুণমুগ্ধ ছিলেন। তাঁর এই অসময়ে চলে যাওয়াটা তো আমাদের কাছে আইসিএসই এবং সিবিএসই স্কুলগুলির কাছে বিশেষ করে যখন সবে মাত্র একটি নতুন সংগঠন হয়েছে সেই সময় এ এক অপূরণীয় ক্ষতি। ওনার একটা বড় গুণ ছিল সকলের সঙ্গে সুব্যবহার আর যোগাযোগ বজায় রেখে চলা। আমি খবর পেয়ে রাতেই ওনার সল্টলেকের বাড়িতে চলে গেছিলাম। আজকে ওর চলে যাওয়াটা একটা বড় ক্ষতি।

মৌসুমী সাহা, প্রিন্সিপাল, ন্যাশনাল ইংলিশ স্কুল

এটা একটা অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে গেল। আমরা তো সবাই স্কুল নিয়ে ব্যস্ত থাকি। কিন্তু স্কুলের বাইরেও অ্যাসোসিয়েশনের যে কর্মকান্ড সেটা উনি খুব দায়িত্বের সঙ্গে সক্রিয়ভাবেই করতেন। কালকেও পর্যন্ত উনি প্রেস রিলিজ পাঠিয়েছেন, ধন্যবাদ জানিয়েছেন। খুবই দুর্ভাগ্যজনক, অপ্রত্যাশিত, অবিশ্বাস্য।

ওনাকে আমি ২০০৬ থেকে জানি। এএসআইএসসি পশ্চিমবঙ্গ শাখার ১২ বছরের সম্পাদক ছিলেন।উনি খুবই সক্রিয় ছিলেন। ফোন করলেই ওনাকে একবারেই পাওয়া যেত। এছাড়াও সিআইএসই- নিউ দিল্লির এক্সিকিউটিভ মেম্বার ছিলেন। এছাড়াও আমাদের এএসআইএসসি-র ন্যাশনাল কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারি ছিলেন। বর্তমানে ওয়েস্টবেঙ্গল প্রাইভেট স্কুল অ্যাসসিয়েশন গঠিত হয়েছিল সেটারও তিনি সেক্রেটারি হয়েছিলেন। যাতে করে একটা ছাতার তলায় আমরা সব বেসরকারি স্কুল আসতে পারি সেই লক্ষ্যেই এই সংগঠন করা হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর সল্টলেক শিক্ষানিকেতনে একটি সভাও হয়েছিল। সেখানে সিবিএসই, আইসিএসই, স্কুল ছিল। সেখানে উনি সেক্রেটারি হিসেবে মনোনীত হন।

লিপিকা ঘোষ, প্রিন্সিপাল, সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল, পানিহাটি

সকলেই বাঙালিদের ব্যাপারে বলে আমরা কর্মভীরু কিন্তু উনি ছিলেন কাজপ্রিয়। সারাক্ষন কাজ নিয়ে থাকতে ভালোবাসতেন। ওনার আর একটা ভালো দিক ছিল যে নিজের কাজ নিজেই করতেন। অনেককে দেখেছি, তাদেরকে ফোন করতে হলে তার সেক্রেটারিকে ফোন করতে হবে। ওনার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। উনি নিজেই ফোন ধরতেন, এটা ওনার একটা বড় দিক। আমি ওনার এই দিকটাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। আর সদা হাস্যমুখ। প্রচন্ড উপকারী মানুষ ছিলেন। ২৪ ঘণ্টাই উনি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।

 

Published on: নভে ২১, ২০২০ @ ১৮:১৯


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

87 − 78 =