“ভারতীয় নবজাগরণের জনক” রাজা রামমোহন রায়কে তাঁর ২৪৬তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাল গুগল

দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: মে ২২, ২০১৮ @ ১১:২০

এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ বাল্যবিবাহ, সতীদাহপ্রথা থেকে ভারতীয় নারীদের মুক্তির জন্য তিনি আজীবন লড়াই-আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। ভারতের নবজাগরণে যাঁর নাম আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে। যাঁকে বলা হয়ে থাকে ” ভারতীয় নবজাগরণের জনক” সেই রাজা রামমোহন রায়ের ২৪৬ তম জন্মবার্ষিকীতে গুগল ডুডল তাঁকে সম্মান জানাল। রাজা রামমহন রায় ভারতে জ্ঞানপ্রসাদ ও উদার আধুনিক সংস্কারের ভিত্তি প্রতিষ্ঠায় রাজা রামমোহন রায় একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন।

তিনি ১৭৭২ সালের ২২ মে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার রাধনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনটি ভাষা বাংলা, ফারসি ও সংস্কৃতের প্রাথমিক অধ্যয়ন বাড়িতেই করেছিলেন। আঠারো বছর বয়সে তিনি বিহারের পাটনা গিয়েছিলেন আরবি ও ফার্সি ভাষার অধ্যয়ন করতে। রাজা রামমোহন রায়, শ্রুতি স্মৃতি-পুরাণ, কুরআন ও বাইবেল অধ্যয়ন করেছেন। এই বিষয়গুলির মূল বিষয়গুলি অধ্যয়ন করার পর, তারা বুঝতে পেরেছিল যে এটি বিভিন্ন দেবতাদের এবং তাদের অবতার এবং মূর্তি পূজা করার অনুপযুক্ত। কিন্তু, সমসাময়িক সম্প্রদায় তাদের মতামত স্বীকার করেনি। অতএব, ১৮২৮  সালের ২0 আগস্ট তিনি ইংল্যান্ড যাত্রার আগে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সাথে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন, পরবর্তীকালে এই ব্রাহ্মসমাজ এক সামাজিক ও ধর্মীয় পুনর্জাগরনের পুরোধা হিসেবে কাজ করেন।

১৮১৫ থেকে ১৮১৯ সালের মধ্যে বাংলা ভাষায় লেখেন বেদান্তগ্রন্থ, বেদান্তসার, কেনোপনিষদ, ঈশপোনিষদ, কঠোপনিষদ, মাণ্ডুক্যোপনিষদ ও মুণ্ডকোপনিষদ। রক্ষণশীল সমাজ তাঁর এইসব লেখা নিয়ে প্রবল ব্যঙ্গ ও টিপ্পনি কাটেন।এত কদর্যভাষায় রামমোহনকে আক্রমণ করেন তাঁরা। যাদের মধ্যে প্রধান ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার। তিনি লেখেন ‘বেদান্তচন্দ্রিকা’। রামমোহন রায় মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারকে জবাব দিয়েছিলেন তাঁর ‘ভট্টাচার্যের সহিত বিচার’ লিখে। ‘বেদান্ত গ্রন্থ’ প্রকাশের পর থেকে ব্রহ্মনিষ্ঠ একেশ্বর উপাসনার পথ দেখালেন। গড়লেন আত্মীয় সভা। যা পরবর্তীকালে ব্রাহ্মসমাজ রূপে পরিচিতি লাভ করে।

ভারতীয় সমাজে নারীদের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার কারণে, রাজা রামমোহন রায় ভারতবর্ষের নিষ্ঠুর ও আন্তরিক প্রেমের জন্য একটি মহান যুদ্ধ উত্থাপিত করেছিলেন। যেখানেই কোন মহিলা সতী হয়ে ওঠে, সেখানে তিনি সহকর্মীদের সাথে যান এবং তাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেন। সতীদাহ প্রথা বন্ধ করারা জন্য তিনি লড়াই শুরু করেন। বেদান্ত-উপনিষদ ঘেঁটে প্রমাণ করেন যে সতীদাহপ্রথা অশাস্ত্রীয়। এরপর তিনি লেখেন-“প্রবর্তক ও নিবর্তনের সম্বাদ”। এর প্রতিবাদের আবার এক পুস্তক প্রকাশিত হল-”বিধায়ক নিষেধকের সম্বাদ”। তার পরেও প্রতিবাদে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুস্তকও প্রকাশিত হল। এরপর গোঁড়ারা বিষয়টি পার্লামেন্টে তোলার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠলেন। রামমোহন রায় তখন এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন। তিনি তখন বিলেত যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন। তাঁকে আর্থিক সাহায্য করতে সেসময় এগিয়ে এসেছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর।

সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় তাঁকে হিন্দুদের বিরোধী হিসেবে দেখতে শুরু করে তৎকালীন সমাজ। তিনি অবশ্য তাতে কোনও কর্ণপাত করেননি।একাধিকবার আক্রান্ত হতে হয়েছিল তাঁকে। নারীদের এভাবে হত্যা করার অভ্যাস বন্ধ করতে আইনের অধিকার অর্জন করার জন্য তিনি গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিকের আইনি অনুমতি নেন। লর্ড বেন্টিক রামমোহনকে একটি দীর্ঘ আলোচনাও দেন এবং অবশেষে ১৮২৯  সালের ৪ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা আইন ঘোষণা করা হয়।

দিল্লির বাদশাহ দ্বিতীয় আকবর রামমোহনকে ‘রাজা’ উপাধি দেন। একই সঙ্গে তাঁকে নির্দেশ দেন দিল্লির দরবারে বাদশাহের ভাতা বৃদ্ধি করার সুপারিশ করেন।

তিনি সবসময় শিক্ষার একটি আধুনিক ওয়েস্টার্ন পদ্ধতি পাওয়ার উপর জোর দেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন বই লিখেছিলেন। তাদের ‘বেদান্ত বই’ বাঙালী গদ্যের জন্য ভিত্তি স্থাপন করে। ১৮৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজা রামমোহন রায় মেনিনিজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিস্টলের কাছে স্টেপলটনে মারা যান।

Published on: মে ২২, ২০১৮ @ ১১:২০


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + 2 =