ব্রিগেডিয়ার বাঘ সিং- মাত্র সাত দিনে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু চশূল এয়ার ফিল্ড গড়ে দেশকে সমর্পন করেছিলেন

Main দেশ প্রতিরক্ষা
শেয়ার করুন

 Published on: আগ ১৩, ২০২১ @ ২১:১৪
Reporter:Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৩ আগস্ট:    ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষায় যারা নিরলস পরিশ্রম করে গিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিকানিরের বীরপুত্র অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার বাঘ সিং তানোয়ার। যার সাহস, বিচক্ষণতা, বুদ্ধি এবং কর্মকুশলতা ভারতকে সামরিক দিক দিয়ে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করেছে। লাদাখের বরফে ঢাকা পাহাড়ি এলাকায় ঘুরে ঘুরে সন্ধান করেছেন এক বিমান ঘাঁটির। যেখান থেকে যুদ্ধ করে ভারত চীনকে সমূহ জবাব দিতে সক্ষম হবে তেমনই এক ঘাঁটি আবিষাক্র করেন। মাত্র সাত দিনে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু চশূল এয়ার ফিল্ড গড়ে বাঘ সিং দেশকে তা সমর্পন করেন। এটা সেই চশূল বিমান ঘাঁটি যার দিকে এখনও নজর চীনের। ভারতের ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সংবাদ প্রভাকর টাইমস শ্রদ্ধা জানায় দেশের এই বীর সন্তানকে। যিনি দেশের প্রতি সমর্পিত ছিলেন আমৃত্যু।

তাঁর পুত্র ইতিহাসবিদ মহাবীর সিং তানোয়ার সংবাদ প্রভাকর টাইমস ব্রিগেডিয়ার বাঘ সিং-এর ঐতিহাসিক মুহূর্তের মূল্যবান ছবি দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন।

চশূল এয়ার ফিল্ড ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার বাঘ সিং

ভারতীয় সেনার সবচেয়ে বড় শক্তি চশূল এয়ার ফিল্ড। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন এটি কেড়ে নেওয়ার সবরকমের চেষ্টা করে। ভারত-চীন বিবাদ চলতে থাকায় দুই দেশের কোর কম্যান্ডারদের মধ্যে মিটিং-এর কারণে চশূল আজ ফের আলচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে।বিকানিরের কাছে এই নাম এই কারণে গুরুত্বপুর্ণ যে চশূলের ইতিহাস বলতে হলে বিকানিরের বীরপুত্র অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার বাঘ সিং-এর নাম দিয়েই তা শুরু হয়। বাঘ সিং মাত্র সাত দিনে এই এয়ার ফিল্ড তৈরি করে দেশকে এটি সমর্পিত করেন ১৯৫২ সালের ২৯ আগস্ট।

চশূল এয়ার ফিল্ড গড়ার পিছনে রোমাঞ্চকর এক কাহিনি

চশূল সেনাদের অ্যাডভান্স ল্যান্ড গ্রাউন্ড, যেখান থেকে চীনের সীমা মাত্র ১৫ কিমি। হিমালয়ের বরফাবৃত পাহাড়ে ১৪ হাজার ২৬০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এই স্থানের সন্ধানের কাহিনি খুবই রোমাঞ্চকর। বাঘ সিং-এর পুত্র ইতিহাসবিদ ঠাকুর মহাবীর সিং তানোয়ার বলেন- ভারতীয় সীমার সুরক্ষা, ডোকলামে বিমান অবতরণ এবং যুদ্ধের সময় চীনের উপর আক্রমণ করার জন্য সেনাদের এক বিমান ঘাঁটির খুব প্রয়োজন। সেই সময় সাদুল লাইট ইনফেন্ট্রিতে কম্যান্ডার বাঘ সিং কার্গিল সেক্টরে মোতায়েন ছিলেন।তাঁর উপর এয়ার ফিল্ড খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২২ জুন, ১৯৫২ সালে তিনি নিজের দায়িত্বে দুর্গম পাহাড়ি পথ ধরে সেই স্থানে পৌঁছন। এক রাত কাটানোর পর আরও খানিকটা এগিয়ে যান। আচমকা তাঁর মনে হয় যে তিনি এক সমান্তরাল জমির উপর দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি দেখেন যে এই চৌকি থেকে ভারত তো চীনের সঙ্গে খুব সহজেই নিজেদের সীমা রক্ষা করতে পারে। এখানে এতটাই জায়গা আছে যে এখানে অনায়াসে একটি বিমান ঘাঁটি তৈরি করা যেতে পারে।  ২২ আগস্ট সকালে সেনাদের সেই কাজে লাগিয়ে দেন। দিন-রাত এক করে মাত্র সাত দিনে ৩৫০০ গজ লম্বা এয়ার ফিল্ড তৈরি হয়ে যায়।গড়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বিমান ঘাঁটি চশূল এয়ার ফিল্ড।

বাঘ সিং-এর পিঠের উপর কাগজ রেখে সাক্ষর করেন ইন্দিরা

ব্রিগেডিয়ার বাঘ সিং ১৯৫২ সালের ২৯ আগস্ট চশূল এয়ার ফিল্ড দেশকে সমর্পন করেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু সেখানে পৌঁছতে চান। এমন দুর্গম স্থানে তাঁকে নিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টদায়ক ছিল। নেহেরুর সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী, শেখ আবদুল্লা, সর্দার বলদেব সিং এবং এয়ার মার্শাল এস মুখার্জিও ছিলেন। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এয়ার ফিল্ড নিয়ে নিজের উপলব্ধি জানাতে সকলেই একটি কাগজে সাক্ষর করেন। ইন্দিরা গান্ধীর কাগজ রাখার জন্য সমতল জায়গা না মেলায় তিনি বাঘ সিং-এর পিঠের উপর কাগজ রেখে সেখানে সেখানে সাক্ষর করেন।

ব্রিগেডিয়ার বাঘ সিং চীন নিয়ে নেহেরুকে সতর্ক করেছিলেন

১৯৫২ সালে ব্রিগেডিয়ার বাঘ সিং তৎকালীন প্র্ধানমন্ত্রী নেহেরুকে সতর্ক করেছিলেন। বলেছিলেন- ‘আপনারা বলেন ইন্দো-চিনি ভাই-ভাই। কিন্তু আদতে তা নয়। এরা আমাদের দেশের ক্ষতি করতে উদ্যত। এখন থেকে সতর্ক না হলে পরে কিন্তু আমাদের মাশুল দিতে হবে।’ সেটাই হয়েছিল ঠিক দশ বছর বাদে ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের সময়। তখন নেহেরু বাঘ সিং-কে ডেকে তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন- বলো তোমার কি পরিকল্পনা আছে? বলেন তাঁর পুত্র মহাবীর সিং।

চশূলের উপর চীনের নজর

১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন চশূলকে হাতানোর খুব চেষ্টা করে। ভীষণ যুদ্ধ হয়। চশূলকে রক্ষা করতে গিয়ে মেজর শৌতান সিং শহীদ হন। মোট ২৭ জন শহীদ হন। ওনার মৃতদেহ চার মাস বাদে মেলে। মেজর ধন সিং থাপা পিগাংগাসো ঝিল থেকে একটু এগিয়ে শত্রুর হাত থেকে খাদের এয়ার ফিল্ড কে রক্ষা করেন। অভূতপূর্ব সাহস দেখানোর জন্য দু’জনকেই পরমবীর চক্র প্রদান করে সম্মান জানানো হয়।

আমাদের গর্ব হয় যে তিনি বিকানীরের সুপুত্র

“আমাদের গর্ব হয় যে ব্রিগেডিয়ার বাঘ সিং বিকানিরের ছিলেন। এবং তিনি দেশের জন্য এমন একটি ঘাঁটি খুঁজেছিলেন যা পাকিস্তান ও চীনকে যুদ্ধে হারাতে সহায়তা করতে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে।” বলেন মহাবীর সিং।

পাকিস্তানের উপরেও নজর

চশূল থেকে শুধু চীন এমনকি পাকিস্তানের উপরেও নজর রাখা সম্ভব। এটি একটি দুর্গের মতো। এখান থেকে সবই নীচে রয়েছে। এবং সহজেই সেনা হামলা রোধ করা যেতে পারে। যেভাবে কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তান উঁচুতে থাকার জন্য ফায়দা লুটেছিল সেরকমই চশূল ঘাঁটির কারণে ভারতও একইভাবে ফায়দা নিতে পারে। ভারতের জন্য সামরিক দৃষ্টিতে এই ঘাঁটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিকানিরের ভূমিপুত্র হিঙ্গলাজ দন রতনুর প্রতিক্রিয়া

বিকানিরের ভূমিপুত্র রাজস্থান পর্যটন বিভাগের আধিকারিক হিঙ্গলাজ দন রতনু বলেন- “ব্রিগেডিয়ার বাঘ সিং জি তানোয়ার ভারত মাতার পুত্র, যিনি ভারতকে চশূল বায়ুক্ষেত্র দিয়েছেন, যার কারণে চীন ডোকলাম এলাকায় ভারত থেকে দূরে খায়, ব্রিগেডিয়ার বাঘ সিং জি তানোয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর স্বার্থে দেশকে সেবা দিয়েছিলেন। মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শ্রীজওহরলাল নেহেরুও তাঁর সেবায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করার এবং তাঁর আশীর্বাদ পাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আগামী প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হতে পারে।”

Published on: আগ ১৩, ২০২১ @ ২১:১৪


শেয়ার করুন